লাউয়াছড়ার বিপন্ন বন by মোকারম হোসেন
একবিংশ শতাব্দীতে এসে নতুন করে অনেক কিছুই ভাবতে হচ্ছে আমাদের। কারণ, আমরা অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে অনেক ধ্বংসাত্মক কাজ করেছি। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগেও আমরা যদি অতীতের ভুল শুধরানোর ও ক্ষতি পূরণের চেষ্টা না করি, তাহলে আমাদের বিপর্যয় ত্বরান্বিত হবে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণটা একটু বেশিই মনে হলো। সারা দিনই স্রোতের মতো মানুষ ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। আমাদের পাশ কাটিয়ে বনের ভেতর ঢুকল আট থেকে দশটি গাড়ি। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত কয়েকটি দলের হল্লা-চিৎকারে প্রকম্পিত হলো বনের নির্জনতা। মানুষের বাঁদরামো দেখে বনের বানর ও হনুমানরাও ভীত হয়ে বন ছেড়ে পালিয়েছে। মাত্র এক দশক আগেও লাউয়াছড়া উদ্যানে খুব সহজেই বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মিলত। অথচ এখন কোনো প্রাণীর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।
ভেতরে আবার কয়েকটি দোকানপাটও গজিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দু-একখানা মার্কেট দাঁড়িয়ে গেলেও অবাক হব না। যতই ভেতরে যাই, দেখি যত্রতত্র মানুষের ছুড়ে ফেলা বর্জ্যের ছড়াছড়ি। অথচ প্রবেশপথের একাধিক নির্দেশনা বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘উদ্যানে প্রবেশের সময় খাবারের প্যাকেট ও প্লাস্টিক-জাতীয় দ্রবাদি সঙ্গে রাখবেন না। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও আবর্জনা ফেলবেন না।’ কিন্তু পর্যটকেরা এসব নির্দেশনা পড়েও দেখছেন না, কিংবা পড়লেও মানছেন না। যাঁরা এসব নিয়ম ভঙ্গ করছেন, তাঁদের ওপর নজরদারি করার ব্যবস্থাও নেই। উদ্যানজুড়েই মানুষের অসচেতনতার চূড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়! রেলপথ ছাড়িয়ে খানিকটা ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে বিক্ষিপ্ত গাছপালা, লতাগুল্ম। একসময়ের ঘন অরণ্যের কোনো চিহ্ন নেই। টিলাজুড়ে যৎসামান্য উঁচু গাছ মাথা তুলে আছে। উদ্যানের কিছু জায়গা একেবারেই ন্যাড়া। কোনো কোনো অংশে পরীক্ষামূলক বৃক্ষায়ণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন সাফ করে সেখানে নতুনভাবে গাছ লাগানো ফলপ্রসূ কোনো কাজ নয়। এটা বন বিভাগের বহুমাত্রিক অপকর্মের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বন-পাহাড়ের গাছপালা লোপাট করে সেখানে বিদেশি গাছ রোপণ করে ইকোসিস্টেম নষ্ট করা। ১৯৯৯, ২০০০ ও ২০০১ সালে যথাক্রমে উদ্যানের শূন্য দশমিক ৭৮ হেক্টর, ৩ হেক্টর এবং শূন্য দশমিক ৫০ হেক্টর জায়গায় নতুন করে বৃক্ষায়ণ করা হয়েছে। এসব গাছের মধ্যে আকাশমণি (অ্যাকাশিয়া) ও মেহগনি ছাড়া অন্যগুলো পাহাড়ি প্রজাতি হিসেবেই পরিচিত। যদিও এ ধরনের বৃক্ষায়ণকে বেশ লাভজনক খাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে, আসলে এসবই খাতা-পুস্তকের হিসাব। বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সাদৃশ্য নেই। দৃশ্যমান এসব লাভালাভের চেয়ে অদৃশ্য ক্ষতির পরিমাণটা কত ভয়াবহ, তা কি বন বিভাগ একবারও ভেবে দেখেছে? বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই তো এ কাজটি করছে, তা থেকে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি কতটা গতিশীল হয়েছে, সেই হিসাব আমাদের জানা নেই।
আদতে নতুন করে এ ধরনের বৃক্ষায়ণের কোনো প্রয়োজনই নেই। যদি বনকে ‘বিরক্ত’ না করা হয়, তাহলে আপনাআপনিই বন নিজ বৈশিষ্ট্যে পুরোনো চেহারায় ফিরে আসতে পারে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ সুন্দরবন: সিডরের প্রলয়ংকরী তাণ্ডবের পরও সুন্দরবন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বনকে মোটেও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা উচিত নয়। আমাদের বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে বনবাদাড় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি। সেগুলোকেও যদি বিপন্ন করা হয়, তাহলে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলব কোথায়?
