দ্যাশ তো যায় যায় অবস্থা -এক রিকশাচালকের রাষ্ট্র চিন্তা
‘দেশের
সুন্দরের জন্য দুই নেত্রীরে সমঝোতার মইধ্যে যাইতে হইবো। একটা সংলাপের
মধ্যে গ্যালে হয় না ? সংলাপের মধ্যে গ্যালেই মনে করেন সবকিছু শ্যাষ। এইসব
কথা বলাও ঠিক না ভাই। ঢাহা শহরে থাহি বোঝেন না? আমারে কইলাম গুলি কইরা
মাইর্যা ফালাইবো। এই যে এইট্যা কইতাছি যদি পত্রিকায় দ্যান তো কি হইবো
আমার! এসব কথা জানতে পারলে আমারে ধইর্যা ফালাইবো, রিমান্ডে নিবো। আমারে
ছুটানোর কেউ নাই।’ এ বক্তব্য মো. দুলাল মিঞার। থাকেন মগবাজার এলাকায়।
পেশায় রিকশাচালক। জীবিকার সন্ধানে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর
কেটে গেছে ২২ বছর। নানা পেশা ঘুরে থিতু হয়েছেন রিকশা চালনায়। বাংলাদেশের
সব মানুষই হয়তো রাজনীতি নিয়ে ভাবেন। দুলাল মিঞাও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট ছুঁয়ে গেছে তার জীবনেও। কমে গেছে আয়। এ রাষ্ট্র
নিয়ে চিন্তা করেন তিনি। ভাবেন সমাধানের পথ নিয়েও।
দুলাল মিঞার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন, আমাদের স্টাফ রিপোর্টার রোকনুজ্জামান পিয়াস দুলালের পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মোমারেজপুর গ্রামে। পিতা দেলোয়ার হোসেনের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এলাকার নারকেল গাছ পরিষ্কার করে দুই ছেলে নিয়ে চলতো তার সংসার। দুলাল তার ছোট ছেলে। ১৯৯২ সালে দুলালের বয়স যখন ১১-১২ বছর তখন তিনি মারা যান। মা মারা যান আরও আগে, তার বয়স যখন ৩ বছর। ঠিক মনেও করতে পারেন না তিনি। পিতা মারা যাওয়ার বছরই তার বড় ভাই আলাউদ্দিন তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি লন্ড্রিতে চাকরি দেন। ওই সময় তার কোন বেতন ছিল না। পেটে-ভাতে কাজ করতেন প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে। এরপর দীর্ঘ চার বছর কাজ করার পর ১৯৯৬ সালে তার বেতন ধরা হয় মাসিক ৮ হাজার টাকা। ওই বছরই বিয়ে করেন খালাতো বোনকে। সস্ত্রীক বস্তিতে একটি কক্ষ ভাড়া করে থাকতেন। এভাবেই কাটছিলো দিন। ২০০৬ সালে তার বেতন বেড়ে ৯ হাজার টাকা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার (তারমতে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকার) এসে বস্তি সংলগ্ল কারখানাটি ভেঙে ফেলে। তখন তিনি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। পরিবার-পরিজন গ্রামে পাঠিয়ে দেন। এখন দুলালের দুই ছেলে। বড় ছেলেটির বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলেটির ৭-৮ বছর। দুলাল বলেন, বড় ছেলেটি ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ে। আর ছোটটি পড়ে কেজি ওয়ানে। তাদের পড়াশোনা বাবদ প্রতিমাসে দিতে হয় ১৬০০ টাকা। গ্রামে ভিটেমাটির ওপর টিনের ঘর বানাতে দুটি এনজিও থেকে কিছু ঋণ নিয়েছিলেন, সেখানে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় ১১৫০ টাকা। লেখাপড়া, কিস্তি, আনুষঙ্গিক সাংসারিক খরচসহ প্রতিমাসে কমপক্ষে বাড়ি পাঠাতে হয় ১২ হাজার টাকা। আর ঢাকাতে প্রতিদিন মেসভাড়া, খাবার বিল এবং রিকশা ভাড়া দিতে হয় সর্বমোট ৪০০ টাকা। তাছাড়া, হাত খরচতো আছেই। দুলাল জানান, ‘আগে খুব ভালোভাবেই তিনি এসব খরচ মেটাতে পারতেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে তার দিন কাটছে অতিকষ্টে। তিনি বলেন, এলাকার বাইরে কখনও ক্ষ্যাপ মারিনি। কিন্তু এখন আর এলাকায় ভাড়া নেই। এলাকায় ৮টি স্কুল-কলেজ আছে জানিয়ে বলেন, এখন ওগুলো বন্ধ, তাই ভাড়াভুতো হয় না। জানুয়ারি মাসের শেষে বাড়িতন (বাড়িতে) টাকা পাঠাইছি ৩ হাজার ৯শ’ ৪০ টাকা। দু’নো (দুই) কিস্তি বাকি পড়ছে। এলাকার দোকানে বলা আছে, বাকিতো চলছে। তিনি বলেন, ডেইলি মেসভাড়া, রিকশা ভাড়া দেওন লাগে। খাবার টাকা বাকি পড়লে খালার কথা শুনতে হয়। তাই মাঝে মাঝে দুপুরেত না খেয়ে থাকন লাগে। কিন্তু রাতে না খাইলে তো চলে না। বেশি ক্ষ্যাপ পাওন যায় না। খরচের টাকার পর কিছু থাকে না। তবে আশাবাদী দুলাল বলেন, অবস্থা ভালো হলে ঠিক হয়ে যাবে। কেমন ভালো এ কথার জবাবে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন এ মানুষটি বলেন, দ্যাশ তো যায় যায় অবস্থা। হরতাল-আন্দোলনের কারণে ইনকাম নাই। স্কুল-কলেজ বন্ধ ইনকাম হইবো ক্যামনে। এলাকায় ৮টি স্কুল আছে ওগুলোত ক্ষ্যাপ মারলেই অনেক ইনকাম হতো। দেশের পরিস্থিতির কারণেই আমার ইনকামের এ অবস্থা। কেন এ পরিস্থিতি এর জবাবে বলেন, সরকারের কারণে হইবো নয়তো বা ধরেন বিরোধী দলের কারণে হইবো। ’৯৬ সালের কথা উল্লেখ করে দুলাল বলেন, তহনও এই অবস্থা হইছে তবে এতো না।’
