সমাজ রূপান্তরে প্রভাব ফেলতে চেয়েছি : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী by জুননু রাইন
জুননু
রাইন : ‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকা একযুগ পূর্ণ করে ১৩ বছরে পদার্পণ করল। এ
দীর্ঘ পথযাত্রায় আপনারা কি উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা রেখে এগিয়েছিলেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : আমরা ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন স্থাপন করি, তারই একটি অংশ হিসেবে এ পত্রিকাটি। ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র’টি একটি বড় স্বপ্নের মতো ছিল। সেখানে অনেক কাজের চিন্তা আমাদের ছিল। নামের মধ্যে যে ইঙ্গিতটি আছে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্য। অর্থাৎ সমাজ রূপান্তরিত হচ্ছে এক ভাবে, আমাদের ইচ্ছে নিরপেক্ষ ভাবেই। কিন্তু এ সমাজের রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রভাব ফেলতে পারি কি না। আমরা কী দাসত্বই স্বীকার করব? না এর ওপরে কর্তৃত্ব করব? এটিই ছিল আমাদের এক ধরনের উদ্দেশ্য বলা যায়।
আপনি যে দাসত্বের কথা বলছেন- সেটা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সামাজিক দাসত্ব না চিন্তার দাসত্ব?
: কর্তৃত্ব করার জন্যও তো চিন্তা করার দরকার। আমরা ভাবলাম এই যে সমাজ রূপান্তর হচ্ছে- এর মধ্যে যদি আমরা প্রভাব ফেলতে পারি এবং লক্ষ্য হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠায়। আমরা যদি সেদিকে কিছুটাও প্রভাব ফেলতে পারি- এটির জন্য একটা কেন্দ্র বানানো। আমরা চিন্তা করলাম আমরা যদি প্রভাব ফেলতে চাই তাহলে আমাদের কতগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে হবে।
সেই কাজগুলোর একটা হল আমরা একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের করব। তারপর ভাবলাম আমরা কিছু আলোচনা সভা করব। সমাজ, রাষ্ট্র যা করছে সেসব বিষয়ে আমরা মত প্রকাশ করব। আমরা বক্তৃতার ব্যবস্থা করব। আমরা কিছু প্রয়োজনীয় বই প্রকাশ করব। আমরা একটি পাঠাগার গড়ে তুলব। যেটি বেশ একটি নতুন ধরনের পাঠাগার হবে। সেখানে একটি আর্কাইভসও থাকবে, যেখানে আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের যে দলিলপত্র ওইগুলো যাতে রাখা যায়।
কেবল একাত্তরের নয়, আমাদের ধারাবাহিকভাবে মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস থাকবে। সেটা ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত।
এসব চিন্তা নিয়ে আমাদের শুরু করা। ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রে’র প্রথম কাজটি ছিল আমাদের পত্রিকাটি বের করা। এটি আমরা বের করলাম। ১২ বছর পার হয়েও গেল। এখন আমরা ১৩ বছর শুরু করলাম। আমরা একটি বইও প্রকাশ করেছি। সেটি মওলানা ভাসানীর জীবনীগ্রন্থ।
আরও বই প্রকাশ করার ইচ্ছা ছিল, আমরা অনেক আলোচনা সভা করেছি। গোলটেবিল বৈঠক, বত্তৃতা, সভা। তবে মূল কাজ যেটি করতে পেরেছি সেটি হচ্ছে- পত্রিকাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা। তো এ পত্রিকাটি প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আমরা ওই চিন্তাগুলোর আদান-প্রদান করার চেষ্টা করেছি।
বলছেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বড় একটি কাজের অংশ হিসেবে এ পত্রিকা। সেক্ষেত্রে লেখা নির্বাচনে আপনাদের পছন্দটা কি রকম?
: মূল দৃষ্টি ছিল মননশীল প্রবন্ধের ওপরে। গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ এমনকি ধারাবাহিক উপন্যাসও আমরা প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আমরা চিন্তাশীল প্রবন্ধ ছাপব। যে লেখা মানুষের চিন্তাকে নাড়া দেবে। মানুষকে ভাবতে সাহায্য করবে সমাজ, রাষ্ট্র এবং তার পারিপার্শিক অবস্থা নিয়ে। লেখা পেতে হলে সাধারণত লেখকদের সম্মানী দিতে হয়। ‘নতুন দিগন্তে’র ক্ষেত্রেও কি এরকম?