সার্বিক বিবেচনায় লাউয়াছড়াকে এখন সত্যিকার বন বা উদ্যান হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ, এখানে এখন একধরনের পর্যটন ব্যবস্থাপনা ভর করেছে—অর্থাৎ উদ্যান ভাঙিয়ে কয়টা পয়সা কামাই! বন বিভাগ ‘নিসর্গ নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের নামে এখানে পর্যটন-ব্যবসা খুলে বসেছে। তা ছাড়া একটি বনে তিন সংস্থার (বন বিভাগ, ইউএসএআইডি ও নিসর্গ নেটওয়ার্ক) খবরদারিও কাম্য নয়। এতে কাজকর্মে সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপন লেনদেনের ভিত্তিতে এখানে দলভিত্তিক পর্যটকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এসব দল বনের ভেতরে খেলাধুলা ও পিকনিক করে। কিন্তু এমন একটি বনে কেন স্বয়ং বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনীর বিনিময়ে অজস্র মানুষ প্রবেশ করবে? কিছু স্পর্শকাতর স্থানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা প্রয়োজন। সবাই তো সবকিছুর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের সংরক্ষিত বিশেষ প্রাকৃতিক অঞ্চল রয়েছে। যেখানে যাওয়ার কথা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করে না, সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে ও বেড়ে ওঠে বিচিত্র গাছপালা। একইভাবে বিচিত্র প্রাণীও খুঁজে পায় তাদের জীবনের গতি। মূলত এ ধরনের বিশেষ প্রাকৃতিক স্থানগুলো নির্দিষ্ট এলাকার জিনব্যাংক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৮ সালে বহুজাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি শেভরন লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপকাজ পরিচালনা করে। জরিপকাজে নয় হাজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানা যায়। বিস্ফোরণের শব্দের মাত্রা ছিল প্রায় ৭৫ দশমিক ৫ ডেসিবল। তখন বন এলাকায় এ ধরনের ক্ষতিকর জরিপকাজ থামানোর জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নানাভাবে আপত্তি তুললেও সরকার ছিল নির্বিকার।
তবে একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনো অজস্র প্রাণবৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে এই বনে। মাটির কয়েক হাত ওপরে অসংখ্য লতাগুল্মের নিশ্ছিদ্র ঠাসবুনন, তারপর মাঝারি ও উঁচু গাছের সমাহার খানিকটা আশ্বস্ত করে। এখনো সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। এই বনকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখনই কতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বনটিকে অবিলম্বে ‘বিপন্ন’ ঘোষণা করে সেখানে শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিষয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বনের নির্দিষ্ট প্রবেশপথগুলোয় পাহারা জোরদার করা, সেখানে কোনো ধরনের কৃত্রিম বৃক্ষায়ণ থেকে বিরত থাকা এবং যতটা সম্ভব বনকে ‘বিরক্ত’ না করা হলে লাউয়াছড়া ধীরে ধীরে আরণ্যক বৈশিষ্ট্যে ফিরে যেতে পারে। সর্বোপরি এই বন থেকে কোনো ধরনের গাছ বা লতাগুল্ম অপসারণ করা যাবে না। তাহলে বনভূমির সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার আন্তপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক, তরুপল্লব।
tarupallab@gmail.com
