‘ওমেন অব কারেজ’ অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশের নাদিয়া
জীবনের
ঝুঁকি উপেক্ষা করে ব্যতিক্রমী সাহস, নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের পক্ষে
অবস্থান করার স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত পুরস্কার পেলেন
বাংলাদেশের সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয় তার হাতে। বিশ্বের
১০টি দেশের ১০ জন নারী সাংবাদিককে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম
নাদিয়া শারমিন। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডেপুটি সেক্রেটারি
হিগিনবটম। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ সময় বিশেষ
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। এ
বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মেরি হার্ফ সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি
বলেন, আজ আপনাদের সামনে খুব স্পেশাল একজন অতিথিকে নিয়ে এসেছি। নারী অধিকার,
সাহস দেখানো ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেয়া
হচ্ছে সম্মানজনক ওই পুরস্কার। এমন একজন নারীকে আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা
সম্মানিত বোধ করছি। তিনি মিসেস নাদিয়া শারমিন। বাংলাদেশী সাংবাদিক ও নারী
অধিকার কর্মী। দায়িত্ব পালনকালে তার ওপর হামলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি
পেশাগত কাজ অব্যাহত রেখেছেন। সর্বত্র নারী ও পুরুষ সাংবাদিকদের কাছে তিনি
একটি অনুপ্রেরণা। এ বছর এ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- আফগানিস্তান বিমান
বাহিনীর ক্যাপ্টেন নিলুফার রহমানি, বাংলাদেশের সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন,
বলিভিয়ার অফিসিনা জুরিডিকা পারা লা মুজের-এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক মিসেস
রোজা জুলিয়েটা মোন্টানো সালভাটিয়েরা, মিয়ানমারের জেন্ডার ইকুইটি
নেটওয়ার্ক-এর মিসেস মে সাবি ফিউ, মধ্য আফ্রিকার ফন্ডেশন ভোয়েক্স ডু
কোয়েউর-এর সভাপতি মিসেস বিট্রিস ইপায়ে, গায়েনায় ইবোলার সংক্রমণ থেকে বেঁচে
যাওয়া নার্স মিসেস মেরি ক্লেয়ার টেসিকোলা, জাপানের মাতাহারা নেট-এর
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিনিধি মিসেস সায়াকা ওসাকাবে, কসোভোর জেরি’র প্রধান
সম্পাদক মিসেস আরবানা সাররা, পাকিস্তানের খেন্ডো জিরগার প্রতিষ্ঠাতা মিসেস
তাবাসসুম আদনান ও সিরিয়ার ওমেন নাউ ফর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের বৈদেশিক
সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক মিসেস মাজদ চৌরবাজি। এতে বাংলাদেশের নাদিয়া শারমিন
সম্পর্কে বলা হয়, নাদিয়া শারমিন নিবেদিত একজন সাংবাদিক। তিনি নারী অধিকারের
একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময়েই সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা
পোষণ করেন। তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। কাজ শুরু করেন
ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তাকে ইসলামপন্থিদের একটি
গণজমায়েতের রিপোর্ট করতে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল। সেখানে তীব্র বিরোধিতার
মুখে পড়তে পারেন এটা জানা সত্ত্বেও তিনি ওই রিপোর্ট কাভার করতে যান
নির্ভয়ে। তাকে উদ্দেশ্য করে সেখানে কটু কথা বলা হয়। এক পর্যায়ে সমাবেশের
লোকজন তার সঙ্গে উগ্র আচরণ করে। ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ তাকে প্রহার করে। লাথি
দেয়। তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। ওদিকে
তাকে ওই এসাইনমেন্টে পাঠানোর কথা অস্বীকার করে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
তারা তার চিকিৎসার খরচ দিতে অস্কীকৃতি জানায়। এমনকি তাকে পদত্যাগে বাধ্য
করে। স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু
তারপর প্রায় দুই বছর পার হতে চলেছে। হামলাকারীদের কেউ শনাক্ত ও গ্রেপ্তার
হয় নি। তিনি বর্তমানে আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করছেন। সেখানেও তিনি
ক্রাইম রিপোর্টার। এর মধ্য দিয়ে তিনি সামাজিক বিভিন্ন বাধার বিরুদ্ধে লড়াই
করছেন।
No comments