বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উত্তরের পাঁচ জেলায় বন্যা, ভাঙন
যমুনার পানির তোড়ে চৌহালীর উত্তর খাসকাউলিয়া গ্রামে এই সেতুর দুই পাশের সড়ক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ছবি -প্রথম আলো |
টানা
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তরের পাঁচ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
যমুনা, তিস্তাসহ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে
বইছে। কুড়িগ্রামের ছয় উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে।
বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উঁচু সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রে ও সিরাজগঞ্জে যমুনায় ভাঙন দেখা
দিয়েছে। কুড়িগ্রামে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায়
তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের তীরবর্তী তিন শতাধিক গ্রাম ও চরের
প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার দুধকুমার নদের
পানির তোড়ে সোনাহাট সেতুর পশ্চিম প্রান্তের সংযোগ সড়কের ৫০ মিটার এলাকায় ধস
দেখা দেওয়ায় এই পথে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাফুজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ২ সেন্টিমিটার, তিস্তায় ১৪ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ধরলায় ৬ সেন্টিমিটার পানি কমলেও তা বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। কুড়িগ্রাম সদরসহ ছয় উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নদ-নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। অনেকেই ঘরের ভেতর উঁচু মাচায় আশ্রয় নিলেও দেখা দিয়েছে জ্বালানি ও খাবারের সংকট।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ঘাট থেকে নৌকায় পোড়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, ২০টি বাড়িতে পানি উঠেছে। স্থানীয় দিনমজুর হাফিজুর রহমান একটি খড়ির বোঝা নিয়ে যাত্রাপুর হাটে যাচ্ছেন। কী করবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিক্রি কইরা চাউল আনুম। বন্যার মধ্যে কোনো কাম নাই। এক সপ্তাহ থাইকা বইসা। কী যে হইব, জানি না।’ যাত্রাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, তাঁর ইউনিয়নে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে আড়াই হাজার বাড়ির মানুষ পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো বরাদ্দ পাননি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালেব মোল্লা জানান, উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেলেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ জানান, ত্রাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানির তোড়ে বিকল্প বাঁধ ভেঙে উপজেলার দুটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে টিনের চালা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। এদিকে দুর্গত এলাকার ২০টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, যমুনায় বিপৎসীমার দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সারিয়াকান্দির কামালপুর ও চন্দনবাইশা এবং ধুনটের চিকাশী ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে।
রোহদহ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আচিরন বেওয়া (৭০) বলেন, ‘তিন দিন আগে বাঁধত আসি উঠিচি। না খ্যায়া দিন যাচ্চে।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশে অন্তত ১০ গ্রামের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, অসময়ে বন্যার পানি ওঠায় প্রায় দুই হাজার একর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভান্ডারবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান আতিকুল করিম জানান, তাঁর এলাকায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, তিস্তার পানি গতকালও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত শনিবার শুরু হওয়া বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। মানুষজন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, কাপাসিয়া, সদর উপজেলার কামারজানি ও সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলো। এসব ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন সরকারি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা, কামারপাড়া, জিয়াডাঙ্গা, রসুলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে এসব গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ও অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে তিন দিন ধরে যমুনায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে সদর, কাজীপুর ও চৌহালী উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলায় পাউবোর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে গেছে।
কাজীপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান জানান, মেঘাই ১ নম্বর স্পারে পানি বাধা পেয়ে ভাটিতে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
এদিকে চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর পূর্ব তীর এলাকার বোয়ালকান্দি থেকে চৌদ্দরশি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এবং খাসপুকুরিয়া থেকে মেটুয়ানী পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। মেটুয়ানী গ্রামের শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন যেভাবে চলছে, তাতে চৌহালীর মূল ভূখণ্ড আর থাকবে না।
