জুবায়ের হত্যার তিন বছর- পরিবারের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না by সামছুর রহমান
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যার বিচারকাজ তিন বছরেও
শেষ হয়নি। ১৩ আসামির ছয়জনই পলাতক। এঁদের মধ্যে চারজন আদালতের কাঠগড়া
থেকে পালিয়ে গেলেও প্রায় ১১ মাসেও পুলিশ তাঁদের ধরতে পারেনি। এ ঘটনায়
মামলাও হয়নি। এই হত্যা মামলার আসামিরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের
কর্মী। তাঁদের একজন চাকরিও পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা কুপিয়ে জখম করেন ছাত্রলীগের কর্মী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম ব্যাচের ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ আদালতে বিচারাধীন হত্যা মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।
কাঠগড়া থেকে আসামি পালালেও মামলা হয়নি: গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ জামিন বাতিল করলে কাঠগড়া থেকে মামলার চার আসামি পালিয়ে যান। তাঁরা হলেন খন্দকার আশিকুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ রইস, ইশতিয়াক মেহবুব ও মাহবুব আকরাম। এ ছাড়া আদালত একই দিনে চার কার্যদিবস উপস্থিত না থাকায় রাশেদুল ও জাহিদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাছলিমা ইয়াসমিন বলেন, কাঠগড়া থেকে পালানো আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেননি পূর্বের কৌঁসুলি। তবে পলাতকদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠালেও পুলিশ এখনো তাঁদের ধরতে পারেনি। তবে পলাতক ইসতিয়াক মালয়েশিয়ায় এবং রইস ডেনমার্কে অবস্থান করছেন বলে তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুক’ পাতায় লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে জুবায়েরের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য আসামিরা ফেসবুকে এসব লিখে থাকতে পারেন। পলাতকদের মাঝেমধ্যেই ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস এলাকায় দেখা যায়।
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। শুনেছি তারা কাঠগড়া থেকে পালিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
পলাতক বাদে বর্তমানে জামিনে থাকা অন্য আসামিরা হলেন শফিউল আলম, অভিনন্দন কুন্ডু, কামরুজ্জামান সোহাগ, মাহমুদুল হাসান, মাজহারুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব ও নাজমুল হাসান। আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসামির চাকরি: অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ে নিম্নমান অফিস সহকারী তথা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘মাস্টাররোলে’ নিয়োগ দেয়। অথচ জুবায়ের হত্যায় জড়িত প্রমাণিত হওয়ায় মাহমুদুলকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। পরে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ এনে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নেওয়া হয় গত মঙ্গলবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারহানা ইসলাম গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের সময় মাহমুদুলের নিয়োগ হয়েছিল। বিষয়টি এত দিন আমাদের জানা ছিল না। জানতে পেরে আজই (বুধবার) তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ তবে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এবিষয়ক কোনো কাগজপত্র আমার কাছে পৌঁছায়নি। তাই চাকরিচ্যুতির বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
বৈরী সাক্ষী: মামলার ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জন ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার নথিতে দেখা যায়, দুজন সাক্ষী আসামিদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন বলে সাবেক পিপি রফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন। ‘বৈরী সাক্ষী’ হিসেবে চিহ্নিত এ দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বতর্মানে স্টেট অফিসার আজিম উদ্দিন এবং নিরাপত্তাকর্মী সিদ্দিকুর রহমান। এ বিষয়ে বর্তমান পিপি বলেন, মামলা প্রমাণে এতে সমস্যা হবে না। ইতিমধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, বাকি ২৫ জনের সাক্ষ্য মামলা প্রমাণে যথেষ্ট।
পরিবারের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না: দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একই আদালতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিহত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার বিচার হয়। রায় হয়েছে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। বিশ্বজিৎ হত্যার ১১ মাস আগে সংঘটিত জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে পিপি বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অনেক তারিখ নিচ্ছেন। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টায় সাক্ষীদের হাজির করে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছি। এখন দেশের পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এই মাসের মধ্যে রায় হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
