সৎ ও সাহসী প্রার্থীদেরই বেছে নিতে হবে -সিটি করপোরেশন নির্বাচন by তোফায়েল আহমে
পশ্চিমা সমাজে ‘১৩’ সংখ্যাটি নিয়ে যে সংস্কার, তা আমাদের মধ্যে না থাকলেও ২০১৩ সালটা এ পর্যন্ত যা দিয়েছে এবং নিয়েছে, তাকে কোনোভাবেই শুভকর বলা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এ বছরের সামনের দিনগুলো নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতার পালাবদলের ধারাবাহিকতার স্বাভাবিকতায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। একই বছরের শেষ প্রান্তে যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল, তাই প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে নির্বাচন কমিশন এ চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা যথার্থই বলতে হয়। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তফসিল অনুযায়ী সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে এ নির্বাচনগুলো সমাপ্ত করা।
যা লেখার শুরুতেই বলছিলাম, সময়টা সাংঘাতিক রকমের বৈরী। বৈরিতার সবচেয়ে বড় উপাদানও কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা। দলীয় সরকার বনাম নির্দল সরকার। এখন যে চারটি করপোরেশনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সে চারটিতে রয়েছেন সরকারি দলের নির্বাচিত মেয়ররা। কেন্দ্র ও প্রান্ত উভয় স্থানেই একই দল ক্ষমতায়। এখানে কিছুই করার নেই। এটি জনরায় বা গণরায়ের ফসল। প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়, যার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার ও নির্বাচনপদ্ধতির যে জাতীয় সংকট, বিরোধ ও আস্থাহীনতা, তা থেকে নির্বাচন কমিশনও মুক্ত নয়। তাই এ বৈরী সময়ে নির্বাচনী তরি পারাপার স্থানীয় নেতৃত্বের জন্য যতটুকু সহজ, কমিশনের জন্য মোটেও তা নয়।
আন্দোলনরত বিরোধী দল বা জোট এ নির্বাচন নিয়ে এখনো পক্ষে-বিপক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। আশা করি, তারা স্থানীয় নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের যে অচলাবস্থা বা অনড়াবস্থা, তার সঙ্গে একাকার করবে না। স্থানীয় নির্বাচনকে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সহায়ক নীতি ও অবস্থান গ্রহণ করলে সরকারি জোট ও বিরোধী জোট কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সরকারি প্রার্থী ও বিরোধী প্রার্থীদের নিয়ে ২০১১ এবং ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় যা যা ঘটেছে, তা থেকে দুটি বড় দল আশা করি কিছু শিক্ষা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সে শিক্ষা গ্রহণ করে এই চার নির্বাচনে জাতীয়ভাবে কোনো মনোনয়নগত, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না চাপিয়ে সবাইকে সমান সুযোগ ও সহায়তা দেবে। নতুবা স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টির আরও একটি নতুন অবকাশ তৈরি হবে।
সব দিক বিবেচনা করে আসন্ন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নাগরিকবান্ধব, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা এবং নির্বাচনকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য কতিপয় সুপারিশ পেশ করছি। এই সুপারিশগুলোতে সরকার, নির্বাচন কমিশন, বিরোধী দল, সম্ভাব্য প্রার্থী, নাগরিক ও প্রশাসন—সবার জন্য কিছু কিছু করণীয় থাকবে।
১. সরকার এ নির্বাচনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার একটি দৃঢ় নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। সরকারি দল কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়নের পথে না গিয়ে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও আগ্রহী নেতা-কর্মীদের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিতে পারে। এমনকি দলের একাধিক প্রার্থী
হলেও স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি সেখানে ছেড়ে দিয়ে দেখতে পারে। তাতে ফলাফল বিরূপ হবে না।
২. বিরোধী দল নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে প্রবল আন্দোলনে থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্দোলনকে সীমিত রেখে এ নির্বাচনে দলের আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীদের স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনী বিধিমালা অনুসরণ বা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতত সজাগ থাকতে পারে। সেটি সংগত ও দীর্ঘ মেয়াদে সুফলদায়ক হতে পারে।
৩. চারটি সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ইত্যাদি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরত রাখার বিধানসংবলিত নির্বাচনী বিধিমালা থাকতে হবে। এ বিধি ভঙ্গ হলে মনোনয়নপত্র ও প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা প্রয়োজন। এমনকি বিধি ভঙ্গ করে নির্বাচিত হওয়ার পরও বিধিভঙ্গের জন্য পদ শূন্য করার স্পষ্ট বিধান এবং সে বিধান কার্যকর করার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