: এ পত্রিকাতে কোনো সম্মানী আমরা কাউকে দিতে পারি না।
সব লেখকই নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখেন এবং আমরা যারা কাজ করি তারাও নিজেদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। দু-একজন আমাদের আছেন যাদের সম্মানী দিতে হয়। আমরা দিয়ে থাকি।
মূলত সামাজিক উদ্যোগেই পত্রিকা চলছে। এ পত্রিকার উৎপাদন খরচ এখন ১২০ টাকা (সংখ্যা প্রতি)। আমরা দাম রেখেছি ৫০ টাকা। শুরুতে ছিল ৩০ টাকা। তার পর ৫০ টাকা করেছি।
এখন আপনাদের সার্কুলেশন কত? শুরুতে কত সংখ্যা ছেপেছিলেন?
: আমরা প্রথম সংখ্যা ছেপেছিলাম ৫০০। আমরা মনে করেছিলাম এর চেয়ে বেশি এটি যাবে না। এর বেশি এর চাহিদা হবে না। তারপর দেখলাম যে খুব চাহিদা হল। তার পরের সংখ্যা থেকে আমরা ১ হাজার কপি ছাপালাম। তার পর ধাপে ধাপে উঠে আমরা আড়াই হাজার ছাপালাম।
আড়াই হাজার ছাপার পর আমরা দেখলাম, খরচ খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে। যত ছাপাব তত বেশি খরচ। তাতে করে আমরা এখন ২ হাজার ৩০০তে নেমে এসেছি।
আপনাদের বিতরণ বা বিপণন ব্যবস্থাটি কি রকম?
: আমাদের বিতরণ ব্যবস্থাটাও বেশ ভালো। আমরা আমাদের পত্রিকায় কিছু ঠিকানা দিই। এরা আসলে পেশাগত বই বিক্রেতা না। তারা আমাদের শুভানুধ্যায়ী। তারা আমাদের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। তারাই গ্রাহকদের মাধ্যম।
পত্রিকার আয় বা এর উৎপাদন খরচের প্রধান উৎস কি?
: আমাদের আয়টা হয় বিজ্ঞাপন থেকে। আর কিছু শুভানুধ্যায়ী আছেন যারা এর খরচের কিছু অংশ বহন করেন। এভাবেই এটি চলছে।
খরচ কমানোর চিন্তা থেকেই ২ হাজার ৫০০ থেকে ছাপানো কমিয়ে এখন ছাপছেন ২ হাজার ৩০০। পত্রিকাটি আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন?
: সব কিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকে। আমরা দেখলাম ১২ বছর পূর্ণ করে ১৩ বছরে চলে আসছি। এটি একটি বিষয়। আমাদের এক ধরনের পরিকল্পনায় বিগত বছরগুলোর কাজ এগিয়েছে। এখন আমরা এটি নিয়ে নতুন করে ভাবছি। ভাবছি যে এর পরবর্তী ধাপটা কি হতে পারে। কীভাবে এ জায়গাটিকে আরও ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এটি নিয়ে আমরা ভাবছি।
আপনাদের মূল উদ্দেশ্য সমাজ রূপান্তর। তারই অংশ হিসেবে এ পত্রিকার প্রকাশ। এর সার্কুলেশন অবশ্যই আপনাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ইতিবাচক ইশারা। এ ধরনের পত্রিকার আড়াই হাজার সার্কুলেশন অনেক বেশি। যদিও জনসংখ্যার হিসেবে তা যথার্থ না বলেই মনে হয়।
আপনাদের মূল উদ্দেশ্যের মুখপত্র যদি ‘নতুন দিগন্ত’কে মনে করি, সেক্ষেত্রে এটি মানুষের মধ্য বেশি ছড়িয়ে দেয়া বা এটির মাধ্যমে আপনারা আপনাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আরও বেশি মানুষকে জানান দেয়ার ব্যাপারে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার নয় কি?
