আসুন, বসন্তে বেগুনি হই by উম্মে মুসলিমা
আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর তাৎপর্যের ওপর এগুলোর পোস্টার বা প্রতীকের রং বেছে নেওয়া হয়। যেমন বিশ্ব শান্তি দিবস সবুজাভ নীল, বিশ্ব শ্রম দিবস বা মে দিবস লাল, বিশ্ব পরিবেশ দিবস সবুজ, সিডও বাস্তবায়ন দিবস কমলা ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস মূলত বেগুনি, সঙ্গে সাদা। কেন এই বেগুনি রং? কারণ, এ রং ভেনাসের, যা কিনা নারীরও প্রতীক। বেগুনি নির্দেশ করে সুবিচার ও মর্যাদা, যা দৃঢ়ভাবে নারীর সমতায়নে সংশ্লিষ্ট।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর এ দিবসের আহ্বান ‘মেইক ইট হ্যাপেন’। বাংলায় ‘একে কার্যকরী করো’ অথবা খোলাসা করে বললে নারীর উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। বিশ্বের প্রতিটা দেশের মানুষ এবং তাদের নীতিনির্ধারণের কাছেই এ আবেদন। বাংলাদেশে এ আবেদন আরও গুরুত্ব বহন করে। কারণ, বলা হচ্ছে বাংলাদেশে গত দুই দশকে মানবিক খাতে নারীর ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হলেও ক্ষমতায়নের জায়গাটি এখনো দুর্বল। অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, নির্যাতন বন্ধে ও সম্পদের অধিকারে নারীর অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
নারীর চলার পথকে সুগম করার জন্য ব্যক্তিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক ইতিবাচক পদক্ষেপ যেমন জরুরি, তেমনি অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সমতায়ন নিয়ে এত আশা-প্রত্যাশার মধ্যেও নারীর বিয়ের বয়স ১৮ থেকে নামিয়ে ১৬ করার জন্য যে রাষ্ট্র হুজুগ তোলে, সেখানে ‘মেইক ইট হ্যাপেন’কে নীতিনির্ধারকেরা কোন অর্থে গ্রহণ করেন, সেটাও ভাবার বিষয়। কেবল ভোটে জেতার হিসাব-নিকাশ করলে নারীর ক্ষমতায়নের অভিযাত্রা রাষ্ট্রের শীর্ষ পদেই আবর্তিত হতে থাকবে দিনের পর দিন, আমনারীর কপালে শিকে ছিঁড়বে না।
এবারের স্লোগানের অন্তর্নিহিত কথাগুলো হলো—
ক. নারীর সমানাধিকারে অধিকতর সচেতনতা
খ. উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও বেশি নারী
গ. শিল্প-সংস্কৃতিতে নারীর সমস্বীকৃতি
ঘ. নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে প্রসার বৃদ্ধি
ঙ. নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সম্প্রসারণ
চ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরও বেশি নারী
ছ. ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীর স্বীকৃতিতে স্বচ্ছতা।
নারীর প্রতি সামাজিক-রািষ্ট্রক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে প্রতিবছর বিশ্ব নারী দিবসের ঝান্ডা উড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়ন অর্জিত হবে না। বিশ্বকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেওয়া ভারতে সংঘটিত বাসের মধ্যে নৃশংস যৌনসন্ত্রাসের পরও মাঝেমধ্যেই নারীরা একই অবস্থার শিকার হয়ে চলেছেন। বাংলাদেশেও মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে, চট্টগ্রামে অটোরিকশায় নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ভারতে একজন বিদেশি পর্যটকও এর শিকার হয়েছেন মাত্র কদিন আগেই। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীহত্যা যেন কাশ্মীর সমস্যার মতো অনন্তকালীন। আইন বা ভয়ভীতির তোয়াক্কা করেন না ক্ষমতাধরেরা, ক্ষমতাহীনেরা তো তিমিরপ্রাপ্ত।
তবে বাংলাদেশ থেমে নেই। এ দেশ পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইলা মিত্রের, অস্ত্র চালিয়ে শুত্রুর মোকািবলা করা প্রীতিলতার, রাজাকারের বিচার চাওয়া অকুতোভয় শহীদজননী জাহানারা ইমামের। শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের নারী অন্য পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী লিন ফেদারস্টোন নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে সফলতা দেখিয়েছে, তা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলেছেন। টিভির এক টক শোতে আইনজীবী সুলতানা কামাল বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ যে অবস্থান করে নিয়েছে, সেটা নারীর অগ্রসরতাকে ঘিরেই সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘ ‘দ্রুত এগিয়ে চলা’ ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে।
তাই বলা যায়, এবারের নারী দিবসের স্লোগানে অন্তর্ভুক্ত প্রত্যাশাগুলোর কোনোটিই বাংলাদেশের নারীদের ক্ষেত্রে একেবারে অনুপার্জিত নয়। সমানাধিকারের সচেতনতা, উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিল্প-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-ক্রীড়ায় সাফল্যে এ দেশের নারীরা প্রশংসাজনক দৃষ্টান্ত রাখছেন। যে পোশাকশিল্প আমাদের অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে, সেই পোশাকশিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই নারী।