৪. নিজেদের বিবেকবোধ থেকেও ক্ষমতাসীন মেয়র ও কাউন্সিলররা স্বেচ্ছায়ও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর পদত্যাগ করে গৌরবময় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
৫. চারটি সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা এ নির্বাচনের সফলতার জন্য অপরিহার্য। নাগরিক সমাজ নির্বাচনী বিধিমালার অনুসরণে প্রার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিধি ভঙ্গকারীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। সর্বোপরি সৎ, নিবেদিত, নিষ্ঠাবান ও যোগ্য প্রার্থীরা যাতে প্রার্থিতায় আগ্রহী হন, সে ব্যাপারে সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। এ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন হবে ঠিকই, কিন্তু নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয়।
বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে (২০১১ ও ২০১২) স্থানীয় নাগরিক সমাজ তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নাগরিক সমাজের সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকার একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। একইভাবে কুমিল্লার ক্ষেত্রেও সাধারণ ভোটাররা নীরবে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। তবে দুই নির্বাচনের ফলাফলের সামগ্রিক বিশ্লেষণে আমরা যা দেখেছি, তাতে ভোটার ও নাগরিক সচেতনতার কিছু কিছু মারাত্মক দুর্বলতাও ধরা পড়েছে, যার পুনরাবৃত্তি সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৩ সালে কাম্য নয়। প্রথমত, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর (নারী ও পুরুষ) প্রার্থীদের মধ্যে আধুনিক একটি নগর গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন প্রার্থীর দারুণ খরা দেখা গেছে। প্রার্থীদের শিক্ষাগত পটভূমি, অপরাধ ও মামলার ইতিহাস, বয়স ও পেশা, সমাজকর্মের পটভূমি ইত্যাদি বিষয়ে নাগরিক সমাজের সামগ্রিক উদাসীনতার কারণে মাঠে ভালো প্রার্থী ছিলেন না। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া প্রার্থীর তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই, মিথ্যা তথ্য চ্যালেঞ্জ করা, তথ্যগুলোর ব্যাপক বিনিময় ও মূল্যায়ন হয়নি। নির্বাচন কমিশন আগে এসব তথ্য জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল। বিশেষত, সুজন কাজটি অত্যন্ত কার্যকরভাবে করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের জন্য সে সুযোগ তৈরি করবে কি না, জানি না।
উপসংহারে বলতে হয়, ভুল করে হোক বা ব্যবস্থার কারণেই হোক, স্থানীয় নির্বাচনকে আমরা চেয়ারম্যান ও বা মেয়র নির্বাচন হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলররা পাদপ্রদীপের ধারেকাছেও থাকেন না। সবাই শুধু মেয়রকে নিয়েই ভাবতে থাকি। মনে রাখা উচিত, এটি মেয়র নির্বাচন নয়, করপোরেশন নির্বাচন। তাই সাধারণ আসনের এবং নারী আসনের কাউন্সিলরদের বিষয়টিও যেন যথাযথ গুরুত্ব পায়, সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সদস্য, স্থানীয় সরকার কমিশন।
যা লেখার শুরুতেই বলছিলাম, সময়টা সাংঘাতিক রকমের বৈরী। বৈরিতার সবচেয়ে বড় উপাদানও কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা। দলীয় সরকার বনাম নির্দল সরকার। এখন যে চারটি করপোরেশনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সে চারটিতে রয়েছেন সরকারি দলের নির্বাচিত মেয়ররা। কেন্দ্র ও প্রান্ত উভয় স্থানেই একই দল ক্ষমতায়। এখানে কিছুই করার নেই। এটি জনরায় বা গণরায়ের ফসল। প্রশ্ন ভিন্ন জায়গায়, যার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার ও নির্বাচনপদ্ধতির যে জাতীয় সংকট, বিরোধ ও আস্থাহীনতা, তা থেকে নির্বাচন কমিশনও মুক্ত নয়। তাই এ বৈরী সময়ে নির্বাচনী তরি পারাপার স্থানীয় নেতৃত্বের জন্য যতটুকু সহজ, কমিশনের জন্য মোটেও তা নয়।
আন্দোলনরত বিরোধী দল বা জোট এ নির্বাচন নিয়ে এখনো পক্ষে-বিপক্ষে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। আশা করি, তারা স্থানীয় নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের যে অচলাবস্থা বা অনড়াবস্থা, তার সঙ্গে একাকার করবে না। স্থানীয় নির্বাচনকে স্বাধীন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সহায়ক নীতি ও অবস্থান গ্রহণ করলে সরকারি জোট ও বিরোধী জোট কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সরকারি প্রার্থী ও বিরোধী প্রার্থীদের নিয়ে ২০১১ এবং ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় যা যা ঘটেছে, তা থেকে দুটি বড় দল আশা করি কিছু শিক্ষা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সে শিক্ষা গ্রহণ করে এই চার নির্বাচনে জাতীয়ভাবে কোনো মনোনয়নগত, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না চাপিয়ে সবাইকে সমান সুযোগ ও সহায়তা দেবে। নতুবা স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টির আরও একটি নতুন অবকাশ তৈরি হবে।
