দুশ্চিন্তা তো আসলে ফিল্ডিং by আরিফুল ইসলাম
অবশেষে মুশফিক একটা ক্যাচ নিতে পারলেন!’—দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অ্যালিস্টার কুকের ক্যাচ নেওয়ার পর ক্রিকইনফোর লাইভ কমেন্ট্রিতে লেখা হলো এমনটাই। ক্যাচ ধরাই তাঁর মূল কাজ। কিন্তু গত কিছুদিনে উইকেটের সামনে আর পেছনের মুশফিকের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ব্যাট হাতে যে মানুষটি দলের অন্যতম নির্ভরতা, দু কদম পেছনে দাঁড়ালে তিনিই হয়ে উঠছেন দুশ্চিন্তার অন্য নাম।
দলের উইকেটকিপার তিনি, মুশফিকুরেরটা খুব বাজেভাবে চোখে পড়ছে বলেই তাঁকে দিয়ে শুরু। নইলে গোটা দলের অবস্থা তো মুশফিকুরের চেয়ে সুবিধের নয়। প্রায় প্রতি ম্যাচ শেষেই ১৫-২০ রানের জন্য আফসোস, নয়তো দু-একটি অসাধারণ ইনিংসের কাছে হেরে যাওয়ার আক্ষেপ। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই বোঝা যাবে, যতটা না ব্যাটিং বা বোলিংয়ে ঘাটতি, বাংলাদেশের জন্য তার চেয়ে বড় সত্যি হলো ক্রিকেটের সেই বহু পুরোনো কথাটাই, ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।’ খুব বেশি স্মৃতি হাতড়ানোর দরকার নেই, কেবল এ বছরে বাংলাদেশের খেলাগুলোর দিকে তাকালেই প্রমাণ মিলে যাবে হাতেনাতে।
৪ জানুয়ারি, ২০১০, ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ। নিজের বলে তিলকরত্নে দিলশানের ক্যাচ যখন ছাড়লেন শফিউল ইসলাম, শ্রীলঙ্কান ওপেনারের রান মাত্র ১৫। অভিষিক্ত পেসারকে যখন অনুসরণ করলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, দিলশান তখন ৬১। শেষ পর্যন্ত ১০৪ রান করে যখন আউট হলেন, জয় (২৬১) থেকে শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৯ রান দূরে। পরের ম্যাচে সাকিব আবার নিজের বলে ক্যাচ ছাড়লেন, মহেন্দ্র সিং ধোনির রান তখন ৬১। পরে ধোনির অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের ২৯৬ টপকে গেল ভারত অনায়াসেই। পরের ম্যাচে ৯৭ রানে উপুল থারাঙ্গাকে যখন মুশফিক ‘জীবন’ দিলেন, তখন অবশ্য শ্রীলঙ্কার নাগালেই জয়। থারাঙ্গা পরে অপরাজিত থেকে যান ১১৮ রানে। শেষ ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল বিরাট কোহলি ও সুরেশ রায়নার দুটি ক্যাচ যেভাবে ছাড়লেন, স্কুল ক্রিকেটেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমন বদান্যতা না পেলে থারাঙ্গার মতো সেঞ্চুরি হতো না কোহলিরও।
ফরম্যাট বদলাল, কিন্তু বদলালেন না বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। কথার আগুন জ্বেলে যে টেস্টের আগে বীরেন্দর শেবাগ উত্তাপ ছড়ালেন, সেই চট্টগ্রাম টেস্টেই কি না ক্যাচ ছাড়ার প্রতিযোগিতায় নামলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দুটি ছেড়ে ‘জয়ী’ ইমরুল কায়েস, একটি করে শফিউল, নাঈম, রকিবুল এবং মুশফিকুর। ঢাকা টেস্টে অবশ্য নাটকীয় উন্নতি, একটিই মাত্র মিস, রকিবুলের।
নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং দলের ‘বাতাস’ পেয়েও লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৭৮ টপকাতে ৮.২ ওভার খেলেছিল নিউজিল্যান্ড, এর মাঝেই ক্যাচ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তামিম ও সাকিব। প্রথম ও শেষ ওয়ানডেতে ‘স্বমহিমায়’ মুশফিকুর। শেষ ম্যাচে তাঁর হাতে ৭ রানে জীবন পেয়ে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি করতে পেরেছিলেন মাত্র ৩৪, কিন্তু এর মাঝেই মার্টিন গাপটিলকে নিয়ে গড়েন ইনিংসের একমাত্র ফিফটি জুটি (৭১)। ৩ উইকেটে হারা ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় ওইটিই। আর এই সিরিজের স্মৃতি তো তরতাজাই, শুধু মুশফিকুর নন, অনেক আক্ষেপের দ্বিতীয় ম্যাচে লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহও। এগুলো শুধুই ক্যাচিংয়ের খতিয়ান, স্টাম্পিংয়েও এমনই ‘ধারাবাহিক’ মুশফিকুর।
‘কেউ তো আর ইচ্ছে করে ক্যাচ ছাড়ে না। চেষ্টা তো কম করছি না, তার পরও এমন হচ্ছে, কী আর করা যাবে!’—দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন অসহায় কণ্ঠে বলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিছু যে করা যায়নি, এটা তো দেখা গেছে পরের ম্যাচেই। কাল ঠিক একই রকম অসহায় লাগল সাকিবকেও, ‘কী আর বলার আছে, আমরা তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি। তার পরও হচ্ছে না, আমি নিজেও আসলে জানি না এর সমাধান কী।’ দীর্ঘদিন এই দলকে কাছ থেকে দেখেছেন যিনি, সেই সাবেক ফিল্ডিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন, ‘উঁচু ক্যাচের ক্ষেত্রে ওরা মনে হয় খুব বেশি ভাবে, পারব কি পারব না ভাবতে গিয়েই মিস করে। এটা না করে টেকনিকের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর ফিল্ডিং অনেকটা মানসিক ব্যাপার, মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে হবে।’
এ বছর নয় ম্যাচ খেলেও জয় নেই একটিও। অথচ যে ক্যাচগুলো ফসকেছে, এর অর্ধেক হাতে জমাতে পারলে জয়ের খাতায়ও জমা পড়ত অন্তত দু-তিনটি ম্যাচ। কণ্ঠ যতই অসহায় শোনাক, যত দ্রুত সম্ভব সমাধান বের করতেই হবে। নতুবা দীর্ঘ হতে থাকবে আক্ষেপের পালা।
দলের উইকেটকিপার তিনি, মুশফিকুরেরটা খুব বাজেভাবে চোখে পড়ছে বলেই তাঁকে দিয়ে শুরু। নইলে গোটা দলের অবস্থা তো মুশফিকুরের চেয়ে সুবিধের নয়। প্রায় প্রতি ম্যাচ শেষেই ১৫-২০ রানের জন্য আফসোস, নয়তো দু-একটি অসাধারণ ইনিংসের কাছে হেরে যাওয়ার আক্ষেপ। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই বোঝা যাবে, যতটা না ব্যাটিং বা বোলিংয়ে ঘাটতি, বাংলাদেশের জন্য তার চেয়ে বড় সত্যি হলো ক্রিকেটের সেই বহু পুরোনো কথাটাই, ‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।’ খুব বেশি স্মৃতি হাতড়ানোর দরকার নেই, কেবল এ বছরে বাংলাদেশের খেলাগুলোর দিকে তাকালেই প্রমাণ মিলে যাবে হাতেনাতে।
৪ জানুয়ারি, ২০১০, ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ। নিজের বলে তিলকরত্নে দিলশানের ক্যাচ যখন ছাড়লেন শফিউল ইসলাম, শ্রীলঙ্কান ওপেনারের রান মাত্র ১৫। অভিষিক্ত পেসারকে যখন অনুসরণ করলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, দিলশান তখন ৬১। শেষ পর্যন্ত ১০৪ রান করে যখন আউট হলেন, জয় (২৬১) থেকে শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৯ রান দূরে। পরের ম্যাচে সাকিব আবার নিজের বলে ক্যাচ ছাড়লেন, মহেন্দ্র সিং ধোনির রান তখন ৬১। পরে ধোনির অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের ২৯৬ টপকে গেল ভারত অনায়াসেই। পরের ম্যাচে ৯৭ রানে উপুল থারাঙ্গাকে যখন মুশফিক ‘জীবন’ দিলেন, তখন অবশ্য শ্রীলঙ্কার নাগালেই জয়। থারাঙ্গা পরে অপরাজিত থেকে যান ১১৮ রানে। শেষ ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল বিরাট কোহলি ও সুরেশ রায়নার দুটি ক্যাচ যেভাবে ছাড়লেন, স্কুল ক্রিকেটেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমন বদান্যতা না পেলে থারাঙ্গার মতো সেঞ্চুরি হতো না কোহলিরও।
ফরম্যাট বদলাল, কিন্তু বদলালেন না বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। কথার আগুন জ্বেলে যে টেস্টের আগে বীরেন্দর শেবাগ উত্তাপ ছড়ালেন, সেই চট্টগ্রাম টেস্টেই কি না ক্যাচ ছাড়ার প্রতিযোগিতায় নামলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দুটি ছেড়ে ‘জয়ী’ ইমরুল কায়েস, একটি করে শফিউল, নাঈম, রকিবুল এবং মুশফিকুর। ঢাকা টেস্টে অবশ্য নাটকীয় উন্নতি, একটিই মাত্র মিস, রকিবুলের।
নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং দলের ‘বাতাস’ পেয়েও লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৭৮ টপকাতে ৮.২ ওভার খেলেছিল নিউজিল্যান্ড, এর মাঝেই ক্যাচ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তামিম ও সাকিব। প্রথম ও শেষ ওয়ানডেতে ‘স্বমহিমায়’ মুশফিকুর। শেষ ম্যাচে তাঁর হাতে ৭ রানে জীবন পেয়ে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি করতে পেরেছিলেন মাত্র ৩৪, কিন্তু এর মাঝেই মার্টিন গাপটিলকে নিয়ে গড়েন ইনিংসের একমাত্র ফিফটি জুটি (৭১)। ৩ উইকেটে হারা ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় ওইটিই। আর এই সিরিজের স্মৃতি তো তরতাজাই, শুধু মুশফিকুর নন, অনেক আক্ষেপের দ্বিতীয় ম্যাচে লোপ্পা ক্যাচ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহও। এগুলো শুধুই ক্যাচিংয়ের খতিয়ান, স্টাম্পিংয়েও এমনই ‘ধারাবাহিক’ মুশফিকুর।
‘কেউ তো আর ইচ্ছে করে ক্যাচ ছাড়ে না। চেষ্টা তো কম করছি না, তার পরও এমন হচ্ছে, কী আর করা যাবে!’—দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন অসহায় কণ্ঠে বলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিছু যে করা যায়নি, এটা তো দেখা গেছে পরের ম্যাচেই। কাল ঠিক একই রকম অসহায় লাগল সাকিবকেও, ‘কী আর বলার আছে, আমরা তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি। তার পরও হচ্ছে না, আমি নিজেও আসলে জানি না এর সমাধান কী।’ দীর্ঘদিন এই দলকে কাছ থেকে দেখেছেন যিনি, সেই সাবেক ফিল্ডিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন, ‘উঁচু ক্যাচের ক্ষেত্রে ওরা মনে হয় খুব বেশি ভাবে, পারব কি পারব না ভাবতে গিয়েই মিস করে। এটা না করে টেকনিকের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর ফিল্ডিং অনেকটা মানসিক ব্যাপার, মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে হবে।’
এ বছর নয় ম্যাচ খেলেও জয় নেই একটিও। অথচ যে ক্যাচগুলো ফসকেছে, এর অর্ধেক হাতে জমাতে পারলে জয়ের খাতায়ও জমা পড়ত অন্তত দু-তিনটি ম্যাচ। কণ্ঠ যতই অসহায় শোনাক, যত দ্রুত সম্ভব সমাধান বের করতেই হবে। নতুবা দীর্ঘ হতে থাকবে আক্ষেপের পালা।
No comments