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণটা একটু বেশিই মনে হলো। সারা দিনই স্রোতের মতো মানুষ ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। আমাদের পাশ কাটিয়ে বনের ভেতর ঢুকল আট থেকে দশটি গাড়ি। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত কয়েকটি দলের হল্লা-চিৎকারে প্রকম্পিত হলো বনের নির্জনতা। মানুষের বাঁদরামো দেখে বনের বানর ও হনুমানরাও ভীত হয়ে বন ছেড়ে পালিয়েছে। মাত্র এক দশক আগেও লাউয়াছড়া উদ্যানে খুব সহজেই বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মিলত। অথচ এখন কোনো প্রাণীর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।
ভেতরে আবার কয়েকটি দোকানপাটও গজিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দু-একখানা মার্কেট দাঁড়িয়ে গেলেও অবাক হব না। যতই ভেতরে যাই, দেখি যত্রতত্র মানুষের ছুড়ে ফেলা বর্জ্যের ছড়াছড়ি। অথচ প্রবেশপথের একাধিক নির্দেশনা বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘উদ্যানে প্রবেশের সময় খাবারের প্যাকেট ও প্লাস্টিক-জাতীয় দ্রবাদি সঙ্গে রাখবেন না। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও আবর্জনা ফেলবেন না।’ কিন্তু পর্যটকেরা এসব নির্দেশনা পড়েও দেখছেন না, কিংবা পড়লেও মানছেন না। যাঁরা এসব নিয়ম ভঙ্গ করছেন, তাঁদের ওপর নজরদারি করার ব্যবস্থাও নেই। উদ্যানজুড়েই মানুষের অসচেতনতার চূড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়! রেলপথ ছাড়িয়ে খানিকটা ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে বিক্ষিপ্ত গাছপালা, লতাগুল্ম। একসময়ের ঘন অরণ্যের কোনো চিহ্ন নেই। টিলাজুড়ে যৎসামান্য উঁচু গাছ মাথা তুলে আছে। উদ্যানের কিছু জায়গা একেবারেই ন্যাড়া। কোনো কোনো অংশে পরীক্ষামূলক বৃক্ষায়ণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন সাফ করে সেখানে নতুনভাবে গাছ লাগানো ফলপ্রসূ কোনো কাজ নয়। এটা বন বিভাগের বহুমাত্রিক অপকর্মের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বন-পাহাড়ের গাছপালা লোপাট করে সেখানে বিদেশি গাছ রোপণ করে ইকোসিস্টেম নষ্ট করা। ১৯৯৯, ২০০০ ও ২০০১ সালে যথাক্রমে উদ্যানের শূন্য দশমিক ৭৮ হেক্টর, ৩ হেক্টর এবং শূন্য দশমিক ৫০ হেক্টর জায়গায় নতুন করে বৃক্ষায়ণ করা হয়েছে। এসব গাছের মধ্যে আকাশমণি (অ্যাকাশিয়া) ও মেহগনি ছাড়া অন্যগুলো পাহাড়ি প্রজাতি হিসেবেই পরিচিত। যদিও এ ধরনের বৃক্ষায়ণকে বেশ লাভজনক খাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে, আসলে এসবই খাতা-পুস্তকের হিসাব। বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সাদৃশ্য নেই। দৃশ্যমান এসব লাভালাভের চেয়ে অদৃশ্য ক্ষতির পরিমাণটা কত ভয়াবহ, তা কি বন বিভাগ একবারও ভেবে দেখেছে? বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই তো এ কাজটি করছে, তা থেকে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি কতটা গতিশীল হয়েছে, সেই হিসাব আমাদের জানা নেই।
আদতে নতুন করে এ ধরনের বৃক্ষায়ণের কোনো প্রয়োজনই নেই। যদি বনকে ‘বিরক্ত’ না করা হয়, তাহলে আপনাআপনিই বন নিজ বৈশিষ্ট্যে পুরোনো চেহারায় ফিরে আসতে পারে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ সুন্দরবন: সিডরের প্রলয়ংকরী তাণ্ডবের পরও সুন্দরবন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বনকে মোটেও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা উচিত নয়। আমাদের বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে বনবাদাড় মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি। সেগুলোকেও যদি বিপন্ন করা হয়, তাহলে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলব কোথায়?
