সৌদিতে গৃহকর্মী পাঠানোর চুক্তি, প্রচারণা ভিন্ন by রোকনুজ্জামান পিয়াস
খুবই সীমিত পরিসরে শুধু গৃহকর্মী নিতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এনিয়ে ভিন্ন প্রচারণা ছিল। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তড়িঘড়ি করে রেজিস্ট্রেশনের জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়। এরপরই শুরু হয় রেজিস্ট্রেশনের হিড়িক। রাজধানীসহ ৬৪টি জেলায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। তবে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠার পর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। তড়িঘড়ি করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌদির জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়নি। দেশটি থেকে চাহিদা আসার পরই রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। কিন্তু এর আগেই সারা দেশে লক্ষাধিক মানুষ রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফরম পূরণ করে। নিজ এলাকা ছাড়াও প্রবাসী ভবনের সামনে ফরম পূরণ করতে হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জড়ো হয় সৌদি গমনেচ্ছু মানুষ। অব্যাহত ভিড় সামলাতে না পেরে অবশেষে ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবে জনশক্তি পাঠানো নিয়ে বিএমইটি’র বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, মানুষ তো ঠকে শেখে। এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে তো শুধু সৌদি আরবের নাম নিবন্ধনের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের জন্য। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি আরবে নারী কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু যেনতেন প্রকারে শ্রমবাজার ধরলেই চলবে না। সৌদিতে নারী কর্মীদের নিরাপত্তা বিভিন্ন দেশে প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নারীকর্মীরা প্রায়ই শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই নিয়মিত বেতন পায় না। এ কারণে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশ সেখানে নারী কর্মী পাঠানো এক প্রকার বন্ধই করে দিয়েছে।
এদিকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ‘সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে চাকরি নিয়ে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের জন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিদেশ গমনের জন্য রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ডিজিটাল মেলায় সাময়িকভাবে রেজিস্ট্রেশন স্টল খোলা হয়েছিল। অনিবার্যকারণবশত ডিজিটাল মেলায় স্টলে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে সৌদি আরবসহ বিশ্বের যে কোন দেশে গমনেচ্ছুক ব্যক্তি বিএমইটির অধীনস্থ সকল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে অফিস চলাকালীন সময়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এর আগে যারা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে গমনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ শ্রমবাজার খুলে যাচ্ছে- কয়েকদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এমন প্রচারণার কারণে বিজ্ঞপ্তিটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৌদি গমনেচ্ছুদের। কিন্তু তখনও পর্যন্ত চুক্তিই স্বাক্ষর হয়নি। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী খাতে শ্রমিক পাঠাতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় গৃহস্থালি কাজের জন্য ১২ ধরনের কর্মী নেয়ার কথা বলে সৌদি আরব। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার এবং সৌদি আরবের পক্ষে দেশটির উপ শ্রমমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদ এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, এই চুক্তির আওতায় ১২ ধরনের গৃহকর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে শুধু গৃহপরিচারিকার (হাউজমেড) ন্যূনতম বেতন ৮০০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৭ হাজার) ঠিক করা হয়েছে। বাকি ১১ ধরনের কর্মীদের বেতনের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি। বাকি খাতগুলো হলো- কেয়ার গিভার, বেবি সিটার, মালি, গার্ড, ক্লিনার, ড্রাইভার, কুক পেশায় দেশটিতে লোক নেবে। তবে প্রথমে শুধু নারী কর্মী নেবে বলে সৌদি আরব জানায়। কিন্তু ঢালাওভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় সময়-শ্রম নষ্ট করে অর্থ খুইয়ে গমনেচ্ছুুরা রেজিস্ট্রেশন করতে ভিড় জমায়। তবে ওই সময় নারীকর্মী সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। শুধুমাত্র ওই সময়ের মধ্যে সারা দেশে লক্ষাধিক সৌদি গমনেচ্ছু মানুষ ফরম পূরণ করেছেন। আর প্রতিজনের কাছ থেকে এ বাবদ নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা করে। তবে এলাকা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া বাবদ একেকজনের প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। দালাল চক্রও হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অন্যদিকে সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই সৌদি প্রবাসীরা নিরুৎসাহিত করতে থাকে। তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিএমইটি’র একটি ভুল মেসেজের কারণে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিলো যে, সবাই দেশটিতে যেতে পারবেন। কিন্তু আদতে এমন কিছুই না। এছাড়া প্রাথমিকভাবে নারী কর্মীদের নেয়ার কথা বলা হলেও পুরুষরাই মূলত রেজিস্ট্রেশনের জন্য আসে।