: এর সঙ্গে খরচের একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত যেটি আমি আগেও বলেছি। বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করা। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা। সেখানে যাওয়া ইত্যাদি কাজের জন্য আমাদের ওই ধরনের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকাই এর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। যেমন আমাদের পত্রিকার জন্য নির্ধারিত কোনো অফিস নেই। আমি এবং আমরা যারা এটি নিয়ে কাজ করছি তারা আমার বাড়ির ছোট্ট চিলেকোঠায় বসার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে বিজ্ঞাপনে কাজ করার জন্য একটি বিভাগ বা সার্কুলেশনে কাজ করার জন্য একটি বিভাগ অথবা সরাসরি পত্রিকার কাজের লোকরা যে বসবে সেই স্থান সংকুলান আমাদের নেই, নেই সেই প্রয়োজনীয় জনবলও।
আমরা দেখছি মননশীল প্রবন্ধের পাঠক বাড়ছে। কিন্তু তাদের চাহিদা পূরণে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। নতুন বছরে আমরা এটি নিয়ে ভাবছি। আমরা চেষ্টা করছি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।
লেখা পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে?
: ভালো লেখা পাওয়া সবসময়ই কঠিন। সেটি তুমিও’ত জান।
এখানে গল্প, কবিতা, উপন্যাস বই আকারেও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের একটি উদ্দেশ্য আছে। যেটি বলেছি- সমাজ রূপান্তরে আমাদের অবদানই মূল লক্ষ্য।
পত্রিকা ছাড়া আপনাদের অন্য আরও যে কাজের পরিকল্পনা ছিল সেসবের এখন কি অবস্থা?
: সেগুলো আমরা ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারিনি। আমরা যারা এটি শুরু করেছিলাম, তাদের অনেকেই এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগের অভাবে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। অনেকের বয়স হয়েছে। তরুণ সমাজকে আমরা সেভাবে আনতে পারিনি এখানে যেমনটি দরকার ছিল। আমরা তো বয়স্ক লোক, আমাদের চেয়ে তরুণদের কাজের শক্তি অনেক বেশি। তাদের আমরা ওভাবে আনতে পারিনি। সেটি আমাদের এক ধরনের সীমাবদ্ধতা। তাদের হাতে কাজটিকে যে উত্তরাধিকার হিসেবে তুলে দেয়া অথবা তাদের ধারা আরও প্রসারিত করা, এ কাজটি আমরা করতে পারলাম না, সেজন্য ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রে’র যেভাবে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম সেভাবে কাজটি করা গেল না। এটি থেকে উপলব্ধি বোধ হয় এ রকমের- যে তরুণ সমাজকে আনতে হবে। এবং সেই তরুণদেরই দায়িত্বটা নিতে হবে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন আমরা সবাই বয়স্ক। আমরা অনেকেই অবসর নিয়ে কাজটি শুরু করেছি। এরা অনেকেই আমার সমসাময়িক, আমার বন্ধুবান্ধব। কিন্তু এখন মাঝখানে একটি ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের এখানে তরুণরা লেখে কিন্তু তাদের আমরা জায়গা করে দিতে পারছি না। জায়গার অভাবটা কিন্তু এমন, যদি বলি রূপক অর্থে যে জায়গা এমনকি শব্দার্থের যে জায়গা সেটিও নেই।
