খারাপ উদ্দেশে খালেদা জিয়ার ওপর পেপার স্প্রে: ড্যাব
বিশেষ
খারাপ উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার
ওপর পেপার স্প্রে প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশ (ড্যাব)। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে
পেপার সেপ্র ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক দিক নিয়ে চিকিৎসক
সমাজের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড্যাব নেতারা এ অভিযোগ করেন।
সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর ওপর এমন নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগকে
অনৈতিক ও অমানবিক আখ্যায়িত করে তারা এ ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চান।
ড্যাবের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু লিখিত বক্তব্যে
বলেন, পেপার সেপ্র হলো এক ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র। কোন কোন দেশে এটাকে
ওলেওরেসিন ক্যাপসিক্যাম স্প্রে বা ওসি গ্যাস বলা হয়। যা মরিচ জাতীয় এক
ধরনের ক্যাপসিকাম, ইথানল ও প্রোপেলিন গ্যালিকোলের মিশ্রনে তৈরি করা হয়। এটা
স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র। পেপার সেপ্র
সরাসরি মানবদেহের উপর প্রয়োগ করা হলে ইনফ্লামম্যাশন বা প্রদাহের কারণে চোখে
প্রচ জ্বালা, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, নাক দিয়ে পানিপড়া,
ল্যাকরিম্যাশন বা চোখ দিয়ে সার্বক্ষণিক পানিপড়া, প্রচ কাঁশি, শরীরের উপরের
অংশে জ্বালাপোড়া এবং শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে ধনুকের মতো বেঁকে যেতে
পারে। ডা. রফিক বলেন, পেপার সেপ্র ব্যবহারে যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, যারা
বয়স্ক এবং অন্য ওষুধে চিকিৎসাধীন তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া
হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ বা পালমুনারি টক্সিসিটি স্নায়ুবিক দুর্বলতাসহ
কারসিনোজেনিক ইফেক্ট অর্থাৎ ক্যান্সার হওয়াসহ মারাত্মক শারিরীক ক্ষতির
সম্ভাবনা রয়েছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমেরিকার লস অ্যানজেলেসে ১৯৯০ থেকে
১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পুলিশের পেপার সেপ্রর কারণে ৬১ জনের মৃত্যুর একটি
প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন
(এসিএলইউ) আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ কাস্টডিতে ১৯৯৩ সালে পেপার
সেপ্রর কারণে ২৭ জনের মৃত্যুর রিপোর্ট প্রকাশ করে। নর্থ ক্যারোলিনা মেডিকেল
জার্নালের মতে, পেপার স্প্রে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। যে কারণে পেপার
স্প্রে রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলনের ১.৫ দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিভিশন অব কেমিক্যাল উইপন (ওপিসিডব্লিউ) এর
উদ্যোগে কেমিক্যাল উইপন কনভেনশন ১৯৯৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি স্বাক্ষর এবং ২৯শে
এপ্রিল ১৯৯৭ থেকে কার্যকর হয়। ডা. রফিক বলেন, এ পর্যন্ত জাতিসংঘের সদস্য
রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ৬টি ছাড়া ১৯০টি রাষ্ট্রই তা স্বাক্ষর ও কার্যকর করেছে।
৬টির মধ্যে মিয়ানমার ও ইসরাইল স্বাক্ষর করলেও কার্যকর করেনি। বাংলাদেশ
১৯৯৩ সালের ১৪ই জানুয়ারি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৭ সালের ২৯শে এপ্রিল থেকে
কার্যকর করে। ড্যাব নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশে শিক্ষকদের
এমপিওভুক্তির আন্দোলন দমানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং পরে তেলের দাম
বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত র্যালিতে এই পেপার সেপ্র ব্যবহার করে। এর
প্রতিক্রিয়ায় জামালপুরের একজন শিক্ষক মারা যান। অন্য ২ জন অন্ধ হয়ে যান।
যার ফলে এ স্প্রে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সারা দেশে ব্যপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ফলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত এই সেপ্র ব্যবহারের ওপর
হাইকোর্ট ২১শে জানুয়ারি ২০১৩ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ড্যাব নেতারা
বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকার এই বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে
সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার
পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার ওপর। এমন একটি
অবস্থায় তার ওপর এই পেপার সেপ্র ব্যবহার করা হয় যখন তিনি তালাবদ্ধ অবস্থায়
তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ। একটি প্রায় বদ্ধ জায়গায় তার
সহকর্মীদের নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই সেপ্র প্রয়োগের ফলে তিনি নিজে
তার অসংখ্য সহকর্মী এবং অনেক সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এখনও তারা
অসুস্থতায় ভুগছেন। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং ভবিষ্যতে এর প্রয়োগের
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার
চিকিৎসক প্রফেসর ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমি
বুধবার তাকে দেখে এসেছি। তিনি ঠিকমতো চেয়ারেও বসতে পারছিলেন না। ঠিক মতো
কথা বলতে পারছিলেন না। চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এ সময় অন্যদের মধ্যে ড্যাবের
উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. আবদুল মান্নান মিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা.
আবদুল কুদ্দুস, প্রফেসর ডা. সাহাবুদ্দিনসহ ড্যাব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
No comments