ট্রেনেও চালকের আসনে নারী by সাঈদা ইসলাম
সহকারী ট্রেনচালক কুলসুম আক্তার |
রেললাইন
বহে সমান্তরাল—রেলপথ সমান্তরাল হলেও নারী-পুরুষ সমানভাবে এগোতে পারেননি।
ট্রেনের ইঞ্জিনে এখনো চালকের আসনে বসতে পারেননি কোনো নারী। তবে কোনো নারী
ট্রেন চালাচ্ছেন, এটি এখন আর দূরের কল্পনা নয়। রেলে এখন আছেন ১৪ জন নারী
সহকারী লোকোমাস্টার (সহকারী ট্রেনচালক)। লোকোমাস্টার (পূর্ণাঙ্গ ট্রেনচালক)
হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন একজন।
ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম সহকারী লোকোমাস্টার পদে যোগ দেন টাঙ্গাইলের ছালমা খাতুন। এখন তিনি সাব-লোকোমাস্টার। চালকের পাশের আসনে বসে মূল চালককে সহযোগিতা করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই লোকোমাস্টার হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাবেন ছালমা। প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করার স্বপ্ন ছিল ছালমার। সেই স্বপ্ন পূরণেই এই পেশায় আসা। মুঠোফোনে ছালমা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, কাজটি মেয়েদের জন্য সহজ নয়। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে টিকে থাকতে হয়। তবে যত বেশি মেয়ে এ পেশায় আসবেন, তত তাড়াতাড়ি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।
ইডেন কলেজ থেকে গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চাঁদপুরের মেয়ে কুলসুম আক্তার ২০১১ সালে যোগ দেন সহকারী লোকোমাস্টার পদে। কুলসুম বলেন, ‘মেয়ে হয়েও এই পেশায় এসেছি, এটি নিয়ে গর্ববোধ আছে। তবে সবাই যখন বলে এটি আসলে পুরুষের কাজ, তখন হতাশ হই। অনেকের টিটকারিও সহ্য করতে হয়।’
আরেক সহকারী ট্রেনচালক খুরশিদা আক্তার জানান, কাজটি বেশ কঠিন। তাঁর স্বামীও সহকারী ট্রেনচালক।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে সাতজন ও পশ্চিমাঞ্চলে আটজন নারী এই পেশায় রয়েছেন। তাঁদের কেউই এখনো পূর্ণাঙ্গ চালক হননি। সহকারী লোকোমাস্টার পদ থেকে লোকোমাস্টার হতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০-১২ বছর। ছালমা খাতুন ছাড়া বাকিরা এখনো সহকারী লোকোমাস্টার। রেলে সহকারী লোকোমাস্টার ৭৮৮ জন।
কষ্ট সহ্য করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যাঁরা এ পেশায় আসবেন, তাঁরা ভালো করবেন বলে মনে করেন সহকারী লোকোমাস্টার উম্মে সালমা সিদ্দিকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিশ্রম বেশি বলে কেউ কেউ হতাশ হচ্ছেন। রেলওয়েতে বাবার চাকরির সুবাদে এ পেশা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি এবং শেষ পর্যন্ত এ পেশায় থাকতে চাই।’
পেশায় লিঙ্গ ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বেসরকারি সংগঠন কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংসদ শিরীন আখতার জানান, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নারীদের নিজেদের ভেতরেও বোঝাপড়া তৈরি করা দরকার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিটি ট্রেনেই চালকের সঙ্গে সহকারী চালক থাকেন। তাঁর মূল কাজ চালককে যাবতীয় সহায়তা দেওয়া। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ট্রেন ছাড়ার আগে লোকোশেডে (যেখানে ইঞ্জিন রাখা হয়) ইঞ্জিন ঠিক আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সহকারী চালকদের। ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ও তড়িৎ (মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল) দিকগুলো শিখতে হয় তাঁদের। সিগন্যালব্যবস্থা, এর নিয়মাবলি শেখা, ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণসহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও শিখতে হয় সহকারী চালকের। এগুলো শিখে নেওয়ার পর চাকরিতে যোগদানের অন্তত ১১ বছর পর একজন চালক লোকোমাস্টার হতে পারবেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, পুরুষের পাশাপাশি সব ধরনের কাজ শিখলেও এখনো দূরের রাস্তায় ট্রেন নিয়ে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না এ পেশার নারীরা। সাধারণত স্বল্প দূরত্বের ডেমু ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে মেয়ে চালকেরা দায়িত্ব পালন করছেন।
নারী চালকদের দূরের যাত্রায় কাজের সমস্যার বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি ট্রেন নিয়ে যাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সেদিন ঢাকা স্টেশনের রানিং রুমে (চালক ও সহকারী চালকদের থাকার জায়গা) থাকতে হবে চালকদের। পরদিন তাঁরা আরেকটি ট্রেন নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরার সুযোগ পাবেন। আবার যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের লোকাল ও মেইল ট্রেন হয়, তাহলে অনেক সময় আখাউড়ায় চালক পরিবর্তন করতে হয়। তখন সেখানেও রানিং রুমে থাকতে হয়। কিন্তু এখনো রানিং রুমে নারীদের থাকার ব্যবস্থা নেই। আবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবাই (নারী) দূরের যাত্রায় যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