তো আমার এ অফিস যে চিলেকোঠায়, চিলেকোঠা ছিল বলে সেখানে একটি ছোট হলেও অফিস করতে পেরেছি। না হলে তো অফিস ভাড়া করতে আমাদের অনেক টাকা চলে যেত। সেজন্য যে জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তরুণরা যদি এ উদ্যোগটা নেয় এবং তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে বয়স্কদের সঙ্গে নেয়, তাহলে কিন্তু কাজটা আরও ভালো হবে এবং কাজটা আরও এগোবে। কিছু তরুণ আছে আমাদের সমাজে যারা লিটল ম্যাগাজিন বের করে। এসব খুব ভালো গ্র“প। কোনো কোনো লিটল ম্যাগাজিন খুবই অসাধারণ। তাদের সঙ্গেও আমাদের পর্যাপ্ত যোগাযোগ হচ্ছে না। আর এখন মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে আমরা চাইলেও এ কাজে সহযোগিতা করার লোক খুব পাব বলেও মনে হচ্ছে না।
এতো কিছুর মধ্যেও পত্রিকাটা যে চলে এসেছে, এটি একটি ঘটনা।
আমরা ভেবেছিলাম একটি কেন্দ্র থাকবে যেখানে বই থাকবে। লোকজন জানার জন্য তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আসবে-যাবে। কিন্তু ওই রকম কিছুর জন্য যে জায়গা দরকার, দালান তৈরি করা দরকার বা সেরকম একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার। ওটা তো আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে ছিল না।
লিটল ম্যাগাজিন এবং এই গ্রুপ নিয়ে আপনি খুব আশাবাদী। লিটল ম্যাগ বা লিটলম্যাগকর্মীদের নিয়ে কিছু বলুন-
: লিটল ম্যাগাজিনের আসল শক্তি থাকবে সে কি বলতে চায়। আমি যে দু-একটা পত্রিকা দেখেছি- মনে হয় তাদের একটা বক্তব্য আছে। তাদের একটি লক্ষ্য আছে। তারা এ সমাজটাকে বদলাতে চায়। এ লক্ষ্য ছাড়া লিটল ম্যাগাজিন কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয় না। মানে লিটল ম্যাগাজিনও বড় ম্যাগাজিনের অংশ হয়ে যাবে।
আমাদের এ পত্রিকাটির আমি মনে করি যদি কোনো গুরুত্ব থাকে তা হলে, এ লক্ষ্যে যে- এটি সমাজ রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তা নাহলে একটি পত্রিকা বের করলাম, পাঁচ মিশালী লেখা এবং সব লেখা একসঙ্গে করে দিলাম, এটি কোনো কাজ হতো না।
লিটল ম্যাগাজিনের যদি লক্ষ্য থাকে সে পারস্পরিক চিন্তাগুলোকে প্রকাশের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। চিন্তা ও প্রকাশের যে একটি অনুশীলন সেই অনুশীলনটা যে ম্যাগাজিনগুলো করে সেই গ্র“পগুলোর কথা আমি বলছি। এমন দু-একটা গ্র“প আমি পাই যারা সমস্যাটাকে বোঝার চেষ্টা করছে। তরুণদের ওপর ভরসা করার ব্যাপারটা আরও আসে যে কারণে তার দুটো ঘটনার একটি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। এই যে তরুণগুলো এলো- এরা কিন্তু বড় কাজ করতে চায়।
কিন্তু ওরা যে শুধু ’যুদ্ধাপরাধের বিচার’ নিয়ে বলছে, এটিতো ছোট জায়গা । যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়ে গেল তার পর কী করবে?
এটিকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়া যেত যদি এরকম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, ধীশক্তিসম্পন্ন নেতৃত্ব এখানে বেরিয়ে আসত, তাহলে কিন্তু এখান থেকেই একটি আন্দোলন তৈরি হতো যে- আমরা সমাজে পরিবর্তন আনতে চাই। যে কাজ আমি লেখার মধ্যে দিয়ে করতে চাই, সে কাজ ছাত্রদের অন্য যুবকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েও হতে পারে।
এই যে কিছুদিন আগে জিহাদকে উদ্ধার করা যুবকরা তাদের যে সামাজিক দায়িত্ব এবং সৃজনশীলতা দেখিয়েছে আমরা কিন্তু এগুলো কাজে লাগাতে পারছি না।
নতুন বছরে আপনাদের ’নতুন দিগন্ত’ নিয়ে কি প্রত্যাশা?
