রূপসী ওরা ভয়ংকর!
এরা নগরীর আলোচিত ‘অন্যরকম’ চরিত্র। এরা ভয়ংকর। এদের ঠেকানোর কেউ নেই। এক রূপের ভেতরে তাদের অনেক রূপ। বিচরণ পর্দার আড়ালে ভিন্ন পর্দায়, রোমাঞ্চ ও রহস্যেঘেরা বিচিত্র কক্ষপথে। এদেরই একজন মডেল প্রিয়াঙ্কা জামান। জীবনের শুরুর দিকে ছন্দ থাকলেও ক্রমশ বিত্ত-বৈভবের লোভে ছন্দহারা হয়ে যান। এখন অন্ধকার গলিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন এই মডেলকন্যা। তার মতো আরও অনেকেই এখন পথহারা। আইনশৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, মডেল প্রিয়াঙ্কা জামান, চিত্রনায়িকা কেয়া, সিলভী আজমী চাঁদনী, মীম, নদী ও মডেল ইমা পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা বিটিভির ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একসময় আরএফএল-পিভিসির বিজ্ঞাপনের মডেলও ছিলেন। কৃষ্ণচূড়া ড্রেসহাউসের ফটোসেশন, মাধুরী জুয়েলার্সের মডেল হিসেবে কাজ করেন। আট বছরের এ পেশায় আসার আগে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শিখেছেন। দুই বছর আগে গুলশানের লেকশোর আবাসিক হোটেলে তিনি ধরা পড়েন বিদেশী মুদ্রাপাচারকারী চক্রের সঙ্গে। এই অপরাধীরা প্রিয়াঙ্কাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। হোটেল রূপসী বাংলায় ডিসকো পার্টিতে পরিচয়ের সূত্র ধরে মডেল প্রিয়াঙ্কা নাম লেখান অপরাধ জগতের সহযোগী হিসেবে।
প্রিয়াঙ্কা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও এখন থাকেন রাজধানীর শান্তিনগরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। তাকে হোটেলকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ডিবি পুলিশ তিন লিবিয়ান নাগরিকসহ তাকে গ্রেফতার করে। পরে আমারা বিন সামির নামে এক বিদেশীকে তিনি বিয়ে করেন। ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই মডেল বিদেশী অপরাধীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর আগে গ্রেফতারের পর জামিনে বের হয়েছেন তিনি। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মডেল প্রিয়াঙ্কার মা গোয়েন্দা পুলিশ অফিসে এসে জানান, তার মেয়েই তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নাচ-গান আর বিনোদন জগতে বিচরণ করে তিনি অর্থ আয় করেন।
চিত্রনায়িকা কেয়ার শুরুটাও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’ হওয়ার মতো একসময় লোভের ফাঁদে পা দিয়ে রুপালি পর্দার নতুন মুখ হিসেবে আলোচিত মুখ হয়ে ওঠার মুহূর্তে জড়িয়ে পড়েন ভিন্ন এক জালে। ধনীর দুলাল আর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুরু হয় ওঠাবসা। ঝলমলে পর্দার কেয়া এভাবেই অন্ধকার জগতে চলে যান। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এই কেয়ার মা রানী সুফিয়া বেগম অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য যশোরের বেশ আলোচিত ও বিতর্কিত। গুলশানের নিকেতনের একটি বাসা থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গুলশান থানা পুলিশ অনৈতিক কাজের অভিযোগে কেয়াকে গ্রেফতার করে। সেবার ৫০০ টাকার মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান কেয়া। পুলিশের কাছে নিজেকে একজন দেহপসারণী হিসেবে স্বীকার করেন তিনি। নানা অপকর্মের পাশাপাশি কেয়া একজন রক্ষিতা হিসেবে কাজ করছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কেয়া তিব্বত স্নোর বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে সাড়া ফেলেন। তারপর একে একে তিব্বত লিপজেল, সাগুফতা, জিএমজি এয়ারলাইনস, বসুধা হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে কেয়া ছিলেন সবচেয়ে সফল। মাঝে এক ধনকুবেরের হাত ধরে পাড়ি দেন আমেরিকা। কিন্তু দু’বছর পর সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। গ্রেফতার হওয়ার কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে কেয়া আবার ‘রক্ষিতার’ মতো জীবনযাপন শুরু করেন। কেয়া এখনও নানা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে নিজের এসব কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে কেয়া বলেন, তিনি পরে ফোন করবেন। এর বেশি তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন চিত্রনায়িকা নাসিমা আক্তার নদী। অশ্লীল ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিতর্কিত এ নায়িকা এফডিসিতে বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছেন। এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। ধনীর দুলালদের প্রমোদভ্রমণের সঙ্গী চিত্রনায়িকা নাসিমা আক্তার নদী। তার পরনের পোশাক নিয়েও অনেকের আপত্তি। সম্প্রতি গুলশান-মহাখালী লিংক রোডে মাল্টিপ্ল্যান স্পোর্টস নামে একটি ক্রীড়াসামগ্রীর শোরুমে গিয়ে নিজেকে ব্যস্ততম চিত্রনায়িকা হিসেবে পরিচয় দেন। তারপর ওই শোরুম থেকে সাত লাখ টাকার পণ্য কিনে সেগুলো গাড়িতে তোলেন। পরে কৌশলে ওই শোরুম থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নগদ নিয়ে পালিয়ে যান। গুলশান এলাকায় পুলিশ আটকের চেষ্টা করলে তিনি পুলিশের হাতে কামড় দিয়ে একটি গাড়িতে উঠে পালান। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নদী প্রতারক চক্রের হয়ে কাজ করছেন। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর তিনি ‘ইয়াবাকন্যা’ হিসেবেই এখন পরিচিত। নদী উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের একটি বাসায় থাকেন। সেখানে ইয়াবার আসর বসে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চিত্রনায়িকা নদীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঘনঘন স্থান বদল করায় তাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
নাম তার রিজওয়ানা খালেদ ইমা। গুলশানে একটি চক্রের সঙ্গে তার রয়েছে অবৈধ ভিওআইপি কারবার। টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত না দিয়ে উল্টো পাওনাদারকে হয়রানি করার ঘটনায় পুলিশের তালিকাভুক্ত প্রতারক তিনি। বেশ শান-শওকতের জীবন এই মডেলকন্যার। গাড়ি বিক্রি, বিবিধ ব্যবসা এবং ভিওআইপির কারবারে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে। রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সেই গাড়ি আর ফেরত দিতেন না। বরং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রির জন্য বায়নার টাকা নিতেন। ফেসবুকে বন্ধু বানিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকেও টাকা নিতেন। ইমার ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হন এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তাকে নায়িকা বানানোর আশ্বাস দিয়ে ক্যামেরার সামনে বিবস্ত্র পোজ দিতে বাধ্য করেন ইমা। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী আর নায়িকা হতে পারেননি। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ গত বছর জুনে ইমাকে গ্রেফতার করে। ইমার প্রতারণা থেকে বাদ যাননি প্রভাবশালী চিত্রপরিচালকরাও। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ইমা ফের গুলশান থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ইমার কাছে এখনও অনেকে টাকা পান। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে কথিত মডেল ইমার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আসে। এই নারী অত্যন্ত কৌশলী ও প্রতারক। জানা গেছে, ডিবির কাছে আসা অভিযোগগুলো সিআইডি তদন্ত করছে।
তার নাম সিলভি আজমী চাঁদনী। ইয়াবা পাচার মামলায় কক্সবাজারে গ্রেফতার হন। সিলভির মতোই একসময়ের চিত্রনায়িকা মীম, যিনি মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার ডাল-ভাত চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। মীমেরও বসবাস এখন অন্ধকার জগতে। বিনোদন বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ হয়ে সিলভি পা রাখেন এ জগতে। তারপর ‘আগুনের চোখে প্রেম’ ছবিতে সিলভিকে দেখা যায়। সিলভির সঠিক অবস্থান কেউ বলতে পারেন না। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, সিলভি গ্রেফতার হয়ে জামিন পাওয়ার পর দু’বার বিদেশ ভ্রমণ করেন।
বিনোদন জগতে পা বাড়িয়ে এসব মডেল ও চিত্রনায়িকা নানা মোহে পড়ে অপরাধ জগতের বাসিন্দা হয়ে যান। হয়ে উঠেন ভয়ংকর চরিত্র। ফিল্মেটিকের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর লস্কর নিয়াজ মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, মডেল বা চিত্রনায়িকার নামে যারা অন্ধকার জগতে অপকর্ম করছে তাদের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রযোজন। এরা এ জগতকে কলংকিত করছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি-পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর যুগান্তরকে বলেন, অর্থের লোভে অনেকে বিপথগামী হয়ে যান। তখন আর তার পরিচয় মডেল বা চিত্রনায়িকা থাকে না। তাকে অপরাধী বলেই গণ্য করা হয়। চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দু-একটি ছবি করলেই চিত্রনায়িকা হওয়া যায় না। আর এদের কখনও নায়িকাও বলা যায় না। যারা অপকর্ম করছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
