দুই মাসে দগ্ধ ১৬৫ জনের চিকিৎসা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে নাতি নিরঞ্জন সিনহাকে খাইয়ে দিচ্ছেন দাদা বাবু সিনহা। গত বুধবার তোলা l ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন |
সিলেট শহরে গত সোমবার ককটেল হামলায় আহত শিশু l ছবি: প্রথম আলো |
গত
৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ, এখনো চলছে।
আর সহিংসতা শুরু হয়েছিল এক দিন আগে থেকে। সহিংস রাজনীতির এই দুই মাসে প্রাণ
হারিয়েছেন ১১৫ জন। এঁদের ৯০ জনই সাধারণ মানুষ। ৬২ জন মারা গেছেন
পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে। অর্থনৈতিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য,
শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে। টানা সহিংসতার দুই মাস নিয়ে এই আয়োজন।
টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ রোগী আসা থামছে না ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন পাঁচ রোগী ভর্তি হয়েছেন এই বার্ন ইউনিটে। তাঁদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
এই পাঁচজনের তিনজন মানিকগঞ্জে ও দুজন কিশোরগঞ্জে দগ্ধ হয়েছেন। মানিকগঞ্জের তিনজন হলেন ট্রাকচালক ইকবাল হোসেন (৩৪), তাঁর সহকারী মোহাম্মদ সুমন ও দিনমজুর আবুল কালাম। তাঁরা ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে লাকড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জ যাচ্ছিলেন। গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছার পর তিন-চারজন ট্রাকে পেট্রলবোমা মারে। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। দগ্ধদের মধ্যে ট্রাকচালকের অবস্থা গুরুতর। কিশোরগঞ্জে দগ্ধ দুজন হলেন জাহেদা বেগম (৪৫) ও আবদুল মালেক (৪২)।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ১৬৫ রোগী এখন পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের একজন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গিয়েছিলেন। এ সপ্তাহ থেকে স্থিতিশীল রোগীদের দেহে অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে পাঁচটি পর্যন্ত অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, এখন চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের কমপক্ষে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে আছেন।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষের শরীর ঢেকে রাখে যে চামড়া, তার স্তর সাতটি। পেট্রলবোমায় দগ্ধদের সাতটি স্তরই পুড়ে গেছে। কারও কারও মাংস পুড়েছে, কারও ক্ষেত্রে হাড়ও বাদ যায়নি। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া কেটে পুড়ে যাওয়া জায়গায় লাগানো হচ্ছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, অস্ত্রোপচার না হলে এসব রোগী স্বাভাবিকভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ৯৬ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের আসলে চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায় শেষ হয়েছে। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা। তাঁদের বেশির ভাগকে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। একটি বড় অংশকে পাঠানো হয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এঁদের মানসিক চিকিৎসা জরুরি। এর বাইরে প্রতি মাসে একবার ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটেও তাঁদের আসতে হবে।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা কয়েকজন রোগীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এঁরা নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এঁদের একজন ময়মনসিংহের সিদ্দিকুর রহমান। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জেলা স্কুলের সামনে পেট্রলবোমায় তিনি দগ্ধ হন, পুড়ে যায় তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন ইজিবাইকটি। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর স্ত্রী শরিফা আক্তার বলেন, সিদ্দিক এখনো হাত নাড়তে পারেন না। অস্ত্রোপচারের জায়গাটি ফুলে উঠছে। সংসার চলছে কী করে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছেন। এতে উপকার হয়েছে। কিন্তু স্কুলপড়ুয়া তিন সন্তান, অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে দিনে ১২টি ডিম খাওয়াতে বলা হলেও চার-পাঁচটির বেশি জোগাড় করতে পারছেন না।
২৩ জানুয়ারি গুলিস্তান থেকে ভুলতাগামী বাসের যাত্রী ফার্মাসিস্ট দম্পতি সাইদা ফাতেমা ও ইয়াসির আরাফাত দগ্ধ হয়েছিলেন। ইয়াসির বাড়ি ফিরেছেন। হাতটা এখনো ভালো হয়নি। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিচ্ছে। সাইদার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা এ সপ্তাহে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিমুল হক ও তাঁর মা শামসুন্নাহার বেগমও হাসপাতাল ছেড়েছেন। পোড়া জায়গায় এখনো ফোসকা দেখা দিচ্ছে বলে জানালেন হাতিয়ার স্কুলশিক্ষিকা শামসুন্নাহার।
বার্ন ইউনিটে হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীদের একটি ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা-সহায়তার পাশাপাশি সমাজের দানশীল লোকজনের আর্থিক সহযোগিতাও তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু দগ্ধদের প্রায় সবাই এত দরিদ্র যে হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই টাকাটা খরচ করে ফেলতে হচ্ছে। ১৯ বছরের মোটর সারাইকর্মী নিরঞ্জনের বাবা বাবু সেনা দেড় মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের বাইরে পেয়েছেন এক লাখ টাকা। সেই টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ছেলে কবে সুস্থ হবে, মৌলভীবাজারে বাড়িতে ফিরবে তা এখনো জানেন না এই কৃষক বাবা।
টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ রোগী আসা থামছে না ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন পাঁচ রোগী ভর্তি হয়েছেন এই বার্ন ইউনিটে। তাঁদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
এই পাঁচজনের তিনজন মানিকগঞ্জে ও দুজন কিশোরগঞ্জে দগ্ধ হয়েছেন। মানিকগঞ্জের তিনজন হলেন ট্রাকচালক ইকবাল হোসেন (৩৪), তাঁর সহকারী মোহাম্মদ সুমন ও দিনমজুর আবুল কালাম। তাঁরা ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে লাকড়ি নিয়ে মানিকগঞ্জ যাচ্ছিলেন। গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছার পর তিন-চারজন ট্রাকে পেট্রলবোমা মারে। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। দগ্ধ তিনজনকে উদ্ধার করে একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। দগ্ধদের মধ্যে ট্রাকচালকের অবস্থা গুরুতর। কিশোরগঞ্জে দগ্ধ দুজন হলেন জাহেদা বেগম (৪৫) ও আবদুল মালেক (৪২)।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ১৬৫ রোগী এখন পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের একজন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গিয়েছিলেন। এ সপ্তাহ থেকে স্থিতিশীল রোগীদের দেহে অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে পাঁচটি পর্যন্ত অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, এখন চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের কমপক্ষে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে আছেন।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানুষের শরীর ঢেকে রাখে যে চামড়া, তার স্তর সাতটি। পেট্রলবোমায় দগ্ধদের সাতটি স্তরই পুড়ে গেছে। কারও কারও মাংস পুড়েছে, কারও ক্ষেত্রে হাড়ও বাদ যায়নি। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া কেটে পুড়ে যাওয়া জায়গায় লাগানো হচ্ছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, অস্ত্রোপচার না হলে এসব রোগী স্বাভাবিকভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ৯৬ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের আসলে চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায় শেষ হয়েছে। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা। তাঁদের বেশির ভাগকে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। একটি বড় অংশকে পাঠানো হয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে এঁদের মানসিক চিকিৎসা জরুরি। এর বাইরে প্রতি মাসে একবার ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটেও তাঁদের আসতে হবে।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা কয়েকজন রোগীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এঁরা নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। এঁদের একজন ময়মনসিংহের সিদ্দিকুর রহমান। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জেলা স্কুলের সামনে পেট্রলবোমায় তিনি দগ্ধ হন, পুড়ে যায় তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন ইজিবাইকটি। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর স্ত্রী শরিফা আক্তার বলেন, সিদ্দিক এখনো হাত নাড়তে পারেন না। অস্ত্রোপচারের জায়গাটি ফুলে উঠছে। সংসার চলছে কী করে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছেন। এতে উপকার হয়েছে। কিন্তু স্কুলপড়ুয়া তিন সন্তান, অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে দিনে ১২টি ডিম খাওয়াতে বলা হলেও চার-পাঁচটির বেশি জোগাড় করতে পারছেন না।
২৩ জানুয়ারি গুলিস্তান থেকে ভুলতাগামী বাসের যাত্রী ফার্মাসিস্ট দম্পতি সাইদা ফাতেমা ও ইয়াসির আরাফাত দগ্ধ হয়েছিলেন। ইয়াসির বাড়ি ফিরেছেন। হাতটা এখনো ভালো হয়নি। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিচ্ছে। সাইদার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা এ সপ্তাহে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিমুল হক ও তাঁর মা শামসুন্নাহার বেগমও হাসপাতাল ছেড়েছেন। পোড়া জায়গায় এখনো ফোসকা দেখা দিচ্ছে বলে জানালেন হাতিয়ার স্কুলশিক্ষিকা শামসুন্নাহার।
বার্ন ইউনিটে হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীদের একটি ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসা-সহায়তার পাশাপাশি সমাজের দানশীল লোকজনের আর্থিক সহযোগিতাও তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু দগ্ধদের প্রায় সবাই এত দরিদ্র যে হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই টাকাটা খরচ করে ফেলতে হচ্ছে। ১৯ বছরের মোটর সারাইকর্মী নিরঞ্জনের বাবা বাবু সেনা দেড় মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের বাইরে পেয়েছেন এক লাখ টাকা। সেই টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ছেলে কবে সুস্থ হবে, মৌলভীবাজারে বাড়িতে ফিরবে তা এখনো জানেন না এই কৃষক বাবা।
No comments