ভালোবাসার মূলমন্ত্র প্রকৃতি by মুকিত মজুমদার বাবু
প্রকৃতির ভালো-মন্দের সঙ্গে আমাদের রয়েছে গভীর যোগসূত্র। মায়ের সঙ্গে যেমন ভ্রূণের সম্পর্ক, প্রকৃতির সঙ্গে তেমনি জীবনের। আমরা প্রকৃতিরই সন্তান। এ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক চলবে প্রকৃতি ও জীবন যত দিন পৃথিবীতে থাকবে। প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কর্মক্ষমতা, আকার-আকৃতি, চলন-বলন, স্বভাব-চরিত্র ওই অঞ্চলের প্রকৃতির প্রভাবেই প্রভাবিত। অবশ্যই আমাদের প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক রূপে পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যেমন অস্থির করে তোলে প্রাণপ্রকৃতি, তেমনি শীতের হিমেল হাওয়াও প্রাণিকুলকে বিপদে ফেলে দেয়। বর্ষার রিমঝিম বারিধারা যেমন স্মৃতিকাতর করে তোলে মানুষের মন, তেমনি শরতের স্বচ্ছতা, নির্মলতা, পবিত্রতা আর রাতের রূপালি চাঁদের আলোর জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায় অন্য কোনো ভুবনে। গর্ভবতী ফসলের মাঠ, হালকা কুয়াশা আর নবান্ন উৎসবই হেমন্তের কথা বলে। ফুল-পাখি-লতা-পাতার সঙ্গে উচ্ছ্বসিত মানুষের হৃদয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ভালোবাসার বসন্ত। প্রকৃতির উৎফুল্লতায় মানবপ্রকৃতিও হয়ে ওঠে চঞ্চল। এই উচ্ছলতা, হারিয়ে যায় যখন বিপন্ন হয়ে পড়ে প্রকৃতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটটা এমনই। শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে বন, বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই আমরা অবিবেচকের মতো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছি। ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসও বৃদ্ধি পেয়েছে। একবার ভেবে দেখুন_ আপনজনের হাত ধরে কোনো বহতা নদীর কূলে কিংবা কোনো নিরিবিলি ছায়া সুনিবিড় উদ্যানে গিয়ে বসলে নদী ও উদ্যানের পরিবেশ যদি ভালো না থাকে তাহলে ভালোবাসাও ভালো লাগবে না। চারপাশে পাখি যদি মিষ্টি মধুর সুরেলা ছন্দে গান না গায় তাহলে মন প্রফুল্ল হয় না। গাছে গাছে যদি ফুল না ফুটে, সৌরভ না ছড়ায় তাহলে ভালোবাসাও পূর্ণতা পায় না। ফাগুনের বাতাস যদি না বয়ে যায়, তাহলে মনে আসে না যৌবনের বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
আজ যথেচ্ছ পরিযায়ী পাখি শিকার হচ্ছে, বনের ভেতর করাতকল বসিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড় করা হচ্ছে, পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোনো গর্ত পূরণ করে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করতে কিংবা ইটভাটায় মাটির জোগান দিতে। নদী দখল, ভরাট আর দূষণ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। অবিবেচকের মতো নদীর বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে মাটি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ্যা। অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, আবাসিক প্রকল্পগুলো দখল করে নিচ্ছে শহরের চারপাশ, বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে যে, বর্তমানে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যার কারণে আঘাত হানছে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের ওপরই ন্যস্ত। কিন্তু স্বউদ্যোগে কম সংখ্যক মানুষই এগিয়ে আসছে প্রকৃতি সংরক্ষণে। সুস্থ প্রকৃতিই ভালোবাসায় পূর্ণতা দিতে পারে। তাই প্রকৃতিকেই আখ্যায়িত করা যায় ভালোবাসার মূলমন্ত্র হিসেবে।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা শুধু লাল গোলাপ, চকলেট, কার্ড আর নানা অনুষ্ঠান নয়, ভালোবাসার অর্থ আরও ব্যাপক, বিশাল। ভালোবাসাকে শুধু মানব-মানবীর ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে ভালোবাসার মহিমা আজ ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। গাছ লাগাতে হবে, সে গাছকে পরিচর্যা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। নদীকে ভালোবাসতে হবে। দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সাগর, পাহাড়কে ভালোবাসতে হবে। ফুল-পাখি-লতা-পাতাকে ভালোবাসতে হবে। এক কথায় প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। প্রকৃতি না থাকলে গান আসবে না, ছন্দ আসবে না, সুর আসবে না। প্রকৃতি যদি ভালো না থাকে তাহলে প্রকৃতির সঙ্গে ভালোবাসাতেও আসবে রিক্ততা, শূন্যতা, শুধুই হাহাকার।
চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই আমরা অবিবেচকের মতো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে চলেছি। ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসও বৃদ্ধি পেয়েছে। একবার ভেবে দেখুন_ আপনজনের হাত ধরে কোনো বহতা নদীর কূলে কিংবা কোনো নিরিবিলি ছায়া সুনিবিড় উদ্যানে গিয়ে বসলে নদী ও উদ্যানের পরিবেশ যদি ভালো না থাকে তাহলে ভালোবাসাও ভালো লাগবে না। চারপাশে পাখি যদি মিষ্টি মধুর সুরেলা ছন্দে গান না গায় তাহলে মন প্রফুল্ল হয় না। গাছে গাছে যদি ফুল না ফুটে, সৌরভ না ছড়ায় তাহলে ভালোবাসাও পূর্ণতা পায় না। ফাগুনের বাতাস যদি না বয়ে যায়, তাহলে মনে আসে না যৌবনের বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
আজ যথেচ্ছ পরিযায়ী পাখি শিকার হচ্ছে, বনের ভেতর করাতকল বসিয়ে সংরক্ষিত বন উজাড় করা হচ্ছে, পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোনো গর্ত পূরণ করে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করতে কিংবা ইটভাটায় মাটির জোগান দিতে। নদী দখল, ভরাট আর দূষণ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। অবিবেচকের মতো নদীর বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে মাটি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ্যা। অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, আবাসিক প্রকল্পগুলো দখল করে নিচ্ছে শহরের চারপাশ, বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে যে, বর্তমানে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে, যার কারণে আঘাত হানছে ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের ওপরই ন্যস্ত। কিন্তু স্বউদ্যোগে কম সংখ্যক মানুষই এগিয়ে আসছে প্রকৃতি সংরক্ষণে। সুস্থ প্রকৃতিই ভালোবাসায় পূর্ণতা দিতে পারে। তাই প্রকৃতিকেই আখ্যায়িত করা যায় ভালোবাসার মূলমন্ত্র হিসেবে।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা শুধু লাল গোলাপ, চকলেট, কার্ড আর নানা অনুষ্ঠান নয়, ভালোবাসার অর্থ আরও ব্যাপক, বিশাল। ভালোবাসাকে শুধু মানব-মানবীর ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে ভালোবাসার মহিমা আজ ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। গাছ লাগাতে হবে, সে গাছকে পরিচর্যা করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। নদীকে ভালোবাসতে হবে। দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সাগর, পাহাড়কে ভালোবাসতে হবে। ফুল-পাখি-লতা-পাতাকে ভালোবাসতে হবে। এক কথায় প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। প্রকৃতি না থাকলে গান আসবে না, ছন্দ আসবে না, সুর আসবে না। প্রকৃতি যদি ভালো না থাকে তাহলে প্রকৃতির সঙ্গে ভালোবাসাতেও আসবে রিক্ততা, শূন্যতা, শুধুই হাহাকার।
চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
No comments