সার্বিক বিবেচনায় লাউয়াছড়াকে এখন সত্যিকার বন বা উদ্যান হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ, এখানে এখন একধরনের পর্যটন ব্যবস্থাপনা ভর করেছে—অর্থাৎ উদ্যান ভাঙিয়ে কয়টা পয়সা কামাই! বন বিভাগ ‘নিসর্গ নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের নামে এখানে পর্যটন-ব্যবসা খুলে বসেছে। তা ছাড়া একটি বনে তিন সংস্থার (বন বিভাগ, ইউএসএআইডি ও নিসর্গ নেটওয়ার্ক) খবরদারিও কাম্য নয়। এতে কাজকর্মে সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপন লেনদেনের ভিত্তিতে এখানে দলভিত্তিক পর্যটকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এসব দল বনের ভেতরে খেলাধুলা ও পিকনিক করে। কিন্তু এমন একটি বনে কেন স্বয়ং বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শনীর বিনিময়ে অজস্র মানুষ প্রবেশ করবে? কিছু স্পর্শকাতর স্থানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা প্রয়োজন। সবাই তো সবকিছুর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের সংরক্ষিত বিশেষ প্রাকৃতিক অঞ্চল রয়েছে। যেখানে যাওয়ার কথা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করে না, সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে ও বেড়ে ওঠে বিচিত্র গাছপালা। একইভাবে বিচিত্র প্রাণীও খুঁজে পায় তাদের জীবনের গতি। মূলত এ ধরনের বিশেষ প্রাকৃতিক স্থানগুলো নির্দিষ্ট এলাকার জিনব্যাংক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৮ সালে বহুজাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি শেভরন লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে ত্রিমাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপকাজ পরিচালনা করে। জরিপকাজে নয় হাজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানা যায়। বিস্ফোরণের শব্দের মাত্রা ছিল প্রায় ৭৫ দশমিক ৫ ডেসিবল। তখন বন এলাকায় এ ধরনের ক্ষতিকর জরিপকাজ থামানোর জন্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নানাভাবে আপত্তি তুললেও সরকার ছিল নির্বিকার।
তবে একেবারে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখনো অজস্র প্রাণবৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে এই বনে। মাটির কয়েক হাত ওপরে অসংখ্য লতাগুল্মের নিশ্ছিদ্র ঠাসবুনন, তারপর মাঝারি ও উঁচু গাছের সমাহার খানিকটা আশ্বস্ত করে। এখনো সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। এই বনকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখনই কতগুলো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বনটিকে অবিলম্বে ‘বিপন্ন’ ঘোষণা করে সেখানে শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিষয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বনের নির্দিষ্ট প্রবেশপথগুলোয় পাহারা জোরদার করা, সেখানে কোনো ধরনের কৃত্রিম বৃক্ষায়ণ থেকে বিরত থাকা এবং যতটা সম্ভব বনকে ‘বিরক্ত’ না করা হলে লাউয়াছড়া ধীরে ধীরে আরণ্যক বৈশিষ্ট্যে ফিরে যেতে পারে। সর্বোপরি এই বন থেকে কোনো ধরনের গাছ বা লতাগুল্ম অপসারণ করা যাবে না। তাহলে বনভূমির সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার আন্তপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক, তরুপল্লব।
tarupallab@gmail.com
No comments