অভিযোগের স্তূপ নারী নির্যাতন সেলে
অভিযোগের
সংখ্যা বেশি কিন্তু সুরাহা খুবই কম। রাজধানীর ইস্কাটনস্থ নারী নির্যাতন
প্রতিরোধ সেলে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই জমা হচ্ছে অসংখ্য অভিযোগ।
বিপরীতে সমাধান চিত্র খুবই কম। মহিলা অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত এই সেলে অসহায়
নারীরা বিনা টাকায় বিচার পাওয়ার আশায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে
ছুটে আসেন। টেবিলে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা হয়। বেশির ভাগই রয়ে যায়
ফাইলবন্দি। বিচার না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান হতাশা নিয়ে। রাজধানীর ইস্কাটনের
মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের নিচতলায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে ঢাকাসহ দেশের
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বিচারপ্রার্থী নির্যাতিত ৪০ থেকে ৫০ জন নারী
আসেন। মাসে গড়ে দেড় হাজার নারী আসেন বিচারের আশায়। পরিসংখ্যান মতে
প্রতিদিনই নির্যাতিত নারীদের অভিযোগ বাড়ছে। এসব নারীর বেশির ভাগই যৌতুকের
কারণে স্বামী-শাশুড়ি দ্বারা নির্যাতনের শিকার। ফেনী জেলার রাবেয়া জানান,
বছর সাতেক আগে পুরান ঢাকা লালবাগের রাজু রহমানের প্রেমের টানে বাবা-মায়ের
ঘর ছেড়েছেন। সংসারের প্রথম এক বছর দুজনে সকাল সন্ধ্যা টিউশিনি করে দারুণ
সুখে ছিলেন। দুই বছরের মাথায় একটি কন্যা সন্তান আসে ঘর আলো করে। একই সময়ে
স্বামী ভাল বেতনের চাকরি পান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সংসার তিন বছরে
না গড়াতেই শুরু হয় ছন্দপতন। সংসার-সন্তানের প্রতি উদাসীন সে (স্বামী)। পরে
জানতে পারি পরকিয়ায় মজেছে তারই পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানতে
পারি সেই প্রেমিকার সংসারেও অশান্তি এই অবৈধ সম্পর্কের কারণে। এ নিয়ে আমি
কিছু বলতে গেলেই চলে শারীরিক নির্যাতন। চার বছরের মাথায় রাজু
সংসার-সন্তানের কথা পুরো ভুলে যায়। জানতে পারি সে তার পুরোনো প্রেমিকাকে
বিয়ে করেছে। কাবিনের টাকা দিতে হবে বলে আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছে না। আবার ঘরেও
আসছে না। সব মিলিয়ে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যেন সমুদ্রে পড়ে যাই। সবাই
মামলা-মকদ্দমার কথা বললেও আমি আরও দুই বছর অপেক্ষায় থাকি তার (স্বামী) ফিরে
আসার। না আসেনি। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে গত বছর এখানে (নির্যাতন প্রতিরোধ
সেল) আসি। এখানেও কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না। শুধু তারিখ পড়ে, আশ্বাস পাই। আর
কিছুই হয় না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে আরেক অভিযোগকারী তাসলিমা। দুই
বছর ধরে অন্তত ২৫টি হাজিরার তারিখে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত
একদিনও শুনানি হয়নি। এর কারণ বিবাদীর কাছে নোটিশ যাওয়ার পরও সে উপস্থিত
হয়নি। তাসলিমা জানান, ২০১৩ সালের মার্চ মাসে স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন
সইতে না পেরে আমি নারী নির্যাতন সেলে অভিযোগ করেছিলাম। আমার স্বামী একটি
তারিখেও উপস্থিত হননি। ফলে এখন পর্যন্ত কোন বিচার পাইনি। তিনি বলেন, প্রায় ৯
বছর আগে পারিবারিকভাবে শরিয়তপুরের আবদুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর
ভালই কাটছিল সংসার। ২ বছর পর আমাদের একটা মেয়ে হয়। এরপর থেকেই শুরু হয়
সংসারে অশান্তি। আর এর কারণ হলো যৌতুক। স্বামী আবদুর রহমান প্রতিদিন বাবার
বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত। টাকা দিয়ে সে ব্যবসা করবে এই কথা বলে
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। বলতো টাকা না আনলে আমাকে বের করে দিবে।
তাই হলো। বাবা-মার কাছ থেকে টাকা আনতে না পারায় আমাকে বাড়ি থেকে বের করে
দেয় স্বামী-শাশুড়ি। পরে আমি একজনের পরামর্শে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে
অভিযোগ করি। ২ বছর হয়ে গেল এখনও পর্যন্ত আমি নির্যাতনের কোন বিচার পেলাম
না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও এর কার্যকর প্রয়োগ না হওয়া
এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে দেশে বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতনের ঘটনা।
এজন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল বলেন, নারী নির্যাতন দমনের যে আইন আছে, তা
যথেষ্ট কঠোর। কিন্তু নির্যাতনের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করা বা নির্যাতিত
নারীকে ন্যায়বিচার পেতে খুব সাহায্য করে না। শ্যামলীর প্রশ্ন, নারী
নির্যাতন বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ হবে কবে? তার মতে, শুধু আইনের কার্যকর
প্রয়োগ এবং ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করা গেলেই দেশে নারী নির্যাতন অনেক কমে
