ব্যয় বিশাল, আয়ের পথ কম by আবুল কাশেম
নির্বাচনের আগে 'জনকল্যাণমুখী' বাজেট
ঘোষণা করতে গিয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল
আবদুল মুহিত। শেষ বাজেটের সঙ্গে মহাজোট সরকারের প্রথম বাজেটের বেশ মিল
রয়েছে।
নির্বাচনের পরপরই জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে
প্রথম বাজেটে নানা ধরনের কল্যাণমুখী উদ্যোগ ছিল সরকারের। শেষ বাজেটে সেটা
থাকছে আরো বেশি। তবে নানা খাতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি কল্যাণকর কাজে
মনোযোগ বাড়ানোর কারণে ব্যয়ের মতো আয়ের হিসাব বাড়াতে পারেননি তাঁর শেষ
বাজেটে। নির্বাচনমুখী বাজেট করতে গিয়ে চার বছরের ব্যবধানে বাজেটের আকার
প্রায় দ্বিগুণ করতে হয়েছে তাঁকে। মহাজোট সরকারের প্রথম বাজেটের আকার ছিল এক
লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। আর আজ ঘোষণা হতে যাওয়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরের
বাজেটের আকার দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে
আয়ের পথ সম্প্রসারিত করতে না পারার কারণে নতুন বাজেটের মোট আকারের প্রায়
চার ভাগের এক ভাগই ঘাটতি, যা পূরণ করতে দেশি-বিদেশি ঋণ ও অনুদানের ওপর
নির্ভর করতে হবে অর্থমন্ত্রী মুহিত ও তাঁর উত্তরসূরিকে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিরোধী দলহীন জাতীয় সংসদে ডিজিটাল পদ্ধতি বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন। এর আগে দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন করা হবে। এটিই সম্ভবত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেওয়া শেষ বাজেট। কারণ তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন; কিন্তু আর কখনো মন্ত্রী হবেন না। এর আগে এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দুটি বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।
শেষ বাজেট তৈরির মতো ভয়াবহ অবস্থা যে অর্থমন্ত্রীর আর কখনো হয়নি, সে কথা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি। মূলত নির্বাচনের আগে এ বাজেটে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের হিসাব সামাল দিতে গিয়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাঁকে। অবশ্য এত বড় আকারের বাজেট তৈরির 'সাহস' সম্পর্কে গত মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিককে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার সাহসী সরকার। আমি সামরিক সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও বাজেট তৈরি করেছি।'
বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বড় বাজেট দেওয়া হলেও পুরো অর্থবছরে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ নির্বাচন সামনে রেখে গণমানুষের প্রত্যাশার কথা ভেবে বাজেটে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও আয় বাড়ানোর ক্ষেত্র সেভাবে সম্প্রসারণ করা হয়নি। তবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার খুব বেশি কার্পণ্য করবে না। প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ঋণনির্ভর হবে সরকার। নির্বাচনের পরের সরকার বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমিয়ে তা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করছি।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী আগে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে ব্যয় বিবেচনায় আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে নানাভাবে রাজস্ব খাতে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরও নতুন বাজেটে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে চলতি অর্থবছরের এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রাই যেখানে রাজস্ব বোর্ড ছুঁতে পারছে না, সেখানে নতুন অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা। অর্থমন্ত্রী নিজেও তাঁর বক্তৃতায় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক মন্দাকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করবেন। বাজেট বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা, বিরোধী দলগুলোর হরতালের ক্ষয়ক্ষতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্ক না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি কখনো দাম বাড়ানোর বাজেট করি না, এবারও তা হচ্ছে না।'
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে ভোজ্য তেলের মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলে শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকছে। ব্যবসায়ীরা এ দুই ধরনের তেল আমদানিতে ভ্যাটে ৫ শতাংশ ছাড় পেতেন। আসছে বাজেটেও সে ছাড় থাকছে। একই সঙ্গে আগের মতো আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। নতুন বাজেটে সুবিধা পাচ্ছে সূর্যমুখী তেলের আমদানিকারক ও ভোক্তারা। দেশে ধীরে ধীরে ব্যবহার বাড়তে থাকা ওই তেলের ওপর শুল্ক কমছে। বর্তমানে সূর্যমুখী তেল আমদানিতে আমদানিকারকদের ১২ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়। তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে সূর্যমুখী তেলের দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাজেটে মসলার শুল্ক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, যাতে উপকৃত হবেন মসলা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জানা গেছে, মসলার ওপর থেকে বাজেটে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হতে পারে। এতে চোরাপথে মসলা আমদানি কমবে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নতুন বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছর ৬.৩ শতাংশ অর্জন হবে দাবি করে নতুন অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। বরাবরের মতো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি হারে বরাদ্দ বাড়ছে পল্লী উন্নয়ন, সড়ক ও রেলযোগাযোগ, কৃষি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে। নতুন বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি তিন হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও মোট ভর্তুকি চলতি অর্থবছরের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কমছে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে। চলতি অর্থবছর মোট ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির চাপ মেটাতে এখন সব কটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা না হলেও নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব কেন্দ্র সার্বক্ষণিক চালু রাখার পরিকল্পনার কথা চিন্তা করেই এ ভর্তুকি রাখা হয়েছে। কারণ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার যত বেশি বিদ্যুৎ কিনবে, ভর্তুকির পরিমাণও তত বাড়বে। এ ছাড়া বিদায়ী অর্থবছর ১৮ লাখ গ্রাহককে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা থাকছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন সত্ত্বেও অনুন্নয়ন মূলধন খাতে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে নতুন বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তবে তা খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে নামিয়ে আনা হয়েছে সাত হাজার ৭৩৫ কোটিতে। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে তাৎক্ষণিক অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হয়। এ জন্যই শেষ বছরের বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে থাকা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয়ের হিসাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বইয়ে এ খাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইকুইটিতে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে।'
