সংসদে সক্রিয়, বাইরে ক্ষমতাহীন by হারুন আল রশীদ
সংরক্ষিত
আসনের নারী সাংসদেরা সংসদীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। কিন্তু বাইরে তাঁদের
কোনো ক্ষমতা নেই। কারণ, তাঁদের আসনের জন্য ভৌগোলিক এলাকা সুনির্দিষ্ট নেই। দলীয়ভাবে
এলাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে তাঁদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নিজ
উদ্যোগে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের বেশির ভাগই সরাসরি নির্বাচিত সাংসদদের
অসহযোগিতার মুখোমুখি হন। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের অন্তত ২৫ জন
সাংসদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, নারী
সাংসদের নেতৃত্বগুণ থাকলেই তা নির্বাচিত সাংসদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ
হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যতে আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় অনেক নির্বাচিত
সাংসদই নারী সাংসদদের এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করতে দেন না। কয়েকটি স্থানে
পুরুষ সাংসদের মদদে নারী সাংসদকে অপমান-অপদস্থ করার ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমান
সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০টিতে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন। সংরক্ষিত
৫০টি আসন মিলিয়ে বর্তমানে সংসদে নারী সাংসদের সংখ্যা ৭০ জন। যা মোট
আসনসংখ্যার ২০ শতাংশ। সরাসরি নির্বাচিতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের
১৮ জন, জাতীয় পার্টির তিনজন ও জাসদের একজন।
জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ নির্বাচিত সাংসদ সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের বহিরাগত মনে করেন। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্যই তাঁরা নারী সাংসদদের কাজে বাধা দিয়ে থাকেন। তৃণমূলের নারীদের অনেকের সরাসরি নির্বাচন করে সংসদে আসার যোগ্যতা থাকলেও নারী বলে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। টাকা এবং পেশিশক্তি না থাকাটাও অন্যতম কারণ।
স্পিকার আরও বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কার্যকর হলে সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন হবে না। বরং মূল আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে দলগুলো ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দিলে তা নারীর ক্ষমতায়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে ভবিষ্যতে দলীয়ভাবে তহবিল তৈরি করা যেতে পারে বলে মনে করেন স্পিকার। সেই তহবিল থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের নির্বাচনে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলে তাঁরা সংসদে আসতে পারবেন।
নারী সাংসদদের অসন্তোষ: নারী সাংসদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা যাতে জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পরেন, সে জন্য সরাসরি নির্বাচিত সাংসদেরা নানাভাবে বাধা দিয়ে থাকেন। সাংসদদের পরামর্শে অনেক জেলায় মাসিক সমন্বয় সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সভাতে নারী সাংসদদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
বরগুনা ও ঝালকাঠির সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী জানান, নারী সাংসদদের অনেককেই পুরুষ সাংসদেরা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। হিতে বিপরীত হওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেন না। তিনি বলেন, ‘সব সময় বেশি কাজ করার চেষ্টা করি বলে আমার এলাকার সাংসদ শওকত হাচানুর রহমানের (বরগুনা-২) মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করে।’
প্রথম আলোর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা (হবিগঞ্জ-৩)। অভিযোগ আছে, তাঁর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বাধা দিয়ে থাকেন একই দলের আবু জাহির।
গত ৩০ নভেম্বর স্থানীয় আলী সোবহান চৌধুরী কলেজের সাময়িক পরীক্ষা চলার সময় একদল বহিরাগত এসে হামলা চালিয়ে পরীক্ষার্থীদের বের করে দেয়। এই কলেজের সভাপতি কেয়া চৌধুরী। এ হামলায় আবু জাহিরের ইন্ধন রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
কেয়া চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলেও কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়নি। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এমন কি ওই দিন তাঁকে এলাকায়ও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে আবু জাহিরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদ সফুরা বেগম বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের সমাজ ও প্রশাসন মূল্যায়ন করে না। যত ভালো কাজই করি না কেন, মূল্যায়ন করা হয় নারী হিসেবে। এখনো কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গেলে আগে পুরুষ সদস্যদের চেয়ার দেওয়া হয়।’
