কোরীয় ইপিজেড- জমির জটিলতায় বিদেশি বিনিয়োগ ফেরত যাচ্ছে
ভূমি হস্তান্তর জটিলতায় কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (কেইপিজেড) আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে। সরকার কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে আড়াই হাজার একর জমি বুঝিয়ে দিলেও এর হস্তান্তর দলিল দেয়নি। বিশ্বের খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে এসেও ভূমি হস্তান্তর দলিল না থাকায় কেইপিজেডে কারখানা স্থাপন না করে ফিরে যাচ্ছে। দেশের একমাত্র বিদেশি মালিকানাধীন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাটি ১৫ বছর ধরে এই সংকটে রয়েছে।
শুধু জমি হস্তান্তর দলিল না দেওয়া নয়, কেইপিজেড ভুগছে আরও অনেক সমস্যায়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগের সমস্যা তো রয়েছেই। এর সঙ্গে কবর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ব্যক্তিরা এখানকার ৬০ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। কেইপিজেডের কর্মকর্তাদের নামে ১৫টি মামলা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানকার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আরেক বড় সংকট—বিপুল পরিমাণ জমি ফিরিয়ে নেওয়া।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ১৯৯৮ সালে ইয়াংওয়ান করপোরেশনকে কেইপিজেড পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পুরো জমির মূল্য বাবদ কেইপিজেড সরকারকে ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধও করে। একটি মহাপরিকল্পনার (মাস্টারপ্ল্যান) আওতায় তারা কেইপিজেডে এ পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ হাজার মানুষের। এক বছরের মধ্যে আরও ৪৩ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে তারা আশা করছে।
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া জমির মূল্য পরিশোধ এবং সব শর্ত পূরণের ১৫ বছর হয়ে গেলেও সরকার কেইপিজেডকে জমি হস্তান্তরের দলিল বুঝিয়ে দেয়নি। ১৯৯৯ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেইপিজেড আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। কিন্তু কারখানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দরকার, তা পেতে লেগে যায় ১০ বছর। ২০০৯ সালের নভেম্বরে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার পর কেইপিজেড অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে।
ইতিমধ্যে কেইপিজেডে ইয়াংওয়ান কারখানা স্থাপনের জন্য ২৫ লাখ বর্গফুট আয়তনের সাতটি ভবন নির্মাণ করেছে। আরও ২২টি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানা গেছে। আগামী আট বছরের মধ্যে আরও আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিকূলতার মধ্যে বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পর এখন আবার কেইপিজেডের দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে, যা কেইপিজেডে ওই সম্ভাব্য বিনিয়োগের পথ বন্ধ করে দেবে বলে মনে করছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইয়াংওয়ান সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। প্রতিবছর ৮০ থেকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার হতাশাজনক চিত্র উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগে আগ্রহ দুটোই কমছে। আর ইয়াংওয়ান এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। কেইপিজেড নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা অন্য দেশের বিনিয়োগকারীরা আমলে নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রুপালী চৌধুরী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডকে একবার জমি দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তাহলে তা দেশের বিনিয়োগ ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভাববে, বাংলাদেশের সরকারের নীতির কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ফলে তারা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।
তবে এর সঙ্গে দ্বিমত রেখে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি দেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, তা যদি পালন না হয় তাহলে সরকার চাইলে তা বাতিল করতে পারে। কেইপিজেডকে আড়াই হাজার একর জমি দেওয়ার পরেও তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ আনতে না পারায় দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাকি ৫০০ একর জমি তো তাদের নামে রয়েছেই। সেখানে তারা চাইলে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।
জমি ফেরত নেওয়া হলে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে কি না, জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী আসছে। অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় আছে। তাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। ফলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।
কিন্তু সরকার থেকে জমির মালিকানা হস্তান্তর দলিল বুঝিয়ে না দেওয়ায় কেইপিজেডে বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করতে এসেও ফিরে গেছে। এই অভিযোগ করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছ থেকে জমি বুঝে নিয়ে সেখানে কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিনিয়োগকারীরা এর আগে কেইপিজেডের নামে জমির হস্তান্তর দলিল আছে কি না, তা দেখতে চায়। তা না থাকায় ফিরে যায় স্যামসাং, এলজিসহ বিশ্বের নামী-দামি কোম্পানিগুলো। অগত্যা ইয়াংওয়ান করপোরেশন নিজেরাই ২০১১ সালে এশিয়ার বৃহত্তম জুতার কারখানা কর্ণফুলী শু ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের কাজ শুরু করে সেখানে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, ব্যাগ ও নানা ধরনের শিল্পপণ্য তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে তারা মোট ৪০ লাখ বর্গফুট কারখানা স্থাপন করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ একর জমির হস্তান্তর দলিল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে সরকার জমি হস্তান্তর করবে। হস্তান্তর দলিল দেওয়া জমিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ও ধরন দেখে পরবর্তী জমি হস্তান্তর দলিল দেওয়া হবে। তবে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি।
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, তারা ইতিমধ্যে ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে। ১৬ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সংযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক থাকার জন্য ১২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফলভাবে এগোলে এখানে মোট তিন লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে কেইপিজেডের প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের সব শর্ত পূরণ করে এবং জমির মূল্য পরিশোধ করার পরও সরকার আমাদের জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। সরকার তার কেইপিজেড সম্পর্কে যেসব অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়ন করলে আগামী আট বছরের মধ্যে আমরা আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনতে পারব বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা না করে যদি জমি কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের বিনিয়োগের পুরো মহাপরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে।’
কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত কোম্পানি স্যামসাং ২০১১ সালে কেইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য আসে। তারা সেখানে ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির কারখানা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি চায়। পরে সুইজারল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরও কয়েকটি কোম্পানি কেইপিজেডে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি চায়। কিন্তু সব কোম্পানিই জমির মালিকানা স্বত্ব কেইপিজেডের নামে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে চায়।
জানতে চাইলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) প্রেসিডেন্ট আফতাব-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের বিনিয়োগ এবং শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছিল। এটা কাটাতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যদি কোরিয়ান ইপিজেডের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে যায়, তাহলে তা দেশের বিনিয়োগে বিদেশিদের নিরুৎসাহিত করবে।’
শুধু জমি হস্তান্তর দলিল না দেওয়া নয়, কেইপিজেড ভুগছে আরও অনেক সমস্যায়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগের সমস্যা তো রয়েছেই। এর সঙ্গে কবর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ব্যক্তিরা এখানকার ৬০ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। কেইপিজেডের কর্মকর্তাদের নামে ১৫টি মামলা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানকার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আরেক বড় সংকট—বিপুল পরিমাণ জমি ফিরিয়ে নেওয়া।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ১৯৯৮ সালে ইয়াংওয়ান করপোরেশনকে কেইপিজেড পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পুরো জমির মূল্য বাবদ কেইপিজেড সরকারকে ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধও করে। একটি মহাপরিকল্পনার (মাস্টারপ্ল্যান) আওতায় তারা কেইপিজেডে এ পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ হাজার মানুষের। এক বছরের মধ্যে আরও ৪৩ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে তারা আশা করছে।
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া জমির মূল্য পরিশোধ এবং সব শর্ত পূরণের ১৫ বছর হয়ে গেলেও সরকার কেইপিজেডকে জমি হস্তান্তরের দলিল বুঝিয়ে দেয়নি। ১৯৯৯ সালের ৩০ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেইপিজেড আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। কিন্তু কারখানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দরকার, তা পেতে লেগে যায় ১০ বছর। ২০০৯ সালের নভেম্বরে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার পর কেইপিজেড অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে।
