বিশ্বকাপে অনিশ্চিত মাশরাফি
ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলটাই ফ্লিক করে স্কয়ার লেগে পাঠালেন। রানের জন্য ছুটলেনও। কিন্তু অল্প দূর যেতেই নন-স্ট্রাইকিং এন্ড থেকে ফরহাদ হোসেনের চিৎকার ‘নো...’। মাশরাফি উইকেটে ফিরতে চেয়েও পারলেন না, পড়ে গেলেন উইকেটের ওপরই। স্কয়ার লেগ থেকে উড়ে আসা থ্রোতে হয়ে গেলেন রানআউট। মাশরাফির কি আর সেদিকে খেয়াল আছে! তাঁর ব্যথাতুর দৃষ্টি তখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।যে হাঁটু মাশরাফিকে এর আগে অনেকবার মাঠের বাইরে ছিটকে ফেলেছে, সেটিই আবার ‘বিদ্রোহ’ করে বসল কাল। বিকেএসপিতে বিকেএসপির বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ডান হাঁটুতে পাওয়া চোট সংশয় ছড়িয়ে দিল মাশরাফির বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই।মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মাশরাফিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল অ্যাপোলো হাসপাতালে। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করার পর প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, অস্ত্রোপচার না লাগলেও এক থেকে দুই মাস পর্যন্ত মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে তাঁকে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। বিসিবির চিকিৎসক মনিরুল আমিন জানালেন, ‘লিগামেন্ট ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ছিঁড়েছে। কাল (আজ) এমআরআইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পুরোটা বোঝা যাবে।’ গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও এই ডান হাঁটুরই লিগামেন্ট ছিঁড়েছিল মাশরাফির। সেবার তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে আট মাস লেগেছিল।বিসিবি থেকে কাল রাতেই মাশরাফির সিটি স্ক্যান ও এমআরআইয়ের ছবি ই-মেইল করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডেভিড ইয়াংয়ের কাছে। সেসব দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে মাশরাফি নিজেও কথা বলেছেন ইয়াংয়ের সঙ্গে। তাঁর হাঁটুতে সর্বশেষ পাঁচটি অস্ত্রোপচারই করেছেন ইয়াং। মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেই তাই অনেক কিছু বুঝে ফেলেন তিনি। তা, কী বললেন ইয়াং? ‘এখনই বিশ্রামে না গিয়ে ইয়াং আমাকে কাল (আজ) থেকে সাইক্লিং করতে বলেছেন। অল্প ব্যথা হলেও করতে বলেছেন। জিম-টিমও হয়তো করতে হবে। অস্ত্রোপচার না করালেও কমপক্ষে দুই মাস সময় তো লাগবেই ফিরতে’—হাসপাতাল ছাড়ার সময় জানালেন মাশরাফি। আবারও কাটাছেঁড়ায় যেতে হবে বলেও আশঙ্কা তাঁর, ‘আমার মনে হয় অপারেশন লাগবে। ব্যথাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। দেখা যাক ডাক্তাররা কী বলেন।’ভাগ্য ভালো হলে হয়তো অস্ত্রোপচার ছাড়াই সেরে উঠবেন মাশরাফি। কিন্তু অস্ত্রোপচার লাগলে কাজটা এবার কঠিনই হবে। পা থেকে লিগামেন্টের যে বাড়তি অংশটা কেটে এনে ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্ট জোড়া লাগাতে হয়, একটার পর একটা অস্ত্রোপচারের পর মাশরাফির শরীরে সেটা আর অবশিষ্ট নেই। আরেকবার অস্ত্রোপচার করতে হলে তাই কোনো মৃতদেহ থেকেই কেটে আনতে হবে সেটা।বাঁ হাঁটুতে এ পর্যন্ত চারবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে মাশরাফির। ডান হাঁটুর ইনজুরিতে পড়লেন তৃতীয়বার এবং আগের দুবারই লেগেছে অস্ত্রোপচার। ২০০২ সালের মার্চ মাসে বাঁ হাঁটুতে প্রথম অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এর পর থেকে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মাশরাফির নিয়তি। তবু এবারের চোটটা বড় এক আঘাত হয়েই এসেছে তাঁর জন্য। গত অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়ে দুই মাস মাঠের বাইরে কাটিয়ে মাত্রই ফিরেছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে বিবর্ণ থাকার পর শেষ দুই ম্যাচে ফিরে পেয়েছিলেন নিজেকে। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচেও ভালো বোলিং করেছেন। অথচ দুর্ভাগ্য আবার তাঁকে ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধে নামিয়ে দিল। হাসপাতালে এমআরআইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বলা মাশরাফির কথাটা শোনাল হাহাকারের মতো, ‘যখন আবার রিদম পেতে শুরু করলাম, ভালো বোলিং করতে শুরু করলাম, তখনই আবার এই অবস্থা! আমার কপালও একটা...!’এই ‘মন্দ কপাল’ জয় করে প্রতিবারই বিজয়ীর বেশে ফিরে এসেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবারও কি পারবেন?
No comments