নবম সংসদে সরকারি দলের সানজিদা খানম সরাসরি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের সংসদে তিনি সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সহকর্মীরা আগের সংসদে আমাকে সমীহ করতেন। এখন সহকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন এসে গেছে।’
তবে জাতীয় পার্টির নারী সাংসদদের ছয় সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
তবুও এগোচ্ছে নারী: সম্প্রতি সংসদবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক নিজাম আহমেদ তাঁর উমেন ইন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পঞ্চম সংসদে ২২টি, সপ্তমে ১৭ এবং নবমে ৪টি কমিটিতে কোনো নারী সদস্য ছিলেন না। অষ্টম সংসদে নারীরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ মৌখিক, ৮ শতাংশ সম্পূরক এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন। নবম সংসদে এসে তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৯ এবং ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে নিজাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাধা সত্ত্বেও সংসদীয় রাজনীতিতে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাঁদের কোনো আসন না থাকায় তাঁরা সংসদে স্থানীয় সমস্যার চেয়ে জাতীয় সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তা ছাড়া সরাসরি নির্বাচিত হওয়া নারী সাংসদের সংখ্যা প্রতিবারই বাড়ছে। এটি নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক লক্ষণ।
বর্তমান সংসদের হিসাব নিয়ে দেখা গেছে, এক অধিবেশন পরে যোগদান করলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে সরাসরি নির্বাচিতদের চেয়ে সংরক্ষিত আসনের নারীদের অংশগ্রহণের হার বেশি।
বর্তমান ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ৮টির সভাপতি পদে নারী সাংসদ রয়েছেন। এর মধ্যে কার্য-উপদেষ্টা, কার্যপ্রণালিবিধি, পিটিশন ও বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দীপু মনি, শ্রম ও কর্মসংস্থানে মন্নুজান সুফিয়ান, মহিলা ও শিশুতে রেবেকা মোমিন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি পদে আছেন সিমিন হোসেন। সব মিলিয়ে ১২টি কমিটিতে একাধিক নারী সদস্য আছেন। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুতে সর্বাধিক ৮ জন, কার্য-উপদেষ্টা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে আছেন ৪ জন করে। একমাত্র সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটিতে কোনো নারী সদস্য নেই। হিসাব করে দেখা গেছে, কমিটিতে সরাসরি নির্বাচিতদের চেয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের উপস্থিতির হার বেশি।
নারী সদস্য বাড়ছে: সংসদের সংরক্ষিত আসনে নারীদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদে ১৫টি আসন নিয়ে। এরপর চার দশকে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রতিবারই বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম সংসদে কোনো নারী সরাসরি জিততে পারেননি। সেবার সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ছিল ৪ দশমকি ৮ শতাংশ। নবম সংসদে নারী আসন ছিল ৫০টি। সরাসরি নির্বাচিত হন ১৯ জন। নারীর মোট প্রতিনিধিত্ব ছিল ১৮ দশমকি ৬ শতাংশ। বর্তমান সংসদে যা ২০ শতাংশ।
জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ নির্বাচিত সাংসদ সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের বহিরাগত মনে করেন। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্যই তাঁরা নারী সাংসদদের কাজে বাধা দিয়ে থাকেন। তৃণমূলের নারীদের অনেকের সরাসরি নির্বাচন করে সংসদে আসার যোগ্যতা থাকলেও নারী বলে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। টাকা এবং পেশিশক্তি না থাকাটাও অন্যতম কারণ।
স্পিকার আরও বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কার্যকর হলে সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন হবে না। বরং মূল আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে দলগুলো ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দিলে তা নারীর ক্ষমতায়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে ভবিষ্যতে দলীয়ভাবে তহবিল তৈরি করা যেতে পারে বলে মনে করেন স্পিকার। সেই তহবিল থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের নির্বাচনে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলে তাঁরা সংসদে আসতে পারবেন।
নারী সাংসদদের অসন্তোষ: নারী সাংসদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা যাতে জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পরেন, সে জন্য সরাসরি নির্বাচিত সাংসদেরা নানাভাবে বাধা দিয়ে থাকেন। সাংসদদের পরামর্শে অনেক জেলায় মাসিক সমন্বয় সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সভাতে নারী সাংসদদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