আসবে। নারী নির্যাতন মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অন্যরাও নির্যাতনে
উৎসাহিত হচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রয়েছে বিভিন্ন আইন। এত আইন ও আইনে
বর্ণিত কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না শুধু আইন প্রয়োগে
ব্যর্থতার কারণে।
নারী নির্যাতন সেল সূত্রে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গত ৪ বছরে পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন, ২য় বিয়ে, পরকীয়া, তালাক এসব বিষয়ে অভিযোগ জমা হয়েছে ৫২,১৫৭টি। এর মধ্যে সুরাহা হয়েছে মাত্র ১২৭৬টি অভিযোগের। এর মধ্যে ২০১১ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৩,৩৫৪টি। ফয়সালা হয়েছে ৩০৩টি। ২০১২ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৪,৪০৫টি। ফয়সালা হয়েছে ৩৩৫টি। ২০১৩ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১০,৯৯৭টি। ফয়সালা হয়েছে ৩৪০টি। ২০১৪ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৩,৪০১টি এবং অভিযোগ ফয়সালা হয়েছে ২৯৮টি। এ বছর গত মাস (এপ্রিল) পর্যন্ত অভিযোগ পড়েছে প্রায় ৭ হাজার। সুরাহার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারী নির্যাতন সেলের দাত্বিপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসি বেগম বলেন, সংসার ভাঙ্গা আমাদের মূল টার্গেট নয়, ভাঙ্গা সংসারটাকে জোড়া লাগানোর চেষ্টাটাই মূলত আমরা করে থাকি। সে জন্যই আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলো নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতাতো রয়েছেই। যে অভিযোগগুলো এখানে সমাধান করা সম্ভব হয় না সেই মামলাগুলো কোর্টের পারিবারিক আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘসূত্রতার পরেও অভিযোগ সুরাহা কম হওয়ার কারণ হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে অভিযোগ করার পর আমাদের প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে নোটিশ পাঠাই। ২টি নোটিশের পর ওই এলাকার পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাই। এর পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ আদালতে হাজির না হওয়ায় অসংখ্য অভিযোগ অমীমাংসিত রয়ে যায়। তবে আমাদের কাছে যদি ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা থাকত তাহলে অব্যশই সব অভিযোগের সুরাহা হতো। এতে তাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করত যে, সেখানে উপস্থিত না হলে তাকে জেলে যেতে হবে। এতে করে অধিকাংশ অভিযোগই দ্রুত সুরাহা করা সম্ভব হতো এবং নির্যাতিতরা সুবিচার পেতেন।
নারী নির্যাতন সেল সূত্রে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গত ৪ বছরে পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন, ২য় বিয়ে, পরকীয়া, তালাক এসব বিষয়ে অভিযোগ জমা হয়েছে ৫২,১৫৭টি। এর মধ্যে সুরাহা হয়েছে মাত্র ১২৭৬টি অভিযোগের। এর মধ্যে ২০১১ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৩,৩৫৪টি। ফয়সালা হয়েছে ৩০৩টি। ২০১২ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৪,৪০৫টি। ফয়সালা হয়েছে ৩৩৫টি। ২০১৩ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১০,৯৯৭টি। ফয়সালা হয়েছে ৩৪০টি। ২০১৪ সালে অভিযোগ জমা হয়েছে ১৩,৪০১টি এবং অভিযোগ ফয়সালা হয়েছে ২৯৮টি। এ বছর গত মাস (এপ্রিল) পর্যন্ত অভিযোগ পড়েছে প্রায় ৭ হাজার। সুরাহার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারী নির্যাতন সেলের দাত্বিপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসি বেগম বলেন, সংসার ভাঙ্গা আমাদের মূল টার্গেট নয়, ভাঙ্গা সংসারটাকে জোড়া লাগানোর চেষ্টাটাই মূলত আমরা করে থাকি। সে জন্যই আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলো নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতাতো রয়েছেই। যে অভিযোগগুলো এখানে সমাধান করা সম্ভব হয় না সেই মামলাগুলো কোর্টের পারিবারিক আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘসূত্রতার পরেও অভিযোগ সুরাহা কম হওয়ার কারণ হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে অভিযোগ করার পর আমাদের প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে নোটিশ পাঠাই। ২টি নোটিশের পর ওই এলাকার পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাই। এর পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ আদালতে হাজির না হওয়ায় অসংখ্য অভিযোগ অমীমাংসিত রয়ে যায়। তবে আমাদের কাছে যদি ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা থাকত তাহলে অব্যশই সব অভিযোগের সুরাহা হতো। এতে তাদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করত যে, সেখানে উপস্থিত না হলে তাকে জেলে যেতে হবে। এতে করে অধিকাংশ অভিযোগই দ্রুত সুরাহা করা সম্ভব হতো এবং নির্যাতিতরা সুবিচার পেতেন।
No comments