দুর্নীতির দায়ে শিক্ষামন্ত্রীর এপিএসকে অব্যাহতি
দুর্নীতির
দায়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মন্মথ
রঞ্জন বাড়ৈকে (মণি) অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকালে জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে,
মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈকে (মণি) এপিএস পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার চাকরি শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সাড়ে ৬ বছরের বেশি
সময় ধরে তিনি বদলি, পদোন্নতি, কমিশন নেয়া, পদায়ন ও নিয়োগ, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট
বিভিন্ন ভবন নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে তার
বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর অনলাইন ভর্তিতে তার
সিন্ডিকেটের কারণে গোটা পদ্ধতিতে একটি বিতর্কের মুখে পড়ে। ভর্তির সঙ্কট
উত্তরণে ৪ঠা জুলাই রাজধানীর হেয়ার রোডে শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শিক্ষাসচিব।
এরপর থেকে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন ওঠে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস-এর নানা দুর্নীতির তথ্য এরই মধ্যে জেনেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেল মেয়াদের পাঁচ বছর ও এ মেয়াদের দেড় বছর কোন কোন খাত থেকে কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে ওই বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর সরকারি চাকরিতে যোগদান ও বর্তমান বিত্তবৈভব সম্পর্কেও তালাশ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এপিএস-এর অবৈধ আয়ের প্রধান উৎস ছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) ও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এই দুই দপ্তরে হাতেগোনা দু’চারজন বাদে প্রায় সবাই এপিএসপন্থি এবং ক্যাশ সরকার হিসেবে পরিচিত। এপিএস’র ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ইইডি ও ডিআইএ’র ৬জন কর্মকর্তা। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সচিবসহ সকল সদস্যই এপিএস সিন্ডিকেটের সদস্য ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র ও সচিব শাহেদুল খবীর, উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার তার সবচেয়ে কাছের লোক। মাদ্রাসা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নিয়মিত বাজার করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বাসায়। তাকে দু’বার অবৈধ পদোন্নতি দেয়া হলেও একবার তা বাতিল করেছেন বর্তমান শিক্ষাসচিব।
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের কোন ফাইলই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত এপিএস’র টেবিলে যাওয়ার কথা নয়। তবে বাস্তবতা ছিল যাবতীয় বদলিভিত্তিক পদায়ন, পদোন্নতি, সরাসরি নিয়োগ, এমপিও, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, বিদেশ ভ্রমণের তালিকা, ভর্তি, কমিটি অনুমোদন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের ফাইল প্রক্রিয়াকরণ, টেন্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুতেই নজর ছিল বিতর্কিত এপিএস’র। এই সুযোগে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ফাইল গায়েব, কখনও ফেরত পাঠাতেন তিনি। এসব কারণে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব এপিএস’র এসব কর্মকাণ্ড কখনই পছন্দ করেননি। সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ এপিএসকে উপাধি দিয়েছেন বাড়ৈ বা ‘ইনফেমাস বাড়ৈ’ নামে। এপিএস’র অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে সচিবের অবস্থান নিয়ে ২০১২ ও ২০১৩ সালে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এর আগে ২০১২ ও ২০১৩ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগ করেন সরকার সমর্থিত বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত হলেও রহস্যজনক কারণে তার কার্যক্রম হয়নি। শুধু এটি নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়মের বদলি বাণিজ্যে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কমিশনসহ অভিযোগের পাহাড়। তিনি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন ২০১৪ সালে। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদের শেষ সময়ে ৫ বছরের জন্য ছুটির আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানিতে চাকরি করবেন উল্লেখ করা ছুটির আবেদনপত্রের ৩ বছরের জন্য অনুমোদন দেন শিক্ষামন্ত্রী। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নজরে এলে তাৎক্ষণিক তার ছুটি বাতিল করা হয়। তখন তাকে ঢাকা বোর্ডে পদায়ন করা হলেও বসতেন মন্ত্রীর দপ্তরে। এরপর ৫ মাসের মাথায় বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় আসীন হলে ৭ই মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে পুনরায় এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে ২০০৮ সালে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, শিক্ষাভবন, সারা দেশের বোর্ড, নায়েম, ইইডিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। নিতে থাকেন একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। গড়ে তোলেন কমিশন বাণিজ্য। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সায় দেয়া। কখনও তাদের ফাইল গায়েব, কখনও ফেরত পাঠানো। এসব অভিযোগের কারণে পুরো সাড়ে ৬ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তিনি।
শুধু এখানেই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে এখতিয়ারের বাইরে প্রকল্পের গাড়ি দখল থেকে শুরু করে নানা ধরনের অন্যায়ে জড়িয়ে পড়াসহ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে শিক্ষাখাতে। তারই অনুসারী হিসেবে কর্মকর্তারা শিক্ষাভবনসহ ঢাকার শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন পান এবং ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। একটি ঘটনায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত এক শিক্ষক সমিতির এক নেতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। পরে ওই নেতা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তখন অভিযোগ তদন্ত করতে বলা হয়। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের মধ্যে দূরত্বও সৃষ্টি হয়। এপিএস’র ইন্ধনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বর্তমান সচিব নজরুল ইসলাম খানের মধ্যে এক ধরনের শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষামন্ত্রী সচিবকে বদলানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ওই পদে নিয়োগ পেয়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর বিতর্কিত এই এপিএস। তার নেতৃত্বেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই টাকার ভাগ চলে যায় তার পকেটে।