বরগুনা ও ঝালকাঠির সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী জানান, নারী সাংসদদের অনেককেই পুরুষ সাংসদেরা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। হিতে বিপরীত হওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেন না। তিনি বলেন, ‘সব সময় বেশি কাজ করার চেষ্টা করি বলে আমার এলাকার সাংসদ শওকত হাচানুর রহমানের (বরগুনা-২) মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করে।’
প্রথম আলোর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ সদরের বাসিন্দা (হবিগঞ্জ-৩)। অভিযোগ আছে, তাঁর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বাধা দিয়ে থাকেন একই দলের আবু জাহির।
গত ৩০ নভেম্বর স্থানীয় আলী সোবহান চৌধুরী কলেজের সাময়িক পরীক্ষা চলার সময় একদল বহিরাগত এসে হামলা চালিয়ে পরীক্ষার্থীদের বের করে দেয়। এই কলেজের সভাপতি কেয়া চৌধুরী। এ হামলায় আবু জাহিরের ইন্ধন রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
কেয়া চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলেও কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়নি। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এমন কি ওই দিন তাঁকে এলাকায়ও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে আবু জাহিরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদ সফুরা বেগম বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের সমাজ ও প্রশাসন মূল্যায়ন করে না। যত ভালো কাজই করি না কেন, মূল্যায়ন করা হয় নারী হিসেবে। এখনো কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গেলে আগে পুরুষ সদস্যদের চেয়ার দেওয়া হয়।’
নবম সংসদে সরকারি দলের সানজিদা খানম সরাসরি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের সংসদে তিনি সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সহকর্মীরা আগের সংসদে আমাকে সমীহ করতেন। এখন সহকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন এসে গেছে।’
তবে জাতীয় পার্টির নারী সাংসদদের ছয় সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
তবুও এগোচ্ছে নারী: সম্প্রতি সংসদবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক নিজাম আহমেদ তাঁর উমেন ইন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পঞ্চম সংসদে ২২টি, সপ্তমে ১৭ এবং নবমে ৪টি কমিটিতে কোনো নারী সদস্য ছিলেন না। অষ্টম সংসদে নারীরা ২ দশমিক ৫ শতাংশ মৌখিক, ৮ শতাংশ সম্পূরক এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন। নবম সংসদে এসে তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৪ দশমিক ৯ এবং ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে নিজাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাধা সত্ত্বেও সংসদীয় রাজনীতিতে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাঁদের কোনো আসন না থাকায় তাঁরা সংসদে স্থানীয় সমস্যার চেয়ে জাতীয় সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তা ছাড়া সরাসরি নির্বাচিত হওয়া নারী সাংসদের সংখ্যা প্রতিবারই বাড়ছে। এটি নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক লক্ষণ।
বর্তমান সংসদের হিসাব নিয়ে দেখা গেছে, এক অধিবেশন পরে যোগদান করলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে সরাসরি নির্বাচিতদের চেয়ে সংরক্ষিত আসনের নারীদের অংশগ্রহণের হার বেশি।
বর্তমান ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ৮টির সভাপতি পদে নারী সাংসদ রয়েছেন। এর মধ্যে কার্য-উপদেষ্টা, কার্যপ্রণালিবিধি, পিটিশন ও বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দীপু মনি, শ্রম ও কর্মসংস্থানে মন্নুজান সুফিয়ান, মহিলা ও শিশুতে রেবেকা মোমিন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি পদে আছেন সিমিন হোসেন। সব মিলিয়ে ১২টি কমিটিতে একাধিক নারী সদস্য আছেন। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুতে সর্বাধিক ৮ জন, কার্য-উপদেষ্টা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে আছেন ৪ জন করে। একমাত্র সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটিতে কোনো নারী সদস্য নেই। হিসাব করে দেখা গেছে, কমিটিতে সরাসরি নির্বাচিতদের চেয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের উপস্থিতির হার বেশি।
নারী সদস্য বাড়ছে: সংসদের সংরক্ষিত আসনে নারীদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদে ১৫টি আসন নিয়ে। এরপর চার দশকে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রতিবারই বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম সংসদে কোনো নারী সরাসরি জিততে পারেননি। সেবার সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ছিল ৪ দশমকি ৮ শতাংশ। নবম সংসদে নারী আসন ছিল ৫০টি। সরাসরি নির্বাচিত হন ১৯ জন। নারীর মোট প্রতিনিধিত্ব ছিল ১৮ দশমকি ৬ শতাংশ। বর্তমান সংসদে যা ২০ শতাংশ।
No comments