এদিকে অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরু’র চেয়ার অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সরকার শুধুমাত্র কর্মী পাঠানোকেই দায়িত্ব মনে করে। কিন্তু তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু নিয়োগকর্তার ওপর ছেড়ে দিলেই হবে না। এজন্য তিনি সেখানে শেল্টার হোম, মাসে অন্তত একবার খোঁজখবর নেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এর আগেও সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হলে সারা দেশে ১৪ লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছিল। কিন্তু দুই বছরে সেখান থেকে মাত্র ৭ হাজারের মতো কর্মী গেছে।
এদিকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ‘সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে চাকরি নিয়ে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের জন্য জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিদেশ গমনের জন্য রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ডিজিটাল মেলায় সাময়িকভাবে রেজিস্ট্রেশন স্টল খোলা হয়েছিল। অনিবার্যকারণবশত ডিজিটাল মেলায় স্টলে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে সৌদি আরবসহ বিশ্বের যে কোন দেশে গমনেচ্ছুক ব্যক্তি বিএমইটির অধীনস্থ সকল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে অফিস চলাকালীন সময়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এর আগে যারা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে গমনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ শ্রমবাজার খুলে যাচ্ছে- কয়েকদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এমন প্রচারণার কারণে বিজ্ঞপ্তিটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৌদি গমনেচ্ছুদের। কিন্তু তখনও পর্যন্ত চুক্তিই স্বাক্ষর হয়নি। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী খাতে শ্রমিক পাঠাতে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় গৃহস্থালি কাজের জন্য ১২ ধরনের কর্মী নেয়ার কথা বলে সৌদি আরব। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার এবং সৌদি আরবের পক্ষে দেশটির উপ শ্রমমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদ এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, এই চুক্তির আওতায় ১২ ধরনের গৃহকর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে শুধু গৃহপরিচারিকার (হাউজমেড) ন্যূনতম বেতন ৮০০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৭ হাজার) ঠিক করা হয়েছে। বাকি ১১ ধরনের কর্মীদের বেতনের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি। বাকি খাতগুলো হলো- কেয়ার গিভার, বেবি সিটার, মালি, গার্ড, ক্লিনার, ড্রাইভার, কুক পেশায় দেশটিতে লোক নেবে। তবে প্রথমে শুধু নারী কর্মী নেবে বলে সৌদি আরব জানায়। কিন্তু ঢালাওভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় সময়-শ্রম নষ্ট করে অর্থ খুইয়ে গমনেচ্ছুুরা রেজিস্ট্রেশন করতে ভিড় জমায়। তবে ওই সময় নারীকর্মী সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। শুধুমাত্র ওই সময়ের মধ্যে সারা দেশে লক্ষাধিক সৌদি গমনেচ্ছু মানুষ ফরম পূরণ করেছেন। আর প্রতিজনের কাছ থেকে এ বাবদ নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা করে। তবে এলাকা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া বাবদ একেকজনের প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। দালাল চক্রও হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অন্যদিকে সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই সৌদি প্রবাসীরা নিরুৎসাহিত করতে থাকে। তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিএমইটি’র একটি ভুল মেসেজের কারণে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিলো যে, সবাই দেশটিতে যেতে পারবেন। কিন্তু আদতে এমন কিছুই না। এছাড়া প্রাথমিকভাবে নারী কর্মীদের নেয়ার কথা বলা হলেও পুরুষরাই মূলত রেজিস্ট্রেশনের জন্য আসে।
এদিকে অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন রামরু’র চেয়ার অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সরকার শুধুমাত্র কর্মী পাঠানোকেই দায়িত্ব মনে করে। কিন্তু তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু নিয়োগকর্তার ওপর ছেড়ে দিলেই হবে না। এজন্য তিনি সেখানে শেল্টার হোম, মাসে অন্তত একবার খোঁজখবর নেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এর আগেও সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হলে সারা দেশে ১৪ লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছিল। কিন্তু দুই বছরে সেখান থেকে মাত্র ৭ হাজারের মতো কর্মী গেছে।
No comments