সিএমএসএমই ঋণ নীতিমালা: ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ হলো
নতুন এসব বিধান যুক্ত করে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) অর্থায়নের নতুন নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নীতিমালা মেনে চলতে হবে। আগামী পাঁচ বছর এই নীতিমালা কার্যকর থাকবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ২৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি এই খাতে প্রতিবছর দশমিক ৫ শতাংশ হারে ঋণ বাড়াতে হবে। ২০২৯ সালের মধ্যে ঋণের ২৭ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে দিতে হবে। এর মধ্যে ক্লাস্টার খাতে ঋণের লক্ষ্য ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা খাতে ঋণ আগের মতোই ১৫ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। সেবা খাতের ঋণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ ও ব্যবসা খাতে ঋণ ৩৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা সিএমএসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যাংকগুলোতে এখন এসএমই ঋণের সুদহার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধার ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৭ থেকে ৮ শতাংশ।
* কুটিরশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা পাবেন সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা
* মাইক্রো শিল্প উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা
* ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তারা পাবেন সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা
* মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা
টিআইএন না থাকলেও মিলবে ঋণ
বর্তমানে সব ধরনের ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক। তবে সিএমএসএমই নীতিমালায় বলা হয়েছে, টিআইএন না থাকলেও ঋণ পাবেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা। ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন তাঁরা। নীতিমালা অনুযায়ী, উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা—এই তিন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তারা, যাঁদের জনবল পারিবারিক সদস্যসহ ১০ জনের বেশি নয়, তাঁরা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ঋণের ক্ষেত্রে এই শ্রেণির উদ্যোক্তাদের টার্নওভারের কোনো শর্ত রাখা হয়নি। তবে তাঁদের জমি ও কারখানা ভবন ব্যতীত প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদের মূল্য পাঁচ লাখ টাকার কম হতে হবে।
কারা কত ঋণ পাবেন
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ১২১ থেকে ৩০০ কর্মী আছেন, এমন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান অথবা এক হাজার কর্মী আছেন, এমন শ্রমঘন শিল্পে এই ঋণ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া মাঝারি শিল্পের মধ্যে সেবা খাতে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যাবে, যেখানে কর্মীর সংখ্যা ৫১ থেকে ১২০ জন। উৎপাদন খাতের ক্ষেত্রে মাইক্রো শিল্প সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা ও ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তারা ২৫ কোটি টাকা ঋণ পাবেন। ট্রেডিং খাতের মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা ১০ কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের ট্রেডিং ও সেবা খাতের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা ঋণ পাবেন। অন্যদিকে ট্রেডিং খাতের মাইক্রো শিল্পের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা এবং কুটিরশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
৩০ দিনে ঋণ
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতেও ঋণের আবেদন করতে পারবেন সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা। ঋণ আবেদন জমার পর গ্রাহককে তা মোবাইলে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানাতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ঋণ অনুমোদন হলে তা যেমন গ্রাহককে অবহিত করতে হবে, তেমনি অনুমোদন না হলে প্রকৃত কারণসহ গ্রাহককে তা জানাতে হবে। আবেদন অনুমোদন না হলে নতুন করে আবার আবেদন করতে পারবেন গ্রাহকেরা। সিএমএসএমই ঋণের সব তথ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার (লাইভ চ্যাটবট) সুবিধা চালু করতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
নারী উদ্যোক্তা কারা
নীতিমালায় নারী উদ্যোক্তা ও উদ্যোগের সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, সিএমএসএমই খাতের কোনো একটি উদ্যোগ নারী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে, যদি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারের ন্যূনতম ২০ শতাংশের মালিক নারী হন। যদি ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অথবা সমপর্যায়ের পদে একজন নারী দায়িত্বরত থাকেন বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারের ন্যূনতম ২০ শতাংশের মালিক হন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্থায়ী জনবলের ন্যূনতম ৫১ শতাংশ নারী কর্মরত থাকেন।
![]() |
একজন ছোট ব্যবসায়ী পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। ফাইল ছবি |
No comments