আলোচনা- সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক by মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে যুগ যুগ বঞ্চিত হয়েছেন আমাদের পূর্বসূরিরা। সুশিক্ষার অধিকার আদায়ের জন্য অনেক আন্দেলন-সংগ্রাম করেছি আমরা । ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দেলনে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে আমাদের। স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উপস্থাপিত ১৯৬৬-এর ৬ দফা এবং ১৯৬৯-এর ১১ দফাতেও বিশেষভাবে যুক্ত ছিল শিক্ষার অধিকার আদায়ের দাবি।
কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণের উচ্চ মূল্যের প্রতিবাদে আমরা ফুঁসে উঠেছি বার বার। সুনিশ্চিত করতে চেয়েছি সবার অন্ন-বস্ত্রসহ সুশিক্ষার অধিকার। অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি দেশ। প্রত্যাশা ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত হবে আমাদের সকল নাগরিক অধিকার। সুশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না আমাদের সন্তান। অথচ শিক্ষা যেন এখন আরো অনেক উচ্চ মূল্যের পণ্য। এখানে চরমভাবে বিদ্যমান ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য। তুলনামূলকভাবে গ্রামের মানুষের অধিক অনটন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ধারাবাহিক অভাবই এর প্রধান কারণ। এ সুযোগেই শহর কেন্দ্রিকভাবে গজিয়ে উঠেছে হাজারো শিক্ষা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এরই মধ্যে দু'একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে হয়নি তা নয়। তবে নীতিহীন শিক্ষাব্যবস্থার করণে তারাও সর্বাংশে দিতে পারেনি-পারছে না সঠিক শিক্ষা। প্রতিষ্ঠান ভালো-মন্দ যা-ই হোক ভর্তির সুযোগ পাওয়া মাত্রই অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুণতে হয় ডোনেশন, উন্নয়ন-ফি, ভর্তি-ফি, সেশন-ফি, টিউশন-ফি ইত্যাদি নামে মোটা অংকের অতিরিক্ত টাকা। বিভিন্ন স্কুল/ কলেজে এ সকল ফি-এর পরিমাণ এত বেশি যে, প্রজাতন্ত্রের প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকতর্ার নির্ধারিত বেতন-ভাতায় খেয়ে-পরে একটি সন্তানকেই যোগ্যতানুসারে কাঙ্ক্ষিত স্কুলে ভর্তি করানো অসম্ভব। পড়ার খরচ চালানো তো পরের কথা। শুধু প্রাইভেট বা বেসরকারি স্কুল/ কলেজগুলোই নয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বি.ডি.আর , পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্ত শাসিত বোর্ড /করপোরেশন/ প্রতিষ্ঠানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিশেষায়িত ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ার যোগ্যতা আমাদের অনেক সন্তানের থাকলেও পড়ানোর সাধ্য সাধারণ অভিভাবকের নেই। কোন রকম দায়সারাভাবে ইংলিশ ভার্সন চালু করতে পারলে তো আর কথাই নেই। সে সকল প্রতিষ্ঠানের ধারে কাছে যাওয়াও মধ্যবিত্তের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এমন একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ১ম শ্রেণীর একজন (অনাবাসিক) শিক্ষাথর্ীকে গত ২০১০ সালে মোট জমা দিতে হয়েছে: ৬০ হাজার ৯৯০ টাকা। এহেন পরিস্থিতিতে অর্থাভাবে অনেক মেধাবি শিক্ষার্থী আজো বঞ্চিত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে। আবার কেউ কেউ সস্তায়/ লিলস্নায় নিয়ে নিচ্ছে কর্ম-বিমুখশিক্ষা! বিভিন্নমুখী বিশৃঙ্খল শিক্ষা ও অশিক্ষার কারণেই আজ এক জাতিতে শত দল।
বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীনতার চার দশকেও আমরা সর্বসাধারণের জন্য সুনিশ্চিত করতে পারিনি সুশিক্ষা লাভের স্বাধীনতা। মুক্ত হতে পারিনি নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে। এখনো সেই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সুশিক্ষার অধিকার বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। শিক্ষার অভাবে এখনো অনেকেই ছাড়তে পারেনি নেংটা পাগলের পিছু। রোগ-বালাই সারাতে ছুটে যায় ধূর্ত সাধক/কবিরাজের কাছে। এখনো রয়ে গেছে সেই জিন-ভূতের আছড়। বন্ধ হচ্ছে না বাল্য বিবাহ। শুধু সঠিক শিক্ষার অভাবে আজো দেশ-বিদেশে সম্মানজনক কর্ম/মজুরি থেকে বঞ্চিত আমাদের লাখ লাখ নারি-পুরুষ। কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি-পাচ্ছে না আমাদের জাতীয় অগ্রগতির চাকা। আজো পূর্ণতা পায়নি আমাদের সার্বিক স্বাধীনতা।
সঠিক সরকারি পদক্ষেপ ব্যতীত নিশ্চিত করা সম্ভব নয় সবার জন্য শিক্ষা। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার পাশপাশি নিতে হবে কিছু স্বল্প মেয়াদি জরুরি পদক্ষেপ। এখই শক্ত হাতে টেনে ধরতে হবে ঊধর্্বমুখী শিক্ষা ব্যয়ের লাগাম। নির্ধারণ করে দিতে হবে বিভিন্ন ফি-এর সর্বোচ্চ পরিমাণ। কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে ডোনেশনসহ বিভিন্ন অযৌক্তিক অর্থ আদায়। অমান্য করলে বাতিল করে দিতে হবে পাঠদানের অনুমতি। সেইসাথে সারা দেশের সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনে রাখতে হবে, যেনতেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম.পি.ও.ভুক্ত করে তা সম্ভব হবে না কোন দিনই। বরং বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সর্ব ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় চেতনা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার উপযোগী নাগরিক-কমর্ী তৈরির প্রয়োজনে দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে জাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতায় উন্নত মানের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য সুনিশ্চিত করতে হবে যথাযোগ্য সুশিক্ষা লাভের স্বাধীনতা।
============================
ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল



দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মো. রহমত উলস্নাহ্
কলেজ অধ্যক্ষ

এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.