পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্ঘাতের নতুন ক্ষেত্র by শাহ্ আব্দুল হান্নান
কয়েক
বছর আগে ইউরোপের কোনো কোনো দেশে মহানবী সা:-এর মানহানিকর কার্টুন ছাপার
মাধ্যমে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সঙ্ঘাতের এক নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি
হয়েছে। ফ্রান্সের কার্টুন পত্রিকা শার্লি এবদু কয়েকবার রাসূল সা:-এর
মানহানিকর কার্টুন ছাপে। এরই প্রতিক্রিয়ায় শার্লি পত্রিকায় হামলা হয় এবং
আক্রমণকারীরা ও পত্রিকার কয়েকজন ব্যক্তি নিহত হয়, যা নিয়ে দুনিয়াজোড়া
প্রতিক্রিয়া হয়। সারা বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্ব এর নিন্দা জানায়। মুসলিম
বিশ্বের বক্তব্য হচ্ছেÑ এসব ঘটনার প্রতিকার আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া নয়। এ
ধরনের ঘটনা মুসলিম বিশ্বে ঘটলে তা কোর্টের মাধ্যমে নিরসন করতে হবে।
রাসূলের অবমাননাকে ফিকাহর পরিভাষায় সাব্বুর রাসূল (রাসূলের অবমাননা) বলে।
এর শাস্তি হচ্ছে বেশির ভাগ ফিকাহবিদের মতে মৃত্যুদণ্ড। তবে ড. হাশিম
কামালীসহ কিছুসংখ্যক ফিকাহবিদ মনে করেন, শাস্তি অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী
জেল থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে (দ্রষ্টব্য ড. হাশিম কামালী, ইসলামে
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম অবমাননা অধ্যায়, বিআইআইটি প্রকাশিত, মূল
ইংরেজি বইয়ের নাম Freedom of Expression in Islam)।
এ ধরনের ঘটনা অমুসলিম বিশ্বে বা পাশ্চাত্যে ঘটলে আইনের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া উচিত। সে দেশের ইসলামি সংগঠনের উচিত কোর্টের মাধ্যমে সুরাহা করা। সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ করা, মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলোকে বলা, ওই দেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া, প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। কোনো অবস্থাতেই আইন হাতে নেয়া উচিত নয়। আইন হাতে নিলে মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং ইসলামের মর্যাদা নষ্ট হয় হয়, ইসলাম প্রসারের সুযোগ কমে আসে। তাই সার্বিক বিবেচনায় সন্ত্রাস কোনো সমাধান নয়।
যা হোক, এর পরের ঘটনা হচ্ছে শার্লি পত্রিকাটি আবার রাসূল সা:-এর কার্টুন ছাপে, যাতে রাসূল সা:কে ক্রন্দনরত দেখানো হয়। এর বিরুদ্ধে মুসিলম বিশ্বে এবং সব মুসলিম সংগঠনে প্রতিক্রিয়া হয়। জনগণ বিক্ষোভ মিছিল করে। সংগঠনগুলো বিবৃতি দেয়। ফরাসি সরকারকে আইন করে এসব বন্ধ করার দাবি জানায়। পাশ্চাত্যের জনমতের একটি বিরাট অংশও এ রকম চায় না। খ্রিষ্টানদের নেতা পোপ ফ্রান্সিস এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং সব ধর্ম অবমাননা, নবী-রাসূলদের অবমাননা বা ধর্ম প্রবর্তকদের অবমাননা বন্ধ করার দাবি জানান।
কিন্তু পাশ্চাত্যের একটি অংশ বুঝতে চাচ্ছে না। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে এ ধরনের কার্টুন আইন করে বন্ধ করা ঠিক হবে না মনে করে। এটা নেহাত বাড়াবাড়ি। কোনো স্বাধীনতাই শর্তহীন হতে পারে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য স্বাধীনতা আইন ও নৈতিকতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলা হয়েছে। তাই আইন থাকা জরুরি, যেন কেউ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যিশুখৃষ্ট বা মুহাম্মদ সা: বা অন্যান্য ধর্ম প্রবর্তকের অবমাননা করতে না পারে। মুসলিম বিশ্ব, খ্রিষ্টান চার্চ ও ইসলামি সহযোগিতা সংগঠনের (OIC) এ ব্যাপারে মূল ভূমিকা নেয়া উচিত।
