বিয়ের বয়স ১৮–ই থাকছে, মা–বাবা চাইলে ১৬, নতুন খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে by মানসুরা হোসাইন
মেয়েদের
বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮-ই থাকছে। তবে মা-বাবা চাইলে ১৬ বছরেও বিয়ে হতে
পারে। বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ করার পরিকল্পনা তীব্রভাবে সমালোচিত হওয়ার পর
সরকার এই নতুন কৌশল অনুসরণের কথা ভাবছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন,
২০১৪ নামে আইনের এই খসড়া মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে।
খসড়ায় উল্লেখ আছে, ‘যুক্তিসংগত কারণে মা-বাবা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর
বয়সে কোনো নারী বিয়ে করলে সেই ক্ষেত্রে তিনি “অপরিণত বয়স্ক” বলে গণ্য
হবেন না।’
খসড়া আইনটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ ডিসেম্বর যে অনুশাসন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ‘বিয়ের বয়স ১৮, তবে পিতামাতা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সামাজিক সমস্যা কম হবে।’
তবে শিশু ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা সরকারের এই ভাবনার সঙ্গে একমত নন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর বয়সের আগে কারও বিয়ে হওয়া উচিত নয়। ১৮ বছরের আগে কেউ বিচার, বুদ্ধি-বিবেচনাবোধসম্পন্ন হতে পারে না। তা ছাড়া ১৮ বছর না হলে একজন ভোটও দিতে পারছে না। আর নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করলে কেউ কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবে না।
গত ১২ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে যে খসড়াটি মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে, তাতেও প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের কথা উল্লেখ আছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, অপরিণত বয়স্ক বা ‘মাইনর’ বলতে পুরুষ হলে অন্যূন ২১ এবং নারী হলে অন্যূন ১৮ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তিকে বোঝাবে। তবে যুক্তিসংগত কারণে মা-বাবা বা আদালতের সম্মতিতে অন্যূন ১৬ বছর বয়সী কোনো নারী বিয়ে করলে সে ক্ষেত্রে সে অপরিণত বয়স্ক বলে গণ্য হবে না।
শিশু আইন, শিশুনীতিসহ বিভিন্ন আইন ও নীতি এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ বিভিন্ন সনদ অনুসমর্থন করে সরকার ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তাহলে নতুন খসড়া এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, এ প্রশ্ন করা হলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বয়সের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে এসে গেছি। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হবে। কিন্তু বিয়ে ছাড়া কেউ প্রেগন্যান্ট (অন্তঃসত্ত্বা) হয়ে গেলে কী হবে?’ তাঁর মতে, প্রতিবন্ধী নারীসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশেও অভিভাবকদের সম্মতিতে এ ধরনের বিয়ের কথা বলা আছে। সব দিক বিবেচনা করে তাঁরা সূক্ষ্মভাবে আইনটি করতে চান বলে জানান।
প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জাতিসংঘের সনদ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন এবং বেসরকারি সংগঠন উইমেন ফর উইমেনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সালমা খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে তাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া সরকারের কাজ নয়। এখন অনেক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে তার প্রতিকার চাইছে। বিষয়টি এখন আর এমন নয় যে ধর্ষণের কথা মুখেই আনা যাবে না। তাই সরকারকে স্বচ্ছ একটি আইন করতে হবে।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, এই বয়সী মেয়েরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। চুরি হয় বলে সরকার কী বলবে যে সব ঘরে তালা লাগিয়ে দাও? আর কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে বিয়ে দিয়ে দিলেই এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সমস্যা বাড়বে। এ রকম আইন হলে অনেক মা-বাবাই এ সুযোগ নেবেন এবং কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই খসড়ায় নাবালকের সংজ্ঞায় পুরুষ হলে অন্যূন ২১ এবং নারী হলে অন্যূন ১৮ বছরের কথা উল্লেখ ছিল। একই বৈঠকে ১৯২৯ সালের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে ১৮ এবং মেয়েদের ১৮ থেকে ১৬ করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা ও বিরোধিতা শুরু হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন সরকারকে স্মারকলিপি দিয়ে, মানববন্ধন করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী আন্দোলন ও উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলো প্রথম থেকেই একমত যে আইনে এমন কোনো ধারা বা উপধারা সংযোজন করা যাবে না, যাতে করে বিয়ের বয়স ১৮-কে বাধাগ্রস্ত করে। বরং পারলে বিয়ের বয়স বাড়াতে হবে।’ তাঁর মতে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নিরাপত্তা, দারিদ্র্য মোচনসহ বিভিন্ন বিষয়ের দিকে নজর বাড়াতে হবে, অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
সরকারের ২০১১ সালের সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) বলছে, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ১৯ বছরের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন কিশোরী গর্ভধারণ করছে বা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে।
