মোটরযান চলাচলে ৪ দেশের চুক্তি সই
বাংলাদেশ,
ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সড়ক পথে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের
রূপরেখা চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের
পরিবহনমন্ত্রীরা এই চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর চার দেশের
যে কোন ধরনের মোটরযান অবাধ যাতায়াত করতে পারবে। চুক্তিটি সইয়ের পর লন্ডন
থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করে চার দেশের
পরিবহনমন্ত্রীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। রূপরেখা চুক্তির পর কিছু
আনুষ্ঠানিকতা শেষে চলতি বছরের শেষের দিকে মূল চুক্তি এবং এটি বাস্তবায়নে
পৃথক একটি প্রটোকল সই হবে। সম্ভাব্য রুটগুলোতে আগামী অক্টোবর থেকে
পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল শুরু হবে। তার আগে চলাচল পথের সমীক্ষা,
পরীক্ষামূলক চলাচল ও অভিবাসন সুবিধা পর্যালোচনা করা হবে। আগামী বছরের
শুরুতে চার দেশের মধ্যে পুরোপুরি যান চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। চুক্তির
অধীনে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি চলতে
পারবে। শুল্ক ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে নিজ
নিজ দেশের আইনে। তবে ট্রানজিট ও চলাচলের অনুমতি সংক্রান্ত ফি নির্ধারণ
আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। জানা গেছে, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক
সহযোগিতা বিষয়ক (সাসেক) কৌশলগত বাণিজ্য সম্প্রসারণ রূপরেখার ওপর ভিত্তি
করেই এ চুক্তি সই হয়েছে। সাসেক রূপরেখা ২০১৪ সালের মার্চে এই চার দেশ
অনুমোদন করে। এদিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ভারত অনুরূপ মোটরযান
চলাচল চুক্তি করতে চলেছে। ভারতের সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী নীতিন গড়গড়ি এ সংবাদ
জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে এশীয় অঞ্চলে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিগন্ত
উন্মোচিত হবে। চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিবিসিকে দেয়া এক
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন,
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে যেমন, তেমনি ভারত, নেপাল বা ভুটানেরও কোন
পর্যটক তাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে বা বাসে চড়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসতে পারবেন।
অবশ্য এ জন্য একটি রুট পারমিট দরকার হবে। প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে ভ্রমণের
আগে রুট পারমিট নিতে হবে, আর নিয়মিত যাতায়াত করবে এমন বাস বা পণ্যবাহী
ট্রাকের জন্য অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মেয়াদে জন্য রুট পারমিট পাওয়া যাবে।
সচিব পর্যায়ের সিরিজ আলোচনা, মন্ত্রীদের সই: একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে গত রোববার থেকে থিম্পুতে সিরিজ আলোচনা হয়েছে চার দেশের সচিবদের মধ্যে। গতকাল দুপুরের আগ পর্যন্ত ওই আলোচনা চলে। অতঃপর বেলা ১২টার দিকে থিম্পুর লা মেরিডিয়ান হোটেলে প্রতিবেশী চার দেশে মধ্যে সড়ক পরিবহনের রূপরেখা চুক্তি সই হয়। যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সই করেন। চুক্তিতে ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী লিনোপো ডি এন ধুঙ্গিয়েল, ভারতের সড়ক পরিবহন, মহাসড়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়গড়ি এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি নিজ নিজ দেশের পক্ষে সই করেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝ্যাং অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে দেয়া বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ আমরা আঞ্চলিক সংযোগের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে একত্রিত হয়েছি।
সইয়ের পর যৌথ বিবৃতি: এদিকে চুক্তি সইয়ের পর চার দেশের মন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচলের এই চুক্তিটি বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কার্যকর সব পরিবহন চুক্তি ও ব্যবস্থাগুলোর সম্পূরক হবে, যেগুলো চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব পক্ষ মেনে চলবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোন জটিলতা দেখা দিলে ‘বিবিআইএন মোটরযান চলাচল চুক্তি’র বিধান অনুযায়ী তা নিষ্পত্তি করা হবে। অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন এবং আগস্টের মধ্যে প্রটোকলসহ চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে চূড়ান্ত বাস্তবায়নে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দ্বিপক্ষীয় (ত্রিপক্ষীয়/চতুর্পক্ষীয়) চুক্তি/প্রটোকলের প্রস্তুতি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চুক্তি/প্রটোকল নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর জন্য পূর্বশর্ত (তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা, অবকাঠামো, ট্র্যাকিং, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) স্থাপন করা হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে এ উদ্যোগের অধীনে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্র ও সুবিধাগুলো তুলে ধরতে অক্টোবরে বিবিআইএন ফ্রেন্ডশিপ মোটর র্যালি আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণে জাতীয় স্থল পরিবহন ত্বরান্বিতকরণ কমিটিগুলোর (নোডাল) কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এর বাস্তবায়নের গতিতে কোন সমস্যা উদ্ভূত হলে তা দ্রুত নজরে আনতে বলা হয়েছে। চার দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ত্বরান্বিত করতে দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক (সাসেক) কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। গত ৮ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ সইয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, চলাচলে রুট পারমিট বাধ্যতামূলক। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোন যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা ‘সার্চ’ ও ‘ইন্সপেকশন’ করতে পারবে। কোন দেশে নিষিদ্ধ থাকা পণ্য সে দেশের ওপর দিয়ে পরিবহন করা যাবে না। চুক্তির আওতায় যান চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ নিজেদের নির্ধারিত হারে ‘ট্রানজিট ফি’ আদায় করবে। রূপরেখা চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে চারটি দেশে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রীবাহী পরিবহন চলবে। এজন্য যানবাহনের নিজ নিজ দেশের ফিটনেস সনদ এবং যানবাহনের বৈধ মালিকানার দলিল থাকতে হবে। গাড়ির চালকের নিজ নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং যাত্রীদের ভ্রমণ দলিল বা পাসপোর্ট ও যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসার প্রয়োজন হবে। ওই চুক্তির পর নতুন কোন চুক্তি হলে এক দেশ অন্য দেশের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশেও যেতে পারবে। অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে চুক্তিটা করা হয়েছে।
চলাচলের পথ: বাংলাদেশে এখন ২০টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর ১৯টিই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। টেকনাফ বন্দরটি মিয়ানমারের সঙ্গে। বিদ্যমান সব বন্দর দিয়েই বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। তবে বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া-আসার জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি করে চারটি পথ ঠিক করা হয়েছে। নেপালে যেতে ঢাকা-বাংলাবান্ধা-জলপাইগুড়ি-কাকরভিটা এবং ঢাকা-বুড়িমারী চেংরাবান্দা এ দুটি পথ ব্যবহার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর ভুটানের পথ দুটি হচ্ছে ঢাকা-বুড়িমারী-চেংরাবান্দা এবং অন্যটি ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি। সমপ্রতি ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি পথে যে বাস চালু করা হয়েছে, সেটি দিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন ভুটানি ভ্রমণ করেছেন।
যান চলবে যেভাবে: ব্যক্তিগত গাড়ি অনিয়মিত যান হিসেবে বিবেচিত হবে। পর্যটন, তীর্থযাত্রা, বিয়ে অনুষ্ঠান, চিকিৎসা, শিক্ষা সফর, রেলস্টেশনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে আগ্রহীরা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের ভ্রমণ-অনুমতি পাবেন। এ ধরনের যাত্রীদের যাত্রাকালে জ্বালানি ভরে যেতে হবে। কোন শুল্ক না দিয়েই নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ। পথে জ্বালানির দরকার হলে ভর্তুকিবিহীন দামে জ্বালানি নিতে হবে। দুর্ঘটনায় পড়লে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাড়ি নিয়ে যতবার ভ্রমণ ততবার নতুন করে অনুমোদন নিতে হবে। যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলো রঙ হবে সাদা রঙের। দুই পাশে হলুদ রঙ দিয়ে ইংরেজি এবং নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষায় পরিবহনের নাম, দেশের নাম, যাত্রা শুরু ও শেষের স্থানের নাম এবং পথের বর্ণনা লিখতে হবে।
এ প্রক্রিয়ায় অন্য দেশও যুক্ত হতে পারবে: খসড়া রূপরেখা চুক্তিতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত চার দেশের বাইরে অন্য কোন দেশ চাইলে এ অবাধ যান চলাচল প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবে। তবে চার দেশের কেউ দ্বিমত করলে অন্তর্ভুক্তি আটকে যাবে। চুক্তিতে সই করা কোন দেশ এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে অন্যদের লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর চার দেশের পরিবহন সচিবরা ৩০ দিনের মধ্যে আলোচনায় বসে পরবর্তী করণীয় ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবেন। চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লিখিত আবেদন বাকি তিন দেশের হাতে পৌঁছানোর দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাস পর তা কার্যকর হবে।
সচিব পর্যায়ের সিরিজ আলোচনা, মন্ত্রীদের সই: একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে গত রোববার থেকে থিম্পুতে সিরিজ আলোচনা হয়েছে চার দেশের সচিবদের মধ্যে। গতকাল দুপুরের আগ পর্যন্ত ওই আলোচনা চলে। অতঃপর বেলা ১২টার দিকে থিম্পুর লা মেরিডিয়ান হোটেলে প্রতিবেশী চার দেশে মধ্যে সড়ক পরিবহনের রূপরেখা চুক্তি সই হয়। যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সই করেন। চুক্তিতে ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী লিনোপো ডি এন ধুঙ্গিয়েল, ভারতের সড়ক পরিবহন, মহাসড়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়গড়ি এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি নিজ নিজ দেশের পক্ষে সই করেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝ্যাং অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে দেয়া বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ আমরা আঞ্চলিক সংযোগের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে একত্রিত হয়েছি।
