লোকালয়ে গুল তৈরির কারখানা, ধুঁকছে সবাই

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচার দক্ষিণ
বালাপাড়া গ্রামের বাদশা গুল ফ্যাক্টরিতে তামাকের গুঁড়া
কৌটায় ভরছেন দুজন নারী শ্রমিক। ছবি -প্রথম আলো
বাতাসে তামাক পোড়ার তীব্র গন্ধ। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কিছুক্ষণ অবস্থান করলেই বমি বমি ভাব আসে। ৭ জুন বেলা একটার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা বাজারের একটি চায়ের দোকানে গেলে তামাক পোড়ার ওই কটু গন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় সে দোকানটিতে বেশিক্ষণ বসে থাকা যায়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাজারের কাছেই দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামে একটি গুল তৈরির কারখানা আছে। এই গন্ধের উৎস সে কারখানাটিই। নাম ‘বাদশা গুল ফ্যাক্টরি’। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই লোকালয়ে কারখানা স্থাপন করেছেন স্থানীয় রহমত আলী। কারখানা থেকে আসা তামাকপাতা গুঁড়ো করার যন্ত্রের শব্দ আর দুর্গন্ধে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ওই এলাকার মহিষখোঁচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন আ স ম আবদুছ ছামাদ বলেন, তামাকজাত গুল, জর্দাসহ অন্যান্য নেশাদ্রব্য ব্যবহারে মুখ ও ফুসফুসের ক্যানসার, পাকস্থলীতে পানি জমা হওয়া, ক্ষুধা মন্দাসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুজন শ্রমিক তামাকের পাতা ও ডাটা একটি যন্ত্র দিয়ে গুঁড়ো করার কাজে ব্যস্ত। তামাক গুঁড়া হওয়ার পর তা দু-তিনটি বড় পাত্রে মেঝেতে রাখা হচ্ছে। আরেক পাশে একটি খোলা টিনের চালার নিচে গুঁড়ো করা তামাক ছোট ছোট কৌটায় ভরছেন চার নারী শ্রমিক। তাঁরা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
কারখানা-সংলগ্ন মহিষখোঁচা বাজার এলাকা এবং আশপাশের ডাওয়াইটারি ও রসুলপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গুল তৈরির সময় বিশেষ করে যখন বাতাসের খুব জোর থাকে তখন তামাকের তীব্র গন্ধে বাড়িতে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। ছোট ছেলেমেয়েদের হাঁচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
কারখানার পাশের মহিষখোঁচা বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বলেন, ‘তিন-চার মাস আগে স্কুল শাখার বাংলা শিক্ষক নূর আলম সেফাউলসহ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তামাক পোড়ার গন্ধে বিদ্যালয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলাম।’
কারখানার মালিক রহমত আলী ও তাঁর ছেলে বাদশা আলম জানান, তাঁরা মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ১০ বছর আগে এই গুল তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা স্বীকার করেন, কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র বা অনুমতি নেননি। মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ওদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছি। গুল তৈরির কারখানার স্থাপনের কারণে পরিবেশ দূষণের দিকটি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় বগুড়ার পরিচালক এ কে এম মাসুদুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি বা অনুমোদন না নিয়ে বাদশা গুল ফ্যাক্টরিটি বেআইনিভাবে চালু রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খুব দ্রুত কারখানাটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.