সক্রিয় ৩০০০ দালাল by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও ইসরাইল হোসেন বাবু
মো.
আলতাফ হোসেন। বয়স ৫০। বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি
ইউনিয়নের আদাচাকি গ্রাম নামে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাবা সাত্তার মণ্ডলের
ছিল- দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। মাথাগোঁজার জন্য ছিল ছোট্ট টিনের চালা।
পেটের ভাত যোগাতে তাই বাড়ির বড় ছেলে আলতাফ কাজ নেয় কাপড়ের দোকানে। পরে পাড়ি
জমায় মালয়েশিয়ায়। সেখানেও সুবিধা করতে না পেরে ফিরে আসে দেশে। এবার সে
নামের সঙ্গে যোগ করে আদম ব্যাপারী। নামের আগে লাগানো এ টাইটেলের কারণেই এখন
তাকে এক নামে আলতাফ দালাল নামেই চেনে এলাকার মানুষ। টেকনাফ দিয়ে সমুদ্রপথে
মালয়েশিয়ায় অবৈধ মানবপাচারই এখন পেশা। এতেই রাতারাতি পাল্টে যায় তার
অবস্থা। কোটিপতি বনে যায় সময়ের ব্যবধানে। সেই টিনের চালার জায়গায় বিশাল
এলাকাজুড়ে এখন উঠছে আলিশান বাড়ি। তবে এখনও সম্পন্ন হয়নি বাড়ির কাজ। তার
আগেই আলোচনায় চলে আসে সমুদ্রপথে পাচারের ভয়াবহ চিত্র। আবিষ্কৃত হয় বিভিন্ন
দেশে পাচার হওয়া মানুষের গণকবর। একের পর এক খবর আসতে থাকে সমুদ্রে আটকে
পড়াদের করুণ কাহিনী। তাই এখন সে এলাকা ছাড়া। সপরিবারে থাকছেন রাজধানী
ঢাকায়। আর একই উপজেলার গাড়ামাসি গ্রামের রিকশাচালক আবু তালেবের ছেলে
শাহাদাত হোসেন ছিলো ফেনসিডিল ব্যবসায়ী। সেও সম্প্রতি মানবপাচার ব্যবসায় নাম
লিখিয়ে মালিক হয়েছে অঢেল সম্পদের। অতিসম্প্রতি প্রায় কোটি টাকা দিয়ে
কিনেছে বিশাল এলাকাসহ একটি বসতবাড়ি। প্রস্তুতি চলছে আরেকটি কেনার। শুধু
আলতাফ-শাহাদাত নয়। এ রকম রাতারাতি পাল্টে গেছে অনেকের অবস্থা। বিনিময়ে
এলাকার অসংখ্য মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজন হারানোর বেদনায়। এসব দালালদের
খপ্পর থেকে বাদ পড়েনি নিকটাত্মীয়রাও। তবে, এসব ঘটনায় মানবপাচার আইনে মামলা
হয়েছে হাতেগোনা।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজেবিলিটি পিপল (ডিডিপি)-এর তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জের সাত উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার দালাল সক্রিয় রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, চৌহালি, মাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ। এদের মধ্যে রয়েছে মূল দালাল, ্উপ-দালাল, উপ-দালাল সহযোগী ও স্থানীয় ফড়িয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রি-সাইকেলে পুরো চক্রটি কাজ করে। ফড়িয়ারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে। এরা পাচার হওয়া মানুষের আশপাশের লোকজন। জনপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকার মাধ্যমে এরা কাজ করে থাকে। এরা নিয়ে যায় উপ-দালালের কাছে। দালাল ও উপ-দালালচক্র একজন থেকে আরেকজন করে টেকনাফ থেকে থাইল্যান্ড পর্যন্ত যুবকদের পৌঁছার পর জিম্মি করে টাকা আদায় করে। অধিকাংশ গ্রামেই দালাল চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক পূর্ব থেকেই মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। সেখান থেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে যুবকদের সংগ্রহ করছে। তবে কেউই বিদেশ যাওয়ার জন্য অগ্রিম কোন টাকা নেয় না। এমনকি বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ওইসব যুবকদের পরিবারকেও নিষেধ করা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের কাউকেও না জানানোর জন্য দালালরা সতর্ক করে দেয়। মোটা আয়ের আশায় এবং যাওয়া যেন ভুণ্ডুল না হয় সেজন্য তারা দালালের কথায় সম্মত হয়। টেকনাফ কিংবা থাইল্যান্ড পৌঁছার পর জিম্মি করে পরিবারের কাছে ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত টাকা দাবি করে দালালরা। কিন্তু কেউ কেউ ফিরে আসলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিখোঁজই থাকছে পাচার হওয়া মানুষ। পরিবারের লোকজন ভিটে-মাটি বিক্রি করেও ফিরে পাচ্ছে না স্বজন। সাগর পথে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যুবকদের প্রতারিত করা দালাল চক্রের অন্যতম ঘাঁটি সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতারিত মানুষ ও সচেতন মহলে দালাল আলতাফ হোসেনের নাম বার বার উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে সরজমিনে তার নিজ গ্রাম আদাচাকি গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে আলিশান বাড়ি। তবে সে বাড়িতে নেই আলতাফ ও তার পরিবার পরিজন। পাশেই টিনের চালায় আছেন বৃদ্ধ মা ও তার ২ ভাইয়ের বউ ও ২ ভাইপো।
গ্রামবাসীরা জানায়, আলতাফ ছাড়াও তার আরও ৪ ভাই রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ভাই আজমও একই কারবারের সঙ্গে জড়িত। তার বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। অতি সামান্য জমিজমা এবং কোনমতে মাথা গোঁজার জন্য টিনের চালার ঘর ছিল তাদের। পরে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয় আলতাফ। আনুমানিক ১৫ বছর আগে আলতাফ মালয়েশিয়া যায়। কিন্তু সেখানেও সুবিধা না করতে পেরে দেশে ফিরে শুরু করে মানব পাচার। বর্তমানে এটাই তার পেশা। শুরুতে সে এলাকা ও আশপাশের দুই একজনকে উদ্বুদ্ধ করে সাগর পথে কম খরচে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়। সেখানে তারা কাজ করে স্বাবলম্বীও হয়। এরপর দ্রুত সে আস্থা অর্জন করতে থাকে। অল্প সময়েই মূল দালাল বনে যায় সে। মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও গরিব-দুস্থদের সহযোগিতার হাত বাড়ায়। এতে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তার। এ বিষয়টি পুঁজি করে পুরোদমে মানব পাচার চালিয়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি মানুষকে ম্যানেজ করতে এলাকায় ও আশপাশের গ্রামগুলোতে উপ-দালাল ও ফড়িয়াদের চক্র গড়ে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে সমদ্রপথে মানব পাচারের বিষয়ে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরী হওয়ায় গা ঢাকা দেয় আলতাফ। এরআগে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় লেগে থাকতো তার ওই বাড়িতে। ২ মাস আগে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলতাফকে বেলকুচি পুলিশ আটক করলেও ২ দিন থানায় রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, মাসখানেক ধরে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। গ্রামবাসী আরও জানান, আদাচাকিতে এরা দুই ভাই ছাড়াও মালেক, শান্ত, সানোয়ার ও পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের আজিজুল হক এ কাজে জড়িত। তারা প্রায়ই এক সঙ্গে আলতাফের বাড়িতে বৈঠক করতো। সেখানে উপ-দালাল, ফড়িয়া ও বিদেশ গমনেচ্ছুক লোকজন যাতায়াত করতো। ভুক্তভোগীরা দালাল আলতাফকে আটক করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। আলতাফের এ নির্মমতা থেকে তার নিজের ভাইপো ডিনারও (২২) রক্ষা পায়নি। চাচার খপ্পরে পড়ে সে এখন থাইল্যান্ডের জেলে রয়েছে।
ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে এক দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, তার ভাই স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সমদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছার পর অজ্ঞাত স্থানে বন্দি রয়েছে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। তার গায়ে ঘা-পচড়া হয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে দালালদের ২ লাখেরও বেশি টাকা দেয়া হয়েছে। দালালদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সমস্যা হতে পারে।
