নির্মাণকাজ অর্ধেক বাকি থাকতেই ভবন হস্তান্তর by রাশিদুল ইসলাম
খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল ভবনটি পাঁচ বছরে নির্মাণ হয়েছে অর্ধেক। আর এ অবস্থার মধ্য দিয়ে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দে ছয়তলা ভবনে একশ’ শয্যার প্রকল্পটি তিন তলার ভবন আর ৩২ শয্যায় অপূর্ণতায় গণপূর্ত বিভাগ-১-এর কাছ থেকে গ্রহণ করেছে খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে ভবন নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হস্তান্তরপত্রে স্বাক্ষরকালে অবকাঠামোগত ত্রুটির কথা বললেন খুলনা সিভিল সার্জন ডা. ইয়াছিন আলী সরদার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের আরও দু’টি হাসপাতালের সঙ্গেই ২০০৯ সালে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ছিল ছয় কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরপর কাজের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রকল্প ব্যয়। গত ৫ বছরে তিন দফায় হাসপাতাল নির্মাণে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এরপরও নির্মাণ কাজ হয়েছে অর্ধেক। ২০১৩ সালের ১২ই নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালটি হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হলেও দিতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুপিসারে ছয়তলা ভবনের একশ’ শয্যার প্রকল্পটি তিন তলার ভবন আর ৩২ শয্যার অপূর্ণতায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ, খুলনা সিভিল সার্জন ডা. ইয়াছিন আলী সরদার, গণপূর্ত বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়াসিফ আহমাদ, খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম মধু প্রমুখ। ডায়াবেটিক সমিতির সূত্র জানায়, নগরীর বয়রায় সিএন্ডবি কলোনির পশ্চিম পাশে প্রায় এক একর জমির ওপর খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ নিউট্রিশন এন্ড পপুলেশন সেক্টর প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ খাতে প্রথম দফায় ছয় কোটি ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ টাকায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছয়তলা ভবন, সীমানা প্রাচীর, লিফট, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও যন্ত্রপাতি, হিমঘরসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নির্মাণের কথা ছিল। হাসপাতাল নির্মাণ কাজের শুরুতেই ধীরগতির অভিযোগ ছিল। এরই মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে ঠিকাদাররা কাজের গতি কমিয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকল্পটি রিভাইস করে নতুন ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২১ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এদিকে কাজে ধীরগতি, ব্যয় ও সময় বাড়তে থাকায় এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতাল হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয় স্থানীয় ডায়াবেটিক সমিতি। তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১২ই নভেম্বর হাসপাতালটি হস্তান্তরের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় হাসপাতাল হস্তান্তর করা যায়নি। এ অবস্থায় ২০১৩ সালে হাসপাতালের তিন তলা নির্মাণ করে কাজ বন্ধ করে দেয় গণপূর্ত বিভাগ। সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এই টাকা দিয়ে তিনতলা ভবন, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, লিফট, সোলার প্যানেল, সাবস্টেশন ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের শয্যা রাখা হয়েছে মাত্র ২৫টি। গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঠিকাদারদের কাজের বিবরণ নিয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের মূল ভবনের কাজ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের প্রধান মো. জসিম জানান, ভবনের কার্যাদেশ ও কাজের মাঝখানে অনেক সময় ব্যয় হওয়ায় প্রকল্প রিভাইস হয়েছে। তবে কতো টাকার কাজ হয়েছে তা মনে নেই। হাসপাতালের সাবস্টেশন ও যন্ত্রপাতির কাজ করেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি বলেন, প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিলো এক কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের সাবস্টেশনের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ভবন হস্তান্তরপত্রে স্বাক্ষরের সময় এসব অপূর্ণতার বিষয়ে একমাত্র আপত্তি তুললেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ইয়াছিন আলী সরদার। উপস্থিত সবার সামনে তিনি বলেন, ভবনের অবকাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। দরজাগুলো ভাল মতো লাগে না, সিটকিনি লাগে না, সুইচে সমস্যা এবং নিম্নমানের ফায়ার মেইন বসানো হয়েছে, যার মেয়াদ দেয়া নেই। এছাড়া এসি স্থাপনের স্থানে মূল ভবনের ছিদ্র সংস্কারের নির্দেশ দেন গণপূর্ত বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়াসিফ আহমাদ। এ সময় ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম মধু বৈদ্যুতিক সরমাঞ্জামাদি হালনাগাদ করে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে হস্তান্তরকালে ভবনের ও শয্যার অপূর্ণতা সম্পর্কে কেউ কোনো আপত্তি তোলেননি। এ সময় খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি কাজী ওয়াহিদুজ্জামান ও গণপূর্ত বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়াসিফ আহমাদ হস্তান্তর স্বাক্ষর এবং এই পত্রে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ ও খুলনা সিভিল সার্জন ডা. ইয়াছিন আলী সরদার প্রতিস্বাক্ষর করেন। হস্তান্তর পত্রে ছয়তলা ভবনে হাসপাতালটি একশ’ শয্যাবিশিষ্ট উল্লেখ করা হয়। শুভঙ্করের ফাঁকিটি দেখে প্রতিবাদ করে খুলনা সিভিল সার্জন ডা. ইয়াছিন আলী সরদার। এ সময় মুদ্রিত হস্তান্তরপত্রে তিন তলার ভবন শব্দটি হাতে লিখে দেন গণপূর্ত বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়াসিফ আহমাদ। এসব প্রসঙ্গে খুলনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি কাজী ওয়াহিদুজ্জামান বললেন, ভবনটি গ্রহণ করা হয়েছে, চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা এলে তিনিই উদ্বোধন করবেন। চিকিৎসা কার্যক্রম এ ভবনে এখনই শুরু করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১১টি যন্ত্রপাতি পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সপ্তাহের মধ্যে পেতে পারি। দেড়-দুই মাসের মধ্যেই শুরু করতে পারবো। জনবল নিয়োগে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। খুব শিগগিরই অর্গানোগ্রাম তৈরি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এই ভবনটিতে এ অবস্থায় ৩২টি বেড করা যাবে। দেড় মাসের মধ্যে খুলনা ডায়াবেটিক সমিতি থেকে এখানে শিফট করবো। তবে স্যার ইকবাল রোডে সাবস্টেশন থাকবে।
No comments