‘পিতৃভিটায় নচিকেতা’
দুই বাংলার প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। জন্ম কলকাতায়। দেশ ভাগের আগেই ১৯৪৫-৪৬ সালের দিকে তার পুরো পরিবার চলে যায় ভারতে। সেখানেই দাদু ললিত মোহন গাংগুলি, বাবা সখা রঞ্জন চক্রবর্তী ও মা লতিকা চক্রবর্তী স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরপর আর বাপ-দাদার জন্মভিটায় ফেরা হয়নি দুই বাংলার প্রখ্যাত এ শিল্পীর। কয়েক দিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এর পর থেকেই মূলত বাপ-দাদার জন্মভিটার মায়ায় পড়ে যান। প্রাণের টানে, নাড়ির টানে ভান্ডারিয়া জন্মভিটায় ঘুরতে এসেছিলেন তিনি। সোমবার দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে ক্ষণিকের জন্য পা রাখেন পিতৃভিটায়। এসময় তিনি বলেন, এইখানে আমার জন্মভিটা। আমি বাঙালি। এখানেই আমার শেকড়। কেবল প্রাণের টানে, বড় মায়ার টানে জন্মভিটায় ঘুরতে এসেছি। মানুষ যেমন পুণ্যের আশায় তীর্থে আসে। ভান্ডারিয়া শহরের বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামার পরই এলাকাবাসীর আন্তরিক অভ্যর্থনা পান এ শিল্পী। এ সময় সঙ্গে তার দুই ভারতীয় বন্ধুও ছিলেন। স্থানীয় থানা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ এই কৃতী শিল্পীকে স্বাগত জানায়। সবার পক্ষ থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর চন্দ্র দাস তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় নচিকেতা চোখের জলে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর তিনি ভা-ারিয়া বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখেন। একসময় এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তার দাদু ললিত মোহন গাংগুলী। এরপর যান বাপ-দাদার ভিটা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেঁচরীরামপুর গ্রামে। নচিকেতাকে একনজর দেখতে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেন গাংগুলিবাড়িতে। এ সময় তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি গাংগুলিবাড়ির ঐতিহ্যবাহী বিশাল দিঘি ও বহমান খালের পাড়ে বসে কিছু সময় কাটান। তিনি দিঘি ও খালের পানি বোতলে ভরে সঙ্গে নিয়ে যান। আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘কলকাতায় গিয়ে আমি শ্রদ্ধাভরে পান করব এই জল।’ ঘরের দাওয়ায় এসে ধুলো মাখা দাওয়ায় বসে পড়েন নচিকেতা। হয়ে পড়েন আবেগতাড়িত। ওই অবস্থায়ই উদাস নচিকেতা কাটিয়ে দেন দীর্ঘ সময়। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরেন।
No comments