: আমি আশা করব আমার তরুণ সহযোগী বন্ধুরা দায়িত্বটা নিয়ে এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটি অন্য আঙ্গিকে হতে পারে।
আমি খুবই আশান্বিত যে এই পত্রিকা মানুষ গ্রহণ করেছে। ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কপি পর্যন্ত ছাপা হয়েছে। পত্রিকা ছাপতে দেরি হলে মানুষ ফোন করে। একটি পাঠক গোষ্ঠীও তৈরি হয়ে গেছে যারা নিয়মিত পড়ে। এই যে ২ হাজার ৫০০ লোকের কাছে যাচ্ছে নিয়মিত এবং আমাদের আগে বিদেশেও যাচ্ছিল। বিদেশে পাঠানো ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়াতে আমরা ওয়েবসাইট খোলার চেষ্টা করছি, যেখানে আপডেট করলে প্রচারটা আরও বেড়ে যাবে।
গ্রন্থনা : মুসাররাত নওশাবা
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : আমরা ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র’ নামে একটি সংগঠন স্থাপন করি, তারই একটি অংশ হিসেবে এ পত্রিকাটি। ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র’টি একটি বড় স্বপ্নের মতো ছিল। সেখানে অনেক কাজের চিন্তা আমাদের ছিল। নামের মধ্যে যে ইঙ্গিতটি আছে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্য। অর্থাৎ সমাজ রূপান্তরিত হচ্ছে এক ভাবে, আমাদের ইচ্ছে নিরপেক্ষ ভাবেই। কিন্তু এ সমাজের রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রভাব ফেলতে পারি কি না। আমরা কী দাসত্বই স্বীকার করব? না এর ওপরে কর্তৃত্ব করব? এটিই ছিল আমাদের এক ধরনের উদ্দেশ্য বলা যায়।
আপনি যে দাসত্বের কথা বলছেন- সেটা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সামাজিক দাসত্ব না চিন্তার দাসত্ব?
: কর্তৃত্ব করার জন্যও তো চিন্তা করার দরকার। আমরা ভাবলাম এই যে সমাজ রূপান্তর হচ্ছে- এর মধ্যে যদি আমরা প্রভাব ফেলতে পারি এবং লক্ষ্য হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠায়। আমরা যদি সেদিকে কিছুটাও প্রভাব ফেলতে পারি- এটির জন্য একটা কেন্দ্র বানানো। আমরা চিন্তা করলাম আমরা যদি প্রভাব ফেলতে চাই তাহলে আমাদের কতগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে হবে।
সেই কাজগুলোর একটা হল আমরা একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের করব। তারপর ভাবলাম আমরা কিছু আলোচনা সভা করব। সমাজ, রাষ্ট্র যা করছে সেসব বিষয়ে আমরা মত প্রকাশ করব। আমরা বক্তৃতার ব্যবস্থা করব। আমরা কিছু প্রয়োজনীয় বই প্রকাশ করব। আমরা একটি পাঠাগার গড়ে তুলব। যেটি বেশ একটি নতুন ধরনের পাঠাগার হবে। সেখানে একটি আর্কাইভসও থাকবে, যেখানে আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের যে দলিলপত্র ওইগুলো যাতে রাখা যায়।
কেবল একাত্তরের নয়, আমাদের ধারাবাহিকভাবে মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস থাকবে। সেটা ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত।
এসব চিন্তা নিয়ে আমাদের শুরু করা। ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রে’র প্রথম কাজটি ছিল আমাদের পত্রিকাটি বের করা। এটি আমরা বের করলাম। ১২ বছর পার হয়েও গেল। এখন আমরা ১৩ বছর শুরু করলাম। আমরা একটি বইও প্রকাশ করেছি। সেটি মওলানা ভাসানীর জীবনীগ্রন্থ।
আরও বই প্রকাশ করার ইচ্ছা ছিল, আমরা অনেক আলোচনা সভা করেছি। গোলটেবিল বৈঠক, বত্তৃতা, সভা। তবে মূল কাজ যেটি করতে পেরেছি সেটি হচ্ছে- পত্রিকাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা। তো এ পত্রিকাটি প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে আমরা ওই চিন্তাগুলোর আদান-প্রদান করার চেষ্টা করেছি।
বলছেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বড় একটি কাজের অংশ হিসেবে এ পত্রিকা। সেক্ষেত্রে লেখা নির্বাচনে আপনাদের পছন্দটা কি রকম?
: মূল দৃষ্টি ছিল মননশীল প্রবন্ধের ওপরে। গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ এমনকি ধারাবাহিক উপন্যাসও আমরা প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আমরা চিন্তাশীল প্রবন্ধ ছাপব। যে লেখা মানুষের চিন্তাকে নাড়া দেবে। মানুষকে ভাবতে সাহায্য করবে সমাজ, রাষ্ট্র এবং তার পারিপার্শিক অবস্থা নিয়ে। লেখা পেতে হলে সাধারণত লেখকদের সম্মানী দিতে হয়। ‘নতুন দিগন্তে’র ক্ষেত্রেও কি এরকম?
