প্যারিসে চলছে দুই জিম্মি নাটক, নিহত ২
(গত বুধবার সাপ্তাহিক রম্য পত্রিকা শার্লি হেবদোতে হামলাকারী সন্দেহভাজন দুই ভাইকে খুঁজতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ। ওই দুই ভাই প্যারিসের উত্তর–পূর্বে ছোট্ট শহর দামার্তাঁ-অঁ-গুলতে একটি প্রিন্টিং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরেছেন। ওই ভবনের ছাদে পুলিশের এক সদস্য। ছবি: এএফপি) ফ্রান্সের
রাজধানী প্যারিস ও এর নিকটবর্তী একটি শহরে একই সঙ্গে চলছে দুই জিম্মি
নাটক। প্যারিসের একটি ইহুদি সুপারশপে ঢুকে এক সন্ত্রাসী অন্তত দুজনকে হত্যা
করে আরও কয়েকজনকে জিম্মি করে আছে। ওই মার্কেট ঘিরে রেখেছে কমান্ডো
বাহিনী। এই ঘটনা যখন চলছে, ঠিক তখনই প্যারিসের প্রধান বিমানবন্দর শার্ল দো
গল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট শহর দামার্তাঁ-অঁ-গুলতে একটি প্রিন্টিং
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কর্মকর্তারা বলেছেন,
রম্য ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোতে হামলাকারী সন্দেহভাজন দুই ভাই ওই ভবনে ঢুকে
এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে রেখেছেন। তাঁদের পাকড়াও করতে শ্বাসরুদ্ধকর
অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশটির সরকারি কয়েকটি সূত্র এএফপিকে এ তথ্য জানায়।
একটি সূত্র জানায়, প্যারিসের সুপারশপে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর
সংখ্যা এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি নিশ্চিত করে বলতে
পারছেন না। প্যারিসের দক্ষিণে শহরতলি মঁরুজ এলাকায় গতকাল এক বন্দুকধারীর
গুলিতে এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরেকজন। হামলার পর
বন্দুকধারী পালিয়ে যায়। আজকের এ জিম্মি নাটকের ঘটনায় ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ
ধারণা করছে, নারী কর্মকর্তাকে হত্যাকারী ওই বন্দুকধারীই পাঁচজনকে জিম্মি
করে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই বন্দুকধারীর নাম আমেদি কৌলিবেলি (৩২)। তাঁর
সঙ্গে গত বুধবার সাপ্তাহিক রম্য পত্রিকা শার্লি হেবদোতে হামলাকারী
সন্দেহভাজন দুই ভাইয়ের একজন শরিফ কোশির পরিচয় আছে। ২০১০ সালে ফ্রান্সে
কারাগার ভাঙার সময় শরিফের সঙ্গে আমেদিকে দেখা গেছে। এদিকে, পুলিশ বলেছে,
দুপুর থেকে শার্লি হেবদোতে হামলাকারী সন্দেহভাজন দুই ভাই রাজধানীর
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ভবনে ঘাপটি মেরে আছে। সেখানে তাঁরা এক ব্যক্তিকে
জিম্মি করে রেখেছে। তাঁদের ঘিরে ফেলেছে কমান্ডো বাহিনী। তাঁদের পাকড়াও
করতে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিসের
প্রধান বিমানবন্দর শার্ল দো গল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ছোট্ট শহর
দামার্তাঁ-অঁ-গুলতে একটি প্রিন্টিং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরেছেন তাঁরা।
ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (স.)-কে ব্যঙ্গ করে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হওয়া
শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে গত বুধবারের জঙ্গি হামলায় নিহত হন পত্রিকাটির
প্রধান সম্পাদকসহ আট সাংবাদিক, পুলিশের দুই সদস্য ও অন্য দুজন । এ ছাড়া
আহত হন আরও ১০ জন। ফ্রান্সের মাটিতে কয়েক দশকের মধ্যে এই হামলাকে সবচেয়ে
ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফরাসি পুলিশ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযানে নামা
বাহিনীগুলোকে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারীর নামসংবলিত যে নথি সরবরাহ করেছে, তা
গতকাল গণমাধ্যমের কর্মীদের হাতে পৌঁছে যায়। ওই নথি মোতাবেক তিন হামলাকারী
হলেন সাইদ কোশি (৩৪), তাঁর ভাই শরিফ কোশি (৩২) ও হামিদ মুরাদ (১৮)। এর
মধ্যে পুলিশ গতকাল সকালে শরিফ ও সাইদ কোশির ছবি প্রকাশ করে। প্যারিসের
সরকারি কৌঁসুলির দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনজনের মধ্যে হামিদ মুরাদ
প্যারিস থেকে ২৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বেলজিয়াম সীমান্তবর্তী একটি
এলাকায় থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। শার্লি হেবদো কার্যালয়ের সামনে
ফেলে যাওয়া একটি পরিচয়পত্র দেখে তাঁকে আগেই শনাক্ত করা হয় বলে জানায়
পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে শরিফ কোশিকে ২০০৮ সালে
একটি জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া
হয়েছিল। প্যারিসভিত্তিক জিহাদি গোষ্ঠীটি ইরাকে জিহাদি পাঠানোর সঙ্গে জড়িত
বলে অভিযোগ ছিল। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরনাদ ক্যাজনভ টেলিভিশনে
দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁদের দমন করতে এ অভিযান চলছে। এরই অংশ হিসেবে
ওই এলাকায় অনেকগুলো বিমান আকাশে টহল দিচ্ছে ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর
সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকতে ও
বাতি নিভিয়ে রাখতে অনুরোধ করেছে পুলিশ। এর আগে দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে
গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের গুলিবিনিময় হয়। তবে এ
ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন কৌঁসুলি। ফ্রান্সের প্রধারনমন্ত্রী
ম্যানুয়েল ভাল আজ বলেছেন, ‘ফ্রান্স সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ নেমেছে।
আমরা ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, একটি সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি।’ তিনি আরও
বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের ওপর হামলা হতে পারে। কিন্তু এ ঘটনার পর
ফ্রান্সবাসীর মনোবল যে আরও দৃঢ় হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা কী চায়? তারা ফ্রান্সে পরস্পরের মধ্যে
ভয় ও বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়... কিন্তু এসব ভয়-বিভেদকে উতরে গিয়ে আমাদের
আরও শক্তিশালী হতে হবে।’
No comments