দুই সন্তানকে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা

ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশায় দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মো. আহাদ (৪০) নামে এক বাবা। গতকাল সকালে রাজধানীর পল্লবীর বাইগারটেক হাজী মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত  আহাদ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। আহাদের বাড়ির মালিক নাসির সরকার বলেন, আহাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ১২ বছর, মেজো ছেলে ৭ বছর, ছোট ছেলে ৩ বছর ও একটা ছোট্ট মেয়ে রয়েছে। তিন মাস আগে আহাদ আমার বাড়ির নিচতলায় বাসা ভাড়া নেয়। তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আর আহাদ স্থানীয় একটি ভবনের কেয়ারটেকার। প্রায়ই সংসারের অভাব অনটন নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। শনিবার সকালেও অনেক চিল্লাচিল্লি হচ্ছিল তাদের বাসায়। সকাল ৯টার দিকে গিয়ে দেখি তার মেজো ছেলে রোহান ও ছোট ছেলে মুসা রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর আহাদের গলা দিয়েও রক্ত ঝরছে। তখন আশেপাশের লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহাদ ও তার সন্তানদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক সোহান মোল্লা ও আব্দুল হাই বলেন, খবর পেয়ে বাইগারটেক হাজী মার্কেট এলাকার একটি বাসার নিচতলার একটি রুম থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় মো. আহাদকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। তাকে ভর্তি দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি আহত আহাদ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই অভাব-অনটন নিয়েই তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। সেই থেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে দুই সন্তানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। বাসা বাড়িতে কাজ করায় ঘটনার সময় তার স্ত্রী কোলের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে তখন বাসায় ছিল না। আর বড় ছেলেও বাসার বাইরে ছিল।

আহত আহাদের সঙ্গে হাসপাতালে আসা তার প্রতিবেশী মো. হাসান খান বলেন, শনিবার সকাল সাতটা থেকে আহাদের বাসায় চিল্লাচিল্লি শুরু হয়। এরপর তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে তার কাজে বের হয়ে যায়। তারপরও ঝামেলা থামেনি। সকাল ৯টার দিকে আমরা গিয়ে দেখি তার দুই সন্তান রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর আহাদের গলা দিয়েও রক্ত ঝরছে। পরে আমরা পুলিশে খবর দিই। পুলিশ এসে সকল উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

আহত আহাদের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আহাদের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এখনো তাকে সংকটমুক্ত বলা যাচ্ছে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে- পারিবারিক কলহ, আর্থিক অনটনসহ নানাবিধ কারণে দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার জন্য গলায় ধারালো ছুরি চালিয়েছেন। এরপরও ঘটনার সঠিক কারণ সন্ধানে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তের পরই বিস্তারিত বলা যাবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.