ভুলেভরা সম্পূরক চার্জশিট
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার বহুল আলোচিত সম্পূরক চার্জশিট এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চার্জশিটটি ভুলেভরা। এ কারণে সিলেট সিটি মেয়র, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট নিয়ে চলছে চরম গোপনীয়তা। স্পর্শকাতর এ মামলার সম্পূরক চার্জশিটে ভুল থাকায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। খোদ চার্জশিট প্রদানকারী সিআইডি কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা পারুল ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, চার্জশিটে কিছু ভুল ছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, চার্জশিটে অভিযুক্ত সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম ভুলবশত আরিফুল ইসলাম চৌধুরী উল্লেখ করা হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া চার্জশিটের ভেতরে শায়েস্তানগরের স্থলে শায়েস্তাগঞ্জ উল্লেখ করা হয়েছিল ভুলবশত। এই ভুলটিও সংশোধন করা হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। তবে চার্জশিট নিয়ে গোপনীয়তার কারণ হিসেবে তিনি নিজের ব্যস্ততার ফিরিস্তি তুলে ধরেন এই প্রতিনিধির কাছে। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার পারুল দাবি করেন, আমার কাছে শুধু কিবরিয়া হত্যা নয় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে। তাই অনেক ব্যস্ত। এই চার্জশিটে সিলেটের মেয়রকে অভিযুক্ত করা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং চরম গোপনীয়তার ফলে নানা গুঞ্জন গুজব ছড়িয়েছে সিলেটে। চার্জশিট নিয়ে এতই গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে যে বাদী কিবরিয়ার পরিবারও এ ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরাও এ ব্যাপারে তথ্য দিতে রাজি নয়। মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বললেন, আমি চার্জশিটের খবর জানি না। আমাকে কোনো কপিও দেয়া হয়নি। ভিকটিমের পরিবারকে আড়ালে রেখে চার্জশিট প্রদান করায় নিহত কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মামলার বাদীও সংশ্লিষ্ট থানা চার্জশিটের কপি পাওয়ার কথা। কিন্তু তারাও এ ব্যাপারে তথ্য দিতে অপারগ। এমতাবস্থায় কিবরিয়া হত্যা মামলায় প্রথম ও দ্বিতীয় দফার চার্জশিটদাতা সাবেক দুই সিআইডি কর্মকর্তা মুখ খুলেছেন যুগান্তরের কাছে। তাদের মতে, মামলার চার্জশিট আদালতে জমার পর তা ‘পাবলিক প্রপার্টি’ বলে গণ্য হয়। মামলাটি যেহেতু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত তাই এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং দেয়া হলে ভালো হতো। দীর্ঘ চাকরি জীবনে এটাই তারা অনুসরণ করেছেন। তাদের মতে, অতিগোপনীয়তার কারণে সাধারণ কোনো বিষয়ও নানা রহস্যের জš§ দেয়। কিবরিয়া হত্যা মামলার প্রথম চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এসএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান। দেশের বহুল আলোচিত গ্রেনেড মামলাগুলোর তদন্তকারী, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা বলেন, আমি ১০ জনকে অভিযুক্ত করে চাজর্শিট দিয়েছিলাম। অভিযোগপত্রে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল কাইউম, জেলা বিএনপির কর্মী ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহ-দফতর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, কর্মী তাজুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী জয়নাল আবেদীন, জালাল, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জমির আলী, ওয়ার্ড বিএনপির নেতা জয়নাল আবেদীন মোমিন ও ছাত্রদলের কর্মী মহিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদন বাদীপক্ষ প্রত্যাখ্যান করলে অধিকতর তদন্তের পর কিবরিয়া হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফার চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এসএসপি রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে অবসরে থাকা এই কর্মকর্তা বলেন, আমি ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিলাম। সাড়ে তিন বছর অনুসন্ধান শেষে সাবেক জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই চার্জশিটও প্রত্যাখ্যাত হলে গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া খাতুনের আদালতে তৃতীয় দফার চার্জশিট জমা হয় চরম গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল এ চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে নতুন আরও ১১ জনসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন- বিএনপির পলাতক নেতা হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জিকে গউছ, মাওলানা তাজ উদ্দিন আহমেদ, মুফতি সফিকুর রহমান, আবদুল হাই, মোহাম্মদ আলী, বদরুল ইসলাম, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ ও হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সঙ্গে পূর্বের চার্জশিটভুক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আবদুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী, শাহ এএমএস কিবরিয়া।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী, শাহ এএমএস কিবরিয়া।
No comments