শিগগিরই আইন সংশোধন: শিশু ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল - ঝিকরগাছায় গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪
শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান
রেখে আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবারের মধ্যে আইনটি সংশোধন হতে
পারে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন আইনে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু শিশু ধর্ষণের মামলার
বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হচ্ছে। উপদেষ্টা
পরিষদের বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস
একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় পরিবেশ, বন ও
জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রধান
উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সরকার নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা
হাসান বলেন, দেশে যেভাবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করতে বসেছিলাম। সেখানে এই আইনের
সংশোধনীর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মাগুরা ও
বরগুনায় ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সব কিছু বিবেচনায় রেখে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর বেশ কিছু সংশোধন প্রস্তাব করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
আমাদের কেবিনেট সেটা নীতিগত অনুমোদন দেয়। ইতিমধ্যে আমরা কিছু মতামত পেয়েছি।
মতামতগুলো কাল-পরশু যাচাই-বাছাই করবো। বৃহস্পতিবার এই আইনটি চূড়ান্তভাবে
অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচারের বিলম্ব হওয়ার কারণ
হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিএনএ ল্যাব না থাকা। এই মুহূর্তে একটি মাত্র ল্যাব
আছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ডিএনএ ল্যাব
স্থাপন করবো। তিনি আরও বলেন, বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে
দ্রুত কিছু সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে, যেন ধর্ষণসহ
অন্যান্য মামলার বিচার ত্বরান্বিত করা যায়। এসময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
বলেন, ধর্ষণের মামলার জট লেগে থাকে। কারণ এখানে দুই ধরনের মামলা আসছে। একটা
হচ্ছে সম্মতিসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এগুলোর অনেক আধিক্য ছিল। এসব
মামলার কারণে ‘সম্মতি ছাড়া’ যেসব ধর্ষণ, সেগুলোর বিচার আটকে থাকছে। সেজন্য
আমরা বিধান যুক্ত করেছি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মতিতে প্রতারণামূলকভাবে
হোক বা যেভাবে হোক ধর্ষণের ঘটনাগুলো আলাদা অপরাধ। সম্মতি ব্যতিরেকে যে
ধর্ষণ, সেটার ক্ষেত্রে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ধরনের
মামলাগুলো আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এগুলো প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে
পাঠানো হচ্ছে। ‘চাঞ্চল্যকর’ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদনের
অপেক্ষায় না থেকে পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দিতে
বিচারককে সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। নতুন আইনে ধর্ষণের
উদ্দেশ্যে কারও ওপর আক্রমণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর যদি ভুক্তভোগীর শারীরিক
ক্ষতি করা হয়, তাহলে সেটাও শাস্তির আওতায় রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাগুরায়
শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনাটি প্রচলিত আইনে দ্রুত
সম্পন্ন করা হবে। এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি মাজার
ভাঙার নামে একটা নৈরাজ্য চলছে। এতদিন সরকার রিঅ্যাক্টিভ অবস্থানে ছিল,
দোষীদের গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু এখন সরকার সবার উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলতে
চায়, সরকার আর কোনোভাবেই মাজার ভাঙার বিষয়টি গ্রহণ করবে না। সবাইকে বিরত
থাকতে বলা হচ্ছে। অন্যথায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঝিকরগাছায় গণধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪
ঝিকরগাছার গদখালিতে গনধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৪ যুবককে আটক করেছে
থানা পুলিশ। ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে, রবিবার (১৬মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টার
দিকে, উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পটুয়াপাড়া গ্রামের একটি লিচু বাগানে। ৯৯৯ কল
দিলে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল
থেকে ধর্ষিতাকে উদ্ধার ও মোবাইল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে সন্ধ্যায় ৪ ধর্ষককে
আটক করেছেন। আটকৃতরা হলো, গদখালী ইউপির পটুয়াপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের
ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (২২), জাকির হোসেনের ছেলে জাবেদ হোসেন (২৮), শরিফুল
ইসলামের ছেলে মামুন হোসেন বাপ্পি (২১) ও উজ্জল হোসেনের ছেলে আমিনুর রহমান
(২০)। জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের রাজগঞ্জ গ্রামের
টুকু মিয়ার মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (১৯) বেনাপোল খালাবাড়ি থেকে ফেরার পথে
গদখালী বাজারে নামে। এরপর গদখালী বাজারের ফুলের দোকানদার আমিনুর রহমানের
দোকানে গেলে ৪ বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়। সেই সুত্রে সুমাইয়াকে গদখালী এলাকায়
ফুলবাগান দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে পটুয়াপাড়া গ্রামের জাবেদ
হোসেনদের লিচুবাগনে নিয়ে গণধর্ষন করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর ই
আলম সিদ্দিকী, নাভারণ (সার্কেল) এএসপি নিশাত আল নাহিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন
করেন। ধর্ষণের ঘটনায় ঝিকরগাছা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে অফিসার
ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান জানিয়েছেন।

No comments