পূর্বাঞ্চলে নারী ট্রেনচালকেরা স্বল্প দূরত্বের রাস্তায় আসা-যাওয়া করলেও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নারী চালকেরা এখনো স্টেশনেই বিভিন্ন কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী আবদুল মতিন চৌধুরী।
ট্রেনচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম সহকারী লোকোমাস্টার পদে যোগ দেন টাঙ্গাইলের ছালমা খাতুন। এখন তিনি সাব-লোকোমাস্টার। চালকের পাশের আসনে বসে মূল চালককে সহযোগিতা করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই লোকোমাস্টার হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাবেন ছালমা। প্রথাগত পেশার বাইরে কিছু করার স্বপ্ন ছিল ছালমার। সেই স্বপ্ন পূরণেই এই পেশায় আসা। মুঠোফোনে ছালমা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, কাজটি মেয়েদের জন্য সহজ নয়। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে টিকে থাকতে হয়। তবে যত বেশি মেয়ে এ পেশায় আসবেন, তত তাড়াতাড়ি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।
ইডেন কলেজ থেকে গণিত বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চাঁদপুরের মেয়ে কুলসুম আক্তার ২০১১ সালে যোগ দেন সহকারী লোকোমাস্টার পদে। কুলসুম বলেন, ‘মেয়ে হয়েও এই পেশায় এসেছি, এটি নিয়ে গর্ববোধ আছে। তবে সবাই যখন বলে এটি আসলে পুরুষের কাজ, তখন হতাশ হই। অনেকের টিটকারিও সহ্য করতে হয়।’
আরেক সহকারী ট্রেনচালক খুরশিদা আক্তার জানান, কাজটি বেশ কঠিন। তাঁর স্বামীও সহকারী ট্রেনচালক।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে সাতজন ও পশ্চিমাঞ্চলে আটজন নারী এই পেশায় রয়েছেন। তাঁদের কেউই এখনো পূর্ণাঙ্গ চালক হননি। সহকারী লোকোমাস্টার পদ থেকে লোকোমাস্টার হতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০-১২ বছর। ছালমা খাতুন ছাড়া বাকিরা এখনো সহকারী লোকোমাস্টার। রেলে সহকারী লোকোমাস্টার ৭৮৮ জন।
কষ্ট সহ্য করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যাঁরা এ পেশায় আসবেন, তাঁরা ভালো করবেন বলে মনে করেন সহকারী লোকোমাস্টার উম্মে সালমা সিদ্দিকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিশ্রম বেশি বলে কেউ কেউ হতাশ হচ্ছেন। রেলওয়েতে বাবার চাকরির সুবাদে এ পেশা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি আমার কাজটাকে ভালোবাসি এবং শেষ পর্যন্ত এ পেশায় থাকতে চাই।’
পেশায় লিঙ্গ ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে বেসরকারি সংগঠন কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংসদ শিরীন আখতার জানান, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে নারীদের নিজেদের ভেতরেও বোঝাপড়া তৈরি করা দরকার।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিটি ট্রেনেই চালকের সঙ্গে সহকারী চালক থাকেন। তাঁর মূল কাজ চালককে যাবতীয় সহায়তা দেওয়া। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ট্রেন ছাড়ার আগে লোকোশেডে (যেখানে ইঞ্জিন রাখা হয়) ইঞ্জিন ঠিক আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সহকারী চালকদের। ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ও তড়িৎ (মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল) দিকগুলো শিখতে হয় তাঁদের। সিগন্যালব্যবস্থা, এর নিয়মাবলি শেখা, ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণসহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও শিখতে হয় সহকারী চালকের। এগুলো শিখে নেওয়ার পর চাকরিতে যোগদানের অন্তত ১১ বছর পর একজন চালক লোকোমাস্টার হতে পারবেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, পুরুষের পাশাপাশি সব ধরনের কাজ শিখলেও এখনো দূরের রাস্তায় ট্রেন নিয়ে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না এ পেশার নারীরা। সাধারণত স্বল্প দূরত্বের ডেমু ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে মেয়ে চালকেরা দায়িত্ব পালন করছেন।
নারী চালকদের দূরের যাত্রায় কাজের সমস্যার বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি ট্রেন নিয়ে যাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সেদিন ঢাকা স্টেশনের রানিং রুমে (চালক ও সহকারী চালকদের থাকার জায়গা) থাকতে হবে চালকদের। পরদিন তাঁরা আরেকটি ট্রেন নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরার সুযোগ পাবেন। আবার যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের লোকাল ও মেইল ট্রেন হয়, তাহলে অনেক সময় আখাউড়ায় চালক পরিবর্তন করতে হয়। তখন সেখানেও রানিং রুমে থাকতে হয়। কিন্তু এখনো রানিং রুমে নারীদের থাকার ব্যবস্থা নেই। আবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবাই (নারী) দূরের যাত্রায় যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
পূর্বাঞ্চলে নারী ট্রেনচালকেরা স্বল্প দূরত্বের রাস্তায় আসা-যাওয়া করলেও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নারী চালকেরা এখনো স্টেশনেই বিভিন্ন কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী আবদুল মতিন চৌধুরী।
No comments