১৯৭১: ভারতের সামরিক ইতিহাসের অনন্য মুহূর্ত by প্রণব মুখার্জি
সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখার্জির বই ‘দি ড্রামেটিক ডিকেড দি ইন্দিরা গান্ধী ইয়ার্স প্রকাশ করেছে দিল্লির রুপা পাবলিকেশন্স। এ বইয়ের একটি অধ্যায় ‘মুক্তিযুদ্ধ: দি মেকিং অব বাংলাদেশ’-এর অবিকল তরজমা...
(পঞ্চম শেষ কিস্তি)
১৯৭১
সালের ৩০শে মার্চে ইন্দিরা গান্ধী সংসদের উভয় কক্ষে পূর্ব পাকিস্তান
পরিস্থিতির ওপর একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং সেখানে তিনি ভারত
সরকারের ভূমিকা কি হবে সে বিষয়ে একটি রূপরেখা দেন:
‘ভারতের পার্লামেন্ট একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবনযাপনের জন্য পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি প্রগাঢ় সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশ করছে। শান্তির প্রতি ভারতের যে স্থায়ী স্বার্থ তা মেনে রেখে ও মানবাধিকার সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে অনতিবিলম্বে শক্তি প্রয়োগ ও নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে ... এই হাউস তার অবিচল আস্থার রেকর্ড রাখছে যে, পূর্ব-বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঐতিহাসিক গণজাগরণ সফল হবে। এই হাউস তাদেরকে আশ্বস্ত করছে যে, তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ভারতীয় জনগণের সর্বান্তকরণে সমর্থন ও সহানুভূতি পাবে।’ (সিলেক্টড স্পিচেচ অব ইন্দিরা গান্ধী : দি ইয়ার্স অব এন্ডেভার: আগস্ট ১৯৬৯-আগস্ট ১৯৭২)।
১৫ই জুন বাজেট অধিবেশনে আমি রাজ্যসভার ফ্লোরে একটি অলোচনা সূচনা করি যে, মুজিবনগরের নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের উচিত হবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়া। যখন একজন সদস্য জিজ্ঞেস করলেন যে, কিভাবে এই সমস্যার মোকোবিলা করা হবে তখন আমি বললাম, ‘আমি এমন একটি রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলছি, যাতে নির্দিষ্টভাবে সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ হলো একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারকে বস্তুগত সাহায্য দেওয়া...।’ আমি বিশ্ব ইতিহাস থেকে অনেকগুলো ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিলাম, যখন একই ধরনের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
‘ভারত ও সংসদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বকে উজ্জীবিত করতে পশ্চিম-ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। এটা ঠিক করা হয়েছিল এমন একটি প্রেক্ষপটে যখন হেনরি কিসিঞ্জার ইঙ্গিত করেছেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন দেবে না। তাই এসব প্রচেষ্টা ভারতে ও বহির্বিশ্বে নেয়া হয়েছিল, যুদ্ধের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করার জন্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং অন্য আরো অনেক মন্ত্রী এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ‘স্বাধীন’ ব্যক্তিত্ব জয়প্রকাশ নারায়ণ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার উল্লেখযোগ্য দেশগুলোতে একটি ব্যাপকভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচারণায় অংশ নিলেন। এসব মিশনে একটি অভিন্ন বার্তা বয়ে নিয়ে যওয়া হলো: যদি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সুরক্ষা দিতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেওয়া। ... এই কূটনৈতিক প্রয়াস সম্পর্কে পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ দিতে যদি নয়া দিল্লির কোন ভাবালুতা থেকেও থাকতো, তাহলে তা ইতিমধ্যে উবে গেছে যখন ভারতের প্রেরিত সর্বশেষ মিশন জুলাইয়ের গোড়ায় দেশে ফিরে এল। ... দ্বিতীয় কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হলো সেপ্টেম্বরে, প্রথমত লাতিন আমেরিকা ও অফ্রিকান দেশগুলোতে, তাদেরকেও এটা বলতো যে, অক্টোবরে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভারত এটা তুলবে এবং তাদেরকে প্রস্তত করতে যে, ভারত সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’ (রিচার্ড সিসন ও লিও রোজ, ওয়ার অ্যান্ড সেশন: পাকিস্তান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দি ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ (নিউ দিল্লি, ১৯৯০)
আমি ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে বিপুলভাবে স্বীকৃতি পেলাম, এই বিষয়ে ভারতের অবস্থানের প্রতি একটি সমর্থনসূচক পরিরেবশ সৃষ্টির জন্য যখন তিনি আমাকে বিদেশে পাঠালেন। ইন্টার পার্টি ইউনিয়নের ৫৯তম সম্মেলনে (২-১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) ভারতের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে আমরা সেখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি দলের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা এবং পূর্ব-পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের সরকারের কাছে যাতে তারা তুলে ধরে সেজন্য অনুরোধ রাখলাম। পরে একই ম্যান্ডেট নিয়ে আমাকে যুক্তরাজ্য এবং ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানিতে পাঠানো হলো।
