নাগরিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন
বাংলাদেশের
চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে এবার সরকারের প্রতি
আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। রাজনৈতিক গোলযোগে
পড়ে বাংলাদেশের ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মানবাধিকার বিপর্যস্ত ১৬টি
দেশের কাতারে গিয়ে ঠেকেছে। দীর্ঘ দলন-পীড়নের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে এ
অবস্থা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে সন্ত্রাসী দমনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে
দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া চরমপন্থা মানুষের
জীবনের নিরাপত্তাকে একেবারে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক
গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে সঙ্গত কারণে জাতিসঙ্ঘ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের
পথ খোঁজার তাৎপর্যপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশকে। জাতিসঙ্ঘ
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জিয়াদ রাদ আল হুসাইন বৃহস্পতিবার জেনেভায়
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে এ আহ্বান জানান। জাতিসঙ্ঘ
মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া সূচনা বক্তব্যে জিয়াদ বলেছেন, কেবল চরমপন্থী নয়,
বরং সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে বাংলাদেশের নাগরিকসমাজ ও বাকস্বাধীনতা
হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি সহিংসতা নিরসন, সংলাপের পথ খুঁজে বের করা এবং
মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান
জানান। মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীর ওপর আক্রমণকে ‘আতঙ্কজনক’
হিসেবে মন্তব্য করেন মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। মানবাধিকারের অবনতিশীল
মানদণ্ডে আরো ১৫টি দেশের সাথে বাংলাদেশকেও তারা অন্তর্ভুক্ত করেন। সহিংস
চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি এসব দেশের প্রতি তাদের সমাজের অন্তর্নিহিত
মানবাধিকার নীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ না হারানোর আহ্বান জানান। যে ধরনের লক্ষণের
ভিত্তিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে, তা এর আগে দেশে
বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে
সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে বারবার। গুম, বিনাবিচারে হত্যা, আটক করে রেখে
দায়িত্ব শিকার না করা, গণহারে গ্রেফতার Ñ এসব কয়েক বছর ধরে চলেছে। সবশেষে
রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সুযোগটিও কেড়ে নেয়া হয়।
তাদের অধিকার হরণ করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে
তৃণমূল নেতাদের গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির
মুখপাত্র হিসেবে কেউ প্রকাশ্যে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। যাকেই পাচ্ছে
পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ মানবাধিকার সম্মেলনে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন দেশের বিদ্যমান অবস্থার সাথে তার কোনো
মিল নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে বলেন, মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য
হিসেবে বিশ্বে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব
পালনে সরকার ভূমিকা পালন করে যাবে।
গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতির বিষয়টি এখন বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কোনোভাবে সরকারের জন্য বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আর এই সরকার বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়। যারাই সরকারে আসবেন সম্মান শ্রদ্ধা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে তাদের কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ আমলে নেবে। চলমান সঙ্কট সমাধানে আন্তরিকতা নিয়ে অগ্রসর হবেন।
গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতির বিষয়টি এখন বিশ্বের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কোনোভাবে সরকারের জন্য বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আর এই সরকার বাংলাদেশের শেষ সরকার নয়। যারাই সরকারে আসবেন সম্মান শ্রদ্ধা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে তাদের কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ আমলে নেবে। চলমান সঙ্কট সমাধানে আন্তরিকতা নিয়ে অগ্রসর হবেন।
No comments