ইতিমধ্যে কেইপিজেডে ইয়াংওয়ান কারখানা স্থাপনের জন্য ২৫ লাখ বর্গফুট আয়তনের সাতটি ভবন নির্মাণ করেছে। আরও ২২টি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে বলে জানা গেছে। আগামী আট বছরের মধ্যে আরও আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিকূলতার মধ্যে বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পর এখন আবার কেইপিজেডের দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে, যা কেইপিজেডে ওই সম্ভাব্য বিনিয়োগের পথ বন্ধ করে দেবে বলে মনে করছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইয়াংওয়ান সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। প্রতিবছর ৮০ থেকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার হতাশাজনক চিত্র উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগে আগ্রহ দুটোই কমছে। আর ইয়াংওয়ান এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। কেইপিজেড নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা অন্য দেশের বিনিয়োগকারীরা আমলে নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রুপালী চৌধুরী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডকে একবার জমি দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তাহলে তা দেশের বিনিয়োগ ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভাববে, বাংলাদেশের সরকারের নীতির কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ফলে তারা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।
তবে এর সঙ্গে দ্বিমত রেখে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি দেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, তা যদি পালন না হয় তাহলে সরকার চাইলে তা বাতিল করতে পারে। কেইপিজেডকে আড়াই হাজার একর জমি দেওয়ার পরেও তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ আনতে না পারায় দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বাকি ৫০০ একর জমি তো তাদের নামে রয়েছেই। সেখানে তারা চাইলে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।
জমি ফেরত নেওয়া হলে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে কি না, জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী আসছে। অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় আছে। তাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। ফলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।
কিন্তু সরকার থেকে জমির মালিকানা হস্তান্তর দলিল বুঝিয়ে না দেওয়ায় কেইপিজেডে বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করতে এসেও ফিরে গেছে। এই অভিযোগ করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছ থেকে জমি বুঝে নিয়ে সেখানে কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বিনিয়োগকারীরা এর আগে কেইপিজেডের নামে জমির হস্তান্তর দলিল আছে কি না, তা দেখতে চায়। তা না থাকায় ফিরে যায় স্যামসাং, এলজিসহ বিশ্বের নামী-দামি কোম্পানিগুলো। অগত্যা ইয়াংওয়ান করপোরেশন নিজেরাই ২০১১ সালে এশিয়ার বৃহত্তম জুতার কারখানা কর্ণফুলী শু ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের কাজ শুরু করে সেখানে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, ব্যাগ ও নানা ধরনের শিল্পপণ্য তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে তারা মোট ৪০ লাখ বর্গফুট কারখানা স্থাপন করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ একর জমির হস্তান্তর দলিল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে সরকার জমি হস্তান্তর করবে। হস্তান্তর দলিল দেওয়া জমিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ও ধরন দেখে পরবর্তী জমি হস্তান্তর দলিল দেওয়া হবে। তবে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি।
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, তারা ইতিমধ্যে ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে। ১৬ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সংযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক থাকার জন্য ১২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা সফলভাবে এগোলে এখানে মোট তিন লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে কেইপিজেডের প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের সব শর্ত পূরণ করে এবং জমির মূল্য পরিশোধ করার পরও সরকার আমাদের জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। সরকার তার কেইপিজেড সম্পর্কে যেসব অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়ন করলে আগামী আট বছরের মধ্যে আমরা আট হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনতে পারব বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা না করে যদি জমি কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের বিনিয়োগের পুরো মহাপরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে।’
কেইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত কোম্পানি স্যামসাং ২০১১ সালে কেইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য আসে। তারা সেখানে ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির কারখানা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি চায়। পরে সুইজারল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরও কয়েকটি কোম্পানি কেইপিজেডে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি চায়। কিন্তু সব কোম্পানিই জমির মালিকানা স্বত্ব কেইপিজেডের নামে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে চায়।
জানতে চাইলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) প্রেসিডেন্ট আফতাব-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের বিনিয়োগ এবং শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছিল। এটা কাটাতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যদি কোরিয়ান ইপিজেডের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে যায়, তাহলে তা দেশের বিনিয়োগে বিদেশিদের নিরুৎসাহিত করবে।’
No comments