জেদের ভাত কুত্তা দিয়ে আর কত খাওয়াবেন by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিরোধী দলের লাগাতার হরতাল ও অবরোধ দু’মাস পার হয়েছে ক’দিন আগে। শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মতিঝিলে নিরন্তর অবস্থানে আছি ৪১ দিন; কিন্তু নট নড়ন চড়ন। কোনো কিছু ভালোর দিকে তো যায়ইনি বরং কিছু কিছু খারাপ হয়েছে। ফুটপাথে বসলে হাহাকার শুনি। কারো কামাইরুজি নেই, সংসার চলবে কী করে? অথচ যাদের জন্য জাতির এই অবস্থা তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বলতে চেষ্টা করেছিলাম, অবরোধ প্রত্যাহার করুন, দেশের স্বার্থে যার সাথে প্রয়োজন আলোচনা করে সুস্থিতি আনুন। কে শোনে কার কথা। সবার মাথায় রক্ত। মাথায় রক্তরণ যে মৃত্যুর লণ কেউ বুঝতে চায় না। অন্যদের মতো নয়, আন্তরিকভাবেই আমি চিন্তিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভরসায় বাহাদুরি করেন তারা জানেন না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো বন্ধু নয়। যতণ নিয়ন্ত্রণ ততণই তার। নিয়ন্ত্রণহারা চুলার আগুনের মতো। চুলার বাইরে আগুন গেলে যেমন সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে, যথাসময়ে দমকল বাহিনী না এলে কিছুই বাঁচে না। সব বাহিনীই সেই রকম। এটা আর কেউ না জানলেও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ভাইয়ের ছেলে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানেন। যে পুলিশ মন্ত্রী থাকতে তাকে সেলুট দিয়ে মাটি ফাটিয়ে ফেলত, সেই পুলিশই তার সাথে কী অবমাননাকর নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।
পুলিশের ব্যাপারে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাঙালির গৌরব শ্রী জ্যোতি বসু এক মারাত্মক মন্তব্য করেছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, পুলিশ সিকিউরিটির ভরসা করবেন না। পুলিশরা যার নিরাপত্তায় থাকে আক্রান্ত হলে পুলিশের প্রধান কাজ কর্তৃপকে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা। কোনো সময় দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণে কোনো ভিআইপি আধমরা হলে অনেক সময় সিকিউরিটিরাও গুলিটুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। কারণ আধামরা কোনো ভিআইপি নিরাপত্তা অবহেলার প্রশ্ন তুলতে পারেন। মরে গেলে সব লেঠা চুকে যায়। শুনেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তিন-চার স্তরের সিকিউরিটি, যমদূত আজরাইল ফেরেশতাও নাকি সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তেমনটা হলেই ভালো। খুব ভালো সিকিউরিটি থাক সেটাই আমরা চাই। অন্ততপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর দেশের অন্য নেতাদের প্রত্যেকের জীবন নিরাপদ থাক, এটা আমি কায়মনে প্রার্থনা করি। কিন্তু মুশকিল হলো, যার যে দায়িত্ব এই অবয়ের জামানায় তা তারা পালন করে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে পালিত হয়নি। জিয়াউর রহমানের সাথে এক থালায় যারা ভাত খেতেন, সেই বন্ধুরাই তাকে খুন করেছে। তাই শঙ্কিত না হয়ে পারি না। এই যে সে দিন কত শক্ত স্তরে স্তরে নিরাপত্তা, তার পরও বইমেলা থেকে ফেরার পথে অভিজিৎ রায় নিহত হলেন- এর কি কোনো জবাব আছে? শুনছি, ৫ হাত দূরে পুলিশ ছিল, এখানে-ওখানে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা ছিল, বইমেলা ক্রেতা-বিক্রেতায় ছিল ঠাসা। তাদের মাঝেই বউটা আহত এবং অভিজিৎ রায় নিহত হলেন- এর জবাব কী? বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো- এমন তো অন্য সব েেত্রও হতে পারে।