সব দিক বিবেচনা করে আসন্ন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নাগরিকবান্ধব, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা এবং নির্বাচনকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য কতিপয় সুপারিশ পেশ করছি। এই সুপারিশগুলোতে সরকার, নির্বাচন কমিশন, বিরোধী দল, সম্ভাব্য প্রার্থী, নাগরিক ও প্রশাসন—সবার জন্য কিছু কিছু করণীয় থাকবে।
১. সরকার এ নির্বাচনে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার একটি দৃঢ় নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। সরকারি দল কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়নের পথে না গিয়ে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও আগ্রহী নেতা-কর্মীদের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিতে পারে। এমনকি দলের একাধিক প্রার্থী
হলেও স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি সেখানে ছেড়ে দিয়ে দেখতে পারে। তাতে ফলাফল বিরূপ হবে না।
২. বিরোধী দল নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে প্রবল আন্দোলনে থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্দোলনকে সীমিত রেখে এ নির্বাচনে দলের আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীদের স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে দিতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনী বিধিমালা অনুসরণ বা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতত সজাগ থাকতে পারে। সেটি সংগত ও দীর্ঘ মেয়াদে সুফলদায়ক হতে পারে।
৩. চারটি সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ইত্যাদি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরত রাখার বিধানসংবলিত নির্বাচনী বিধিমালা থাকতে হবে। এ বিধি ভঙ্গ হলে মনোনয়নপত্র ও প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা প্রয়োজন। এমনকি বিধি ভঙ্গ করে নির্বাচিত হওয়ার পরও বিধিভঙ্গের জন্য পদ শূন্য করার স্পষ্ট বিধান এবং সে বিধান কার্যকর করার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
৪. নিজেদের বিবেকবোধ থেকেও ক্ষমতাসীন মেয়র ও কাউন্সিলররা স্বেচ্ছায়ও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর পদত্যাগ করে গৌরবময় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
৫. চারটি সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা এ নির্বাচনের সফলতার জন্য অপরিহার্য। নাগরিক সমাজ নির্বাচনী বিধিমালার অনুসরণে প্রার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিধি ভঙ্গকারীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। সর্বোপরি সৎ, নিবেদিত, নিষ্ঠাবান ও যোগ্য প্রার্থীরা যাতে প্রার্থিতায় আগ্রহী হন, সে ব্যাপারে সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। এ ভূমিকা পালন না করলে নির্বাচন হবে ঠিকই, কিন্তু নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয়।
বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে (২০১১ ও ২০১২) স্থানীয় নাগরিক সমাজ তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নাগরিক সমাজের সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকার একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। একইভাবে কুমিল্লার ক্ষেত্রেও সাধারণ ভোটাররা নীরবে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। তবে দুই নির্বাচনের ফলাফলের সামগ্রিক বিশ্লেষণে আমরা যা দেখেছি, তাতে ভোটার ও নাগরিক সচেতনতার কিছু কিছু মারাত্মক দুর্বলতাও ধরা পড়েছে, যার পুনরাবৃত্তি সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৩ সালে কাম্য নয়। প্রথমত, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর (নারী ও পুরুষ) প্রার্থীদের মধ্যে আধুনিক একটি নগর গড়ে তোলার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন প্রার্থীর দারুণ খরা দেখা গেছে। প্রার্থীদের শিক্ষাগত পটভূমি, অপরাধ ও মামলার ইতিহাস, বয়স ও পেশা, সমাজকর্মের পটভূমি ইত্যাদি বিষয়ে নাগরিক সমাজের সামগ্রিক উদাসীনতার কারণে মাঠে ভালো প্রার্থী ছিলেন না। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া প্রার্থীর তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই, মিথ্যা তথ্য চ্যালেঞ্জ করা, তথ্যগুলোর ব্যাপক বিনিময় ও মূল্যায়ন হয়নি। নির্বাচন কমিশন আগে এসব তথ্য জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল। বিশেষত, সুজন কাজটি অত্যন্ত কার্যকরভাবে করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের জন্য সে সুযোগ তৈরি করবে কি না, জানি না।
উপসংহারে বলতে হয়, ভুল করে হোক বা ব্যবস্থার কারণেই হোক, স্থানীয় নির্বাচনকে আমরা চেয়ারম্যান ও বা মেয়র নির্বাচন হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলররা পাদপ্রদীপের ধারেকাছেও থাকেন না। সবাই শুধু মেয়রকে নিয়েই ভাবতে থাকি। মনে রাখা উচিত, এটি মেয়র নির্বাচন নয়, করপোরেশন নির্বাচন। তাই সাধারণ আসনের এবং নারী আসনের কাউন্সিলরদের বিষয়টিও যেন যথাযথ গুরুত্ব পায়, সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সদস্য, স্থানীয় সরকার কমিশন।
No comments