দুলাল মিঞার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন, আমাদের স্টাফ রিপোর্টার রোকনুজ্জামান পিয়াস দুলালের পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মোমারেজপুর গ্রামে। পিতা দেলোয়ার হোসেনের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এলাকার নারকেল গাছ পরিষ্কার করে দুই ছেলে নিয়ে চলতো তার সংসার। দুলাল তার ছোট ছেলে। ১৯৯২ সালে দুলালের বয়স যখন ১১-১২ বছর তখন তিনি মারা যান। মা মারা যান আরও আগে, তার বয়স যখন ৩ বছর। ঠিক মনেও করতে পারেন না তিনি। পিতা মারা যাওয়ার বছরই তার বড় ভাই আলাউদ্দিন তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি লন্ড্রিতে চাকরি দেন। ওই সময় তার কোন বেতন ছিল না। পেটে-ভাতে কাজ করতেন প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে। এরপর দীর্ঘ চার বছর কাজ করার পর ১৯৯৬ সালে তার বেতন ধরা হয় মাসিক ৮ হাজার টাকা। ওই বছরই বিয়ে করেন খালাতো বোনকে। সস্ত্রীক বস্তিতে একটি কক্ষ ভাড়া করে থাকতেন। এভাবেই কাটছিলো দিন। ২০০৬ সালে তার বেতন বেড়ে ৯ হাজার টাকা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার (তারমতে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকার) এসে বস্তি সংলগ্ল কারখানাটি ভেঙে ফেলে। তখন তিনি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। পরিবার-পরিজন গ্রামে পাঠিয়ে দেন। এখন দুলালের দুই ছেলে। বড় ছেলেটির বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলেটির ৭-৮ বছর। দুলাল বলেন, বড় ছেলেটি ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ে। আর ছোটটি পড়ে কেজি ওয়ানে। তাদের পড়াশোনা বাবদ প্রতিমাসে দিতে হয় ১৬০০ টাকা। গ্রামে ভিটেমাটির ওপর টিনের ঘর বানাতে দুটি এনজিও থেকে কিছু ঋণ নিয়েছিলেন, সেখানে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় ১১৫০ টাকা। লেখাপড়া, কিস্তি, আনুষঙ্গিক সাংসারিক খরচসহ প্রতিমাসে কমপক্ষে বাড়ি পাঠাতে হয় ১২ হাজার টাকা। আর ঢাকাতে প্রতিদিন মেসভাড়া, খাবার বিল এবং রিকশা ভাড়া দিতে হয় সর্বমোট ৪০০ টাকা। তাছাড়া, হাত খরচতো আছেই। দুলাল জানান, ‘আগে খুব ভালোভাবেই তিনি এসব খরচ মেটাতে পারতেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে তার দিন কাটছে অতিকষ্টে। তিনি বলেন, এলাকার বাইরে কখনও ক্ষ্যাপ মারিনি। কিন্তু এখন আর এলাকায় ভাড়া নেই। এলাকায় ৮টি স্কুল-কলেজ আছে জানিয়ে বলেন, এখন ওগুলো বন্ধ, তাই ভাড়াভুতো হয় না। জানুয়ারি মাসের শেষে বাড়িতন (বাড়িতে) টাকা পাঠাইছি ৩ হাজার ৯শ’ ৪০ টাকা। দু’নো (দুই) কিস্তি বাকি পড়ছে। এলাকার দোকানে বলা আছে, বাকিতো চলছে। তিনি বলেন, ডেইলি মেসভাড়া, রিকশা ভাড়া দেওন লাগে। খাবার টাকা বাকি পড়লে খালার কথা শুনতে হয়। তাই মাঝে মাঝে দুপুরেত না খেয়ে থাকন লাগে। কিন্তু রাতে না খাইলে তো চলে না। বেশি ক্ষ্যাপ পাওন যায় না। খরচের টাকার পর কিছু থাকে না। তবে আশাবাদী দুলাল বলেন, অবস্থা ভালো হলে ঠিক হয়ে যাবে। কেমন ভালো এ কথার জবাবে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন এ মানুষটি বলেন, দ্যাশ তো যায় যায় অবস্থা। হরতাল-আন্দোলনের কারণে ইনকাম নাই। স্কুল-কলেজ বন্ধ ইনকাম হইবো ক্যামনে। এলাকায় ৮টি স্কুল আছে ওগুলোত ক্ষ্যাপ মারলেই অনেক ইনকাম হতো। দেশের পরিস্থিতির কারণেই আমার ইনকামের এ অবস্থা। কেন এ পরিস্থিতি এর জবাবে বলেন, সরকারের কারণে হইবো নয়তো বা ধরেন বিরোধী দলের কারণে হইবো। ’৯৬ সালের কথা উল্লেখ করে দুলাল বলেন, তহনও এই অবস্থা হইছে তবে এতো না।’
No comments