ফুকুশিমা বিপর্যয়ের চার বছর: পরিবার–পরিজন সবই গেছে, এখন শঙ্কা জমি হারানোর
স্বজনদের সমাধিতে প্রার্থনা করছেন নরিও কিমুরা। চার বছর আগে জাপানের ফুকুশিমায় সুনামিতে স্ত্রী, বাবা ও সাত বছরের মেয়েকে হারিয়েছিলেন তিনি |
জাপানে
২০১১ সালের ১১ মার্চের সুনামিতে স্ত্রী, বাবা ও সাত বছরের মেয়ে ইউনাকে
হারিয়েছেন নরিও কিমুরা। স্বজন হারানোর সেই শোক এই চার বছরে একটু একটু করে
ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করেছেন তিনি। তবে এখন নতুন ভয় পেয়ে বসেছে
কিমুরাকে। নিজের জমিগুলো হারানোর দিন গুনছেন তিনি। কারণ, জাপান সরকার
যেখানে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মজুত কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে, তার
মধ্যে পড়েছে কিমুরার জমিও। স্থানটির অবস্থান সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত
ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির কাছেই। কিমুরার সাবেক বাড়িটির দোরগোড়ায়
অবস্থিত ওই জায়গায় ৩০ মিলিয়ন টন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাখার পরিকল্পনা
করছে জাপান সরকার। কিমুরার মতো অনেকই সরকারের ওই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। সরকার
বলছে, ৩০ বছর পর কেন্দ্রটি পরিষ্কার করে ফেলা ও বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে
এই আশ্বাসবাণী খুব কম লোকের মনই গলাতে পারছে।
৪৯ বছর বয়সী কিমুরা বললেন, ‘আমাদের ওপর দিয়ে যে ধকলটা গেছে, তার পরও এখানে তারা তাদের বর্জ্য স্তূপ করতে যাচ্ছে। এটা আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’ ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়া যে ঢিবিটার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কথাগুলো বললেন, নিজের বাড়ির অবশিষ্টাংশ বলতে এখন সেটুকুই।
সুনামির পর বাড়িতে এসে নিজের পরিবারের খোঁজ করতে শুরু করেছিলেন কিমুরা। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি। কারণ, মাত্র দুই মাইল দূরে অবস্থিত ফুকুশিমা চুল্লিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটার পর এলাকা ছাড়ার নির্দেশ আসে। মাস কয়েক পর নিজের স্ত্রী ও বাবার মরদেহ খুঁজে পান কিমুরা। তবে মেয়ে ইউনাকে আর পাননি। আবর্জনা আর কাদামাটির স্তূপ সরিয়ে যেটুকু পেয়েছিলেন, তা হলো ইউনার কিছু কাপড়চোপড় ও একটি খেলনা পুতুল, যেগুলো কাদায় লেপটে ছিল।
সুনামির চার বছর পর কিমুরা নিজের স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন। পাশের জনশূন্য সমুদ্রসৈকতে গিয়ে খুঁজে ফেরেন ইউনার লাশ। তবে তা মাত্র পাঁচ ঘণ্টার জন্য। তেজস্ক্রিয়তার ব্যাপারে যে স্বাস্থ্য নির্দেশনা দেওয়া আছে, তাতে এর বেশি থাকার অনুমতি নেই।
২০১১ সালের মার্চে প্রথমে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং এর জের ধরে সাগরে সৃষ্ট সুনামি উত্তর জাপানের শহরগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছিল ফুকুশিমার ডাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। এর ভারী পানির চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে উদ্বেগ শুরু হয় এলাকাজুড়ে।
আশপাশের শহরগুলোতে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে জাপান নজিরবিহীন এক প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিদিনই কর্মীরা দলে দলে গিয়ে ওই এলাকায় কাজ করেন। তাঁরা পানি দিয়ে রাস্তা ও বাড়িগুলো ঘষে-মেজে পরিষ্কার করেন, গাছের ডালপালা ছাঁটেন এবং দূষিত মাটি কৃষিজমি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেন।
বর্তমানে এই তেজস্ক্রিয় বর্জ্যগুলো নীল ও কালো রঙের প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে পরিত্যক্ত কৃষিজমি, পার্কিং লট, এমনকি বাড়িগুলোর আঙিনাতেই রেখে দেওয়া হচ্ছে।
আসন্ন বছরগুলোতে ফুকুশিমার কাছের পরিত্যক্ত শহর ওকুমা ও ফুতাবায় একটি অধিকতর স্থায়ী মজুত কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে জাপান। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এ পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ওকুমার বাসিন্দা ও স্থানীয় ভূমিমালিকদের একটি গ্রুপের প্রধান কোজি মোনমা (৬০) বলেন, ‘এই জমির ভেতর দিয়ে আমাদের রক্ত ও ঘাম প্রবহমান। আমি এটাকে এভাবে চলে যেতে দিতে পারি না।’
বর্জ্য রাখার বিনিময়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে এবং ৩০ বছর পর বর্জ্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে, টোকিওর এমন আশ্বাসের প্রেক্ষাপটেই ফুকুশিমার গভর্নর বর্জ্য মজুতকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে সম্মতি দেন। এরপরই কেবল ওকুমা ও ফুতাবার মেয়ররা ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই বর্জ্য মজুতকেন্দ্র তৈরির অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে কমবেশি ২ হাজার ৩০০ বাসিন্দার সামনে নিজেদের জমি ছেড়ে দেওয়ার মতো কঠিন পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকছে না। সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় অন্তত এক ডজন বৈঠক করেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অবিশ্বাস দূর করতে পারেনি।
