কূটনীতিকদের টেবিলে এখন তারানকোর ফর্মুলা
এই
মুহূর্তে বিদেশী কূটনীতিকদের আলোচনার টেবিলে স্থান পেয়েছে নির্বাচনকালীন
সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেস
তারানকোর ফর্মুলা। গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে দুই দলকে সমঝোতায়
পৌঁছতে এই ফর্মুলা দিয়েছিলেন তারানকো। এতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কিছুটা
খর্ব করে তার নেতৃত্বে অথবা রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন
সরকার গঠনের প্রস্তাব ছিল। তবে কূটনীতিকদের টেবিলে তারানকোর ফর্মুলা
স্থান পেলেও এ মুহূর্তে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা তাদের প্রধান অগ্রাধিকার
বলে জানা গেছে। সেই লক্ষ্যেই তারা দু’পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা
করে চলেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সম্প্রতি এই বিশ্ব সংস্থার সহকারী
মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেস তারানকোকে দুই দলের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁর
দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তমান সংকট সমাধানে তারানকো বাংলাদেশে আসতে চাইলেও এখনও
পর্যন্ত মেলেনি সরকারের সবুজ সংকেত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দলের সঙ্গে
যোগাযোগ শুরু করেছেন ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও
যুক্তরাজ্যসহ ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূতরা। ইতিমধ্যেই কূটনীতিকদের এই গ্রুপের
পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল পৃথকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই সঙ্গে বিদেশী
কূটনীতিকরা সমাধান সূত্র খুঁজে পেতে সুশীল সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা
করছেন। তাদের পরামর্শও গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন কূটনীতিকরা।
কূটনীতিকদের তৎপরতার পাশাপাশি চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের সুশীল সমাজও। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ পৃথক একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
সূত্র মতে, কূটনীতিকরা তাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন। প্রাথমিকভাবে তারা আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সহিংসতা বন্ধ করা, হরতাল ও অবরোধ স্থগিত করা, নাশকতায় জড়িতদের বিচার এবং জামায়াতকে আলোচনা থেকে দূরে রাখা। অপরদিকে বিএনপির দেয়া শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়াসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবাধে পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা। সরকার আন্তরিকভাবে এসব শর্ত পূরণে উদ্যোগ নিলে চলমান আন্দোলন স্থগিত বা শিথিল করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। সংঘাত বন্ধ হলে দুই দলের মধ্যে একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা আলোচনায় আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকোর সফরকালে নির্বাচনকালীন সরকারে সংবিধানের আওতায় সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সব পক্ষই একমত হয়েছিল। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাবে আপত্তি করেছিল আওয়ামী লীগ। ফলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা এবারও এ ফর্মুলা কার্যকর হবে না। কূটনীতিকরা স্পষ্ট মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বারবার যাতে ফিরে না আসে সেজন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। এমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হলে নির্বাচনের ফল দু’পক্ষই মেনে নেবে বলে কূটনীতিকদের ধারণা।
সূত্র মতে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকোর মধ্যস্থতায় আলোচনায় রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবও আলোচনায় ছিল। সেই আলোচনা এবারও ফিরে আসতে পারে এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন। তবে গোটা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সচল রাখা, বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে সংকট নিরসন করতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা পর্দার আড়ালে কাজ করছেন। ১৬ কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ আরাফাত সমন্বয় করছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষে যোগাযোগ করছেন সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে কোনো একটা সমাধানের কাছাকাছি গেলে এবং পরবর্তীকালে সরকারের সম্মতি পেলে জাতিসংঘ থেকে অস্কার ফার্নান্দেস তারানকো বাংলাদেশে আসতে পারেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান জটিল পরিস্থিতি রাতারাতি সমাধানের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কূটনীতিকরা অনেক বেশি দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করতে চান। আপাতত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে জ্বালাময়ী বক্তব্য পরিহার করার জন্য কূটনীতিকরা সরকার ও বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন।
কূটনীতিকদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সবাই চাচ্ছেন বর্তমান সংকটের সমাধান হোক। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় হলেও তো কোনো সমস্যা নেই। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশ্বের ১৬ কূটনীতিক সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা যদি আরও চাপ দেন, তবে প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে জাতিসংঘও সংকট নিরসনে নানামুখী চাপ অব্যাহত রেখেছে। তবে কূটনীতিকদের উদ্যোগেই সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব বা তারা সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন, এমনটা ভাবা ভুল। তবে শ্বাসরুদ্ধকর যে অবস্থা ছিল কূটনীতিকদের তৎপরতায় কেউ কেউ আশার আলো দেখছে।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন কোনো শর্ত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা বলা সম্ভব হবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চলমান সংকট নিরসনে চেয়ারপারসন সংলাপের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ আমাদের দাবি হচ্ছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া। আলোচনায় বসলেই নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এর আগে সরকারকে বলতে হবে তারা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে চান।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান লক্ষ্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা। আর কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে সরকার আলোচনা করতে রাজি নয়। ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রপতির অধীনে জাতীয় সরকারের ধারণাকে নাকচ করে দেন তিনি।