বাজেটে বড় আকারের ঘাটতির মধ্যেও থাকছে স্বল্পহারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা বাজেটে থাকছে না। এ জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে ভেবে তা থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। তাই মহার্ঘ ভাতার বদলে বাজেট বক্তৃতায় স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এটি হলে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রতিবছরই বাড়বে। তবে বাজেট বক্তব্যে ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি থাকবে কি না সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কমপক্ষে দুটি করে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে অর্থ বিভাগকে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে তা অন্তর্ভুক্ত করে ইতিমধ্যে ছাপানো হওয়া বাজেট বক্তৃতায় নতুন করে একটি পৃষ্ঠা যুক্ত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহেদুর রহমান জানান, বাজেট উপস্থাপনকালে নারীর উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের কার্যক্রম, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও অসমতা : উত্তরণের পথে যাত্রা, জেলা বাজেট, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা : হালচিত্র-২০১৩, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা : অগ্রগতির ধারা, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো নিয়ে বিস্তৃত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশন প্রণীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০১৩-১৪ এর একটি দলিল এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাবলি ২০১২-১৩ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
শাহেদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাজেটকে আরো অংশগ্রহণমূলক করতে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে (www.mof.gov.bd) বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল পাওয়া যাবে। যে কেউ ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে পারবে। সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদে বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে। এ ছাড়া সরকারি ওয়েবসাইট লিংক www.bangladesh.gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.bdpressinform.org, www.pmo.gov.bd এবং বেসরকারি ওয়েবসাইট লিংক www. bdnews24.com ঠিকানায় বাজেটসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
একনজরে নতুন বাজেট
নতুন অর্থবছরের জন্য মোট দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট আসছে। এটি বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৭.৫ শতাংশ বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার বাইরে রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা ও কর ব্যতীত ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর বৈদেশিক অনুদান প্রত্যাশা করা হয়েছে ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। ফলে বিদেশি অনুদান না পেলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। নতুন বাজেটে মোট অনুন্নয়নমূলক ব্যয় এক লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি ও মোট উন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদান পাওয়া গেলে নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ শতাংশ।
নতুন বাজেটে ঘাটতি অর্থ জোগাড় করতে দেশের ভেতর থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণ ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ও স্বল্পমেয়াদি থাকবে ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ থাকছে মোট সাত হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চার হাজার ৯৭১ কোটি ও অন্যান্য উৎস থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে নতুন অর্থবছরে ২৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধের পর নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিরোধী দলহীন জাতীয় সংসদে ডিজিটাল পদ্ধতি বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন। এর আগে দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদন করা হবে। এটিই সম্ভবত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেওয়া শেষ বাজেট। কারণ তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন; কিন্তু আর কখনো মন্ত্রী হবেন না। এর আগে এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দুটি বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।
শেষ বাজেট তৈরির মতো ভয়াবহ অবস্থা যে অর্থমন্ত্রীর আর কখনো হয়নি, সে কথা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি। মূলত নির্বাচনের আগে এ বাজেটে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের হিসাব সামাল দিতে গিয়েই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাঁকে। অবশ্য এত বড় আকারের বাজেট তৈরির 'সাহস' সম্পর্কে গত মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিককে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ সরকার সাহসী সরকার। আমি সামরিক সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও বাজেট তৈরি করেছি।'
বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বড় বাজেট দেওয়া হলেও পুরো অর্থবছরে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ নির্বাচন সামনে রেখে গণমানুষের প্রত্যাশার কথা ভেবে বাজেটে ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকলেও আয় বাড়ানোর ক্ষেত্র সেভাবে সম্প্রসারণ করা হয়নি। তবে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার খুব বেশি কার্পণ্য করবে না। প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ঋণনির্ভর হবে সরকার। নির্বাচনের পরের সরকার বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমিয়ে তা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করছি।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী আগে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে ব্যয় বিবেচনায় আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে নানাভাবে রাজস্ব খাতে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরও নতুন বাজেটে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে চলতি অর্থবছরের এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রাই যেখানে রাজস্ব বোর্ড ছুঁতে পারছে না, সেখানে নতুন অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা। অর্থমন্ত্রী নিজেও তাঁর বক্তৃতায় বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক মন্দাকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করবেন। বাজেট বক্তৃতায় হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা, বিরোধী দলগুলোর হরতালের ক্ষয়ক্ষতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্ক না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি কখনো দাম বাড়ানোর বাজেট করি না, এবারও তা হচ্ছে না।'
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটে ভোজ্য তেলের মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলে শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকছে। ব্যবসায়ীরা এ দুই ধরনের তেল আমদানিতে ভ্যাটে ৫ শতাংশ ছাড় পেতেন। আসছে বাজেটেও সে ছাড় থাকছে। একই সঙ্গে আগের মতো আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। নতুন বাজেটে সুবিধা পাচ্ছে সূর্যমুখী তেলের আমদানিকারক ও ভোক্তারা। দেশে ধীরে ধীরে ব্যবহার বাড়তে থাকা ওই তেলের ওপর শুল্ক কমছে। বর্তমানে সূর্যমুখী তেল আমদানিতে আমদানিকারকদের ১২ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়। তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে সূর্যমুখী তেলের দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাজেটে মসলার শুল্ক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, যাতে উপকৃত হবেন মসলা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। জানা গেছে, মসলার ওপর থেকে বাজেটে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হতে পারে। এতে চোরাপথে মসলা আমদানি কমবে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নতুন বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছর ৬.৩ শতাংশ অর্জন হবে দাবি করে নতুন অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। বরাবরের মতো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি হারে বরাদ্দ বাড়ছে পল্লী উন্নয়ন, সড়ক ও রেলযোগাযোগ, কৃষি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে। নতুন বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি তিন হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও মোট ভর্তুকি চলতি অর্থবছরের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কমছে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে। চলতি অর্থবছর মোট ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রাখা হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির চাপ মেটাতে এখন সব কটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা না হলেও নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব কেন্দ্র সার্বক্ষণিক চালু রাখার পরিকল্পনার কথা চিন্তা করেই এ ভর্তুকি রাখা হয়েছে। কারণ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার যত বেশি বিদ্যুৎ কিনবে, ভর্তুকির পরিমাণও তত বাড়বে। এ ছাড়া বিদায়ী অর্থবছর ১৮ লাখ গ্রাহককে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা থাকছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়।
৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন সত্ত্বেও অনুন্নয়ন মূলধন খাতে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে নতুন বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তবে তা খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে নামিয়ে আনা হয়েছে সাত হাজার ৭৩৫ কোটিতে। বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে তাৎক্ষণিক অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হয়। এ জন্যই শেষ বছরের বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়। নতুন অর্থবছরের বাজেটে থাকা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয়ের হিসাবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বইয়ে এ খাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইকুইটিতে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে।'
বাজেটে বড় আকারের ঘাটতির মধ্যেও থাকছে স্বল্পহারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা বাজেটে থাকছে না। এ জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে ভেবে তা থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। তাই মহার্ঘ ভাতার বদলে বাজেট বক্তৃতায় স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এটি হলে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রতিবছরই বাড়বে। তবে বাজেট বক্তব্যে ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি থাকবে কি না সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কমপক্ষে দুটি করে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে অর্থ বিভাগকে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে তা অন্তর্ভুক্ত করে ইতিমধ্যে ছাপানো হওয়া বাজেট বক্তৃতায় নতুন করে একটি পৃষ্ঠা যুক্ত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহেদুর রহমান জানান, বাজেট উপস্থাপনকালে নারীর উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের কার্যক্রম, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও অসমতা : উত্তরণের পথে যাত্রা, জেলা বাজেট, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা : হালচিত্র-২০১৩, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা : অগ্রগতির ধারা, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো নিয়ে বিস্তৃত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশন প্রণীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০১৩-১৪ এর একটি দলিল এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যাবলি ২০১২-১৩ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।
শাহেদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাজেটকে আরো অংশগ্রহণমূলক করতে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে (www.mof.gov.bd) বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল পাওয়া যাবে। যে কেউ ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে পারবে। সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদে বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে। এ ছাড়া সরকারি ওয়েবসাইট লিংক www.bangladesh.gov.bd, www.nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd, www.bdpressinform.org, www.pmo.gov.bd এবং বেসরকারি ওয়েবসাইট লিংক www. bdnews24.com ঠিকানায় বাজেটসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
একনজরে নতুন বাজেট
নতুন অর্থবছরের জন্য মোট দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট আসছে। এটি বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৭.৫ শতাংশ বেশি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার বাইরে রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা ও কর ব্যতীত ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর বৈদেশিক অনুদান প্রত্যাশা করা হয়েছে ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। ফলে বিদেশি অনুদান না পেলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। নতুন বাজেটে মোট অনুন্নয়নমূলক ব্যয় এক লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি ও মোট উন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদান পাওয়া গেলে নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৮ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ শতাংশ।
নতুন বাজেটে ঘাটতি অর্থ জোগাড় করতে দেশের ভেতর থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণ ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি ও স্বল্পমেয়াদি থাকবে ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ থাকছে মোট সাত হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চার হাজার ৯৭১ কোটি ও অন্যান্য উৎস থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে নতুন অর্থবছরে ২৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধের পর নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
No comments