ওকুমার বাসিন্দা তাকাশি সুজিমোতো (৭৩) বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, তারা এখানে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের একটি চূড়ান্ত মজুতকেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে। আমি তাদের বিশ্বাস করি না, কেউই করে না।’
৪৯ বছর বয়সী কিমুরা বললেন, ‘আমাদের ওপর দিয়ে যে ধকলটা গেছে, তার পরও এখানে তারা তাদের বর্জ্য স্তূপ করতে যাচ্ছে। এটা আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’ ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়া যে ঢিবিটার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কথাগুলো বললেন, নিজের বাড়ির অবশিষ্টাংশ বলতে এখন সেটুকুই।
সুনামির পর বাড়িতে এসে নিজের পরিবারের খোঁজ করতে শুরু করেছিলেন কিমুরা। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি। কারণ, মাত্র দুই মাইল দূরে অবস্থিত ফুকুশিমা চুল্লিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটার পর এলাকা ছাড়ার নির্দেশ আসে। মাস কয়েক পর নিজের স্ত্রী ও বাবার মরদেহ খুঁজে পান কিমুরা। তবে মেয়ে ইউনাকে আর পাননি। আবর্জনা আর কাদামাটির স্তূপ সরিয়ে যেটুকু পেয়েছিলেন, তা হলো ইউনার কিছু কাপড়চোপড় ও একটি খেলনা পুতুল, যেগুলো কাদায় লেপটে ছিল।
সুনামির চার বছর পর কিমুরা নিজের স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন। পাশের জনশূন্য সমুদ্রসৈকতে গিয়ে খুঁজে ফেরেন ইউনার লাশ। তবে তা মাত্র পাঁচ ঘণ্টার জন্য। তেজস্ক্রিয়তার ব্যাপারে যে স্বাস্থ্য নির্দেশনা দেওয়া আছে, তাতে এর বেশি থাকার অনুমতি নেই।
২০১১ সালের মার্চে প্রথমে প্রচণ্ড শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং এর জের ধরে সাগরে সৃষ্ট সুনামি উত্তর জাপানের শহরগুলো লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছিল ফুকুশিমার ডাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। এর ভারী পানির চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে উদ্বেগ শুরু হয় এলাকাজুড়ে।
আশপাশের শহরগুলোতে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে জাপান নজিরবিহীন এক প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিদিনই কর্মীরা দলে দলে গিয়ে ওই এলাকায় কাজ করেন। তাঁরা পানি দিয়ে রাস্তা ও বাড়িগুলো ঘষে-মেজে পরিষ্কার করেন, গাছের ডালপালা ছাঁটেন এবং দূষিত মাটি কৃষিজমি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেন।
বর্তমানে এই তেজস্ক্রিয় বর্জ্যগুলো নীল ও কালো রঙের প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে পরিত্যক্ত কৃষিজমি, পার্কিং লট, এমনকি বাড়িগুলোর আঙিনাতেই রেখে দেওয়া হচ্ছে।
আসন্ন বছরগুলোতে ফুকুশিমার কাছের পরিত্যক্ত শহর ওকুমা ও ফুতাবায় একটি অধিকতর স্থায়ী মজুত কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে জাপান। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এ পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ওকুমার বাসিন্দা ও স্থানীয় ভূমিমালিকদের একটি গ্রুপের প্রধান কোজি মোনমা (৬০) বলেন, ‘এই জমির ভেতর দিয়ে আমাদের রক্ত ও ঘাম প্রবহমান। আমি এটাকে এভাবে চলে যেতে দিতে পারি না।’
বর্জ্য রাখার বিনিময়ে আড়াই বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে এবং ৩০ বছর পর বর্জ্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে, টোকিওর এমন আশ্বাসের প্রেক্ষাপটেই ফুকুশিমার গভর্নর বর্জ্য মজুতকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে সম্মতি দেন। এরপরই কেবল ওকুমা ও ফুতাবার মেয়ররা ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই বর্জ্য মজুতকেন্দ্র তৈরির অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে কমবেশি ২ হাজার ৩০০ বাসিন্দার সামনে নিজেদের জমি ছেড়ে দেওয়ার মতো কঠিন পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকছে না। সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় অন্তত এক ডজন বৈঠক করেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অবিশ্বাস দূর করতে পারেনি।
ওকুমার বাসিন্দা তাকাশি সুজিমোতো (৭৩) বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, তারা এখানে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের একটি চূড়ান্ত মজুতকেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে। আমি তাদের বিশ্বাস করি না, কেউই করে না।’
No comments