সর্বতুলসী গ্রামের নিখোঁজ তাঁত শ্রমিক শামীমের (১৭) বাবা সরোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ৮৫ দিন আগে তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর এলাকার দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সময় দালালরা তার ছেলেকে সমুদ্রপথে পাঠিয়েছে স্বীকার করে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কল্যাণপুর গ্রামের দালাল ফয়জালের কাছে ৪০ হাজার টাকা দেয়। ছেলে শামীমের সঙ্গে তার ভাইপো আমিরুল ইসলামও নিখোঁজ রয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামটিতে জুলমাত, আলম, কেরামত ও জাক্কুসহ ৩০-৩৫ দালাল ও সহযোগী দালাল রয়েছে। এরা জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কাজ করে। আজুগড়া গ্রামের দালাল রয়েছে সাবেক মেম্বার করিম ও তার ছেলে রেজাউল, আবদুল লতিফ ও রাজুসহ অনেকে।
বেলকুচি পৌর শহরের গাড়ামাসি মহল্লার শাহাদাত। তার বাবা আবু তালেব এক সময়ের রিকশাচালক। ১ মাস ১০ দিন আগে শাহাদাত তার আপন খালাতো বোনের স্বামী চালা গ্রামের শরিফ উদ্দিনসহ ১৪ জনকে ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করে। সেখান থেকে তাদের ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা। তবে পাচারের বিষয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে তাদের ইন্দোনেশিয়ার একটি জঙ্গলে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের ওপর প্রায়ই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শরিফের সঙ্গে তার পরিবারের একাধিকবার কথাও হয়েছে। শাহাদাত এখন শরিফকে ফেরত দিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করছে। সরজমিনে ওই বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন, ভাই আমরা বেশি কিছু বললে সমস্যা হতে পারে। সাংবাদিক বাড়িতে আসায় দালালরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। পরে সরজমিনে শাহাদাতের গ্রাম গাড়ামাসিতে গেলে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা একটি বাড়ি সম্প্রতি ক্রয় করেছে সে। গ্রামবাসী জানান, এক সময়ের ফেনসিডিল বিক্রেতা শাহাদাত আদম ব্যবসা করার অল্প কয়েক দিনের মাথায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেছে। আরেকটি বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, সে সব সময়ই দু’নম্বর ব্যবসা করেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার খামার পাইকোশা গ্রামের দালাল শুকুর আলীর ছেলে সুলতান অনেকদিন ধরেই মালয়েশিয়া থাকে। কিছুদিন পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে। এরপর সে চলে যাওয়ার পর থেকে আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে।
ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌ-বাহিনীর হাতে আটক হওয়া বেলকুচির ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামের আলমগীর জানান, তিনিসহ বড়ধুল গ্রামের আশরাফ, মনিরুল, মেনহাজ ও ফরজ তার চাচাতো ভাই জহুরুলের মাধ্যমে কক্সবাজারে যান। সেখানে দুদিন হোটেলে রাখার পর সূর্য নামে আরেক দালালের হাতে তুলে দেয়া হয় তাদের। সেখান থেকে ট্রলারে তুলে দালালরা ৫ জনসহ প্রায় শতাধিক যুবককে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন ট্রলার চলার পর তারা বাংলাদেশের নৌ-বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানায়, বেলকুচি উপজেলার মেঘুল্লা গ্রামের সোহেল, দৌলতপুর গ্রামের ঠোটকাটা লতিফ, পূর্ব দেলুয়া গ্রামের আফজাল মোল্লার ছেলে আশরাফ মোল্লা, সোহাগপুর চরের আলম শেখ, তামাই গ্রামের নুরনবী শেখ, সদর উপজেলার খামার পাইকোশা গ্রামের সুলতান, তার বাবা