শিশুটির অপহরণের নেপথ্যে কী?
গতকাল র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শিশু জাইফার মায়ের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্ক গড়ে তোলে অপহরণ চক্রের প্রধান ফাতেমা আক্তার। শিশুটির মা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত। তিনি মন্ত্রণালয়ের বাসে যাতায়াতকালে কৌশলে ওই বাসে ওঠেন অপহরণকারী ফাতেমা। নানানভাবে অপহৃতের মায়ের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে শিশুর মায়ের সঙ্গে সাবলেটে একই বাড়ি থাকার পরিকল্পনাও করেন তারা। ঘটনার দিন আজিমপুরে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে প্রবেশ করেন ফাতেমা আক্তার। এ সময় কৌশলে ভুক্তভোগীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর ফাতেমার তিনজন সহযোগী ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে থাকা নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এরপর শিশু মেয়ে আরিশা জান্নাতকে অপহরণ করে আনা হয়। রাখা হয় আদাবর নবীনগর হাউজিংয়ে। সেখান থেকে শুক্রবার রাতে র্যাব শিশুটিকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, অপহৃত ভিকটিম ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত উক্ত ব্যক্তিরা ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। ভুক্তভোগী আরিসা জান্নাত জাইফার মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। ভুক্তভোগীর মা চাকরি করেন এবং বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ভিকটিমের পরিবার বিগত ৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অপহরণের দুই সপ্তাহ পূর্বে ভুক্তভোগীর মায়ের সঙ্গে অফিসে যাতায়াত করার সময় গ্রেপ্তারকৃত শাপলার পরিচয় হয়। এ সময় শাপলা ভুক্তভোগীর মায়ের কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। শাপলা আরও জানায়, সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ২য় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে। পরিচয়ের একপর্যায়ে শাপলা জানায়, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসায় ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি ভুক্তভোগী শিশুকে দেখভালও করতে পারবে। ভিকটিমের মা ভিকটিমের দেখাশুনার কথা চিন্তা করে শাপলাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য রাজি হয়। পরে শাপলা গত ১৪ই নভেম্বর বিকালে এসে ভুক্তভোগীর মাকে ২০০০ টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে প্রদান করে বাসায় রাত্রিযাপন করে। পরের দিন সকালে শাপলা ভুক্তভোগীর মা ফারজানা আক্তারকে জানায়, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। সকাল সাড়ে ৮টায় শাপলা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার একপর্যায়ে শাপলা ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী শিশুর মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় শাপলা ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভিকটিম জাইফাকে নিয়ে শাপলার বাসায় চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে ভিকটিম জাইফাকে উদ্ধারপূর্বক অপহরণের পরিকল্পনাকারী শাপলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উল্লেখ্য, শাপলা ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি বলে জানায়।
র্যাব জানিয়েছে, ফাতেমা আক্তার শাপলা একজন গৃহিণী। সে ২০১০ সালে তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। সে ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং বিগত ৩-৪ মাস পূর্বে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করে।
No comments