চৌহালীর উত্তর খাসকাউলিয়া গ্রামে গতকাল বেলা তিনটার দিকে যমুনার পানির তোড়ে একটি সেতুর দুই পাশের সড়ক ধসে গেছে। ফলে ওই সড়কের দুই পাশের মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি গতকাল বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই দিন সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং দুপুর ১২টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক গেজ লিডার নুরুল ইসলাম জানান, নতুন করে বৃষ্টি না হলে বা আবার ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল না এলে রোববার (গতকাল) রাতের মধ্যেই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুড়িগ্রাম অফিস, বগুড়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি}
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাফুজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ২ সেন্টিমিটার, তিস্তায় ১৪ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ধরলায় ৬ সেন্টিমিটার পানি কমলেও তা বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। কুড়িগ্রাম সদরসহ ছয় উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নদ-নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। অনেকেই ঘরের ভেতর উঁচু মাচায় আশ্রয় নিলেও দেখা দিয়েছে জ্বালানি ও খাবারের সংকট।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ঘাট থেকে নৌকায় পোড়ার চরে গিয়ে দেখা যায়, ২০টি বাড়িতে পানি উঠেছে। স্থানীয় দিনমজুর হাফিজুর রহমান একটি খড়ির বোঝা নিয়ে যাত্রাপুর হাটে যাচ্ছেন। কী করবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিক্রি কইরা চাউল আনুম। বন্যার মধ্যে কোনো কাম নাই। এক সপ্তাহ থাইকা বইসা। কী যে হইব, জানি না।’ যাত্রাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, তাঁর ইউনিয়নে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে আড়াই হাজার বাড়ির মানুষ পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো বরাদ্দ পাননি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালেব মোল্লা জানান, উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেলেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এ বি এম আজাদ জানান, ত্রাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানির তোড়ে বিকল্প বাঁধ ভেঙে উপজেলার দুটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে টিনের চালা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি। এদিকে দুর্গত এলাকার ২০টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, যমুনায় বিপৎসীমার দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সারিয়াকান্দির কামালপুর ও চন্দনবাইশা এবং ধুনটের চিকাশী ও গোসাইবাড়ী ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে।
রোহদহ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আচিরন বেওয়া (৭০) বলেন, ‘তিন দিন আগে বাঁধত আসি উঠিচি। না খ্যায়া দিন যাচ্চে।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশে অন্তত ১০ গ্রামের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, অসময়ে বন্যার পানি ওঠায় প্রায় দুই হাজার একর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভান্ডারবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান আতিকুল করিম জানান, তাঁর এলাকায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, তিস্তার পানি গতকালও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত শনিবার শুরু হওয়া বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইউনিয়নের তিস্তাবেষ্টিত ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। মানুষজন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, কাপাসিয়া, সদর উপজেলার কামারজানি ও সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলো। এসব ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন সরকারি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া, রতনপুর, কালাসোনা, কামারপাড়া, জিয়াডাঙ্গা, রসুলপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে এসব গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ও অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে তিন দিন ধরে যমুনায় অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে সদর, কাজীপুর ও চৌহালী উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলায় পাউবোর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে গেছে।
কাজীপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান জানান, মেঘাই ১ নম্বর স্পারে পানি বাধা পেয়ে ভাটিতে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়ে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
এদিকে চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর পূর্ব তীর এলাকার বোয়ালকান্দি থেকে চৌদ্দরশি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এবং খাসপুকুরিয়া থেকে মেটুয়ানী পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। মেটুয়ানী গ্রামের শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন যেভাবে চলছে, তাতে চৌহালীর মূল ভূখণ্ড আর থাকবে না।
চৌহালীর উত্তর খাসকাউলিয়া গ্রামে গতকাল বেলা তিনটার দিকে যমুনার পানির তোড়ে একটি সেতুর দুই পাশের সড়ক ধসে গেছে। ফলে ওই সড়কের দুই পাশের মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি গতকাল বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই দিন সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং দুপুর ১২টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক গেজ লিডার নুরুল ইসলাম জানান, নতুন করে বৃষ্টি না হলে বা আবার ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল না এলে রোববার (গতকাল) রাতের মধ্যেই তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কুড়িগ্রাম অফিস, বগুড়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি}
No comments