শুকুর আলী, সদর উপজেলার জগৎগাঁতি গ্রামের আতাউর রহমান, শাহজাদপুর উপজেলার রূপনাই গাছপাড়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফ, জেন্নত আলী মোল্লা, আবদুল খালেক, নিজাম উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন, ব্রাহ্মণগ্রামের আজমত আলী, ফজল হক, শাবু ব্যাপারী, আব্দুর রউফ, চাঁনপুরের আব্দুর রশিদ, ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের হোসেন, গোপিনাথপুরের আবদুল হালিম, সোনাতলার ফরিদ, দ্বাদশপট্টি গ্রামের কালামসহ অসংখ্য দালাল, উপ-দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। তারাও একই পন্থায় মানবপাচার করে। এদের অনেকেই এখন পলাতক। এ ছাড়াও সম্প্রতি এনায়েতপুরের কুখ্যাত দালাল আবুল কালাম ও বেলকুচির কালুগাজীকে পুলিশ আটক করায় তারা জেল হাজতে রয়েছে। তাদের পাঠানো অনেক লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে অনেকের অভিযোগ, কতিপয় দালাল, অধিকাংশ উপ-দালাল ও ফড়িয়ারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এদিকে, অনেক ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছেন, দালাল চক্রের হুমকি-ধামকির কারণে তারা মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না।
এসব ঘটনায় থানা ও আদালত মিলে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে এনায়েতপুর থানায় দায়ের হওয়া ৫টি মামলার ২টিতে চার্জশিট হয়েছে। বাকি ৩টির মধ্যে থানা পুলিশ ২টি ও সিআইডি ১টি মামলার তদন্ত করছে। বেলকুচি থানায় দায়ের হওয়া ৩টির মধ্যে চার্জশিট হয়েছে ২টির। এ ছাড়াও আদালতে দায়ের করা ৩টি মামলারও তদন্ত চলছে। কামারখন্দ থানায় দায়ের হওয়ায় ১টি মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে। সম্প্রতি উল্লাপাড়া থানায় ১টি এবং শাহজাদপুরে আরও ২টি মামলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন শুক্রবার বিকালে মানবজমিনকে বলেন, এরআগে আমাদের কাছে মানব পাচারের বিষয়ে কোন খবর ছিল না। এমনকি গোয়েন্দা সংন্থাও এমন কোন রিপোর্ট ইতোপূর্বে দেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরই বিষয়টি জানতে পারি। এমনকি সিরাজগঞ্জের বিষয়টিও খবরের মাধ্যমেই জেনেছি। জানার পরই আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছি। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিংয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। নিখোঁজের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ে মেম্বারদের নিয়ে সভা করে নিখোঁজের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। তবে, এখনও কোন তালিকা জমা পড়েনি। তিনি এও জানান, মৌখিকভাবে আমরা ৮-১০ জনের একটি হিসাব জানতে পেরেছি। তাদের বিষয়ে লিখিতভাবে তালিকা তৈরী করতে বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজেবিলিটি পিপল (ডিডিপি)-এর তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জের সাত উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার দালাল সক্রিয় রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, চৌহালি, মাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ। এদের মধ্যে রয়েছে মূল দালাল, ্উপ-দালাল, উপ-দালাল সহযোগী ও স্থানীয় ফড়িয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রি-সাইকেলে পুরো চক্রটি কাজ করে। ফড়িয়ারা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে। এরা পাচার হওয়া মানুষের আশপাশের লোকজন। জনপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকার মাধ্যমে এরা কাজ করে থাকে। এরা নিয়ে যায় উপ-দালালের কাছে। দালাল ও উপ-দালালচক্র একজন থেকে আরেকজন করে টেকনাফ থেকে থাইল্যান্ড পর্যন্ত যুবকদের পৌঁছার পর জিম্মি করে