তবে আমরা আশা করি, যা কিছু অপ্রাপ্তি তার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেবল নারীদের বেগুনি আভা ছড়িয়েই ফুরিয়ে যাবে না। যে বেগুনির অর্থ সুবিচার ও মর্যাদা, সে বেগুনি রঙের ফিতা বুকে ঝুলিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে যাঁরা মানুষের গৌরব ভাবেন, সেসব পুরুষও এগিয়ে এসে বলবেন, ‘ওকে, লেটস মেইক ইট হ্যাপেন’।
উম্মে মুসলিমা: কথাশিল্পী।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর এ দিবসের আহ্বান ‘মেইক ইট হ্যাপেন’। বাংলায় ‘একে কার্যকরী করো’ অথবা খোলাসা করে বললে নারীর উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। বিশ্বের প্রতিটা দেশের মানুষ এবং তাদের নীতিনির্ধারণের কাছেই এ আবেদন। বাংলাদেশে এ আবেদন আরও গুরুত্ব বহন করে। কারণ, বলা হচ্ছে বাংলাদেশে গত দুই দশকে মানবিক খাতে নারীর ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হলেও ক্ষমতায়নের জায়গাটি এখনো দুর্বল। অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, নির্যাতন বন্ধে ও সম্পদের অধিকারে নারীর অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
নারীর চলার পথকে সুগম করার জন্য ব্যক্তিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক ইতিবাচক পদক্ষেপ যেমন জরুরি, তেমনি অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, সমতায়ন নিয়ে এত আশা-প্রত্যাশার মধ্যেও নারীর বিয়ের বয়স ১৮ থেকে নামিয়ে ১৬ করার জন্য যে রাষ্ট্র হুজুগ তোলে, সেখানে ‘মেইক ইট হ্যাপেন’কে নীতিনির্ধারকেরা কোন অর্থে গ্রহণ করেন, সেটাও ভাবার বিষয়। কেবল ভোটে জেতার হিসাব-নিকাশ করলে নারীর ক্ষমতায়নের অভিযাত্রা রাষ্ট্রের শীর্ষ পদেই আবর্তিত হতে থাকবে দিনের পর দিন, আমনারীর কপালে শিকে ছিঁড়বে না।
এবারের স্লোগানের অন্তর্নিহিত কথাগুলো হলো—
ক. নারীর সমানাধিকারে অধিকতর সচেতনতা
খ. উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও বেশি নারী
গ. শিল্প-সংস্কৃতিতে নারীর সমস্বীকৃতি
ঘ. নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে প্রসার বৃদ্ধি
ঙ. নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সম্প্রসারণ
চ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরও বেশি নারী
ছ. ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীর স্বীকৃতিতে স্বচ্ছতা।
নারীর প্রতি সামাজিক-রািষ্ট্রক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে প্রতিবছর বিশ্ব নারী দিবসের ঝান্ডা উড়িয়ে নারীর ক্ষমতায়ন অর্জিত হবে না। বিশ্বকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেওয়া ভারতে সংঘটিত বাসের মধ্যে নৃশংস যৌনসন্ত্রাসের পরও মাঝেমধ্যেই নারীরা একই অবস্থার শিকার হয়ে চলেছেন। বাংলাদেশেও মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে, চট্টগ্রামে অটোরিকশায় নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ভারতে একজন বিদেশি পর্যটকও এর শিকার হয়েছেন মাত্র কদিন আগেই। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীহত্যা যেন কাশ্মীর সমস্যার মতো অনন্তকালীন। আইন বা ভয়ভীতির তোয়াক্কা করেন না ক্ষমতাধরেরা, ক্ষমতাহীনেরা তো তিমিরপ্রাপ্ত।
তবে বাংলাদেশ থেমে নেই। এ দেশ পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইলা মিত্রের, অস্ত্র চালিয়ে শুত্রুর মোকািবলা করা প্রীতিলতার, রাজাকারের বিচার চাওয়া অকুতোভয় শহীদজননী জাহানারা ইমামের। শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের নারী অন্য পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী লিন ফেদারস্টোন নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যে সফলতা দেখিয়েছে, তা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলেছেন। টিভির এক টক শোতে আইনজীবী সুলতানা কামাল বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ যে অবস্থান করে নিয়েছে, সেটা নারীর অগ্রসরতাকে ঘিরেই সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘ ‘দ্রুত এগিয়ে চলা’ ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রেখেছে।
তাই বলা যায়, এবারের নারী দিবসের স্লোগানে অন্তর্ভুক্ত প্রত্যাশাগুলোর কোনোটিই বাংলাদেশের নারীদের ক্ষেত্রে একেবারে অনুপার্জিত নয়। সমানাধিকারের সচেতনতা, উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, শিল্প-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-ক্রীড়ায় সাফল্যে এ দেশের নারীরা প্রশংসাজনক দৃষ্টান্ত রাখছেন। যে পোশাকশিল্প আমাদের অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে, সেই পোশাকশিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই নারী।
তবে আমরা আশা করি, যা কিছু অপ্রাপ্তি তার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেবল নারীদের বেগুনি আভা ছড়িয়েই ফুরিয়ে যাবে না। যে বেগুনির অর্থ সুবিচার ও মর্যাদা, সে বেগুনি রঙের ফিতা বুকে ঝুলিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে যাঁরা মানুষের গৌরব ভাবেন, সেসব পুরুষও এগিয়ে এসে বলবেন, ‘ওকে, লেটস মেইক ইট হ্যাপেন’।
উম্মে মুসলিমা: কথাশিল্পী।
No comments