: এ পত্রিকাতে কোনো সম্মানী আমরা কাউকে দিতে পারি না।
সব লেখকই নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখেন এবং আমরা যারা কাজ করি তারাও নিজেদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। দু-একজন আমাদের আছেন যাদের সম্মানী দিতে হয়। আমরা দিয়ে থাকি।
মূলত সামাজিক উদ্যোগেই পত্রিকা চলছে। এ পত্রিকার উৎপাদন খরচ এখন ১২০ টাকা (সংখ্যা প্রতি)। আমরা দাম রেখেছি ৫০ টাকা। শুরুতে ছিল ৩০ টাকা। তার পর ৫০ টাকা করেছি।
এখন আপনাদের সার্কুলেশন কত? শুরুতে কত সংখ্যা ছেপেছিলেন?
: আমরা প্রথম সংখ্যা ছেপেছিলাম ৫০০। আমরা মনে করেছিলাম এর চেয়ে বেশি এটি যাবে না। এর বেশি এর চাহিদা হবে না। তারপর দেখলাম যে খুব চাহিদা হল। তার পরের সংখ্যা থেকে আমরা ১ হাজার কপি ছাপালাম। তার পর ধাপে ধাপে উঠে আমরা আড়াই হাজার ছাপালাম।
আড়াই হাজার ছাপার পর আমরা দেখলাম, খরচ খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে। যত ছাপাব তত বেশি খরচ। তাতে করে আমরা এখন ২ হাজার ৩০০তে নেমে এসেছি।
আপনাদের বিতরণ বা বিপণন ব্যবস্থাটি কি রকম?
: আমাদের বিতরণ ব্যবস্থাটাও বেশ ভালো। আমরা আমাদের পত্রিকায় কিছু ঠিকানা দিই। এরা আসলে পেশাগত বই বিক্রেতা না। তারা আমাদের শুভানুধ্যায়ী। তারা আমাদের কাছ থেকে পত্রিকা নেন। তারাই গ্রাহকদের মাধ্যম।
পত্রিকার আয় বা এর উৎপাদন খরচের প্রধান উৎস কি?
: আমাদের আয়টা হয় বিজ্ঞাপন থেকে। আর কিছু শুভানুধ্যায়ী আছেন যারা এর খরচের কিছু অংশ বহন করেন। এভাবেই এটি চলছে।
খরচ কমানোর চিন্তা থেকেই ২ হাজার ৫০০ থেকে ছাপানো কমিয়ে এখন ছাপছেন ২ হাজার ৩০০। পত্রিকাটি আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন?
: সব কিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকে। আমরা দেখলাম ১২ বছর পূর্ণ করে ১৩ বছরে চলে আসছি। এটি একটি বিষয়। আমাদের এক ধরনের পরিকল্পনায় বিগত বছরগুলোর কাজ এগিয়েছে। এখন আমরা এটি নিয়ে নতুন করে ভাবছি। ভাবছি যে এর পরবর্তী ধাপটা কি হতে পারে। কীভাবে এ জায়গাটিকে আরও ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এটি নিয়ে আমরা ভাবছি।
আপনাদের মূল উদ্দেশ্য সমাজ রূপান্তর। তারই অংশ হিসেবে এ পত্রিকার প্রকাশ। এর সার্কুলেশন অবশ্যই আপনাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ইতিবাচক ইশারা। এ ধরনের পত্রিকার আড়াই হাজার সার্কুলেশন অনেক বেশি। যদিও জনসংখ্যার হিসেবে তা যথার্থ না বলেই মনে হয়।
আপনাদের মূল উদ্দেশ্যের মুখপত্র যদি ‘নতুন দিগন্ত’কে মনে করি, সেক্ষেত্রে এটি মানুষের মধ্য বেশি ছড়িয়ে দেয়া বা এটির মাধ্যমে আপনারা আপনাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আরও বেশি মানুষকে জানান দেয়ার ব্যাপারে আরও বেশি তৎপর হওয়া দরকার নয় কি?
