নারীদের একটি নীরব নির্বাচন by তোফায়েল আহমেদ
সারা
দেশে উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচন
হতে যাচ্ছে। চলছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড, কিন্তু খুব নীরবে। এ নীরবতার নানা
কারণ—প্রথমত, নির্বাচনটি শুধু নারীদের, তাই নড়াচড়া কম। দ্বিতীয়ত,
বহুবিলম্বিত এ নির্বাচন। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সময়ের মধ্যে পরপর আকাশ-বাতাস
কাঁপিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সব বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে দু-দুটি উপজেলা পরিষদ
নির্বাচন হলেও পরোক্ষ নির্বাচনের বিধানের অধীনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে
নির্বাচনটি সম্পন্ন করার বিষয়টি বারবার আড়ালে থেকে যায়। দেশে নারী অধিকার
সংরক্ষণবিষয়ক অনেক সংস্থা ও সংগঠন কাজ করলেও কেউই এ বিষয়টিতে মনোযোগী বা
সোচ্চার ছিল না। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ নির্বাচনটির বিষয়ে বরাবরই আগ্রহ
দেখিয়েছে। নির্বাচন কমিশন অজানা কারণে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। অবশেষে দুই
পরিষদেরও ছয় বছর গত হতে চলল, এবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়েছে গত ২১ মে
এবং নির্বাচন হতে যাচ্ছে ১৫ জুন।
এ নির্বাচন নিয়ে নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, এমনকি নারী সংগঠন—কারও কোনো প্রতিক্রিয়া, সরবতা নেই। নীরবে, নিভৃতে এ নির্বাচনের তিনটি পর্ব মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন হলো। জানা গেছে, ৩ হাজার ১১৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় আছেন ২ হাজার ৮৬৬ জন। খুব সম্ভবত কমবেশি ১ হাজার ৮০০ নারী উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধিত্বশীলতা বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।
নির্বাচনটি নীরবে হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদের নিয়মিত সভা, স্থায়ী কমিটিগুলোর পুনর্গঠন এবং সভা অনুষ্ঠানে এ নির্বাচনের একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদগুলোর কিছু আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। নির্বাচনের পর দায়িত্ব গ্রহণে আবারও কালক্ষেপণ কাম্য নয়। অবশ্য ইতিমধ্যে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ আসন্ন রমজানের পরপরই নবনির্বাচিতদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেটি খুবই আশার কথা। আশা করা যায়, নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা ও বাজেট প্রভৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোয় সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচনের ব্যবস্থাটি কার্যকর রয়েছে। প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা তাঁদের উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারেন না। উপজেলা পরিষদেও নবনির্বাচিতরা নির্বিঘ্নতার সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবেন না, তা নয়। তবে সব পক্ষ থেকে এখানে সহযোগিতা ও সক্ষমতার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। উপজেলা পরিষদ শুরু থেকেই নানা রকমের সাংগঠনিক, প্রশাসনিক, আইনগত ও আর্থিক সীমাবদ্ধতায় আড়ষ্ট। নবনির্বাচিত নারী প্রতিনিধিকেও সে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির সুবিধা-অসুবিধাগুলো বুঝতে হবে। সে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকারিতার পথে ধাবিত করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রধানদের তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়ররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী হলেও তাঁরা উপজেলা পরিষদের সদস্যমাত্র। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের নারী সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়ররা সমমর্যাদায় সদস্য—এ বিষয়টিকে সসম্মানে মেনে নিতে হবে। এ জন্য সম্মানিত সদস্য হিসেবে পরিষদে বিভিন্ন সভা ও ফোরামে অবদান রাখার জন্য সমান সক্ষমতা নারীদেরও অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিষদকে নবাগত সদস্যদের জন্য কাজ করার পরিসর বিশেষ করে, প্রাথমিক অবস্থায় তাঁদের উপজেলা পরিষদে যাতায়াত ও অবস্থানকালীন আর্থিক সহায়তার স্পষ্ট বিধান করে নিতে হবে। আর্থিক বছরের শুরুতে এই নির্বাচনটি হওয়ার কারণে নবনির্বাচিত সদস্যরা উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নবিষয়ক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এ সুযোগটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশিক্ষণটি বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। তবে এখানে একটি সীমাবদ্ধতার কথাও বলে রাখা ভালো, এ সদস্যদের কার্যকাল আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কারণ, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার বেশির ভাগের কার্যকাল বা মেয়াদ ২০১৬ সালে প্রথমার্ধের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ২০১৬ সালে আবারও নতুন নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে।
সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই পুনরায় উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এটিও হয়তো সময়ের কাজ সময়ে না করার খেসারত। দেশে অন্তত বিলম্ব হলেও চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নারী সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা পেতে যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ উপজেলা পরিষদের এ নবযাত্রা শুভ হোক।
ড. তোফায়েল আহমেদ: পরিচালক-গভর্ন্যান্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং বিশেষ ফেলো, বিআইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
এ নির্বাচন নিয়ে নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, এমনকি নারী সংগঠন—কারও কোনো প্রতিক্রিয়া, সরবতা নেই। নীরবে, নিভৃতে এ নির্বাচনের তিনটি পর্ব মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন হলো। জানা গেছে, ৩ হাজার ১১৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় আছেন ২ হাজার ৮৬৬ জন। খুব সম্ভবত কমবেশি ১ হাজার ৮০০ নারী উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধিত্বশীলতা বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।
নির্বাচনটি নীরবে হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদের নিয়মিত সভা, স্থায়ী কমিটিগুলোর পুনর্গঠন এবং সভা অনুষ্ঠানে এ নির্বাচনের একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদগুলোর কিছু আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। নির্বাচনের পর দায়িত্ব গ্রহণে আবারও কালক্ষেপণ কাম্য নয়। অবশ্য ইতিমধ্যে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ আসন্ন রমজানের পরপরই নবনির্বাচিতদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেটি খুবই আশার কথা। আশা করা যায়, নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা তাঁদের নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা ও বাজেট প্রভৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোয় সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচনের ব্যবস্থাটি কার্যকর রয়েছে। প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা তাঁদের উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারেন না। উপজেলা পরিষদেও নবনির্বাচিতরা নির্বিঘ্নতার সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবেন না, তা নয়। তবে সব পক্ষ থেকে এখানে সহযোগিতা ও সক্ষমতার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। উপজেলা পরিষদ শুরু থেকেই নানা রকমের সাংগঠনিক, প্রশাসনিক, আইনগত ও আর্থিক সীমাবদ্ধতায় আড়ষ্ট। নবনির্বাচিত নারী প্রতিনিধিকেও সে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির সুবিধা-অসুবিধাগুলো বুঝতে হবে। সে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকারিতার পথে ধাবিত করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রধানদের তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়ররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী হলেও তাঁরা উপজেলা পরিষদের সদস্যমাত্র। এ ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের নারী সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়ররা সমমর্যাদায় সদস্য—এ বিষয়টিকে সসম্মানে মেনে নিতে হবে। এ জন্য সম্মানিত সদস্য হিসেবে পরিষদে বিভিন্ন সভা ও ফোরামে অবদান রাখার জন্য সমান সক্ষমতা নারীদেরও অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিষদকে নবাগত সদস্যদের জন্য কাজ করার পরিসর বিশেষ করে, প্রাথমিক অবস্থায় তাঁদের উপজেলা পরিষদে যাতায়াত ও অবস্থানকালীন আর্থিক সহায়তার স্পষ্ট বিধান করে নিতে হবে। আর্থিক বছরের শুরুতে এই নির্বাচনটি হওয়ার কারণে নবনির্বাচিত সদস্যরা উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নবিষয়ক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এ সুযোগটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশিক্ষণটি বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। তবে এখানে একটি সীমাবদ্ধতার কথাও বলে রাখা ভালো, এ সদস্যদের কার্যকাল আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কারণ, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার বেশির ভাগের কার্যকাল বা মেয়াদ ২০১৬ সালে প্রথমার্ধের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ২০১৬ সালে আবারও নতুন নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে।
সে জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে পরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই পুনরায় উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এটিও হয়তো সময়ের কাজ সময়ে না করার খেসারত। দেশে অন্তত বিলম্ব হলেও চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নারী সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা পেতে যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ উপজেলা পরিষদের এ নবযাত্রা শুভ হোক।
ড. তোফায়েল আহমেদ: পরিচালক-গভর্ন্যান্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং বিশেষ ফেলো, বিআইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments