বিদায় ঋতুপর্ণ ঘোষ হঠাৎই চলে গেলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, তাঁকে নিয়ে আমাদের এ আয়োজন ঋতু কথা রাখেনি
ঋতুপর্ণ ঘোষের খুব কাছের মানুষ ছিলেন প্রসেনজিৎ। ঋতুপর্ণের মৃত্যুর পর ‘আনন্দ’-এর কাছে তিনি তাঁর অনুভূতির কথা বলেছেন
এখনো ভাবতে পারছি না, ও নেই আমাদের মাঝে। ও মানে আমার বন্ধু ঋতু।
এখনো ভাবতে পারছি না, ও নেই আমাদের মাঝে। ও মানে আমার বন্ধু ঋতু।
ঋতুপর্ণ ঘোষ। চলচ্চিত্র পরিচালক। কাহিনিকার, লেখক। আমার পারিবারিক বন্ধু।
২০ বছর ধরে গভীর সম্পর্ক। এতটুকু ফাটল ধরেনি আমাদের বন্ধুত্বে। ঝগড়া হয়েছে,
অভিমান হয়েছে। কিন্তু বন্ধুত্বের শিকড়ে আঘাত আসেনি। তাই মেনে নিতে পারছি
না ওর এই অকালে চলে যাওয়া। এখনো ভাবি, ও হারিয়ে যায়নি। ও আছে আমাদের মাঝে।
আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনজুড়ে। সত্যি কথা কি, ও শুধু আমার বন্ধু ছিল না, ছিল
আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের একজন বড় মাপের শিক্ষক।
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। মনে পড়ে, একদিন আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম আমাদের প্রিয় রীনাদির (অপর্ণা সেন) বাড়িতে। ওই বাড়িতেই প্রথম পরিচয় হয় ঋতুপর্ণর সঙ্গে। রীনাদি বলেছিলেন, ও ভালো ছবি করে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি কথা বললাম। তার পর থেকে ঋতু আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠে।
একদিন ঋতু আমাকে বলল, ‘তুমি আমার ছবিতে একটা অতিথি চরিত্র করে দেবে?’ আমি ফেরাতে পারিনি ঋতুর প্রস্তাব। সে সময় আমি তিন-চার শিফটে কাজ করছি। দারুণ ব্যস্ত। রাজি হলাম। ঋতু তৈরি করল উনিশে এপ্রিল। দারুণ প্রশংসিত ছবি। জাতীয় পুরস্কারও পায়। ঋতু অন্তত ২১টি ছবি করেছে। এর মধ্যে আমি সাতটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি।উৎসব, চোখের বালি, দোসর, খেলা, নৌকাডুবি, সব চরিত্র কাল্পনিক...। সত্যি কথা কি, ছবির যেকোনো চরিত্র নিয়ে একটা ম্যাজিক তৈরি করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল ঋতুর। আমি যখন ওর ছবিতে অভিনয় করতাম, তখন ঋতু আমাকে বলত, ‘তুই নিজের মতো কাজ কর। ভালো লাগবে।’
আমি অনেক নামীদামি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমি দেখেছি, ওর ছিল একটা অসাধারণ ক্ষমতা। বিশাল দূরদৃষ্টি। স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে পরিচালনা। নতুন মাত্রা যোগ করত। তাই তো বলতাম, ‘তুই আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের একজন শিক্ষক।’ ও হাসত।
কখনো কখনো কোনো ছবির দৃশ্য করতে গিয়ে ঋতুর সঙ্গে আমার মতের অমিল হতো। পরে আবার পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তা মিটেও যেত। আর আমার সেরা প্রশংসা তো আমি ওর কাছ থেকেই পেয়েছি। ও বলত, ‘বুম্বা খুব ভালো অভিনেতা। ওর তো একটা পরিচালকের চোখও রয়েছে। গোটা ছবি নিয়ে ও ভাবে।’
সবচেয়ে দুঃখ লাগে, যখন ভাবি ও ওর শেষ ছবি সত্যান্বেষীর শুটিং শেষ করে গেলেও আর মুক্তি দিয়ে যেতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, ভাওয়ালের রাজাকে নিয়ে ও একটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি করতে চেয়েছিল। ওই ছবিতে আমাকে ভাওয়ালের রাজার ভূমিকায় অভিনয় করার কথাও বলেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করে যেতে পারল না ঋতু।
আমার মনে পড়ছে দোসর ছবির কথা। দোসর-এর স্ক্রিপ্টটা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে হয়েছিল, একেবারে নেগেটিভ চরিত্র। তখন ঋতু বলেছিল, আমি চাই, তুই এমন অভিনয় করবি, যাতে শেষের ১৫ মিনিট তোর প্রতি যেন দর্শকদের সহানুুভূতি চলে আসে। আর দোসর-এর মেকআপও হয়েছিল অসাধারণ। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেখে বলিউড পরিচালক মণিরত্নম বলেছিলেন, ‘এ রকম মেকআপ তো আগে দেখিনি।’
আরেকটা কথা না বললে নয়, ঋতু চেয়েছিল বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবিকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে। আলাদাভাবে গড়তেও চেয়েছিল দুই বাংলার ছবির একটি ভিন্ন জগৎ। চেয়েছিল দুই বাংলার ছবির বিনিময়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল বাংলা ছবিকে। গড়তেও চেয়েছিল বাংলা ছবির বিশ্ববাজার। সেই লক্ষ্যে এগিয়েও ছিল ঋতু। সাড়াও পেয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর সফল করে যেতে পারল না ঋতু। আজ সবাই বলে, ঋতু একটি যুগের নাম। তবে একটা যুগের পরিপূর্ণতা আনতে ঋতুর আরও ১৫-২০ বছর বেঁচে থাকার কথা ছিল। ওর বিদায়ের আগে আমার সঙ্গে শেষ দেখার সময় ওর শেষ কথা ছিল, ‘বাড়িতে আসিস। খুব আড্ডা হবে।’ ঋতু কথা রাখেনি। না বলেই চলে গেল। এ শোক আমি সইব কী করে?
অনুলিখন: অমর সাহা, কলকাতা প্রতিনিধি
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। মনে পড়ে, একদিন আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম আমাদের প্রিয় রীনাদির (অপর্ণা সেন) বাড়িতে। ওই বাড়িতেই প্রথম পরিচয় হয় ঋতুপর্ণর সঙ্গে। রীনাদি বলেছিলেন, ও ভালো ছবি করে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি কথা বললাম। তার পর থেকে ঋতু আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠে।
একদিন ঋতু আমাকে বলল, ‘তুমি আমার ছবিতে একটা অতিথি চরিত্র করে দেবে?’ আমি ফেরাতে পারিনি ঋতুর প্রস্তাব। সে সময় আমি তিন-চার শিফটে কাজ করছি। দারুণ ব্যস্ত। রাজি হলাম। ঋতু তৈরি করল উনিশে এপ্রিল। দারুণ প্রশংসিত ছবি। জাতীয় পুরস্কারও পায়। ঋতু অন্তত ২১টি ছবি করেছে। এর মধ্যে আমি সাতটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি।উৎসব, চোখের বালি, দোসর, খেলা, নৌকাডুবি, সব চরিত্র কাল্পনিক...। সত্যি কথা কি, ছবির যেকোনো চরিত্র নিয়ে একটা ম্যাজিক তৈরি করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল ঋতুর। আমি যখন ওর ছবিতে অভিনয় করতাম, তখন ঋতু আমাকে বলত, ‘তুই নিজের মতো কাজ কর। ভালো লাগবে।’
আমি অনেক নামীদামি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমি দেখেছি, ওর ছিল একটা অসাধারণ ক্ষমতা। বিশাল দূরদৃষ্টি। স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে পরিচালনা। নতুন মাত্রা যোগ করত। তাই তো বলতাম, ‘তুই আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের একজন শিক্ষক।’ ও হাসত।
কখনো কখনো কোনো ছবির দৃশ্য করতে গিয়ে ঋতুর সঙ্গে আমার মতের অমিল হতো। পরে আবার পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তা মিটেও যেত। আর আমার সেরা প্রশংসা তো আমি ওর কাছ থেকেই পেয়েছি। ও বলত, ‘বুম্বা খুব ভালো অভিনেতা। ওর তো একটা পরিচালকের চোখও রয়েছে। গোটা ছবি নিয়ে ও ভাবে।’
সবচেয়ে দুঃখ লাগে, যখন ভাবি ও ওর শেষ ছবি সত্যান্বেষীর শুটিং শেষ করে গেলেও আর মুক্তি দিয়ে যেতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, ভাওয়ালের রাজাকে নিয়ে ও একটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি করতে চেয়েছিল। ওই ছবিতে আমাকে ভাওয়ালের রাজার ভূমিকায় অভিনয় করার কথাও বলেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করে যেতে পারল না ঋতু।
আমার মনে পড়ছে দোসর ছবির কথা। দোসর-এর স্ক্রিপ্টটা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে হয়েছিল, একেবারে নেগেটিভ চরিত্র। তখন ঋতু বলেছিল, আমি চাই, তুই এমন অভিনয় করবি, যাতে শেষের ১৫ মিনিট তোর প্রতি যেন দর্শকদের সহানুুভূতি চলে আসে। আর দোসর-এর মেকআপও হয়েছিল অসাধারণ। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেখে বলিউড পরিচালক মণিরত্নম বলেছিলেন, ‘এ রকম মেকআপ তো আগে দেখিনি।’
আরেকটা কথা না বললে নয়, ঋতু চেয়েছিল বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবিকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে। আলাদাভাবে গড়তেও চেয়েছিল দুই বাংলার ছবির একটি ভিন্ন জগৎ। চেয়েছিল দুই বাংলার ছবির বিনিময়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল বাংলা ছবিকে। গড়তেও চেয়েছিল বাংলা ছবির বিশ্ববাজার। সেই লক্ষ্যে এগিয়েও ছিল ঋতু। সাড়াও পেয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর সফল করে যেতে পারল না ঋতু। আজ সবাই বলে, ঋতু একটি যুগের নাম। তবে একটা যুগের পরিপূর্ণতা আনতে ঋতুর আরও ১৫-২০ বছর বেঁচে থাকার কথা ছিল। ওর বিদায়ের আগে আমার সঙ্গে শেষ দেখার সময় ওর শেষ কথা ছিল, ‘বাড়িতে আসিস। খুব আড্ডা হবে।’ ঋতু কথা রাখেনি। না বলেই চলে গেল। এ শোক আমি সইব কী করে?
অনুলিখন: অমর সাহা, কলকাতা প্রতিনিধি
No comments