প্রিয়াঙ্কা বিটিভির ছায়াছন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। একসময় আরএফএল-পিভিসির বিজ্ঞাপনের মডেলও ছিলেন। কৃষ্ণচূড়া ড্রেসহাউসের ফটোসেশন, মাধুরী জুয়েলার্সের মডেল হিসেবে কাজ করেন। আট বছরের এ পেশায় আসার আগে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শিখেছেন। দুই বছর আগে গুলশানের লেকশোর আবাসিক হোটেলে তিনি ধরা পড়েন বিদেশী মুদ্রাপাচারকারী চক্রের সঙ্গে। এই অপরাধীরা প্রিয়াঙ্কাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। হোটেল রূপসী বাংলায় ডিসকো পার্টিতে পরিচয়ের সূত্র ধরে মডেল প্রিয়াঙ্কা নাম লেখান অপরাধ জগতের সহযোগী হিসেবে।
প্রিয়াঙ্কা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও এখন থাকেন রাজধানীর শান্তিনগরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। তাকে হোটেলকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ডিবি পুলিশ তিন লিবিয়ান নাগরিকসহ তাকে গ্রেফতার করে। পরে আমারা বিন সামির নামে এক বিদেশীকে তিনি বিয়ে করেন। ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই মডেল বিদেশী অপরাধীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর আগে গ্রেফতারের পর জামিনে বের হয়েছেন তিনি। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মডেল প্রিয়াঙ্কার মা গোয়েন্দা পুলিশ অফিসে এসে জানান, তার মেয়েই তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নাচ-গান আর বিনোদন জগতে বিচরণ করে তিনি অর্থ আয় করেন।
চিত্রনায়িকা কেয়ার শুরুটাও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’ হওয়ার মতো একসময় লোভের ফাঁদে পা দিয়ে রুপালি পর্দার নতুন মুখ হিসেবে আলোচিত মুখ হয়ে ওঠার মুহূর্তে জড়িয়ে পড়েন ভিন্ন এক জালে। ধনীর দুলাল আর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুরু হয় ওঠাবসা। ঝলমলে পর্দার কেয়া এভাবেই অন্ধকার জগতে চলে যান। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এই কেয়ার মা রানী সুফিয়া বেগম অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য যশোরের বেশ আলোচিত ও বিতর্কিত। গুলশানের নিকেতনের একটি বাসা থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে গুলশান থানা পুলিশ অনৈতিক কাজের অভিযোগে কেয়াকে গ্রেফতার করে। সেবার ৫০০ টাকার মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান কেয়া। পুলিশের কাছে নিজেকে একজন দেহপসারণী হিসেবে স্বীকার করেন তিনি। নানা অপকর্মের পাশাপাশি কেয়া একজন রক্ষিতা হিসেবে কাজ করছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কেয়া তিব্বত স্নোর বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে সাড়া ফেলেন। তারপর একে একে তিব্বত লিপজেল, সাগুফতা, জিএমজি এয়ারলাইনস, বসুধা হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে কেয়া ছিলেন সবচেয়ে সফল। মাঝে এক ধনকুবেরের হাত ধরে পাড়ি দেন আমেরিকা। কিন্তু দু’বছর পর সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে। গ্রেফতার হওয়ার কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে কেয়া আবার ‘রক্ষিতার’ মতো জীবনযাপন শুরু করেন। কেয়া এখনও নানা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে নিজের এসব কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে কেয়া বলেন, তিনি পরে ফোন করবেন। এর বেশি তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন চিত্রনায়িকা নাসিমা আক্তার নদী। অশ্লীল ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিতর্কিত এ নায়িকা এফডিসিতে বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছেন। এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। ধনীর দুলালদের প্রমোদভ্রমণের সঙ্গী চিত্রনায়িকা নাসিমা আক্তার নদী। তার পরনের পোশাক নিয়েও অনেকের আপত্তি। সম্প্রতি গুলশান-মহাখালী লিংক রোডে মাল্টিপ্ল্যান স্পোর্টস নামে একটি ক্রীড়াসামগ্রীর শোরুমে গিয়ে নিজেকে ব্যস্ততম চিত্রনায়িকা হিসেবে পরিচয় দেন। তারপর ওই শোরুম থেকে সাত লাখ টাকার পণ্য কিনে সেগুলো গাড়িতে তোলেন। পরে কৌশলে ওই শোরুম থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নগদ নিয়ে পালিয়ে যান। গুলশান এলাকায় পুলিশ আটকের চেষ্টা করলে তিনি পুলিশের হাতে কামড় দিয়ে একটি গাড়িতে উঠে পালান। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নদী প্রতারক চক্রের হয়ে কাজ করছেন। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পর তিনি ‘ইয়াবাকন্যা’ হিসেবেই এখন পরিচিত। নদী উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের একটি বাসায় থাকেন। সেখানে ইয়াবার আসর বসে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, চিত্রনায়িকা নদীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঘনঘন স্থান বদল করায় তাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
নাম তার রিজওয়ানা খালেদ ইমা। গুলশানে একটি চক্রের সঙ্গে তার রয়েছে অবৈধ ভিওআইপি কারবার। টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত না দিয়ে উল্টো পাওনাদারকে হয়রানি করার ঘটনায় পুলিশের তালিকাভুক্ত প্রতারক তিনি। বেশ শান-শওকতের জীবন এই মডেলকন্যার। গাড়ি বিক্রি, বিবিধ ব্যবসা এবং ভিওআইপির কারবারে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে। রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সেই গাড়ি আর ফেরত দিতেন না। বরং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রির জন্য বায়নার টাকা নিতেন। ফেসবুকে বন্ধু বানিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকেও টাকা নিতেন। ইমার ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হন এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তাকে নায়িকা বানানোর আশ্বাস দিয়ে ক্যামেরার সামনে বিবস্ত্র পোজ দিতে বাধ্য করেন ইমা। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী আর নায়িকা হতে পারেননি। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ গত বছর জুনে ইমাকে গ্রেফতার করে। ইমার প্রতারণা থেকে বাদ যাননি প্রভাবশালী চিত্রপরিচালকরাও। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর ইমা ফের গুলশান থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ইমার কাছে এখনও অনেকে টাকা পান। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে কথিত মডেল ইমার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আসে। এই নারী অত্যন্ত কৌশলী ও প্রতারক। জানা গেছে, ডিবির কাছে আসা অভিযোগগুলো সিআইডি তদন্ত করছে।
তার নাম সিলভি আজমী চাঁদনী। ইয়াবা পাচার মামলায় কক্সবাজারে গ্রেফতার হন। সিলভির মতোই একসময়ের চিত্রনায়িকা মীম, যিনি মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার ডাল-ভাত চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। মীমেরও বসবাস এখন অন্ধকার জগতে। বিনোদন বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ হয়ে সিলভি পা রাখেন এ জগতে। তারপর ‘আগুনের চোখে প্রেম’ ছবিতে সিলভিকে দেখা যায়। সিলভির সঠিক অবস্থান কেউ বলতে পারেন না। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, সিলভি গ্রেফতার হয়ে জামিন পাওয়ার পর দু’বার বিদেশ ভ্রমণ করেন।
বিনোদন জগতে পা বাড়িয়ে এসব মডেল ও চিত্রনায়িকা নানা মোহে পড়ে অপরাধ জগতের বাসিন্দা হয়ে যান। হয়ে উঠেন ভয়ংকর চরিত্র। ফিল্মেটিকের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর লস্কর নিয়াজ মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, মডেল বা চিত্রনায়িকার নামে যারা অন্ধকার জগতে অপকর্ম করছে তাদের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রযোজন। এরা এ জগতকে কলংকিত করছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি-পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর যুগান্তরকে বলেন, অর্থের লোভে অনেকে বিপথগামী হয়ে যান। তখন আর তার পরিচয় মডেল বা চিত্রনায়িকা থাকে না। তাকে অপরাধী বলেই গণ্য করা হয়। চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দু-একটি ছবি করলেই চিত্রনায়িকা হওয়া যায় না। আর এদের কখনও নায়িকাও বলা যায় না। যারা অপকর্ম করছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
No comments