প্রাপ্তির ঝুলিতে অনেক নুড়ি পাথর
এই ছবিটাও সবার মনে ছড়িয়ে যাক। ছবি: শামসুল হক |
মন খারাপ বুঝি?
ম্যাচ শেষের আগেই ফাঁকা হয়ে আসা গ্যালারি, থমথমে বিষণ্ন মুখগুলোই প্রশ্নের উত্তরটা বেশ দিয়ে দেয়। দুটো দিন বাংলাওয়াশ-এর সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় কেটেছে। অন্যরকম এক উত্তেজনা, রোমাঞ্চ, ভালো লাগা ছিল মনে। এ কারণেই হয়তো আজ দুপুরে মাথার ওপর স্পেস শিপের মতো ঘুরতে থাকা মেঘ দেখেও বিরক্ত লেগেছে! বৃষ্টিতে আবার না ম্যাচটা ভেসে যায়। কেউ কেউ হিসাব কষতে বসলেন, ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতলেও কি বাংলাওয়াশ বলা যাবে না?
ম্যাচটা শেষ অবধি মাঠে গড়াল। আর কী আশ্চর্য, ভারত সিরিজে এই প্রথম একটা ম্যাচ হলো, যেটাতে বৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য বাগড়া দিল না!
এ পরাজয় হয়তো মানতে চাইবে না অনেকের মন! মানবে কেন? গত আট মাস ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যে হারতেই ভুলে গিয়েছিল। ঘরের মাঠে টানা ১০ ম্যাচ জয়। এর মধ্যে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়া, এক ম্যাচ বাকি থাকতে তারকাখচিত ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিরিজ জিতে নেওয়া বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এতটাই উঁচুতে উঠল, আজকের ম্যাচের বাজির দরে বাংলাদেশই ছিল ফেবারিট!
শেষ পর্যন্ত বাংলাওয়াশ না হলেও প্রাপ্তির ঝুলিতে অনেক নুড়ি পাথর? আছে কিছু মণিমানিক্যও।
দলীয় প্রাপ্তি তো অবশ্যই ভারতকে অনায়াসে প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ ছিল ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের ৬ ওয়ানডের অন্তত দুটোতে জেতা। সেই কাজটা প্রথম দুই ম্যাচেই সেরে ফেলল বাংলাদেশ! তবে এই সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া আসলে মুস্তাফিজই।
নিজের প্রথম ওয়ানডে সিরিজটা কত স্মরণীয় করে রাখলেন সাতক্ষীরার এই এই ‘কিশোর’। ২০-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও যাঁর গা থেকে কৈশোরের গন্ধ আর সবুজ বাংলার সরলতা মুছে যায়নি। মুস্তাফিজ এতটাই উজ্জ্বল, পুরো সিরিজে ব্যাটে-বলে ভালো খেলেও সাকিব আল হাসান যেন আড়ালে! ভাবা যায়, সাকিবের মতো মহা তারকাও পার্শ্বনায়ক। এবং সাকিব তাতে বরং বেশি খুশিই হবেন। মুস্তাফিজের হয়ে ধোনিকে ‘জবাব’ দেওয়ার পর যেমন বাধভাঙা খুশিতে মেতে উঠেছিলেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে।
চার পেসার নিয়ে বাংলাদেশের চমকে দেওয়া বাংলাদেশের কৌশলগত একটা জয়ও ছিল। নাসির হোসেনের ‘ফিনিশার’ থেকে ‘স্পিনার’ হয়ে ওঠাও চমকের তালিকায় রাখতে হবে। পুরো সিরিজে ভারতের মহা মহা তারকাসহ ব্যাটসম্যানদের কেউই সেঞ্চুরি পাননি। তিন ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র চারটি ফিফটি, এর মধ্যে প্রথম দুটো ওয়ানডেতে মাত্র দুটি! ভারতের কোনো বোলারও পাঁচ উইকেট পাননি কোনো ম্যাচেই। আইপিএলে ছক্কার ফুলঝুড়ি ছড়ানো ভারত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পুরো ইনিংসে মেরেছে মাত্র একটি ছক্কা। সেই ছক্কা যাঁর ব্যাটে, যিনি শচীন টেন্ডুলকারকেও রেকর্ডে ছাড়িয়ে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে, সেই বিরাট কোহলি তিন ম্যাচের রান যোগ করেও ‘ফিফটি’ করতে পারেননি।
শুধু তা-ই নয়, আক্রমণাত্মক কোহলি ফ্রি হিট পেয়েও ছক্কা না হাঁকিয়ে কীভাবে বলটা ডিফেন্স করেছিলেন, এই স্মৃতি অনেক দিন তাঁকে পোড়াবে, লজ্জা দেবে। পলকা-দুবলো শরীরের মুস্তাফিজ এমন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের জন্য। কোহলি এই সফর অনেক দিন মনে রাখবেন। ভারত এই সিরিজ অনেক দিন মনে রাখবে। এটা যে তাদের জন্য ছিল এক রকম ‘শিক্ষাসফর’!