২০১৩ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজের কন্যার ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত শেষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হলে তা ফেরত পাঠানো হয়। শিক্ষা প্রকৗশল অধিদপ্তরের রয়েছে এপিএস’র একচেটিয়া আধিপত্য।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এপিএস’র সিন্ডিকেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়, মইনুল হক, শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী, জসিমউদ্দিন, ডিআইএর মফিজুল ইসলাম, ঢাকা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবির, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ প্রমুখ। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এবং শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এভাবে সিন্ডিকেট করে শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনার কারণে অনেকটা সমালোচিত মন্ত্রীর এপিএস। যার সর্বশেষ পরিণতি দেরিতে হলেও অব্যাহতি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস-এর নানা দুর্নীতির তথ্য এরই মধ্যে জেনেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেল মেয়াদের পাঁচ বছর ও এ মেয়াদের দেড় বছর কোন কোন খাত থেকে কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে ওই বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈর সরকারি চাকরিতে যোগদান ও বর্তমান বিত্তবৈভব সম্পর্কেও তালাশ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এপিএস-এর অবৈধ আয়ের প্রধান উৎস ছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) ও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এই দুই দপ্তরে হাতেগোনা দু’চারজন বাদে প্রায় সবাই এপিএসপন্থি এবং ক্যাশ সরকার হিসেবে পরিচিত। এপিএস’র ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ইইডি ও ডিআইএ’র ৬জন কর্মকর্তা। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সচিবসহ সকল সদস্যই এপিএস সিন্ডিকেটের সদস্য ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র ও সচিব শাহেদুল খবীর, উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার তার সবচেয়ে কাছের লোক। মাদ্রাসা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নিয়মিত বাজার করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বাসায়। তাকে দু’বার অবৈধ পদোন্নতি দেয়া হলেও একবার তা বাতিল করেছেন বর্তমান শিক্ষাসচিব।
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের কোন ফাইলই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত এপিএস’র টেবিলে যাওয়ার কথা নয়। তবে বাস্তবতা ছিল যাবতীয় বদলিভিত্তিক পদায়ন, পদোন্নতি, সরাসরি নিয়োগ, এমপিও, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, বিদেশ ভ্রমণের তালিকা, ভর্তি, কমিটি অনুমোদন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের ফাইল প্রক্রিয়াকরণ, টেন্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুতেই নজর ছিল বিতর্কিত এপিএস’র। এই সুযোগে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ফাইল গায়েব, কখনও ফেরত পাঠাতেন তিনি। এসব কারণে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব এপিএস’র এসব কর্মকাণ্ড কখনই পছন্দ করেননি। সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ এপিএসকে উপাধি দিয়েছেন বাড়ৈ বা ‘ইনফেমাস বাড়ৈ’ নামে। এপিএস’র অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে সচিবের অবস্থান নিয়ে ২০১২ ও ২০১৩ সালে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
এর আগে ২০১২ ও ২০১৩ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অভিযোগ করেন সরকার সমর্থিত বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত হলেও রহস্যজনক কারণে তার কার্যক্রম হয়নি। শুধু এটি নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, অনিয়মের বদলি বাণিজ্যে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কমিশনসহ অভিযোগের পাহাড়। তিনি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন ২০১৪ সালে। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদের শেষ সময়ে ৫ বছরের জন্য ছুটির আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানিতে চাকরি করবেন উল্লেখ করা ছুটির আবেদনপত্রের ৩ বছরের জন্য অনুমোদন দেন শিক্ষামন্ত্রী। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নজরে এলে তাৎক্ষণিক তার ছুটি বাতিল করা হয়। তখন তাকে ঢাকা বোর্ডে পদায়ন করা হলেও বসতেন মন্ত্রীর দপ্তরে। এরপর ৫ মাসের মাথায় বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় আসীন হলে ৭ই মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে পুনরায় এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে ২০০৮ সালে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, শিক্ষাভবন, সারা দেশের বোর্ড, নায়েম, ইইডিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। নিতে থাকেন একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। গড়ে তোলেন কমিশন বাণিজ্য। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সায় দেয়া। কখনও তাদের ফাইল গায়েব, কখনও ফেরত পাঠানো। এসব অভিযোগের কারণে পুরো সাড়ে ৬ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তিনি।
শুধু এখানেই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে এখতিয়ারের বাইরে প্রকল্পের গাড়ি দখল থেকে শুরু করে নানা ধরনের অন্যায়ে জড়িয়ে পড়াসহ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে শিক্ষাখাতে। তারই অনুসারী হিসেবে কর্মকর্তারা শিক্ষাভবনসহ ঢাকার শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন পান এবং ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। একটি ঘটনায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত এক শিক্ষক সমিতির এক নেতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। পরে ওই নেতা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তখন অভিযোগ তদন্ত করতে বলা হয়। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের মধ্যে দূরত্বও সৃষ্টি হয়। এপিএস’র ইন্ধনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বর্তমান সচিব নজরুল ইসলাম খানের মধ্যে এক ধরনের শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষামন্ত্রী সচিবকে বদলানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ওই পদে নিয়োগ পেয়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর বিতর্কিত এই এপিএস। তার নেতৃত্বেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই টাকার ভাগ চলে যায় তার পকেটে।
২০১৩ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজের কন্যার ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত শেষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হলে তা ফেরত পাঠানো হয়। শিক্ষা প্রকৗশল অধিদপ্তরের রয়েছে এপিএস’র একচেটিয়া আধিপত্য।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এপিএস’র সিন্ডিকেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়, মইনুল হক, শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী, জসিমউদ্দিন, ডিআইএর মফিজুল ইসলাম, ঢাকা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবির, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ প্রমুখ। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এবং শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এভাবে সিন্ডিকেট করে শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনার কারণে অনেকটা সমালোচিত মন্ত্রীর এপিএস। যার সর্বশেষ পরিণতি দেরিতে হলেও অব্যাহতি।
No comments