পরিস্থিতির অবনতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গার্মেন্ট
বিদেশী ক্রেতারা এদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে মুখ ফিরিযে নিতে শুরু করেছে |
বাংলাদেশের
দুই নেত্রীর দীর্ঘদিনের বিবাদ দেশটির ভঙ্গুর গণতন্ত্র হুমকির মুখে ফেলে
দিয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতিও চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদি
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে, তবে দেশটির তৈরী পোশাক খাত মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে বৈশ্বিক তৈরী পোশাক বাজারে।
গতকাল বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে জাপানের অনলাইন নিকাই
এশিয়ান রিভিউ। এতে আরও বলা হয়, ১৯৯১ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি
পর্যায়ক্রমে শাসন করে আসছেন ক্ষমতাধর এই দুই নেত্রী। তখন থেকেই ক্ষমতার
লড়াই বেশ মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে তাদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন। প্রতিবেশী ভারতের সহযোগিতায় তার দল
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। বাংলাদেশের
প্রথম সরকারও আওয়ামী লীগ গঠন করে। এ ইতিহাসের কারণে আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থি
ও সমাজতন্ত্রী ভাবা হয়। অপরদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার
নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি মধ্য-ডানপন্থি দল। এ
দলটিকে ভারত-বিরোধী বলে ভাবা হয়। ২৫শে ফেব্রুয়ারি দুর্নীতিবিরোধী আদালত
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ মামলায় দোষী
সাব্যস্ত হলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। যদি সত্যি এমনটা ঘটে, তবে
নিশ্চিতভাবে রাজপথে আরও সংঘর্ষ হবে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ
করে। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
ব্যাপক হরতালের পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা।
আবার ২০০১ সালে বিপুল পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি।
আবারও প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। কিন্তু শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার
জেরে সেনাবাহিনী আবারও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। এরপর ২০০৯ সালে গণতন্ত্রে
পুনরায় প্রবেশের পর আবারও বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। বহুবছরের
রাজনৈতিক বিরোধিতার পর, এখন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনই শেষ করে দিতে চান
শেখ হাসিনা- এমনটিই মনে হচ্ছে। পারসপরিক বিদ্বেষ আরও খারাপ অবস্থায় যায়,
যখন বিরোধী দলগুলো গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন বর্জন
করে। প্রায় বিরোধিতা ছাড়াই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে
হাসিনার আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও নির্বাচন হয়। বড়
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার পর ওই নির্বাচনের বৈধতা আন্তর্জাতিক
সমপ্রদায়ের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। বহু দেশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে
পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে বিরত থাকে। খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে
প্রশ্ন তুলে নতুন নির্বাচনে ডাক দিয়েছেন। আর এ বছরের শুরুর দিক থেকে
বিরোধী এ নেত্রীকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, নৈরাজ্য সৃষ্টিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন খালেদা জিয়া। এর পাল্টা হিসেবে বিরোধী দলগুলো প্রায়
দিনই দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম
দরিদ্র একটি দেশ। ফলে দেশটির এমন রাজনৈতিক দ্বৈরথ বিশ্ব সমপ্রদায়ের
মন্তব্যের বাইরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বের তৈরী পোশাক চাহিদার অন্যতম
প্রধান সরবরাহকারী এ দেশটি বিশ্ব অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের
শীর্ষস্থানীয় বহু প্রতিষ্ঠানের কাপড় উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ফলে চীনের পর
বাংলাদেশই বিশ্বের বৃহত্তম তৈরী পোশাক রপ্তানিকারক। গত বছরের জুনে শেষ হওয়া
সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৬.১ শতাংশ। তবে বর্তমান
অচলাবস্থার ফলে উৎপাদন খাতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অবরোধের ফলে
ব্যবসা বাণিজ্য চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক স্থানীয় কোমপানি পোশাক চালান
দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে পোশাক খাতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল
বাংলাদেশের। এ বছর তা কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ, অনেকে ভয়ে কর্মক্ষেত্রে
যোগ দিতে চাইছে না। বিদেশী কোমপানিগুলো ইতিমধ্যেই সমস্যার মুখোমুখি হতে
শুরু করেছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে, আরেকটি অভ্যুত্থান। বর্তমান
রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসানে যদি সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাহলে
গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে দেশটির
অর্থনীতিতেও দীর্ঘ নেতিবাচক ছায়া পড়বে। তৈরী পোশাক খাতের মালিকদের একটি
সংগঠনের এক কর্মকর্তা জানালেন, এ দেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় তৈরী পোশাক
শিল্প। আমাদের উচ্চ উৎপাদন হার ও বিদেশী বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে, যদি দেশে
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করে।
No comments