জুবায়েরের ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেসব আসামি পালিয়ে গেছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ পদক্ষেপ নেবে। দ্রুত মামলার রায় হবে, দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে এটাই এখন আমাদের আশা।’
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা কুপিয়ে জখম করেন ছাত্রলীগের কর্মী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম ব্যাচের ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ আদালতে বিচারাধীন হত্যা মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।
কাঠগড়া থেকে আসামি পালালেও মামলা হয়নি: গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ জামিন বাতিল করলে কাঠগড়া থেকে মামলার চার আসামি পালিয়ে যান। তাঁরা হলেন খন্দকার আশিকুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ রইস, ইশতিয়াক মেহবুব ও মাহবুব আকরাম। এ ছাড়া আদালত একই দিনে চার কার্যদিবস উপস্থিত না থাকায় রাশেদুল ও জাহিদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাছলিমা ইয়াসমিন বলেন, কাঠগড়া থেকে পালানো আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেননি পূর্বের কৌঁসুলি। তবে পলাতকদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠালেও পুলিশ এখনো তাঁদের ধরতে পারেনি। তবে পলাতক ইসতিয়াক মালয়েশিয়ায় এবং রইস ডেনমার্কে অবস্থান করছেন বলে তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুক’ পাতায় লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে জুবায়েরের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য আসামিরা ফেসবুকে এসব লিখে থাকতে পারেন। পলাতকদের মাঝেমধ্যেই ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস এলাকায় দেখা যায়।
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। শুনেছি তারা কাঠগড়া থেকে পালিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
পলাতক বাদে বর্তমানে জামিনে থাকা অন্য আসামিরা হলেন শফিউল আলম, অভিনন্দন কুন্ডু, কামরুজ্জামান সোহাগ, মাহমুদুল হাসান, মাজহারুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব ও নাজমুল হাসান। আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসামির চাকরি: অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ে নিম্নমান অফিস সহকারী তথা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ‘মাস্টাররোলে’ নিয়োগ দেয়। অথচ জুবায়ের হত্যায় জড়িত প্রমাণিত হওয়ায় মাহমুদুলকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। পরে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ এনে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নেওয়া হয় গত মঙ্গলবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারহানা ইসলাম গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের সময় মাহমুদুলের নিয়োগ হয়েছিল। বিষয়টি এত দিন আমাদের জানা ছিল না। জানতে পেরে আজই (বুধবার) তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ তবে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এবিষয়ক কোনো কাগজপত্র আমার কাছে পৌঁছায়নি। তাই চাকরিচ্যুতির বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
বৈরী সাক্ষী: মামলার ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জন ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার নথিতে দেখা যায়, দুজন সাক্ষী আসামিদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন বলে সাবেক পিপি রফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন। ‘বৈরী সাক্ষী’ হিসেবে চিহ্নিত এ দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বতর্মানে স্টেট অফিসার আজিম উদ্দিন এবং নিরাপত্তাকর্মী সিদ্দিকুর রহমান। এ বিষয়ে বর্তমান পিপি বলেন, মামলা প্রমাণে এতে সমস্যা হবে না। ইতিমধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, বাকি ২৫ জনের সাক্ষ্য মামলা প্রমাণে যথেষ্ট।
পরিবারের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না: দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একই আদালতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিহত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার বিচার হয়। রায় হয়েছে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। বিশ্বজিৎ হত্যার ১১ মাস আগে সংঘটিত জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে পিপি বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অনেক তারিখ নিচ্ছেন। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টায় সাক্ষীদের হাজির করে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছি। এখন দেশের পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এই মাসের মধ্যে রায় হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
জুবায়েরের ভাই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেসব আসামি পালিয়ে গেছে, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ পদক্ষেপ নেবে। দ্রুত মামলার রায় হবে, দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে এটাই এখন আমাদের আশা।’
No comments