গত জুলাই মাসে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ও যুক্তরাজ্য সরকারের যৌথ আয়োজনে ২১ থেকে ২৩ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের আগে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূণর্ভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন।
খসড়া আইনটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ ডিসেম্বর যে অনুশাসন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ‘বিয়ের বয়স ১৮, তবে পিতামাতা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সামাজিক সমস্যা কম হবে।’
তবে শিশু ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা সরকারের এই ভাবনার সঙ্গে একমত নন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর বয়সের আগে কারও বিয়ে হওয়া উচিত নয়। ১৮ বছরের আগে কেউ বিচার, বুদ্ধি-বিবেচনাবোধসম্পন্ন হতে পারে না। তা ছাড়া ১৮ বছর না হলে একজন ভোটও দিতে পারছে না। আর নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করলে কেউ কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবে না।
গত ১২ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে যে খসড়াটি মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে, তাতেও প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের কথা উল্লেখ আছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, অপরিণত বয়স্ক বা ‘মাইনর’ বলতে পুরুষ হলে অন্যূন ২১ এবং নারী হলে অন্যূন ১৮ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তিকে বোঝাবে। তবে যুক্তিসংগত কারণে মা-বাবা বা আদালতের সম্মতিতে অন্যূন ১৬ বছর বয়সী কোনো নারী বিয়ে করলে সে ক্ষেত্রে সে অপরিণত বয়স্ক বলে গণ্য হবে না।
শিশু আইন, শিশুনীতিসহ বিভিন্ন আইন ও নীতি এবং জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ বিভিন্ন সনদ অনুসমর্থন করে সরকার ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তাহলে নতুন খসড়া এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, এ প্রশ্ন করা হলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বয়সের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে এসে গেছি। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হবে। কিন্তু বিয়ে ছাড়া কেউ প্রেগন্যান্ট (অন্তঃসত্ত্বা) হয়ে গেলে কী হবে?’ তাঁর মতে, প্রতিবন্ধী নারীসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশেও অভিভাবকদের সম্মতিতে এ ধরনের বিয়ের কথা বলা আছে। সব দিক বিবেচনা করে তাঁরা সূক্ষ্মভাবে আইনটি করতে চান বলে জানান।
প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জাতিসংঘের সনদ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন এবং বেসরকারি সংগঠন উইমেন ফর উইমেনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সালমা খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে তাকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া সরকারের কাজ নয়। এখন অনেক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে তার প্রতিকার চাইছে। বিষয়টি এখন আর এমন নয় যে ধর্ষণের কথা মুখেই আনা যাবে না। তাই সরকারকে স্বচ্ছ একটি আইন করতে হবে।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, এই বয়সী মেয়েরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। চুরি হয় বলে সরকার কী বলবে যে সব ঘরে তালা লাগিয়ে দাও? আর কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে বিয়ে দিয়ে দিলেই এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সমস্যা বাড়বে। এ রকম আইন হলে অনেক মা-বাবাই এ সুযোগ নেবেন এবং কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এই খসড়ায় নাবালকের সংজ্ঞায় পুরুষ হলে অন্যূন ২১ এবং নারী হলে অন্যূন ১৮ বছরের কথা উল্লেখ ছিল। একই বৈঠকে ১৯২৯ সালের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে ১৮ এবং মেয়েদের ১৮ থেকে ১৬ করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা ও বিরোধিতা শুরু হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন সরকারকে স্মারকলিপি দিয়ে, মানববন্ধন করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী আন্দোলন ও উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলো প্রথম থেকেই একমত যে আইনে এমন কোনো ধারা বা উপধারা সংযোজন করা যাবে না, যাতে করে বিয়ের বয়স ১৮-কে বাধাগ্রস্ত করে। বরং পারলে বিয়ের বয়স বাড়াতে হবে।’ তাঁর মতে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নিরাপত্তা, দারিদ্র্য মোচনসহ বিভিন্ন বিষয়ের দিকে নজর বাড়াতে হবে, অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
সরকারের ২০১১ সালের সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) বলছে, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ১৯ বছরের মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন কিশোরী গর্ভধারণ করছে বা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে।
গত জুলাই মাসে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ ও যুক্তরাজ্য সরকারের যৌথ আয়োজনে ২১ থেকে ২৩ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের আগে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূণর্ভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন।
No comments