তবে মাঠের লড়াই মাঠেই শেষ। রায়না যেমন ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বারবার শুধু বাংলাদেশের জয়গানই গাইলেন। এর আগে টুপিটা আলতো নাড়িয়ে ক্রিকেটীয় কেতায় ধোনির সঙ্গে করমর্দন করেছেন মাশরাফি। খেলায় উত্তেজনা-উত্তাপ ভীষণই দরকার, না হলে মানুষ খেলা দেখবে কেন। আবার খেলা শেষে দরকার সেই কথাটাও মনে করিয়ে দেওয়া—সৌভ্রাতৃত্বই আসলে খেলার শেষ কথা।
আর তাই অনেক অনেক ছবির মধ্যে এটাও খুব মনে পড়ছে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পতাকা নাড়ছেন দুই দলের দুই চেনা সমর্থক—টাইগার শোয়েব আর সুধীর গৌতম!
ম্যাচ শেষের আগেই ফাঁকা হয়ে আসা গ্যালারি, থমথমে বিষণ্ন মুখগুলোই প্রশ্নের উত্তরটা বেশ দিয়ে দেয়। দুটো দিন বাংলাওয়াশ-এর সাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় কেটেছে। অন্যরকম এক উত্তেজনা, রোমাঞ্চ, ভালো লাগা ছিল মনে। এ কারণেই হয়তো আজ দুপুরে মাথার ওপর স্পেস শিপের মতো ঘুরতে থাকা মেঘ দেখেও বিরক্ত লেগেছে! বৃষ্টিতে আবার না ম্যাচটা ভেসে যায়। কেউ কেউ হিসাব কষতে বসলেন, ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতলেও কি বাংলাওয়াশ বলা যাবে না?
ম্যাচটা শেষ অবধি মাঠে গড়াল। আর কী আশ্চর্য, ভারত সিরিজে এই প্রথম একটা ম্যাচ হলো, যেটাতে বৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য বাগড়া দিল না!
এ পরাজয় হয়তো মানতে চাইবে না অনেকের মন! মানবে কেন? গত আট মাস ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যে হারতেই ভুলে গিয়েছিল। ঘরের মাঠে টানা ১০ ম্যাচ জয়। এর মধ্যে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়া, এক ম্যাচ বাকি থাকতে তারকাখচিত ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিরিজ জিতে নেওয়া বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এতটাই উঁচুতে উঠল, আজকের ম্যাচের বাজির দরে বাংলাদেশই ছিল ফেবারিট!
