প্রথম ‘মেম্বারনি’ অনিতা by উজ্জ্বল মেহেদী
ইউপি সদস্য অনিতা পাত্র এক নারীর সঙ্গে কথা বলছেন l প্রথম আলো |
টিলার
উঁচুনিচু জমিতে ঘরবাড়ি। এক বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল দুই নারীর।
কথাবার্তা শেষে টিলা বেয়ে রাস্তায় ওঠার পথে দেখা। কী কথা হচ্ছিল?
সিলেটের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দলইপাড়া গ্রামের আদিবাসী নারী পারুল পাত্রের
কাছে এভাবেই জানতে চাওয়া।
কথা বলতে যেন রাজ্যের জড়তা বোধ করছিলেন পারুল। মাথায় ঘোমটা টানছিলেন আর বলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না। পরে এক টানেই বলেন, ‘আমরা তো অত কিছু জানতাম না। পয়লা পয়লা মেম্বারনির (ইউপি সদস্য) কাছ থাকি সবতা জানা-শেখা হয়।’ পারুলের সঙ্গের জন হচ্ছেন এই ‘মেম্বারনি’। নাম অনিতা পাত্র। তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আদিবাসী পাত্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাত্র নারী-পুরুষের কাছে তাই নিজ নামে নয়, ‘মেম্বারনি’ সম্মোধনে বেশি পরিচিত। গত বুধবার বিকেলে অনিতা পাত্রের সঙ্গে দলইপাড়ার পারুল পাত্রের জীবনে প্রথম ‘জানা’ বিষয়টি ছিল মাতৃত্বকালীন ভাতা। ইউপি থেকে সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা মেলে—শুধু এটুকু জানা ছিল পারুলের। একটু আগে অনিতা পাত্রের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন পারুল, স্বগতোক্তির সুরে বলেন, ‘মেম্বারনির যয়বার (যতবার) সাক্ষাৎ হয়, একটা না একটা বিষয় জানা হয়।’
এই ‘জানা’ শুধু একটি বিষয় বা একজন পারুলকে নিয়ে নয়। নিজের ইউনিয়নের সীমানা ছাড়িয়ে যেখানে পাত্র জনগোষ্ঠী, সেখানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় সচেতনতার কাজ করেন অনিতা পাত্র। চিকনাগুল ইউপির ঠাকুরেরমাটি, সেনাপতির টিলা, ভুবিরতল, গরান্দার, কালেশ্বরী, কহাইগড় গ্রাম পাত্র-অধ্যুষিত। এসব গ্রামেই যাতায়াত অনিতার।
২০১১ সালে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনিতা। এটা পাত্রদের হয়ে প্রথম কারও সরাসরি ভোটে লড়াই। চারজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ১ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান-১-এর দায়িত্বে রয়েছেন।
বাংলাদেশে আদিবাসী পাত্র জনগোষ্ঠীর বসবাস শুধু সিলেটেই। চতুর্দশ শতাব্দীর আগে থেকেই সিলেট অঞ্চলে তাদের বসবাস। ‘পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদ-পাসকপ’ নামের আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠনের ‘আর্থসামাজিক অবস্থা-২০১৪’ জরিপে বলা হয়, জেলায় ৩৩টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাত্র সম্প্রদায় অন্যতম। পাত্রদের ঐতিহাসিক নাম হচ্ছে ‘লালেং’। কিন্তু পাত্র ভাষায় পাথরকে ‘লালং’ বলা হয়। এ জন্য তারা নিজেদের মধ্যে ‘পাথর জাতি’ নামেও অভিহিত। সিলেটে মোট ১২টি গোত্রে বিভক্ত পাত্ররা।
অনিতার স্বামী ভুবেন্দ্র পাত্র পেশায় ভ্যানচালক। স্বামীর পেশার সুবিধার জন্য প্রায় ১০ বছর আগে দলইপাড়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পৈতৃক এলাকায় গিয়ে স্থায়ী হন। স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে অনিতার সংসার। বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই।
নির্বাচন করলেন কেন—জানতে চাইলে অনিতা হেসে বলেন, ‘আমি তো করি নাই। আমারে সবাই ধরছিল। কইলাম, আমার তো ইলেকশনে খরচপাতি করার মতো অর্থসম্পদ নাই। সবাই কইল খরচপাতি লাগব না, খাড়াও।’ এক প্রশ্নের জবাবে অনিতা পাত্র বলেন, পাত্র সম্প্রদায়সহ আদিবাসীরা স্বভাবতভাবে না জানার মতো অবস্থার মধ্যে থাকে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছরে তিনি পাঁচ শতাধিক পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করছেন।
পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও আদিবাসী দিবস উদ্যাপন পরিষদের সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক গৌরাঙ্গ পাত্র বলেন, ‘মানুষ ডাকার আগেই অনিতার দেখা পেয়ে যায়। একজন অনিতাকে দেখে আগামীতে আরও অনিতা বের হয়ে আসবে, এটা অনিতারও চাওয়া, আমাদেরও চাওয়া।’
কথা বলতে যেন রাজ্যের জড়তা বোধ করছিলেন পারুল। মাথায় ঘোমটা টানছিলেন আর বলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না। পরে এক টানেই বলেন, ‘আমরা তো অত কিছু জানতাম না। পয়লা পয়লা মেম্বারনির (ইউপি সদস্য) কাছ থাকি সবতা জানা-শেখা হয়।’ পারুলের সঙ্গের জন হচ্ছেন এই ‘মেম্বারনি’। নাম অনিতা পাত্র। তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আদিবাসী পাত্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাত্র নারী-পুরুষের কাছে তাই নিজ নামে নয়, ‘মেম্বারনি’ সম্মোধনে বেশি পরিচিত। গত বুধবার বিকেলে অনিতা পাত্রের সঙ্গে দলইপাড়ার পারুল পাত্রের জীবনে প্রথম ‘জানা’ বিষয়টি ছিল মাতৃত্বকালীন ভাতা। ইউপি থেকে সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা মেলে—শুধু এটুকু জানা ছিল পারুলের। একটু আগে অনিতা পাত্রের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন পারুল, স্বগতোক্তির সুরে বলেন, ‘মেম্বারনির যয়বার (যতবার) সাক্ষাৎ হয়, একটা না একটা বিষয় জানা হয়।’
এই ‘জানা’ শুধু একটি বিষয় বা একজন পারুলকে নিয়ে নয়। নিজের ইউনিয়নের সীমানা ছাড়িয়ে যেখানে পাত্র জনগোষ্ঠী, সেখানে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় সচেতনতার কাজ করেন অনিতা পাত্র। চিকনাগুল ইউপির ঠাকুরেরমাটি, সেনাপতির টিলা, ভুবিরতল, গরান্দার, কালেশ্বরী, কহাইগড় গ্রাম পাত্র-অধ্যুষিত। এসব গ্রামেই যাতায়াত অনিতার।
২০১১ সালে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনিতা। এটা পাত্রদের হয়ে প্রথম কারও সরাসরি ভোটে লড়াই। চারজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ১ হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর প্যানেল চেয়ারম্যান-১-এর দায়িত্বে রয়েছেন।
বাংলাদেশে আদিবাসী পাত্র জনগোষ্ঠীর বসবাস শুধু সিলেটেই। চতুর্দশ শতাব্দীর আগে থেকেই সিলেট অঞ্চলে তাদের বসবাস। ‘পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদ-পাসকপ’ নামের আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠনের ‘আর্থসামাজিক অবস্থা-২০১৪’ জরিপে বলা হয়, জেলায় ৩৩টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাত্র সম্প্রদায় অন্যতম। পাত্রদের ঐতিহাসিক নাম হচ্ছে ‘লালেং’। কিন্তু পাত্র ভাষায় পাথরকে ‘লালং’ বলা হয়। এ জন্য তারা নিজেদের মধ্যে ‘পাথর জাতি’ নামেও অভিহিত। সিলেটে মোট ১২টি গোত্রে বিভক্ত পাত্ররা।
অনিতার স্বামী ভুবেন্দ্র পাত্র পেশায় ভ্যানচালক। স্বামীর পেশার সুবিধার জন্য প্রায় ১০ বছর আগে দলইপাড়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পৈতৃক এলাকায় গিয়ে স্থায়ী হন। স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে অনিতার সংসার। বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই।
নির্বাচন করলেন কেন—জানতে চাইলে অনিতা হেসে বলেন, ‘আমি তো করি নাই। আমারে সবাই ধরছিল। কইলাম, আমার তো ইলেকশনে খরচপাতি করার মতো অর্থসম্পদ নাই। সবাই কইল খরচপাতি লাগব না, খাড়াও।’ এক প্রশ্নের জবাবে অনিতা পাত্র বলেন, পাত্র সম্প্রদায়সহ আদিবাসীরা স্বভাবতভাবে না জানার মতো অবস্থার মধ্যে থাকে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন বছরে তিনি পাঁচ শতাধিক পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করছেন।
পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও আদিবাসী দিবস উদ্যাপন পরিষদের সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক গৌরাঙ্গ পাত্র বলেন, ‘মানুষ ডাকার আগেই অনিতার দেখা পেয়ে যায়। একজন অনিতাকে দেখে আগামীতে আরও অনিতা বের হয়ে আসবে, এটা অনিতারও চাওয়া, আমাদেরও চাওয়া।’
No comments