প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ দিয়ে শান্তি আসবে না by আলী ইদরিস
দেশের
১৬ কোটি মানুষের সৌভাগ্য যে, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ
হয়ে ধর্ম, বর্ণ, পেশা, দল, মত নির্বিশেষে মাত্র ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে
পাকিস্তানের মতো একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা
ছিনিয়ে এনেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের পর গণতন্ত্রও অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু সেই
গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি প্রধান
খালেদা জিয়া হাতে হাত ধরে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে কবর দেয়া
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষের
সুখে- শান্তিতে বাঁচার অধিকার, ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দুর্নীতিমুক্ত
দেশ। এ দেশের মানুষের আরও সৌভাগ্য যে, দুই নেত্রীর নেতৃত্বে দু’টি বৃহৎ দল
পর্যায়ক্রমে দেশ শাসন করে আসছিল। ২০০১ সালে বিএনপিকে এবং ২০০৮ সালে
মহাজোটকে ভোট দিয়ে যেভাবে নিরঙ্কুশ বিজয় এনে দিয়েছিল এ দেশের মানুষ সেটা কি
ভুল হয়েছিল? ভুল আমাদের হয় নি। ভোট তো আমাদের যে কোন এক দলকে দিতেই হবে।
কিন্তু উভয় বছরে আমরা ভোটারগণ ক্ষমতাসীন দলের কর্মকাণ্ডকেই বিবেচনায়
নিয়েছিলাম। সুতরাং ভোটার নয়, রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডই তাদের জয় বা পরাজয়ের
জন্য দায়ী। জলের মতো এই সহজ সত্যিটি রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করেও না
করার ভান করে। তারা আমাদের নেতানেত্রী, হর্তাকর্তা এবং মহান পেশার অধিকারী
হয়েও এক দল পেট্রলবোমা ফাটিয়ে মানুষ হতাহত করছে আর এক দল রাষ্ট্রীয় শক্তি
প্রয়োগ করে বিরোধীদলকে দমন করতে যেয়ে নিরপরাধ মানুষকেও হতাহত করছে। অর্থাৎ
দু’দলই পেশিশক্তি প্রয়োগ করছে যা গণতান্ত্রিক পরিসরে কাম্য নয়। সহিংসতা,
নিরপরাধ মানুষ হত্যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটা অত্যন্ত ঘৃণার বিষয়। এটা
সত্য যে দুই জোটই এ সময়ে খারাপ নজির স্থাপন করছে। খারাপ নজির এ হতভাগ্য
দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অশনি সংকেত। যে
দলই রাষ্ট্রীয় বা দলীয় ক্ষমতার বলে প্রতিপক্ষের ওপর অত্যাচার, অবিচার,
নির্মম আচরণ করবে তার ওপর প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নেমে আসবে যা গণতন্ত্র,
দেশ, জনমানুষ তথা অর্থনীতিকে অশান্ত, অস্থিতিশীল করে তুলবে। একটি ছোট
পরিবারেও এক সন্তান নামাজ পড়বে, অন্যজন পড়বে না, একটি পাড়ায় ১০ ঘর
মোহামেডানকে, বাকি ১০ ঘর আবাহনীকে সমর্থন করতে পারে। তাই বলে শান্তিপূর্ণ
সহাবস্থান না করে যদি একপক্ষ আরেক পক্ষকে নির্মূল করতে চায়, তাহলে
সহিংসতা, সংঘর্ষ ঘটতে পারে। জঙ্গলেও প্রকৃতির নিয়মে বনরাজ সিংহ তার
প্রতিপক্ষ বাঘ ও চিতাকে সহাবস্থান করতে দেয়। এ হতভাগ্য দেশে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এলেই ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য যত
রকম ফন্দি-ফিকির, কৌশল অবলম্বন করে। তাতে বিরোধী দল প্রতিবাদ প্রতিরোধ করে।
ফলে বিরোধ, অশান্তি, হরতাল-অবরোধ দেখা দেয়। অথচ পাশে পৃথিবীর বৃহত্তম
গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে বাংলাদেশের প্রায় আটগুণ বেশি জনসংখ্যা নিয়েও কত
শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা দেখে আমরা শিক্ষা নিতে
পারি না। সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে আমাদের আর কত যুগ লাগবে?
যে মহান আদর্শ, স্বপ্ন, প্রত্যয় ও সংকল্প বুকে নিয়ে শহীদগণ আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই স্বাধীনতা কি আমরা অর্জন করেছি? নিশ্চয়ই অনেক কিছু অর্জন করেছি, আবার অনেক কিছু অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু অনেক অর্জনকেই ধরে রাখতে পারি নি বলে অভীষ্ট স্থানে অবিচল থাকতে পারি নি, পিছিয়ে গেছে উন্নতির বাংলাদেশ। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ কোন সরকারই আজ পর্যন্ত দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেনি। দুর্নীতি দূর করতে হলে যতটুকু সুশাসন প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোন সরকার।
যে মহান আদর্শ, স্বপ্ন, প্রত্যয় ও সংকল্প বুকে নিয়ে শহীদগণ আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই স্বাধীনতা কি আমরা অর্জন করেছি? নিশ্চয়ই অনেক কিছু অর্জন করেছি, আবার অনেক কিছু অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু অনেক অর্জনকেই ধরে রাখতে পারি নি বলে অভীষ্ট স্থানে অবিচল থাকতে পারি নি, পিছিয়ে গেছে উন্নতির বাংলাদেশ। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ কোন সরকারই আজ পর্যন্ত দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেনি। দুর্নীতি দূর করতে হলে যতটুকু সুশাসন প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোন সরকার।
No comments