নদী ভাঙনের জেলা ভোলায় চলছে ১৫টি সিনেমা হল by ছোটন সাহা

কালের পরিবর্তে দেশের অন্যসব জেলায় সিমেনা হল ব্যবসায় ধস নেমে এলেও নদী ভাঙন কবলিত এলাকা ভোলা জেলায় লোকসান নিয়ে চলছে ১৫টি সিনেমা হল। ভোলায় মোট ২৭টি সিনেমা হল থাকলেও বিভিন্ন কারণে গত ৫ বছরে ১২টি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যেগুলো চালু রয়েছে সেগুলোও মধ্যে অনেকগুলোই বন্ধের উপক্রম।

এক সময় এ জেলার সিনেমা হলগুলো খুব ধুমধামের সঙ্গে ব্যবআ করলেও বর্তমানে ঘটেছে তার উল্টোটা।
বর্তমানে এখানকার হলগুলোতে শুরু হয়েছে বন্ধের প্রতিযোগিতা। কে কার আগে বন্ধ করতে পারে। দর্শকরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা লোকসান গুণতে গুণতে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন হলগুলো।

অশ্লীল ছবি, স্যাটেলাইট চ্যানেল, সিডি, মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে সিনেমা শিল্পে ধস নেমেছে বলে মনে করছেন অনেক সিনেমা প্রেমী।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরে ৩টি, দৌলতখানে ৫টি, বোরহানউদ্দিনে ৩টি, তজুমদ্দিনে ৩টি, মনপুরায় ২টি, লালমোহনে ৫টি ও চরফ্যাশনে ৬টিসহ মোট ২৭ সিমেমা হল ছিল এ জেলায়।

এসব সিনেমা হলে এক সময় হাজারো শ্রমিক কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বর্তমানে তারা আজ বেকার জীবনযাপন করছেন।

এদিকে, দৌলতখান উপজেলার “ডায়মন্ড” সিনেমা হলের মালিক আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিন আগেও জমজমাট ছিলো সিনেমা হল ব্যবসা। কিন্তু এখন আর দর্শক আসেনা। দৈনিক ১/২টি শো চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, “এভাবে হলের ব্যবসা চললে খুব শিগগিরই আমার “ডায়মন্ড” সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যাবে।”

লালমোহন উপজেলার ৫টি সিনেমা হলের মধ্যে “মধুছন্দ” ও “বিনোদন” আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর থেকে মালিকপক্ষ আর সেগুলো চালু করেনি। “লালমনি” নামে একটি হল চললেও ওই হলটি রয়েছে লোকসানের মুখে। বাকি দুটি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

মনপুরা উপজেলায় “ঝলক” ও “সনি” সিনেমা হল ২টি এক সময় দর্শকদের ভিড়ে জমজমাট থাকতো। ওই সময় সাধারণ মানুষের অপেক্ষা করতো কখন হলগুলোতে নতুন ছবি আসবে। কিন্তু গত এক বছর ধরে ২টিই হলই বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসানের মুখে পড়ে হল ব্যবসায়ীয়া এ ব্যবসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

“সনি” সিমেনা হলের মালিক মো. সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, “দর্শক নেই, শুধু শুধু লোকসান গুণতে হচ্ছে, তাই বন্ধ করে দিয়েছি হলটি। ”

তিনি বলেন, “একেকটি ছবি আনতে যে খরচ হয়, শো চালিয়ে সে টাকা ওঠছে না।”

স্যাটেলাইট আর ছোট ছোট প্রেক্ষাগৃহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

ভোলা সদরে ৩টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন চলছে দুটি। কিছুদিন আগে পরানগঞ্জ এলাকার হলটি বন্ধ হয়ে যায়। সদরের “অবসর” ও “অনুপম” চলছে ধীর গতিতে। ওই দুটি হলের মালিকও লোকসান গুণছেন।

চরফ্যাশন উপজেলা সদরে ৩টি ও প্রত্যন্ত এলাকায় ৩টি। মোট ৬টি সিনেমা হল এ উপজেলায়। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এখানকার ৪টি হল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চলছে মাত্র ২টি।

একই অবস্থা তজুমদ্দিন উপজেলাতেও সেখানে ৩টি হলের মধ্যে ১টি ৫ বছর ধরে বন্ধ। চলছে ২টি।

স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩/৪ বছর  আগে ভোলার সিমেনা হলগুলোতে শাবানা-আলমগীর, রাজ্জাক-ববিতা, সুচরিতার অভিনয়ের ছবিগুলো দেখার জন্য মানুষ সিনেমা হলে ভিড় জমাতেন।

ওই সময় বাংলা সিনেমায় কোনো ধরনের অশ্লীল দৃশ্য দেখা যেতনা। তাই অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখতে আসতেন। এখন দিন পাল্টেছে, বেড়েছে অশ্লীল ছবি। এতে মুখ ফিরিয়ে নেন দর্শকরা। এখন আর সামাজিক সিনেমা নেই। দু’একটি ছাড়াও অধিকাংশ হলই এখন লোকসানের মুখে আছে।

তারা বলেন, আগে ছবির গুণগত মান, সামাজিকতা আর টিকেটের সল্পমূল্য সব মিলিয়ে হলগুলোতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। তবে বর্তমানের চিত্র একটু ভিন্ন।

এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখন দেখা যায় মানুষের ঘরে ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। তারা ঘরে বসেই সময় পার করছেন। হলগুলোতে এখন আর আগের পরিবেশ নেই, তাই দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, হল মালিকরা দর্শক ধরে রাখতে পারছেননা। এটা তাদের ব্যর্থতা। তবে হলগুলোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে কিছুটা পরিবর্তন সম্বব। যদি কেউ অশ্লীন ছবি প্রদর্শন করে তাহলে তার কিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.