জনাব অভিজিৎ রায় আমেরিকান নাগরিক এই অজুহাতে এফবিআই ঢাকায় এলো, কত ছবি তুলল। জন্মসূত্রে বাঙালি আমেরিকান নাগরিক অভিজিৎ রায় নিহত হলে আমেরিকান এফবিআই যেভাবে হাওয়ায় ভেসে ঢাকায় এলো আমাদের কোনো নাগরিক আমেরিকায় নিহত হলে আমাদের কোনো তদন্ত টিম কি ওইভাবে তড়িঘড়ি আমেরিকায় যেতে পারবে? আমেরিকান সরকার কি তাদের গ্রহণ করবে? যদি তা না করে তাহলে আমরা এত নতজানু কেন? চাপার জোরে আমরা তো কারো চেয়ে পিছে নেই। এখানে সেই চাপা কোথায়? নিজের দেশের সম্মানী মানুষদের আমরা কতই-না অসম্মান করি। সে অভ্যাসে আমেরিকার মন্ত্রীকেও দু’আনা, চার আনার মন্ত্রী বলি। রাষ্ট্রের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূতকে কাজের মেয়ে মর্জিনা বলে ব্যঙ্গ করি অথচ তারাই এফবিআইয়ের টিমের ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে পারি না- কী আশ্চর্য ব্যাপার! এ দৈন্য আমরা কী দিয়ে ঢাকব? অভিজিৎ রায়ের ওরকম নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিহত হওয়ায় আমার মনে আরো প্রশ্ন জেগেছে। অনবরত দাঙ্গাহাঙ্গামায় পুলিশের বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই। তাদের রাতদিন ডিউটি। দু-আড়াই মাস দেশে দাঙ্গাহাঙ্গামা ফেরাতে গিয়ে বিশ্রাম না পাওয়ায় তারা তাদের কার্যমতা হারিয়ে ফেলেনি তো। যুদ্ধেেত্রও সৈন্যরা লাগাতার যুদ্ধ করে না, তাদের বিশ্রাম দিতে হয়। সরকারের হাতে কত আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনী আছে যে এক দলকে বিশ্রামে দিয়ে অন্য দলকে সক্রিয় করতে পারে? মানবদেহ মহাশয় কথায় আছে যা দেবেন তাই সয়। কিন্তু তবু বোঝা বইবার একটা সীমা থাকে। মাত্রাতিরিক্ত বোঝা গাধায়ও বইতে পারে না। ৪১ দিন মতিঝিলের ফুটপাথে থেকে দেখছি, শত শত কর্মী অদল-বদল করে অবস্থান করছে। তার পরও কেউ কেউ অসুস্থ হচ্ছে। হাবিবুন নবী সোহেলের ঘাড়ে রগটান লেগে বেসামাল, রিফাতুল ইসলাম দীপ সচল থাকলেও দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে প্রায়ই কষ্ট পায়, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক বিছানায় পড়া, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী মাঝেসাজেই গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সখিপুরের নাজমুলকে ক’দিন পর হঠাৎ দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোকে যে দেখছি না? ঠাণ্ডায় শরীর খারাপ হয়েছিল তাই আসতে পারেনি। বহু দিনের সঙ্গী ব্যক্তিগত সচিব ফরিদ আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরশু রাতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আর বাতাস থাকায় সে আমায় কম্বল দিতে গিয়েছিল। গাড়ির শব্দে ঘুমানো যায় না। হয়তো তন্দ্রায় ছিলাম। তাই বলেছিলাম, কম্বলের দরকার নেই। সে গাল ফুলিয়ে চলে গিয়েছিল। সেই রাতে ঠাণ্ডায় গলায় কফ জমেছিল। হামদর্দের এলভাসিন খাওয়ায় তবেই মুক্তি। তাই সরকারকেও ভাবতে হবে তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কত দিন একইভাবে রাখতে পারবেন। সময় পেরিয়ে গেলে বাঙালির অনেক কিছুই মনে থাকে না।
জনাব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাড়ে ৯ বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ৬ ডিসেম্বর ’৯০ ফরিদপুরের টেকেরহাটে বেইলি ব্রীজ ওপেন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে লোক হয়েছিল দুই-তিন লাখ। অথচ ঢাকায় ফিরেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন নরসিংদীর জেনারেল নুরুদ্দিন খান। প্রেসিডেন্ট নাকি তাকে ছেলের মতো দেখতেন। জনাব নুরুদ্দিনও তাকে বাবা ডাকতেন। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীদের মতার অনেক সন্তান থাকে, মতায় থাকতে তারা তা বোঝেন না এবং কিয়ামত পর্যন্তও বুঝবেন না। টেকেরহাট থেকে ফিরে সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন খানকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, তুমি তোমার সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়জিত করো। বিনীতভাবে জেনারেল নুরুদ্দিন খান বলেছিলেন, আমার কাজ সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো নয়। আমি তা করতে পারব না। আপনি আপনার রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করুন। সাথে সাথে জনাব এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন। মনে হয় এখনকার বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই বলেছিলেন, আপনি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলেন, পদত্যাগ করলেন, আমাদের সাথে একটু আলোচনা করলেন না। জানা কথা নয়, শোনা কথা। জনাব এরশাদ নাকি বলেছিলেন, ‘পদত্যাগ’ ওই একটা সিদ্ধান্তই কারো সাথে আলোচনা করে নিতে হয় না, ওটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। সত্য-মিথ্যা জানি না, একজন সামরিক ব্যক্তি হয়েও সে দিন রক্ত য় না করে সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল নুরুদ্দিন খান যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসে বরণীয় হয়ে আছেন, জনাব এরশাদও জল্লাদের খেতাব থেকে বেঁচে গেছেন।
পরশু ছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অমোঘ ঘোষণার দিন। আজকাল অনুপযুক্তরা ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও সমালোচনা করে। সমালোচনাই যাদের স্বভাব, তা তারা করবেই। তবে ৭ মার্চের ভাষণ কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, ওটা ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির অভিব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে উচ্চারিত হলেও বঙ্গবন্ধু তখন কোনো ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, চিন্তা-চৈতন্যের মূর্ত প্রতীক। কোনো ব্যক্তি হিসেবে কোনো জনসমুদ্রে অমন নির্ভুল ঘোষণা দিতে পারেন না, এযাবৎ কেউ পারেনি। তার ত্যাগ-তিতিা, জাতির প্রতি নিষ্ঠায় তিনি সে দিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই ৭ মার্চ গত শনিবার পালন করেছে বর্তমান সরকার বা আওয়ামী লীগ। যা ছিল জাতীয় সম্পদ তা পরিণত হয়েছে ব্যক্তি বা দলীয় সম্পদে। তাই জাতীয় উন্মাদনা কিংবা উৎসাহ নেই। ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাস্থলের সামনে যে মেয়েদের ছবি দেখা গেছে তারা কারা? তারা কি কোনো সাধারণ নারী, স্কুল-কলেজের ছাত্রী, ঘরের বধূ? তেমনটা মনে হয় না। ছবি দেখে অনেকে বলার চেষ্টা করছে, এদের বেশিসংখ্যকই গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক অথবা লাখ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যদের কেউ। সাধারণ জনসাধারণের অংশগ্রহণ একেবারেই নেই। আর কেউ আশা না করলেও এই জ্বলন্ত সময়ে ৭ মার্চের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে শান্তির ললিত বাণী শোনাবেন- এটা আমার আশা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কি কখনো প্রধানমন্ত্রীর মতো অথবা সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতার মতো কোনো কথা শুনতে পারব না? সব সময় কেন তিনি আক্রমণাত্মক ভাষণ দেবেন। তার চিরশত্র“ বেগম খালেদা জিয়া। তাকে খুনি মামলার আসামি করা হয়েছে। তার বিচার হবে, বিচারে ফাঁসি হবে- এমন কথা তো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ইয়াহিয়া খানও বলতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ’৭১-এর মার্চের ২৬ তারিখ হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের ওপর লেলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, This time Sheikh Mujib will be the not go unpunished.' তবে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইয়াহিয়ার ভাষায় কথা বলছেন? কেন অমন বলবেন? বড় পীড়া জাগে।
আজ ৪১টি দিন কখনো তীব্র শীত, বাতাস, আবার বৃষ্টি। তার পরেও আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ফুটপাথে আছি, ভিজেছি; কিন্তু ঘরে যাইনি। প্রার্থনা খুব বেশি নয়, যারা দেশের শান্তি-অশান্তির মূল আল্লাহ তাদের সুমতি দিন, জাতিকে রা করুন। যদি জানতে পারতাম আর কত দিন রাস্তায় থাকলে তাদের মন গলবে, গাড়িতে আগুন দেয়া বন্ধ হবে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এটা-ওটা করে পেট চালাতে পারবে, রিকশাওয়ালার ঘরে হাহাকার থাকবে না, কৃষক-শ্রমিকের চুলা জ্বলবে, তত দিন শান্তিকামনা করে যেতাম। যারা অবস্থানস্থলে এসে সমর্থন জানিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যারা কষ্ট করে আসতে পারেননি তাদেরও যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন থাকে সেটাই যথেষ্ট। নাগরিক ঐক্যের প্রধান জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে একেবারে ঠুনকো অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নাজেহাল করা হয়েছে, আবার ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পরাধীন পাকিস্তানে আমরা কত জেল খেটেছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী হিসেবে রিমান্ডের কথা চিন্তাও করিনি। স্বাধীনতা হবে পরাধীনতার চেয়ে লাখো গুণ উত্তম, স্বাচ্ছন্দ্যময়, আনন্দদায়ক। আমাদের স্বাধীনতায় এত কদর্য কেন? আমরা তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছি, পথে পথে ঘাটে ঘাটে রক্ত ঢেলেছি। মায়ের পবিত্র রক্তে লুটোপুটি খেয়ে যেমনি মানবসন্তান এ দুনিয়ায় আসে আমরা তো তার চোয়ে অনেক বেশি রক্ত দিয়ে ধুয়েমুছে পূতপবিত্র করে স্বাধীনতা এনেছি। তবে কেন আমাদের স্বাধীনতায় এত কালিমা? আমরা গণতন্ত্রকে বাধামুক্ত করতে কত ত্যাগ স্বীকার করেছি। সেই গণতন্ত্রের দৈন্যদশা দেখে, গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক তৎপরতা দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে তা-ও পারি না। আল্লাহর জীবন, তার জীবন তিনিই নেবেন। সেখানে আমাদের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু দোজখের জ্বালার চেয়ে বেশি জ্বালায় পুড়ে খাক হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ।
গতকাল এই লেখা তৈরির পরে মতিঝিলে মুক্তিযোদ্ধা, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মতামত নিতে বসেছিলাম। তাই সে সম্পর্কে কিছুই লিখতে পারলাম না। আগামীকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা আছে। আশা করি সেখানে দু’কথা লিখতে পারব। আবারো আহ্বান জানাচ্ছি, এভাবে দেশ চলে না। জেদের ভাত আর কুত্তা দিয়ে খাওয়াবেন না। মানুষকে ভালোভাবে চলতে দিন, বলতে দিন, ইচ্ছেমতো বাঁচতে দিন।
বিরোধী দলের লাগাতার হরতাল ও অবরোধ দু’মাস পার হয়েছে ক’দিন আগে। শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মতিঝিলে নিরন্তর অবস্থানে আছি ৪১ দিন; কিন্তু নট নড়ন চড়ন। কোনো কিছু ভালোর দিকে তো যায়ইনি বরং কিছু কিছু খারাপ হয়েছে। ফুটপাথে বসলে হাহাকার শুনি। কারো কামাইরুজি নেই, সংসার চলবে কী করে? অথচ যাদের জন্য জাতির এই অবস্থা তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বলতে চেষ্টা করেছিলাম, অবরোধ প্রত্যাহার করুন, দেশের স্বার্থে যার সাথে প্রয়োজন আলোচনা করে সুস্থিতি আনুন। কে শোনে কার কথা। সবার মাথায় রক্ত। মাথায় রক্তরণ যে মৃত্যুর লণ কেউ বুঝতে চায় না। অন্যদের মতো নয়, আন্তরিকভাবেই আমি চিন্তিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভরসায় বাহাদুরি করেন তারা জানেন না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারো বন্ধু নয়। যতণ নিয়ন্ত্রণ ততণই তার। নিয়ন্ত্রণহারা চুলার আগুনের মতো। চুলার বাইরে আগুন গেলে যেমন সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে, যথাসময়ে দমকল বাহিনী না এলে কিছুই বাঁচে না। সব বাহিনীই সেই রকম। এটা আর কেউ না জানলেও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ভাইয়ের ছেলে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানেন। যে পুলিশ মন্ত্রী থাকতে তাকে সেলুট দিয়ে মাটি ফাটিয়ে ফেলত, সেই পুলিশই তার সাথে কী অবমাননাকর নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।