সইয়ের পর যৌথ বিবৃতি: এদিকে চুক্তি সইয়ের পর চার দেশের মন্ত্রীরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচলের এই চুক্তিটি বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কার্যকর সব পরিবহন চুক্তি ও ব্যবস্থাগুলোর সম্পূরক হবে, যেগুলো চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব পক্ষ মেনে চলবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে কোন জটিলতা দেখা দিলে ‘বিবিআইএন মোটরযান চলাচল চুক্তি’র বিধান অনুযায়ী তা নিষ্পত্তি করা হবে। অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন এবং আগস্টের মধ্যে প্রটোকলসহ চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে চূড়ান্ত বাস্তবায়নে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দ্বিপক্ষীয় (ত্রিপক্ষীয়/চতুর্পক্ষীয়) চুক্তি/প্রটোকলের প্রস্তুতি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চুক্তি/প্রটোকল নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর জন্য পূর্বশর্ত (তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা, অবকাঠামো, ট্র্যাকিং, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) স্থাপন করা হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, চার দেশের মধ্যে এ উদ্যোগের অধীনে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্র ও সুবিধাগুলো তুলে ধরতে অক্টোবরে বিবিআইএন ফ্রেন্ডশিপ মোটর র্যালি আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণে জাতীয় স্থল পরিবহন ত্বরান্বিতকরণ কমিটিগুলোর (নোডাল) কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং এর বাস্তবায়নের গতিতে কোন সমস্যা উদ্ভূত হলে তা দ্রুত নজরে আনতে বলা হয়েছে। চার দেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ত্বরান্বিত করতে দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক (সাসেক) কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। গত ৮ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যানবাহন চলাচলে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ সইয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, চলাচলে রুট পারমিট বাধ্যতামূলক। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোন যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা ‘সার্চ’ ও ‘ইন্সপেকশন’ করতে পারবে। কোন দেশে নিষিদ্ধ থাকা পণ্য সে দেশের ওপর দিয়ে পরিবহন করা যাবে না। চুক্তির আওতায় যান চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ নিজেদের নির্ধারিত হারে ‘ট্রানজিট ফি’ আদায় করবে। রূপরেখা চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে চারটি দেশে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রীবাহী পরিবহন চলবে। এজন্য যানবাহনের নিজ নিজ দেশের ফিটনেস সনদ এবং যানবাহনের বৈধ মালিকানার দলিল থাকতে হবে। গাড়ির চালকের নিজ নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং যাত্রীদের ভ্রমণ দলিল বা পাসপোর্ট ও যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসার প্রয়োজন হবে। ওই চুক্তির পর নতুন কোন চুক্তি হলে এক দেশ অন্য দেশের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশেও যেতে পারবে। অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে চুক্তিটা করা হয়েছে।
চলাচলের পথ: বাংলাদেশে এখন ২০টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর ১৯টিই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। টেকনাফ বন্দরটি মিয়ানমারের সঙ্গে। বিদ্যমান সব বন্দর দিয়েই বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। তবে বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া-আসার জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি করে চারটি পথ ঠিক করা হয়েছে। নেপালে যেতে ঢাকা-বাংলাবান্ধা-জলপাইগুড়ি-কাকরভিটা এবং ঢাকা-বুড়িমারী চেংরাবান্দা এ দুটি পথ ব্যবহার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর ভুটানের পথ দুটি হচ্ছে ঢাকা-বুড়িমারী-চেংরাবান্দা এবং অন্যটি ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি। সমপ্রতি ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি পথে যে বাস চালু করা হয়েছে, সেটি দিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকজন ভুটানি ভ্রমণ করেছেন।
যান চলবে যেভাবে: ব্যক্তিগত গাড়ি অনিয়মিত যান হিসেবে বিবেচিত হবে। পর্যটন, তীর্থযাত্রা, বিয়ে অনুষ্ঠান, চিকিৎসা, শিক্ষা সফর, রেলস্টেশনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে আগ্রহীরা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের ভ্রমণ-অনুমতি পাবেন। এ ধরনের যাত্রীদের যাত্রাকালে জ্বালানি ভরে যেতে হবে। কোন শুল্ক না দিয়েই নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ। পথে জ্বালানির দরকার হলে ভর্তুকিবিহীন দামে জ্বালানি নিতে হবে। দুর্ঘটনায় পড়লে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাড়ি নিয়ে যতবার ভ্রমণ ততবার নতুন করে অনুমোদন নিতে হবে। যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনগুলো রঙ হবে সাদা রঙের। দুই পাশে হলুদ রঙ দিয়ে ইংরেজি এবং নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষায় পরিবহনের নাম, দেশের নাম, যাত্রা শুরু ও শেষের স্থানের নাম এবং পথের বর্ণনা লিখতে হবে।
এ প্রক্রিয়ায় অন্য দেশও যুক্ত হতে পারবে: খসড়া রূপরেখা চুক্তিতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত চার দেশের বাইরে অন্য কোন দেশ চাইলে এ অবাধ যান চলাচল প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবে। তবে চার দেশের কেউ দ্বিমত করলে অন্তর্ভুক্তি আটকে যাবে। চুক্তিতে সই করা কোন দেশ এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে অন্যদের লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর চার দেশের পরিবহন সচিবরা ৩০ দিনের মধ্যে আলোচনায় বসে পরবর্তী করণীয় ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবেন। চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লিখিত আবেদন বাকি তিন দেশের হাতে পৌঁছানোর দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাস পর তা কার্যকর হবে।
No comments