পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে by হরি কিশোর চাকমা
কর্মমুখর দিন কাটে আদিবাসী নারীর। কিন্তু কতটুকু নিরাপদ তাঁরা। ঘরে–বাইরে ওত পেতে থাকে বিপদ। কাপ্তাই ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মোড়লীপাড়া থেকে ছবিটি তুলেছেন সুপ্রিয় চাকমা |
আদিবাসী
নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে—এমন সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০১৩ সালের তুলনায়
২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। বিচারহীনতা,
সাম্প্রদায়িকতা ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়াই এর মূল কারণ বলে
দাবি করেছে পাহাড়ের নারী সংগঠনগুলো।
মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭১ জন আদিবাসী নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এসবের মধ্যে ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৩ সালে ৫৩ জন এবং ২০১২ সালে ৫৫ জন নারী সহিংসতার শিকার হন বলে সংগঠনটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, বিচারহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদিবাসী শিশু ও নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। অপর দিকে, গত ৩১ জানুয়ারি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের নেতারা দাবি করেন, ২০১৪ সালে যৌন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারী ও শিশুর মধ্যে ৫৭ ভাগই শিশু, যাদের বয়স ৪ থেকে ১৮ বছর। ২০১৪ সালে সংঘটিত ঘটনার বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যস্ত ৪২টি ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় আজ রোববার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে শিশু ও নারীরা সহিংসতার শিকার হতেন নির্জন বা দূরবর্তী এলাকায়। কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে তাঁরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বাড়ির পাশের স্থানগুলোয়।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নে সবিতা চাকমাকে (৩০) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বাড়ির পাশের চেঙ্গী নদীর তীরে। ২০ আগস্ট রাঙামাটি শহরের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা বিশাখা চাকমাকে (৩৩) ধর্ষণ ও হত্যা করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে অল্প দূরে কাপ্তাই হ্রদের তীরে। ১৫ ডিসেম্বর কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ঘাট এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রী উমরা চিং মারমাকে (১৫) হত্যা করা হয় বাড়ির পাশের পাহাড়ে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলন পার্বত্য চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও হিমাওয়ান্তির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন টুকু তালুকদার মনে করেন, অপরাধীদের বিচার ও সাজা না হওয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াছে। পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন, বিশেষ করে শ্রমিকেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আসছেন। তাঁদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ আদিবাসীদের সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। পুলিশ তৎপর থাকলেও আদিবাসী নারীদের নিরাপদ রাখতে তা যথেষ্ট নয়। এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধব্যবস্থা নিলে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, মানবাধিকারের প্রতি অসচেতনতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার অন্যতম কারণ। আইনের শাসন ও যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে।
রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসতা রোধ করা সম্ভব। কমিউনিটি পুলিশিং, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আয়োজন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭১ জন আদিবাসী নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এসবের মধ্যে ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৩ সালে ৫৩ জন এবং ২০১২ সালে ৫৫ জন নারী সহিংসতার শিকার হন বলে সংগঠনটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, বিচারহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদিবাসী শিশু ও নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। অপর দিকে, গত ৩১ জানুয়ারি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের নেতারা দাবি করেন, ২০১৪ সালে যৌন ও শারীরিক সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারী ও শিশুর মধ্যে ৫৭ ভাগই শিশু, যাদের বয়স ৪ থেকে ১৮ বছর। ২০১৪ সালে সংঘটিত ঘটনার বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যস্ত ৪২টি ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের প্রতি সহিংস ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় আজ রোববার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে শিশু ও নারীরা সহিংসতার শিকার হতেন নির্জন বা দূরবর্তী এলাকায়। কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে তাঁরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বাড়ির পাশের স্থানগুলোয়।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নে সবিতা চাকমাকে (৩০) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বাড়ির পাশের চেঙ্গী নদীর তীরে। ২০ আগস্ট রাঙামাটি শহরের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা বিশাখা চাকমাকে (৩৩) ধর্ষণ ও হত্যা করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে অল্প দূরে কাপ্তাই হ্রদের তীরে। ১৫ ডিসেম্বর কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ঘাট এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্রী উমরা চিং মারমাকে (১৫) হত্যা করা হয় বাড়ির পাশের পাহাড়ে।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আন্দোলন পার্বত্য চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও হিমাওয়ান্তির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন টুকু তালুকদার মনে করেন, অপরাধীদের বিচার ও সাজা না হওয়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়াছে। পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন, বিশেষ করে শ্রমিকেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আসছেন। তাঁদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ আদিবাসীদের সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। পুলিশ তৎপর থাকলেও আদিবাসী নারীদের নিরাপদ রাখতে তা যথেষ্ট নয়। এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধব্যবস্থা নিলে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, মানবাধিকারের প্রতি অসচেতনতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার অন্যতম কারণ। আইনের শাসন ও যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে।
রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সহিংসতা রোধ করা সম্ভব। কমিউনিটি পুলিশিং, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আয়োজন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
No comments