: এর সঙ্গে খরচের একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত যেটি আমি আগেও বলেছি। বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করা। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা। সেখানে যাওয়া ইত্যাদি কাজের জন্য আমাদের ওই ধরনের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকাই এর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। যেমন আমাদের পত্রিকার জন্য নির্ধারিত কোনো অফিস নেই। আমি এবং আমরা যারা এটি নিয়ে কাজ করছি তারা আমার বাড়ির ছোট্ট চিলেকোঠায় বসার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে বিজ্ঞাপনে কাজ করার জন্য একটি বিভাগ বা সার্কুলেশনে কাজ করার জন্য একটি বিভাগ অথবা সরাসরি পত্রিকার কাজের লোকরা যে বসবে সেই স্থান সংকুলান আমাদের নেই, নেই সেই প্রয়োজনীয় জনবলও।
আমরা দেখছি মননশীল প্রবন্ধের পাঠক বাড়ছে। কিন্তু তাদের চাহিদা পূরণে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। নতুন বছরে আমরা এটি নিয়ে ভাবছি। আমরা চেষ্টা করছি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।
লেখা পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে?
: ভালো লেখা পাওয়া সবসময়ই কঠিন। সেটি তুমিও’ত জান।
এখানে গল্প, কবিতা, উপন্যাস বই আকারেও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের একটি উদ্দেশ্য আছে। যেটি বলেছি- সমাজ রূপান্তরে আমাদের অবদানই মূল লক্ষ্য।
পত্রিকা ছাড়া আপনাদের অন্য আরও যে কাজের পরিকল্পনা ছিল সেসবের এখন কি অবস্থা?
: সেগুলো আমরা ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারিনি। আমরা যারা এটি শুরু করেছিলাম, তাদের অনেকেই এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগের অভাবে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। অনেকের বয়স হয়েছে। তরুণ সমাজকে আমরা সেভাবে আনতে পারিনি এখানে যেমনটি দরকার ছিল। আমরা তো বয়স্ক লোক, আমাদের চেয়ে তরুণদের কাজের শক্তি অনেক বেশি। তাদের আমরা ওভাবে আনতে পারিনি। সেটি আমাদের এক ধরনের সীমাবদ্ধতা। তাদের হাতে কাজটিকে যে উত্তরাধিকার হিসেবে তুলে দেয়া অথবা তাদের ধারা আরও প্রসারিত করা, এ কাজটি আমরা করতে পারলাম না, সেজন্য ‘সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রে’র যেভাবে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম সেভাবে কাজটি করা গেল না। এটি থেকে উপলব্ধি বোধ হয় এ রকমের- যে তরুণ সমাজকে আনতে হবে। এবং সেই তরুণদেরই দায়িত্বটা নিতে হবে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন আমরা সবাই বয়স্ক। আমরা অনেকেই অবসর নিয়ে কাজটি শুরু করেছি। এরা অনেকেই আমার সমসাময়িক, আমার বন্ধুবান্ধব। কিন্তু এখন মাঝখানে একটি ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের এখানে তরুণরা লেখে কিন্তু তাদের আমরা জায়গা করে দিতে পারছি না। জায়গার অভাবটা কিন্তু এমন, যদি বলি রূপক অর্থে যে জায়গা এমনকি শব্দার্থের যে জায়গা সেটিও নেই।
তো আমার এ অফিস যে চিলেকোঠায়, চিলেকোঠা ছিল বলে সেখানে একটি ছোট হলেও অফিস করতে পেরেছি। না হলে তো অফিস ভাড়া করতে আমাদের অনেক টাকা চলে যেত। সেজন্য যে জিনিসটা আমরা বুঝতে পারি, তরুণরা যদি এ উদ্যোগটা নেয় এবং তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে বয়স্কদের সঙ্গে নেয়, তাহলে কিন্তু কাজটা আরও ভালো হবে এবং কাজটা আরও এগোবে। কিছু তরুণ আছে আমাদের সমাজে যারা লিটল ম্যাগাজিন বের করে। এসব খুব ভালো গ্র“প। কোনো কোনো লিটল ম্যাগাজিন খুবই অসাধারণ। তাদের সঙ্গেও আমাদের পর্যাপ্ত যোগাযোগ হচ্ছে না। আর এখন মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে আমরা চাইলেও এ কাজে সহযোগিতা করার লোক খুব পাব বলেও মনে হচ্ছে না।