পুলিশের ব্যাপারে প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাঙালির গৌরব শ্রী জ্যোতি বসু এক মারাত্মক মন্তব্য করেছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, পুলিশ সিকিউরিটির ভরসা করবেন না। পুলিশরা যার নিরাপত্তায় থাকে আক্রান্ত হলে পুলিশের প্রধান কাজ কর্তৃপকে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা। কোনো সময় দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণে কোনো ভিআইপি আধমরা হলে অনেক সময় সিকিউরিটিরাও গুলিটুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। কারণ আধামরা কোনো ভিআইপি নিরাপত্তা অবহেলার প্রশ্ন তুলতে পারেন। মরে গেলে সব লেঠা চুকে যায়। শুনেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তিন-চার স্তরের সিকিউরিটি, যমদূত আজরাইল ফেরেশতাও নাকি সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তেমনটা হলেই ভালো। খুব ভালো সিকিউরিটি থাক সেটাই আমরা চাই। অন্ততপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর দেশের অন্য নেতাদের প্রত্যেকের জীবন নিরাপদ থাক, এটা আমি কায়মনে প্রার্থনা করি। কিন্তু মুশকিল হলো, যার যে দায়িত্ব এই অবয়ের জামানায় তা তারা পালন করে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে পালিত হয়নি। জিয়াউর রহমানের সাথে এক থালায় যারা ভাত খেতেন, সেই বন্ধুরাই তাকে খুন করেছে। তাই শঙ্কিত না হয়ে পারি না। এই যে সে দিন কত শক্ত স্তরে স্তরে নিরাপত্তা, তার পরও বইমেলা থেকে ফেরার পথে অভিজিৎ রায় নিহত হলেন- এর কি কোনো জবাব আছে? শুনছি, ৫ হাত দূরে পুলিশ ছিল, এখানে-ওখানে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা ছিল, বইমেলা ক্রেতা-বিক্রেতায় ছিল ঠাসা। তাদের মাঝেই বউটা আহত এবং অভিজিৎ রায় নিহত হলেন- এর জবাব কী? বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো- এমন তো অন্য সব েেত্রও হতে পারে।
জনাব অভিজিৎ রায় আমেরিকান নাগরিক এই অজুহাতে এফবিআই ঢাকায় এলো, কত ছবি তুলল। জন্মসূত্রে বাঙালি আমেরিকান নাগরিক অভিজিৎ রায় নিহত হলে আমেরিকান এফবিআই যেভাবে হাওয়ায় ভেসে ঢাকায় এলো আমাদের কোনো নাগরিক আমেরিকায় নিহত হলে আমাদের কোনো তদন্ত টিম কি ওইভাবে তড়িঘড়ি আমেরিকায় যেতে পারবে? আমেরিকান সরকার কি তাদের গ্রহণ করবে? যদি তা না করে তাহলে আমরা এত নতজানু কেন? চাপার জোরে আমরা তো কারো চেয়ে পিছে নেই। এখানে সেই চাপা কোথায়? নিজের দেশের সম্মানী মানুষদের আমরা কতই-না অসম্মান করি। সে অভ্যাসে আমেরিকার মন্ত্রীকেও দু’আনা, চার আনার মন্ত্রী বলি। রাষ্ট্রের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূতকে কাজের মেয়ে মর্জিনা বলে ব্যঙ্গ করি অথচ তারাই এফবিআইয়ের টিমের ব্যাপারে কোনো মতামত দিতে পারি না- কী আশ্চর্য ব্যাপার! এ দৈন্য আমরা কী দিয়ে ঢাকব? অভিজিৎ রায়ের ওরকম নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিহত হওয়ায় আমার মনে আরো প্রশ্ন জেগেছে। অনবরত দাঙ্গাহাঙ্গামায় পুলিশের বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই। তাদের রাতদিন ডিউটি। দু-আড়াই মাস দেশে দাঙ্গাহাঙ্গামা ফেরাতে গিয়ে বিশ্রাম না পাওয়ায় তারা তাদের কার্যমতা হারিয়ে ফেলেনি তো। যুদ্ধেেত্রও সৈন্যরা লাগাতার যুদ্ধ করে না, তাদের বিশ্রাম দিতে হয়। সরকারের হাতে কত আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনী আছে যে এক দলকে বিশ্রামে দিয়ে অন্য দলকে সক্রিয় করতে পারে? মানবদেহ মহাশয় কথায় আছে যা দেবেন তাই সয়। কিন্তু তবু বোঝা বইবার একটা সীমা থাকে। মাত্রাতিরিক্ত বোঝা গাধায়ও বইতে পারে না। ৪১ দিন মতিঝিলের ফুটপাথে থেকে দেখছি, শত শত কর্মী অদল-বদল করে অবস্থান করছে। তার পরও কেউ কেউ অসুস্থ হচ্ছে। হাবিবুন নবী সোহেলের ঘাড়ে রগটান লেগে বেসামাল, রিফাতুল ইসলাম দীপ সচল থাকলেও দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে প্রায়ই কষ্ট পায়, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক বিছানায় পড়া, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী মাঝেসাজেই গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সখিপুরের নাজমুলকে ক’দিন পর হঠাৎ দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোকে যে দেখছি না? ঠাণ্ডায় শরীর খারাপ হয়েছিল তাই আসতে পারেনি। বহু দিনের সঙ্গী ব্যক্তিগত সচিব ফরিদ আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরশু রাতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আর বাতাস থাকায় সে আমায় কম্বল দিতে গিয়েছিল। গাড়ির শব্দে ঘুমানো যায় না। হয়তো তন্দ্রায় ছিলাম। তাই বলেছিলাম, কম্বলের দরকার নেই। সে গাল ফুলিয়ে চলে গিয়েছিল। সেই রাতে ঠাণ্ডায় গলায় কফ জমেছিল। হামদর্দের এলভাসিন খাওয়ায় তবেই মুক্তি। তাই সরকারকেও ভাবতে হবে তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কত দিন একইভাবে রাখতে পারবেন। সময় পেরিয়ে গেলে বাঙালির অনেক কিছুই মনে থাকে না।