১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর গোধূলি লগ্নে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রিএম্পটিভ আক্রমণ চালালো।
‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত লড়াই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপান্তরিত হলো। পশ্চিম পাকিস্তানের জেট ভারতের অন্তত চারটি বিমানবন্দরের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে আটটি যুদ্ধক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে।... পাকিস্তানি বিমান হামলার প্রাথমিক খবর অস্পষ্ট কিন্তু উভয় রাজধানী নিশ্চিত করেছে যে, ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, অবন্তিপুর এবং শ্রীনগরে আঘাত হানা হয়েছে। ভারত সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। (১৯৭১: পাকিস্তান ইনসেনটিফাইজ এয়ার রেইডস অন ইন্ডিয়া, বিবিসি নিউজ, ৩রা ডিসেম্বর , ১৯৭১)
এবং এভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ১২৩ দিনব্যাপী যুদ্ধের সূচনা ঘটল। পাকিস্তান ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালো।
যুদ্ধে জয় এসেছে দ্রুত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মমর্পণের পরে ইন্দরা গান্ধী লোকসভায় ঘোষণা করলেন :
‘মি. স্পিকার স্যার। আমি এখন এমন একটি ঘোষণা দিচ্ছি যা শোনার জন্য এই সংসদ বেশ কিছু সময় ধরে অপেক্ষা করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণের দলিল আজ ঢাকায় আইএইচটি ১৬.৩১ ঘণ্টায় সই করেছেন পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের পক্ষে লে. জে. এএকে নিয়াজি। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ভারত-বাংলাদেশ বাহিনীর জিওসি-ইন-সি হিসেবে লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেছেন। ঢাকা এখন থেকে একটি মুক্ত দেশের মুক্ত রাজধানী।’
ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন করে একটি প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়েছিলেন বিশেষ করে যেখানে পাকিস্তানের সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনার আশঙ্কা ছিল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী চাপ এবং চীনা ঠাট-ঠমকের মুখে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকেন এবং প্রমাণ করেন যে, তিনি পিতার উত্তরাধিকার বহনে সক্ষম। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর একাগ্রচিত্ত-পরিচালিত জাতীয়তাবাদী কূটনীতি দিয়ে ভারতকে বিজয় দেখিয়েছেন- প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি যুদ্ধজয় ঘটেছে, যা ভারতের সামরিক ইতিহাসের একটি অনন্য মুহূর্ত।
‘ভারতের পার্লামেন্ট একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবনযাপনের জন্য পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি প্রগাঢ় সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশ করছে। শান্তির প্রতি ভারতের যে স্থায়ী স্বার্থ তা মেনে রেখে ও মানবাধিকার সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে অনতিবিলম্বে শক্তি প্রয়োগ ও নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে ... এই হাউস তার অবিচল আস্থার রেকর্ড রাখছে যে, পূর্ব-বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঐতিহাসিক গণজাগরণ সফল হবে। এই হাউস তাদেরকে আশ্বস্ত করছে যে, তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ভারতীয় জনগণের সর্বান্তকরণে সমর্থন ও সহানুভূতি পাবে।’ (সিলেক্টড স্পিচেচ অব ইন্দিরা গান্ধী : দি ইয়ার্স অব এন্ডেভার: আগস্ট ১৯৬৯-আগস্ট ১৯৭২)।
১৫ই জুন বাজেট অধিবেশনে আমি রাজ্যসভার ফ্লোরে একটি অলোচনা সূচনা করি যে, মুজিবনগরের নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের উচিত হবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়া। যখন একজন সদস্য জিজ্ঞেস করলেন যে, কিভাবে এই সমস্যার মোকোবিলা করা হবে তখন আমি বললাম, ‘আমি এমন একটি রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলছি, যাতে নির্দিষ্টভাবে সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ হলো একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারকে বস্তুগত সাহায্য দেওয়া...।’ আমি বিশ্ব ইতিহাস থেকে অনেকগুলো ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিলাম, যখন একই ধরনের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