রূপরেখা দেবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ : দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসানোর তাগিদ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি চলমান সংকটের স্থায়ী সমাধানে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্যরা এ নিয়ে দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। আলোচনা করে সংকটের স্থায়ী সমাধানে একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন। শিগগিরই তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রূপরেখা দেশবাসীকে অবহিত করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংকট নিরসনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার কথা ছিল। রাজনীতির বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিসহ দেশের বিশিষ্টজনরা এতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছিল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমদুদুর রহমান মান্নার দুটি অডিও টেপ প্রকাশিত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় বদলে যায় দৃশ্যপট। ওই ঘটনার পর কিছুটা ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করেন তারা।
উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন, তাদের উদ্যোগ থেমে নেই। চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে তারা নিজেরা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব মহলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য যোগাযোগও করেছেন। প্রয়োজনে দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না গেলে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সংকটের স্থায়ী সমাধানে একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার, সংসদ কার্যকর ও সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা ও আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের রূপরেখায়।
এছাড়া সংকট নিরসনে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন ও সব ধরনের কালাকানুন বাতিল, কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব থাকবে তাদের।
এ প্রসঙ্গে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তাদের উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে দুটি। একটি- চলমান সংকট নিরসনে সংঘাতের পথ পরিহার করে অবিলম্বে সংলাপে বসা। সমঝোতায় আসা। বাস্তবতা হচ্ছে এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তিনি আরও বলেন, তাদের উদ্যোগের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে সংকটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধান। সংলাপে না বসলে সংকটের সমাধান হবে না। তাই সংলাপ হতে হবে। আবার এটাও ঠিক, সংলাপে বসলে হয়তো আপাতদৃষ্টিতে সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হবে না।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংকটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধান করতে না পারলে পাঁচ বছর পরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। এজন্য প্রয়োজন সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ এই কাজটিই করছে। তিনি জানান, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই তারা এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন।
জানতে চাইলে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তারা বর্তমান অচলাবস্থার অবসানে দুই প্রধান দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। এই তাগিদ দেয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি শুধু সংলাপে বসলেই হবে না- এমন বিবেচনায় সমস্যা সমাধানের স্থায়ী উপায় খুঁজে বের করার জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বসে নেই। মানুষ সমাধান চায়। আমরাও সমাধানের কথা বলছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সমাধানের পথ বের হবেই।’
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেশের চলমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগ নিতে নাগরিক সমাজের পক্ষে লিখিত অনুরোধ জানান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। একই অনুরোধ তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও জানান। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এ উদ্যোগে সহায়তা করতেও চিঠি দেন সাবেক এই সিইসি। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও আপত্তি জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক ১৪ দল। এ অবস্থায় ১৩ ফেব্র“য়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেন ড. এটিএম শামসুল হুদা।
সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন লোকজন বাদ দিয়ে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরেন। ওইদিনই তাকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, এএসএম শাহজাহান, ড. আকবর আলি খান, সিএম শফি সামী, রাশেদা কে চৌধূরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ এবং অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
কূটনীতিকদের তৎপরতার পাশাপাশি চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের সুশীল সমাজও। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ পৃথক একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।
সূত্র মতে, কূটনীতিকরা তাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন। প্রাথমিকভাবে তারা আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সহিংসতা বন্ধ করা, হরতাল ও অবরোধ স্থগিত করা, নাশকতায় জড়িতদের বিচার এবং জামায়াতকে আলোচনা থেকে দূরে রাখা। অপরদিকে বিএনপির দেয়া শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, দলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়াসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবাধে পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা। সরকার আন্তরিকভাবে এসব শর্ত পূরণে উদ্যোগ নিলে চলমান আন্দোলন স্থগিত বা শিথিল করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। সংঘাত বন্ধ হলে দুই দলের মধ্যে একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা আলোচনায় আসতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকোর সফরকালে নির্বাচনকালীন সরকারে সংবিধানের আওতায় সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সব পক্ষই একমত হয়েছিল। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাবে আপত্তি করেছিল আওয়ামী লীগ। ফলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা এবারও এ ফর্মুলা কার্যকর হবে না। কূটনীতিকরা স্পষ্ট মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বারবার যাতে ফিরে না আসে সেজন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। এমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হলে নির্বাচনের ফল দু’পক্ষই মেনে নেবে বলে কূটনীতিকদের ধারণা।
সূত্র মতে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকোর মধ্যস্থতায় আলোচনায় রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবও আলোচনায় ছিল। সেই আলোচনা এবারও ফিরে আসতে পারে এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন। তবে গোটা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সচল রাখা, বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে সংকট নিরসন করতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা পর্দার আড়ালে কাজ করছেন। ১৬ কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুহাম্মদ আরাফাত সমন্বয় করছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষে যোগাযোগ করছেন সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে কোনো একটা সমাধানের কাছাকাছি গেলে এবং পরবর্তীকালে সরকারের সম্মতি পেলে জাতিসংঘ থেকে অস্কার ফার্নান্দেস তারানকো বাংলাদেশে আসতে পারেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান জটিল পরিস্থিতি রাতারাতি সমাধানের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কূটনীতিকরা অনেক বেশি দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করতে চান। আপাতত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে জ্বালাময়ী বক্তব্য পরিহার করার জন্য কূটনীতিকরা সরকার ও বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন।
কূটনীতিকদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সবাই চাচ্ছেন বর্তমান সংকটের সমাধান হোক। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় হলেও তো কোনো সমস্যা নেই। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশ্বের ১৬ কূটনীতিক সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা যদি আরও চাপ দেন, তবে প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে জাতিসংঘও সংকট নিরসনে নানামুখী চাপ অব্যাহত রেখেছে। তবে কূটনীতিকদের উদ্যোগেই সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাব বা তারা সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন, এমনটা ভাবা ভুল। তবে শ্বাসরুদ্ধকর যে অবস্থা ছিল কূটনীতিকদের তৎপরতায় কেউ কেউ আশার আলো দেখছে।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন কোনো শর্ত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা বলা সম্ভব হবে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চলমান সংকট নিরসনে চেয়ারপারসন সংলাপের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ আমাদের দাবি হচ্ছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া। আলোচনায় বসলেই নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এর আগে সরকারকে বলতে হবে তারা নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে চান।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান লক্ষ্য সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা। আর কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে সরকার আলোচনা করতে রাজি নয়। ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রপতির অধীনে জাতীয় সরকারের ধারণাকে নাকচ করে দেন তিনি।
রূপরেখা দেবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ : দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসানোর তাগিদ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি চলমান সংকটের স্থায়ী সমাধানে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্যরা এ নিয়ে দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। আলোচনা করে সংকটের স্থায়ী সমাধানে একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন। শিগগিরই তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রূপরেখা দেশবাসীকে অবহিত করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংকট নিরসনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার কথা ছিল। রাজনীতির বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিসহ দেশের বিশিষ্টজনরা এতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছিল উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমদুদুর রহমান মান্নার দুটি অডিও টেপ প্রকাশিত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় বদলে যায় দৃশ্যপট। ওই ঘটনার পর কিছুটা ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করেন তারা।
উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন, তাদের উদ্যোগ থেমে নেই। চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে তারা নিজেরা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব মহলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য যোগাযোগও করেছেন। প্রয়োজনে দুই শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না গেলে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সংকটের স্থায়ী সমাধানে একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার, সংসদ কার্যকর ও সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা ও আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করাসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের রূপরেখায়।
এছাড়া সংকট নিরসনে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন ও সব ধরনের কালাকানুন বাতিল, কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব থাকবে তাদের।
এ প্রসঙ্গে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তাদের উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে দুটি। একটি- চলমান সংকট নিরসনে সংঘাতের পথ পরিহার করে অবিলম্বে সংলাপে বসা। সমঝোতায় আসা। বাস্তবতা হচ্ছে এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তিনি আরও বলেন, তাদের উদ্যোগের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে সংকটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধান। সংলাপে না বসলে সংকটের সমাধান হবে না। তাই সংলাপ হতে হবে। আবার এটাও ঠিক, সংলাপে বসলে হয়তো আপাতদৃষ্টিতে সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান হবে না।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংকটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধান করতে না পারলে পাঁচ বছর পরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। এজন্য প্রয়োজন সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ এই কাজটিই করছে। তিনি জানান, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই তারা এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন।
জানতে চাইলে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তারা বর্তমান অচলাবস্থার অবসানে দুই প্রধান দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। এই তাগিদ দেয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি শুধু সংলাপে বসলেই হবে না- এমন বিবেচনায় সমস্যা সমাধানের স্থায়ী উপায় খুঁজে বের করার জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বসে নেই। মানুষ সমাধান চায়। আমরাও সমাধানের কথা বলছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সমাধানের পথ বের হবেই।’
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেশের চলমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগ নিতে নাগরিক সমাজের পক্ষে লিখিত অনুরোধ জানান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। একই অনুরোধ তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও জানান। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এ উদ্যোগে সহায়তা করতেও চিঠি দেন সাবেক এই সিইসি। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও আপত্তি জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক ১৪ দল। এ অবস্থায় ১৩ ফেব্র“য়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেন ড. এটিএম শামসুল হুদা।
সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন লোকজন বাদ দিয়ে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরেন। ওইদিনই তাকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, এএসএম শাহজাহান, ড. আকবর আলি খান, সিএম শফি সামী, রাশেদা কে চৌধূরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ এবং অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
No comments