‘মঙ্গল গ্রহে পৃথিবীর সুমেরু মহাসাগরের চেয়ে বড় মহাসাগর ছিল’
সুদূর
অতীতে ধূলায় ধূসরিত ও রক্তিম গ্রহ মঙ্গলে পৃথিবীর সুমেরু মহাসাগরের চেয়ে
বড় মহাসাগর ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি
গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, সম্ভবত, প্রায় ৪৩০
কোটি বছর আগে মঙ্গলে এতো বিপুল পরিমাণ জলরাশি ছিল যে, তা গ্রহটির সম্পূর্ণ
পৃষ্ঠদেশকে ৪৫০ ফুট বা ১৩৭ মিটার গভীর তরলের স্তরে নিমজ্জিত করতে পারতো।
নাসার বিবরণে বলা হয়, খুব সম্ভবত, মঙ্গল গ্রহের উত্তর গোলার্ধের প্রায়
অর্ধাংশ জুড়ে একটি মহাসাগর সৃষ্টি করেছিল বিপুল এ জলরাশি। এতে আরও বলা হয়,
মহাসাগরটির কোন কোন অংশে গভীরতা হয়তো ১ মাইল বা ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের
চেয়েও বেশি ছিল। ধারণা অনুযায়ী, সব মিলিয়ে মঙ্গল গ্রহের এ মহাসাগরে ২ কোটি
ঘন কিলোমিটার পানি ধারণক্ষমতা ছিল। কিন্তু, এর পর থেকে মহাকাশেই মিলিয়ে
গেছে ৮৭ শতাংশ পানি। নতুন এ গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক
‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা আইএএনএস। দীর্ঘ ৬ বছর
নানা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের পর মঙ্গল গ্রহে সুদূর অতীতে মহাসাগর থাকার
দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল গ্রহের বায়ুম-ল থেকে প্রাপ্ত খানিকটা
ভিন্নধর্মী ২ ধরনের পানির অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে তারা ভিন্নধর্মী পানির নমুনা দুটি বিশ্লেষণ
করেন। ভারি পানিতে থাকা হাইড্রোডেজেনের স্থায়ী আইসোটোপ ডিউটেরিয়ামের
অনুপাতের সঙ্গে সাধারণভাবে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত পানির অনুপাতের তুলনামূলক
পর্যালোচনা করেন তারা। নানা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের পর বিজ্ঞানীরা
সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহ থেকে সাড়ে ৬ গুণ পরিমাণ পানি
মহাকাশে মিলিয়ে গেছে। আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের ১৭ শতাংশ
স্থান দখল করে আছে। সেভাবে তুলনা করলে, মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন মহাসাগর
পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের ১৯ শতাংশ দখল করতো। নাসার ‘গোডার্ড স্পেস ফাইট
সেন্টার’-এর জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের লেখক মাইকেল মুমা বলেন, মঙ্গল
থেকে এতো বিপুল পরিমাণ জলরাশি মিলিয়ে যাওয়ার অর্থ, পূর্বের ধারণার তুলনায়
গ্রহটি দীর্ঘ সময় আর্দ্র ছিল। তিনি বলেন, মঙ্গল গ্রহ দীর্ঘ সময়ের জন্য
বসবাসযোগ্য ছিল, এমন ইঙ্গিতই বহন করছে এ গবেষণা।
No comments