জনাব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাড়ে ৯ বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ৬ ডিসেম্বর ’৯০ ফরিদপুরের টেকেরহাটে বেইলি ব্রীজ ওপেন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে লোক হয়েছিল দুই-তিন লাখ। অথচ ঢাকায় ফিরেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন নরসিংদীর জেনারেল নুরুদ্দিন খান। প্রেসিডেন্ট নাকি তাকে ছেলের মতো দেখতেন। জনাব নুরুদ্দিনও তাকে বাবা ডাকতেন। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীদের মতার অনেক সন্তান থাকে, মতায় থাকতে তারা তা বোঝেন না এবং কিয়ামত পর্যন্তও বুঝবেন না। টেকেরহাট থেকে ফিরে সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন খানকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, তুমি তোমার সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়জিত করো। বিনীতভাবে জেনারেল নুরুদ্দিন খান বলেছিলেন, আমার কাজ সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো নয়। আমি তা করতে পারব না। আপনি আপনার রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করুন। সাথে সাথে জনাব এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন। মনে হয় এখনকার বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই বলেছিলেন, আপনি এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলেন, পদত্যাগ করলেন, আমাদের সাথে একটু আলোচনা করলেন না। জানা কথা নয়, শোনা কথা। জনাব এরশাদ নাকি বলেছিলেন, ‘পদত্যাগ’ ওই একটা সিদ্ধান্তই কারো সাথে আলোচনা করে নিতে হয় না, ওটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। সত্য-মিথ্যা জানি না, একজন সামরিক ব্যক্তি হয়েও সে দিন রক্ত য় না করে সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল নুরুদ্দিন খান যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসে বরণীয় হয়ে আছেন, জনাব এরশাদও জল্লাদের খেতাব থেকে বেঁচে গেছেন।
পরশু ছিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অমোঘ ঘোষণার দিন। আজকাল অনুপযুক্তরা ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও সমালোচনা করে। সমালোচনাই যাদের স্বভাব, তা তারা করবেই। তবে ৭ মার্চের ভাষণ কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, ওটা ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির অভিব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে উচ্চারিত হলেও বঙ্গবন্ধু তখন কোনো ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, চিন্তা-চৈতন্যের মূর্ত প্রতীক। কোনো ব্যক্তি হিসেবে কোনো জনসমুদ্রে অমন নির্ভুল ঘোষণা দিতে পারেন না, এযাবৎ কেউ পারেনি। তার ত্যাগ-তিতিা, জাতির প্রতি নিষ্ঠায় তিনি সে দিন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই ৭ মার্চ গত শনিবার পালন করেছে বর্তমান সরকার বা আওয়ামী লীগ। যা ছিল জাতীয় সম্পদ তা পরিণত হয়েছে ব্যক্তি বা দলীয় সম্পদে। তাই জাতীয় উন্মাদনা কিংবা উৎসাহ নেই। ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাস্থলের সামনে যে মেয়েদের ছবি দেখা গেছে তারা কারা? তারা কি কোনো সাধারণ নারী, স্কুল-কলেজের ছাত্রী, ঘরের বধূ? তেমনটা মনে হয় না। ছবি দেখে অনেকে বলার চেষ্টা করছে, এদের বেশিসংখ্যকই গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক অথবা লাখ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যদের কেউ। সাধারণ জনসাধারণের অংশগ্রহণ একেবারেই নেই। আর কেউ আশা না করলেও এই জ্বলন্ত সময়ে ৭ মার্চের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে শান্তির ললিত বাণী শোনাবেন- এটা আমার আশা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কি কখনো প্রধানমন্ত্রীর মতো অথবা সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় নেতার মতো কোনো কথা শুনতে পারব না? সব সময় কেন তিনি আক্রমণাত্মক ভাষণ দেবেন। তার চিরশত্র“ বেগম খালেদা জিয়া। তাকে খুনি মামলার আসামি করা হয়েছে। তার বিচার হবে, বিচারে ফাঁসি হবে- এমন কথা তো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ইয়াহিয়া খানও বলতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ’৭১-এর মার্চের ২৬ তারিখ হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের ওপর লেলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, This time Sheikh Mujib will be the not go unpunished.' তবে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইয়াহিয়ার ভাষায় কথা বলছেন? কেন অমন বলবেন? বড় পীড়া জাগে।
আজ ৪১টি দিন কখনো তীব্র শীত, বাতাস, আবার বৃষ্টি। তার পরেও আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ফুটপাথে আছি, ভিজেছি; কিন্তু ঘরে যাইনি। প্রার্থনা খুব বেশি নয়, যারা দেশের শান্তি-অশান্তির মূল আল্লাহ তাদের সুমতি দিন, জাতিকে রা করুন। যদি জানতে পারতাম আর কত দিন রাস্তায় থাকলে তাদের মন গলবে, গাড়িতে আগুন দেয়া বন্ধ হবে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এটা-ওটা করে পেট চালাতে পারবে, রিকশাওয়ালার ঘরে হাহাকার থাকবে না, কৃষক-শ্রমিকের চুলা জ্বলবে, তত দিন শান্তিকামনা করে যেতাম। যারা অবস্থানস্থলে এসে সমর্থন জানিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যারা কষ্ট করে আসতে পারেননি তাদেরও যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন থাকে সেটাই যথেষ্ট। নাগরিক ঐক্যের প্রধান জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে একেবারে ঠুনকো অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে নাজেহাল করা হয়েছে, আবার ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পরাধীন পাকিস্তানে আমরা কত জেল খেটেছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী হিসেবে রিমান্ডের কথা চিন্তাও করিনি। স্বাধীনতা হবে পরাধীনতার চেয়ে লাখো গুণ উত্তম, স্বাচ্ছন্দ্যময়, আনন্দদায়ক। আমাদের স্বাধীনতায় এত কদর্য কেন? আমরা তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছি, পথে পথে ঘাটে ঘাটে রক্ত ঢেলেছি। মায়ের পবিত্র রক্তে লুটোপুটি খেয়ে যেমনি মানবসন্তান এ দুনিয়ায় আসে আমরা তো তার চোয়ে অনেক বেশি রক্ত দিয়ে ধুয়েমুছে পূতপবিত্র করে স্বাধীনতা এনেছি। তবে কেন আমাদের স্বাধীনতায় এত কালিমা? আমরা গণতন্ত্রকে বাধামুক্ত করতে কত ত্যাগ স্বীকার করেছি। সেই গণতন্ত্রের দৈন্যদশা দেখে, গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক তৎপরতা দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে তা-ও পারি না। আল্লাহর জীবন, তার জীবন তিনিই নেবেন। সেখানে আমাদের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু দোজখের জ্বালার চেয়ে বেশি জ্বালায় পুড়ে খাক হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ।
গতকাল এই লেখা তৈরির পরে মতিঝিলে মুক্তিযোদ্ধা, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মতামত নিতে বসেছিলাম। তাই সে সম্পর্কে কিছুই লিখতে পারলাম না। আগামীকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা আছে। আশা করি সেখানে দু’কথা লিখতে পারব। আবারো আহ্বান জানাচ্ছি, এভাবে দেশ চলে না। জেদের ভাত আর কুত্তা দিয়ে খাওয়াবেন না। মানুষকে ভালোভাবে চলতে দিন, বলতে দিন, ইচ্ছেমতো বাঁচতে দিন।
No comments