টাকা আদায় করে। অধিকাংশ গ্রামেই দালাল চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক পূর্ব থেকেই মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। সেখান থেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে যুবকদের সংগ্রহ করছে। তবে কেউই বিদেশ যাওয়ার জন্য অগ্রিম কোন টাকা নেয় না। এমনকি বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ওইসব যুবকদের পরিবারকেও নিষেধ করা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের কাউকেও না জানানোর জন্য দালালরা সতর্ক করে দেয়। মোটা আয়ের আশায় এবং যাওয়া যেন ভুণ্ডুল না হয় সেজন্য তারা দালালের কথায় সম্মত হয়। টেকনাফ কিংবা থাইল্যান্ড পৌঁছার পর জিম্মি করে পরিবারের কাছে ২ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত টাকা দাবি করে দালালরা। কিন্তু কেউ কেউ ফিরে আসলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিখোঁজই থাকছে পাচার হওয়া মানুষ। পরিবারের লোকজন ভিটে-মাটি বিক্রি করেও ফিরে পাচ্ছে না স্বজন। সাগর পথে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যুবকদের প্রতারিত করা দালাল চক্রের অন্যতম ঘাঁটি সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর উপজেলা ও এনায়েতপুর থানার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতারিত মানুষ ও সচেতন মহলে দালাল আলতাফ হোসেনের নাম বার বার উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে সরজমিনে তার নিজ গ্রাম আদাচাকি গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে আলিশান বাড়ি। তবে সে বাড়িতে নেই আলতাফ ও তার পরিবার পরিজন। পাশেই টিনের চালায় আছেন বৃদ্ধ মা ও তার ২ ভাইয়ের বউ ও ২ ভাইপো।
গ্রামবাসীরা জানায়, আলতাফ ছাড়াও তার আরও ৪ ভাই রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ভাই আজমও একই কারবারের সঙ্গে জড়িত। তার বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। অতি সামান্য জমিজমা এবং কোনমতে মাথা গোঁজার জন্য টিনের চালার ঘর ছিল তাদের। পরে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারীর কাজ নেয় আলতাফ। আনুমানিক ১৫ বছর আগে আলতাফ মালয়েশিয়া যায়। কিন্তু সেখানেও সুবিধা না করতে পেরে দেশে ফিরে শুরু করে মানব পাচার। বর্তমানে এটাই তার পেশা। শুরুতে সে এলাকা ও আশপাশের দুই একজনকে উদ্বুদ্ধ করে সাগর পথে কম খরচে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়। সেখানে তারা কাজ করে স্বাবলম্বীও হয়। এরপর দ্রুত সে আস্থা অর্জন করতে থাকে। অল্প সময়েই মূল দালাল বনে যায় সে। মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও গরিব-দুস্থদের সহযোগিতার হাত বাড়ায়। এতে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তার। এ বিষয়টি পুঁজি করে পুরোদমে মানব পাচার চালিয়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি মানুষকে ম্যানেজ করতে এলাকায় ও আশপাশের গ্রামগুলোতে উপ-দালাল ও ফড়িয়াদের চক্র গড়ে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে সমদ্রপথে মানব পাচারের বিষয়ে দেশ ও বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক তৈরী হওয়ায় গা ঢাকা দেয় আলতাফ। এরআগে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় লেগে থাকতো তার ওই বাড়িতে। ২ মাস আগে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলতাফকে বেলকুচি পুলিশ আটক করলেও ২ দিন থানায় রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, মাসখানেক ধরে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। গ্রামবাসী আরও জানান, আদাচাকিতে এরা দুই ভাই ছাড়াও মালেক, শান্ত, সানোয়ার ও পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের আজিজুল হক এ কাজে জড়িত। তারা প্রায়ই এক সঙ্গে আলতাফের বাড়িতে বৈঠক করতো। সেখানে উপ-দালাল, ফড়িয়া ও বিদেশ গমনেচ্ছুক লোকজন যাতায়াত করতো। ভুক্তভোগীরা দালাল আলতাফকে আটক করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। আলতাফের এ নির্মমতা থেকে তার নিজের ভাইপো ডিনারও (২২) রক্ষা পায়নি। চাচার খপ্পরে পড়ে সে এখন থাইল্যান্ডের জেলে রয়েছে।
ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে এক দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, তার ভাই স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে সমদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছার পর অজ্ঞাত স্থানে বন্দি রয়েছে। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। তার গায়ে ঘা-পচড়া হয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে দালালদের ২ লাখেরও বেশি টাকা দেয়া হয়েছে। দালালদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সমস্যা হতে পারে।
সর্বতুলসী গ্রামের নিখোঁজ তাঁত শ্রমিক শামীমের (১৭) বাবা সরোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ৮৫ দিন আগে তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর এলাকার দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সময় দালালরা তার ছেলেকে সমুদ্রপথে পাঠিয়েছে স্বীকার করে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কল্যাণপুর গ্রামের দালাল ফয়জালের কাছে ৪০ হাজার টাকা দেয়। ছেলে শামীমের সঙ্গে তার ভাইপো আমিরুল ইসলামও নিখোঁজ রয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামটিতে জুলমাত, আলম, কেরামত ও জাক্কুসহ ৩০-৩৫ দালাল ও সহযোগী দালাল রয়েছে। এরা জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কাজ করে। আজুগড়া গ্রামের দালাল রয়েছে সাবেক মেম্বার করিম ও তার ছেলে রেজাউল, আবদুল লতিফ ও রাজুসহ অনেকে।
বেলকুচি পৌর শহরের গাড়ামাসি মহল্লার শাহাদাত। তার বাবা আবু তালেব এক সময়ের রিকশাচালক। ১ মাস ১০ দিন আগে শাহাদাত তার আপন খালাতো বোনের স্বামী চালা গ্রামের শরিফ উদ্দিনসহ ১৪ জনকে ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করে। সেখান থেকে তাদের ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা। তবে পাচারের বিষয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে তাদের ইন্দোনেশিয়ার একটি জঙ্গলে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের ওপর প্রায়ই অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শরিফের সঙ্গে তার পরিবারের একাধিকবার কথাও হয়েছে। শাহাদাত এখন শরিফকে ফেরত দিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করছে। সরজমিনে ওই বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন, ভাই আমরা বেশি কিছু বললে সমস্যা হতে পারে। সাংবাদিক বাড়িতে আসায় দালালরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। পরে সরজমিনে শাহাদাতের গ্রাম গাড়ামাসিতে গেলে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা একটি বাড়ি সম্প্রতি ক্রয় করেছে সে। গ্রামবাসী জানান, এক সময়ের ফেনসিডিল বিক্রেতা শাহাদাত আদম ব্যবসা করার অল্প কয়েক দিনের মাথায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেছে। আরেকটি বাড়ি কেনার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, সে সব সময়ই দু’নম্বর ব্যবসা করেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার খামার পাইকোশা গ্রামের দালাল শুকুর আলীর ছেলে সুলতান অনেকদিন ধরেই মালয়েশিয়া থাকে। কিছুদিন পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে। এরপর সে চলে যাওয়ার পর থেকে আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে।
ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নৌ-বাহিনীর হাতে আটক হওয়া বেলকুচির ক্ষিদ্রমাটিয়া গ্রামের আলমগীর জানান, তিনিসহ বড়ধুল গ্রামের আশরাফ, মনিরুল, মেনহাজ ও ফরজ তার চাচাতো ভাই জহুরুলের মাধ্যমে কক্সবাজারে যান। সেখানে দুদিন হোটেলে রাখার পর সূর্য নামে আরেক দালালের হাতে তুলে দেয়া হয় তাদের। সেখান থেকে ট্রলারে তুলে দালালরা ৫ জনসহ প্রায় শতাধিক যুবককে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন ট্রলার চলার পর তারা বাংলাদেশের নৌ-বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানায়, বেলকুচি উপজেলার মেঘুল্লা গ্রামের সোহেল, দৌলতপুর গ্রামের ঠোটকাটা লতিফ, পূর্ব দেলুয়া গ্রামের আফজাল মোল্লার ছেলে আশরাফ মোল্লা, সোহাগপুর চরের আলম শেখ, তামাই গ্রামের নুরনবী শেখ, সদর উপজেলার খামার পাইকোশা গ্রামের সুলতান, তার বাবা শুকুর আলী, সদর উপজেলার জগৎগাঁতি গ্রামের আতাউর রহমান, শাহজাদপুর উপজেলার রূপনাই গাছপাড়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফ, জেন্নত আলী মোল্লা, আবদুল খালেক, নিজাম উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন, ব্রাহ্মণগ্রামের আজমত আলী, ফজল হক, শাবু ব্যাপারী, আব্দুর রউফ, চাঁনপুরের আব্দুর রশিদ, ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের হোসেন, গোপিনাথপুরের আবদুল হালিম, সোনাতলার ফরিদ, দ্বাদশপট্টি গ্রামের কালামসহ অসংখ্য দালাল, উপ-দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই মালয়েশিয়া অবস্থান করছে। তারাও একই পন্থায় মানবপাচার করে। এদের অনেকেই এখন পলাতক। এ ছাড়াও সম্প্রতি এনায়েতপুরের কুখ্যাত দালাল আবুল কালাম ও বেলকুচির কালুগাজীকে পুলিশ আটক করায় তারা জেল হাজতে রয়েছে। তাদের পাঠানো অনেক লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে অনেকের অভিযোগ, কতিপয় দালাল, অধিকাংশ উপ-দালাল ও ফড়িয়ারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এদিকে, অনেক ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছেন, দালাল চক্রের হুমকি-ধামকির কারণে তারা মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না।
এসব ঘটনায় থানা ও আদালত মিলে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে এনায়েতপুর থানায় দায়ের হওয়া ৫টি মামলার ২টিতে চার্জশিট হয়েছে। বাকি ৩টির মধ্যে থানা পুলিশ ২টি ও সিআইডি ১টি মামলার তদন্ত করছে। বেলকুচি থানায় দায়ের হওয়া ৩টির মধ্যে চার্জশিট হয়েছে ২টির। এ ছাড়াও আদালতে দায়ের করা ৩টি মামলারও তদন্ত চলছে। কামারখন্দ থানায় দায়ের হওয়ায় ১টি মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যেই চার্জশিট দিয়েছে। সম্প্রতি উল্লাপাড়া থানায় ১টি এবং শাহজাদপুরে আরও ২টি মামলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন শুক্রবার বিকালে মানবজমিনকে বলেন, এরআগে আমাদের কাছে মানব পাচারের বিষয়ে কোন খবর ছিল না। এমনকি গোয়েন্দা সংন্থাও এমন কোন রিপোর্ট ইতোপূর্বে দেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরই বিষয়টি জানতে পারি। এমনকি সিরাজগঞ্জের বিষয়টিও খবরের মাধ্যমেই জেনেছি। জানার পরই আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছি। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিংয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। নিখোঁজের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ে মেম্বারদের নিয়ে সভা করে নিখোঁজের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। তবে, এখনও কোন তালিকা জমা পড়েনি। তিনি এও জানান, মৌখিকভাবে আমরা ৮-১০ জনের একটি হিসাব জানতে পেরেছি। তাদের বিষয়ে লিখিতভাবে তালিকা তৈরী করতে বলা হয়েছে।
No comments