ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি by শামীমুল হক
চারদিকে
গাঢ় অন্ধকার। আকাশে কাল মেঘ। ধেয়ে আসছে সুনামি। নিশ্চিত ধ্বংসযজ্ঞ জেনেও
নির্বাক সবাই। কোন হাঁকডাক নেই। নেই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচার চেষ্টা। নেই
সুনামি ঠেকানোর কোন প্রক্রিয়া। এ অবস্থায়ই এগিয়ে যাচ্ছে সময়। রাত গড়িয়ে দিন
আবার দিন গড়িয়ে রাত। অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনই এক অবস্থা দেশের। যে
অবস্থা দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পেছনে। যে অবস্থায় কোন প্রকারেই কারও মঙ্গল
বয়ে আনতে পারে না। এখন আমরা এগিয়ে যাবো কিভাবে? লাগাতার অবরোধের মাঝেই
আবার ঘোষণা আসছে হরতালের। রাজধানীর চিত্র দেখলে অবরোধ কিংবা হরতাল কোন
কিছুই বুঝার উপায় নেই। যেন মনে হয় সবকিছু স্বাভাবিক। বাস্তবে তা নয়।
দূরপাল্লার কোন গাড়ি চলছে না। যদিও দু-একটি লোকাল বাস চলছে তাও আতঙ্কের
মধ্যে। আমদানি-রপ্তানি প্রায় বন্ধ। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট।
ব্যবসায়ীরা বসে আছেন কর্মহীন অবস্থায়। অর্থনীতির চাকা অচল না হলেও এভাবে
কতদিন সচল থাকবে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। অর্থনীতিবিদরা বিশ্লেষণ করছেন ভয়াবহ
সঙ্কট হিসাবে। প্রতিদিনই মানুষ ঘুমাতে যায় একটি স্বপ্ন নিয়ে। একটি আশা
নিয়ে। ঘুম থেকে জেগে আশার বাণী শুনবেন সে আশা নিয়েই ঘুমাতে যান তারা।
কিন্তু দিনের পর দিন আশাহত হচ্ছেন মানুষ। যে মানুষকে নিয়ে দেশ। যে মানুষের
ওপর ভরসা করে রাজনীতি। যে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া তারাই আজ
অবহেলিত। কেউ-ই তাদের কথা ভাবছেন না। কেউ-ই তাদের নিয়ে হিসাব মেলাতে চাইছেন
না। বরং কেউ কেউ এ মানুষকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা করছে। কেউ বা দগ্ধ হয়ে
কাতরাচ্ছে। যত দিন বেঁচে থাকবেন তিনি পেট্রলবোমা তাকে তাড়া করে ফিরবে।
কেউবা ক্রসফায়ারের নামে এসব মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে। তাদের
পরিবার পরিজন আজীবন এ শোক বয়ে বেড়াবে। গুম সংস্কৃতি এখন ফের চাঙ্গা হয়ে
উঠেছে। এ সংস্কৃতি খুব ভয়ঙ্কর। এ থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসা যাবে ততই
মঙ্গল। কেউ হিসাব মেলান না। এ হিসাব না মেলানোই হলো সমস্যা। সবারই একটা
হিসাব থাকে। সংসার চালাতে যেমন হিসাবের প্রয়োজন, তেমনি দেশ চালাতেও হিসাবের
প্রয়োজন। দল চালাতেও যেমন হিসাব লাগে, তেমনি রাজনীতি করতেও লাগে হিসাব। আর
হিসাব না করে চললে সংসারের কোন সদস্য বিগড়ে যেতে পারে। কিংবা সে বেলাইনে
চলে যেতে পারে। তাকে লাইনে রাখার জন্য, সুপথে পরিচালিত করার জন্য সংসারের
কর্তাকে হিসাব করে চলতে হয়। একটু বেহিসেবি হলেই সমস্যা এসে ভর করে সংসারে।
তখন তাল সামলানো বেকায়দা হয়ে পড়ে। তেমনি রাজনীতিতেও হিসাব করে চলতে হয়। দেশ
চালাতেও প্রয়োজন হয় হিসাবের। অঙ্কের হিসাব অবশ্য বড় জটিল। কখনও কখনও
একভাবে অঙ্ক কষলে হয় আরেক। কখনও কখনও ভুল অঙ্কে জেরবার হয়ে পড়ে সবকিছু।
লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে সব। এ অবস্থায় কি করা যায়? একটাই সমাধান, সংসারের সবার
সঙ্গে বসে আলোচনা করা। সংসারের যে সদস্য কথা শুনছে না তাকেও আদর করে কাছে
ডাকা। সবার মতামত নিয়ে সামনের পথ চলা। তাহলেই হয়তো ওই সংসার জেরবার না হয়ে
লাগে জোড়া। সবার মনে ফের দেখা দেয় আনন্দ। উল্লাস। দেশওতো একটি সংসার। একটি
পরিবার। বাংলাদেশ নামক এ সংসারের কর্তা প্রধানমন্ত্রী। তার সামনে দেশ এভাবে
জ্বলছে, নিশ্চয় তিনি এতে ব্যথা পাচ্ছেন। প্রকাশ্যে তিনি কেঁদেছেনও। দেশের
জন্য অবশ্যই তার দরদ অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। কারণ, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তার পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশ নামক গোলাপ ফুলের সৃষ্টি। যে গোলাপ তিনি এখন
পাহারা দিচ্ছেন। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের এ পর্যায়ে এসেছেন তিনি। তাই
তার ওপর দেশবাসীর আশা অনেক। ভরসারস্থলও তিনি। তার কর্মকাণ্ডে দেশবাসী আশাহত
হতে চান না। সবাই চেয়ে আছেন তার দিকে। নিশ্চয় তিনি সংলাপে বসে এ সমস্যার
সমাধান করবেন। আকাশের কাল মেঘ সরাতে তিনি এ কাজ করবেন দেশবাসী এটাই কামনা
করেন। এভাবে হলে দেশের মানুষ তাকেই বাহবা দেবেন। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
তাছাড়া যে কোন দেশে সমস্যা দেখা দিলে দলমত নির্বিশেষে সবাই এক টেবিলে গিয়ে
বসেন। দিনের পর দিনি আলোচনা করেন। তারপর সমাধানে পৌঁছান। পার্শ্ববর্তী দেশ
ভারতে এ ধরনের উদাহরণ ভূরি ভূরি। ভারতে বিজেপি আর কংগ্রেস দা-কুমড়া
সম্পর্ক। কিন্তু ক’দিন আগে আমরা কি দেখলাম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক
ওবামাকে ঘিরে একদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, অন্যদিকে বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কি চমৎকার সে দৃশ্য। তাছাড়া কোন সমস্যা দেখা
দিলে তারা দেশকে আগে প্রাধান্য দিয়ে একসঙ্গে এক টেবিলে বসে সমাধান করেন। আর
এজন্যই হয়তো কংগ্রেসের সঙ্গে এত সুসম্পর্ক থাকার পরও আওয়ামী লীগ সরকার
তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। আর এজন্য সব ঠিক থাকার
পরও তিস্তা চুক্তি হয়নি। অথচ বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু
মনি বারবার বলে বেড়িয়েছেন তিস্তা চুক্তি হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম ভারতের
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এলেন। বেড়ালেন। কিন্তু তিস্তা চুক্তি হলো না। সেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার রাতে বাংলাদেশ সফর করে তার দেশে ফিরে গেছেন।
এবারও এ বার্তাই দিয়ে গেছেন, তিস্তা চুক্তিতে টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে।
অবশ্য তিনি তার ওপর আস্থা রাখার কথাও বলে গেছেন। মানুষ যা বুঝার বুঝে গেছে।
থাকগে, সেসব কথা না বলে আমার দেশ নিয়েই চিন্তা করি। মানুষ এ অবস্থা থেকে
মুক্তি চায়। এটা কেমন করে বললে রাজনীতিকরা বুঝবেন সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
শামীমুল হক |
No comments