শেষ পর্যন্ত বাংলাওয়াশ না হলেও প্রাপ্তির ঝুলিতে অনেক নুড়ি পাথর? আছে কিছু মণিমানিক্যও।
দলীয় প্রাপ্তি তো অবশ্যই ভারতকে অনায়াসে প্রথম দুই ম্যাচে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ ছিল ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের ৬ ওয়ানডের অন্তত দুটোতে জেতা। সেই কাজটা প্রথম দুই ম্যাচেই সেরে ফেলল বাংলাদেশ! তবে এই সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া আসলে মুস্তাফিজই।
নিজের প্রথম ওয়ানডে সিরিজটা কত স্মরণীয় করে রাখলেন সাতক্ষীরার এই এই ‘কিশোর’। ২০-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও যাঁর গা থেকে কৈশোরের গন্ধ আর সবুজ বাংলার সরলতা মুছে যায়নি। মুস্তাফিজ এতটাই উজ্জ্বল, পুরো সিরিজে ব্যাটে-বলে ভালো খেলেও সাকিব আল হাসান যেন আড়ালে! ভাবা যায়, সাকিবের মতো মহা তারকাও পার্শ্বনায়ক। এবং সাকিব তাতে বরং বেশি খুশিই হবেন। মুস্তাফিজের হয়ে ধোনিকে ‘জবাব’ দেওয়ার পর যেমন বাধভাঙা খুশিতে মেতে উঠেছিলেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে।
চার পেসার নিয়ে বাংলাদেশের চমকে দেওয়া বাংলাদেশের কৌশলগত একটা জয়ও ছিল। নাসির হোসেনের ‘ফিনিশার’ থেকে ‘স্পিনার’ হয়ে ওঠাও চমকের তালিকায় রাখতে হবে। পুরো সিরিজে ভারতের মহা মহা তারকাসহ ব্যাটসম্যানদের কেউই সেঞ্চুরি পাননি। তিন ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র চারটি ফিফটি, এর মধ্যে প্রথম দুটো ওয়ানডেতে মাত্র দুটি! ভারতের কোনো বোলারও পাঁচ উইকেট পাননি কোনো ম্যাচেই। আইপিএলে ছক্কার ফুলঝুড়ি ছড়ানো ভারত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পুরো ইনিংসে মেরেছে মাত্র একটি ছক্কা। সেই ছক্কা যাঁর ব্যাটে, যিনি শচীন টেন্ডুলকারকেও রেকর্ডে ছাড়িয়ে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে, সেই বিরাট কোহলি তিন ম্যাচের রান যোগ করেও ‘ফিফটি’ করতে পারেননি।
শুধু তা-ই নয়, আক্রমণাত্মক কোহলি ফ্রি হিট পেয়েও ছক্কা না হাঁকিয়ে কীভাবে বলটা ডিফেন্স করেছিলেন, এই স্মৃতি অনেক দিন তাঁকে পোড়াবে, লজ্জা দেবে। পলকা-দুবলো শরীরের মুস্তাফিজ এমন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিলেন ভারতের জন্য। কোহলি এই সফর অনেক দিন মনে রাখবেন। ভারত এই সিরিজ অনেক দিন মনে রাখবে। এটা যে তাদের জন্য ছিল এক রকম ‘শিক্ষাসফর’!
তবে মাঠের লড়াই মাঠেই শেষ। রায়না যেমন ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বারবার শুধু বাংলাদেশের জয়গানই গাইলেন। এর আগে টুপিটা আলতো নাড়িয়ে ক্রিকেটীয় কেতায় ধোনির সঙ্গে করমর্দন করেছেন মাশরাফি। খেলায় উত্তেজনা-উত্তাপ ভীষণই দরকার, না হলে মানুষ খেলা দেখবে কেন। আবার খেলা শেষে দরকার সেই কথাটাও মনে করিয়ে দেওয়া—সৌভ্রাতৃত্বই আসলে খেলার শেষ কথা।
আর তাই অনেক অনেক ছবির মধ্যে এটাও খুব মনে পড়ছে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পতাকা নাড়ছেন দুই দলের দুই চেনা সমর্থক—টাইগার শোয়েব আর সুধীর গৌতম!
No comments