এতো কিছুর মধ্যেও পত্রিকাটা যে চলে এসেছে, এটি একটি ঘটনা।
আমরা ভেবেছিলাম একটি কেন্দ্র থাকবে যেখানে বই থাকবে। লোকজন জানার জন্য তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আসবে-যাবে। কিন্তু ওই রকম কিছুর জন্য যে জায়গা দরকার, দালান তৈরি করা দরকার বা সেরকম একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার। ওটা তো আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে ছিল না।
লিটল ম্যাগাজিন এবং এই গ্রুপ নিয়ে আপনি খুব আশাবাদী। লিটল ম্যাগ বা লিটলম্যাগকর্মীদের নিয়ে কিছু বলুন-
: লিটল ম্যাগাজিনের আসল শক্তি থাকবে সে কি বলতে চায়। আমি যে দু-একটা পত্রিকা দেখেছি- মনে হয় তাদের একটা বক্তব্য আছে। তাদের একটি লক্ষ্য আছে। তারা এ সমাজটাকে বদলাতে চায়। এ লক্ষ্য ছাড়া লিটল ম্যাগাজিন কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয় না। মানে লিটল ম্যাগাজিনও বড় ম্যাগাজিনের অংশ হয়ে যাবে।
আমাদের এ পত্রিকাটির আমি মনে করি যদি কোনো গুরুত্ব থাকে তা হলে, এ লক্ষ্যে যে- এটি সমাজ রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তা নাহলে একটি পত্রিকা বের করলাম, পাঁচ মিশালী লেখা এবং সব লেখা একসঙ্গে করে দিলাম, এটি কোনো কাজ হতো না।
লিটল ম্যাগাজিনের যদি লক্ষ্য থাকে সে পারস্পরিক চিন্তাগুলোকে প্রকাশের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। চিন্তা ও প্রকাশের যে একটি অনুশীলন সেই অনুশীলনটা যে ম্যাগাজিনগুলো করে সেই গ্র“পগুলোর কথা আমি বলছি। এমন দু-একটা গ্র“প আমি পাই যারা সমস্যাটাকে বোঝার চেষ্টা করছে। তরুণদের ওপর ভরসা করার ব্যাপারটা আরও আসে যে কারণে তার দুটো ঘটনার একটি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। এই যে তরুণগুলো এলো- এরা কিন্তু বড় কাজ করতে চায়।
কিন্তু ওরা যে শুধু ’যুদ্ধাপরাধের বিচার’ নিয়ে বলছে, এটিতো ছোট জায়গা । যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়ে গেল তার পর কী করবে?
এটিকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়া যেত যদি এরকম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, ধীশক্তিসম্পন্ন নেতৃত্ব এখানে বেরিয়ে আসত, তাহলে কিন্তু এখান থেকেই একটি আন্দোলন তৈরি হতো যে- আমরা সমাজে পরিবর্তন আনতে চাই। যে কাজ আমি লেখার মধ্যে দিয়ে করতে চাই, সে কাজ ছাত্রদের অন্য যুবকদের আন্দোলনের মধ্য দিয়েও হতে পারে।
এই যে কিছুদিন আগে জিহাদকে উদ্ধার করা যুবকরা তাদের যে সামাজিক দায়িত্ব এবং সৃজনশীলতা দেখিয়েছে আমরা কিন্তু এগুলো কাজে লাগাতে পারছি না।
নতুন বছরে আপনাদের ’নতুন দিগন্ত’ নিয়ে কি প্রত্যাশা?
: আমি আশা করব আমার তরুণ সহযোগী বন্ধুরা দায়িত্বটা নিয়ে এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটি অন্য আঙ্গিকে হতে পারে।
আমি খুবই আশান্বিত যে এই পত্রিকা মানুষ গ্রহণ করেছে। ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কপি পর্যন্ত ছাপা হয়েছে। পত্রিকা ছাপতে দেরি হলে মানুষ ফোন করে। একটি পাঠক গোষ্ঠীও তৈরি হয়ে গেছে যারা নিয়মিত পড়ে। এই যে ২ হাজার ৫০০ লোকের কাছে যাচ্ছে নিয়মিত এবং আমাদের আগে বিদেশেও যাচ্ছিল। বিদেশে পাঠানো ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়াতে আমরা ওয়েবসাইট খোলার চেষ্টা করছি, যেখানে আপডেট করলে প্রচারটা আরও বেড়ে যাবে।
গ্রন্থনা : মুসাররাত নওশাবা
No comments