যদি এ তথাকথিত স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রিত না করা হয়, তাহলে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বে সঙ্ঘাতের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। আগেও ক্রুসেডের মাধ্যমে, উপনিবেশবাদের মাধ্যমে পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাষ্ট্র দখল করে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব সঙ্ঘাত কয়েক শ’ বছর চলেছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের দখলদারিত্ব শেষ হলে এসব সঙ্ঘাত কমে আসবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কার্টুনের নামে বা রাসূল সা:-এর অবমাননা করে নতুন সঙ্ঘাত সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত হবে না।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
এ ধরনের ঘটনা অমুসলিম বিশ্বে বা পাশ্চাত্যে ঘটলে আইনের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া উচিত। সে দেশের ইসলামি সংগঠনের উচিত কোর্টের মাধ্যমে সুরাহা করা। সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ করা, মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলোকে বলা, ওই দেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া, প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। কোনো অবস্থাতেই আইন হাতে নেয়া উচিত নয়। আইন হাতে নিলে মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং ইসলামের মর্যাদা নষ্ট হয় হয়, ইসলাম প্রসারের সুযোগ কমে আসে। তাই সার্বিক বিবেচনায় সন্ত্রাস কোনো সমাধান নয়।
যা হোক, এর পরের ঘটনা হচ্ছে শার্লি পত্রিকাটি আবার রাসূল সা:-এর কার্টুন ছাপে, যাতে রাসূল সা:কে ক্রন্দনরত দেখানো হয়। এর বিরুদ্ধে মুসিলম বিশ্বে এবং সব মুসলিম সংগঠনে প্রতিক্রিয়া হয়। জনগণ বিক্ষোভ মিছিল করে। সংগঠনগুলো বিবৃতি দেয়। ফরাসি সরকারকে আইন করে এসব বন্ধ করার দাবি জানায়। পাশ্চাত্যের জনমতের একটি বিরাট অংশও এ রকম চায় না। খ্রিষ্টানদের নেতা পোপ ফ্রান্সিস এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং সব ধর্ম অবমাননা, নবী-রাসূলদের অবমাননা বা ধর্ম প্রবর্তকদের অবমাননা বন্ধ করার দাবি জানান।
কিন্তু পাশ্চাত্যের একটি অংশ বুঝতে চাচ্ছে না। তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে এ ধরনের কার্টুন আইন করে বন্ধ করা ঠিক হবে না মনে করে। এটা নেহাত বাড়াবাড়ি। কোনো স্বাধীনতাই শর্তহীন হতে পারে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য স্বাধীনতা আইন ও নৈতিকতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলা হয়েছে। তাই আইন থাকা জরুরি, যেন কেউ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যিশুখৃষ্ট বা মুহাম্মদ সা: বা অন্যান্য ধর্ম প্রবর্তকের অবমাননা করতে না পারে। মুসলিম বিশ্ব, খ্রিষ্টান চার্চ ও ইসলামি সহযোগিতা সংগঠনের (OIC) এ ব্যাপারে মূল ভূমিকা নেয়া উচিত।
যদি এ তথাকথিত স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রিত না করা হয়, তাহলে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বে সঙ্ঘাতের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। আগেও ক্রুসেডের মাধ্যমে, উপনিবেশবাদের মাধ্যমে পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাষ্ট্র দখল করে পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব সঙ্ঘাত কয়েক শ’ বছর চলেছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের দখলদারিত্ব শেষ হলে এসব সঙ্ঘাত কমে আসবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কার্টুনের নামে বা রাসূল সা:-এর অবমাননা করে নতুন সঙ্ঘাত সৃষ্টি করা একেবারেই উচিত হবে না।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
No comments