‘ভারত ও সংসদের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বকে উজ্জীবিত করতে পশ্চিম-ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। এটা ঠিক করা হয়েছিল এমন একটি প্রেক্ষপটে যখন হেনরি কিসিঞ্জার ইঙ্গিত করেছেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন দেবে না। তাই এসব প্রচেষ্টা ভারতে ও বহির্বিশ্বে নেয়া হয়েছিল, যুদ্ধের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করার জন্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এবং অন্য আরো অনেক মন্ত্রী এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ‘স্বাধীন’ ব্যক্তিত্ব জয়প্রকাশ নারায়ণ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার উল্লেখযোগ্য দেশগুলোতে একটি ব্যাপকভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচারণায় অংশ নিলেন। এসব মিশনে একটি অভিন্ন বার্তা বয়ে নিয়ে যওয়া হলো: যদি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সুরক্ষা দিতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেওয়া। ... এই কূটনৈতিক প্রয়াস সম্পর্কে পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ দিতে যদি নয়া দিল্লির কোন ভাবালুতা থেকেও থাকতো, তাহলে তা ইতিমধ্যে উবে গেছে যখন ভারতের প্রেরিত সর্বশেষ মিশন জুলাইয়ের গোড়ায় দেশে ফিরে এল। ... দ্বিতীয় কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হলো সেপ্টেম্বরে, প্রথমত লাতিন আমেরিকা ও অফ্রিকান দেশগুলোতে, তাদেরকেও এটা বলতো যে, অক্টোবরে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভারত এটা তুলবে এবং তাদেরকে প্রস্তত করতে যে, ভারত সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’ (রিচার্ড সিসন ও লিও রোজ, ওয়ার অ্যান্ড সেশন: পাকিস্তান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড দি ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ (নিউ দিল্লি, ১৯৯০)
আমি ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে বিপুলভাবে স্বীকৃতি পেলাম, এই বিষয়ে ভারতের অবস্থানের প্রতি একটি সমর্থনসূচক পরিরেবশ সৃষ্টির জন্য যখন তিনি আমাকে বিদেশে পাঠালেন। ইন্টার পার্টি ইউনিয়নের ৫৯তম সম্মেলনে (২-১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) ভারতের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে আমরা সেখানে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি দলের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা এবং পূর্ব-পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের সরকারের কাছে যাতে তারা তুলে ধরে সেজন্য অনুরোধ রাখলাম। পরে একই ম্যান্ডেট নিয়ে আমাকে যুক্তরাজ্য এবং ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানিতে পাঠানো হলো।
১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর গোধূলি লগ্নে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রিএম্পটিভ আক্রমণ চালালো।
‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত লড়াই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপান্তরিত হলো। পশ্চিম পাকিস্তানের জেট ভারতের অন্তত চারটি বিমানবন্দরের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে আটটি যুদ্ধক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে।... পাকিস্তানি বিমান হামলার প্রাথমিক খবর অস্পষ্ট কিন্তু উভয় রাজধানী নিশ্চিত করেছে যে, ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, অবন্তিপুর এবং শ্রীনগরে আঘাত হানা হয়েছে। ভারত সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। (১৯৭১: পাকিস্তান ইনসেনটিফাইজ এয়ার রেইডস অন ইন্ডিয়া, বিবিসি নিউজ, ৩রা ডিসেম্বর , ১৯৭১)
এবং এভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ১২৩ দিনব্যাপী যুদ্ধের সূচনা ঘটল। পাকিস্তান ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালো।
যুদ্ধে জয় এসেছে দ্রুত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মমর্পণের পরে ইন্দরা গান্ধী লোকসভায় ঘোষণা করলেন :
‘মি. স্পিকার স্যার। আমি এখন এমন একটি ঘোষণা দিচ্ছি যা শোনার জন্য এই সংসদ বেশ কিছু সময় ধরে অপেক্ষা করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণের দলিল আজ ঢাকায় আইএইচটি ১৬.৩১ ঘণ্টায় সই করেছেন পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের পক্ষে লে. জে. এএকে নিয়াজি। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ভারত-বাংলাদেশ বাহিনীর জিওসি-ইন-সি হিসেবে লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেছেন। ঢাকা এখন থেকে একটি মুক্ত দেশের মুক্ত রাজধানী।’
ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন করে একটি প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়েছিলেন বিশেষ করে যেখানে পাকিস্তানের সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনার আশঙ্কা ছিল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী চাপ এবং চীনা ঠাট-ঠমকের মুখে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকেন এবং প্রমাণ করেন যে, তিনি পিতার উত্তরাধিকার বহনে সক্ষম। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর একাগ্রচিত্ত-পরিচালিত জাতীয়তাবাদী কূটনীতি দিয়ে ভারতকে বিজয় দেখিয়েছেন- প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি যুদ্ধজয় ঘটেছে, যা ভারতের সামরিক ইতিহাসের একটি অনন্য মুহূর্ত।
(সম্প্রতি
ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসের প্রবীণ
নেতা প্রণব মুখার্জির বই ‘দি ড্রামেটিক ডিকেড দি ইন্দিরা গান্ধী ইয়ার্স
প্রকাশ করেছে দিল্লির রুপা পাবলিকেশন্স। এ বইয়ের একটি অধ্যায় ‘মুক্তিযুদ্ধ:
দি মেকিং অব বাংলাদেশ’ এর অবিকল তরজমা)
No comments